চলারপথে রিপোর্ট :
দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাসেল হোসেন (৩২) নামে এক ট্রাক চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ৪জন আহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আজ ৯ এপ্রিল বুধবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকায়। নিহত রাসেল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আব্দুল আজিজের ছেলে। এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছেন।
সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন রহমান জানান, আজ সকালে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কুট্টাপাড়া এলাকায় সিলেটগামী দ্রুতগতির একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই গাড়িতে থাকা চারজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানার ৭ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ রাজিব মিয়া (২৫), রাজন মিয়া (৩০), আমিন মিয়া (২৫), সমুজ আলী (৩৫), লিটন মিয়া (৫০), নাছিমা বেগম (২৫) মোঃ আল আমিন (১৯)।
পুলিশ জানায়, তাদের মধ্যে ২জন নিয়মিত মামলার, ৪জন সিআর মামলার ও একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার সকালে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সরাইল প্রতিনিধি :
সরাইলে খাদিজা বেগমের (৪৫) পরিবারের দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে আশেক মিয়া (২২) শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। মেজ ছেলে লাদেন মিয়া (১৮) শারীরিক প্রতিবন্ধী। মিথ্যা মামলায় স্বামী দুলাল মিয়া (৫০) জেলখানায়। মেয়ে একটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। বইখাতা ও বেতনের অভাবে লেখাপড়া বন্ধের পথে।
বড় ছেলে আশেক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কিছুটা চলাফেরা করতে পারলেও লাদেন ঘরের বাইরে যেতে পারে না। লাদেনের যখন আট বছর বয়স তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে সময় লাদেনের বাবা জমিজমা বিক্রি করে দেশের নামিদামি বহু হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও লাভ হয়নি। সেই থেকে লাদেনের হৃদয় যেন বেদনার বালুচর।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধূলা করা ছোট্ট লাদেন এখন হয়ে গেছেন প্রতিবন্ধী। তখন থেকে বাইরে বের হয়ে দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ কিছুই দেখা হয় না তার। ছোটবেলার ছোটাছুটি আর বন্ধুদের সঙ্গে মাতামাতি এখন কেবলই স্মৃতি। সবই বিধাতার খেলা। আশা ছেড়ে দিয়েছেন সুস্থ হওয়ারও। এখন আর চিকিৎসা করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। কোথায় পাবেন অত টাকা? কোথায় করাবেন চিকিৎসা? প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কোনোরকমে অর্ধাহার-অনাহারে চলে তাদের সংসার।
সকালে খেলে বিকালের খাবার থাকে না। ক্ষুধায় ছটফট করে কাটে সারারাত। তাদের শেষ সম্বল যেটি ছিল, সেই ভিটেবাড়িটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। অসুস্থ ছেলেমেয়েদের মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় খাদিজা আশ্রয় নিয়েছেন লাদেনের চাচার বাসায়।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী খাদিজার স্বামী ফেঁসে গেছেন মিথ্যা মামলায়। জেলখানায় রয়েছেন ছয় মাস ধরে। একদিকে দুই সন্তান অসুস্থ, মেয়ের পড়ার খরচ, স্বামী জেলখানায়। অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকে বেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। চারবার করিয়েছেন বেস্ট ক্যান্সারের অপারেশন। তাতেও সফল হয়নি। ক্যান্সারের জীবাণু ছড়িয়ে গেছে পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বেলা থাকতেও যেন আঁধার এসে গ্রাস করেছে তাকে। শুধু মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই তার।
উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে বৃহস্পতিবার সরেজমিন যান এ প্রতিবেদক। তার কাছে নিজের এ ভাগ্যবিড়ম্বনার কথা তুলে ধরেন মৃত্যুশয্যায় ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চান স্বামীর। জানান বাঁচার আকুতি। বাঁচাতে চান ছেলেমেয়েদেরও। দুই ছেলের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করতে চান। পড়াতে চান মেয়েকে। আর এ জন্য দেশবাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি। চাইছেন তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়াক। আর এ জন্য দিয়েছেন বিকাশ নম্বর। খাদিজার বিকাশ নম্বর ০১৭৭২২৯৪৬৮৪।
চলারপথে রিপোর্ট :
যথাযথ মর্যাদায় সরাইলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে।
উদযাপন উপলক্ষে একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১মিনিটে সরাইল উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. রকিবুল হাসান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা, সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস।
সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমত আলী, আওয়ামী লীগের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. নাজমুল হোসেন, উপজেলা বিএনপির পক্ষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. নুরুজ্জামান লস্কর তপু, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরিদ, আওয়ামী লীগ নেতা মো.মাহফুজ আলী সহ উপজেলার প্রশাসনের র্কমকর্ত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেতা কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটায় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মঈন উদ্দিন। আলোচনা শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
এছাড়াও সকল ভাষা শহীদ ও প্রয়াত ভাষা সৈনিকদের আত্মার শান্তি কামনা করে উপজেলা সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল, মোনাজাত এবং অন্যান্য সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
২৪ হেক্টরেরও অধিক ইরিবোরো ধানের জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অফিস বলছেন, পোকা মাকড় জীবাণুর আক্রমণ বা ব্লাস্ট রোগ।
কৃষকরা বলছেন, ধানে চাল আসার আগেই ছড়াগুলো জ্বলে পুড়ে লালচে হয়ে ঝরে পড়ছে। কোথাও সাদা পাউডারের মতো হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার জয়ধরকান্দি, দেওড়া, মলাইশ, নিয়ামতপুর, ধাউরিয়া, চুণ্টা, বিটঘর গ্রামের ফসলি মাঠে ও কালিকচ্ছের ধর্মতীর্থ এলাকায় আকাশী হাওর বিলে বি আর-২৮ ধানের জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে।
সরাইল উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরাইল উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ইরিবোরো ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২৪ হেক্টর জমি। তবে কৃষকদের দেয়া তথ্য মতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫-৪০ হেক্টর জমির ধান। অধিকাংশ এলাকায় বিআর-২৮ জাতের ধান আক্রান্ত হয়েছে। এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে কৃষি অফিস। কারণ এগুলো অনেক পুরাতন মডেল।
তাই ২৮ জাতের ধানে দ্রুত পোকা মাকড় ও জীবাণু আক্রমণ করে ক্ষতি করে থাকে। এর পরিবর্তে নতুন উন্নত জাতের ধান এখন বিআর-৮৮, ৮৯ জাত। জয়ধরকান্দি গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া (৪০) ও ইমরান মিয়া (৩৫) বলেন, বিঘা প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করেছি। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধানে এখনো চাল হয়নি। এরই মধ্যে ছড়া লাল বা সাদা রঙ ধারণ করে নিচ দিয়ে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আবার সাদা পাউডারের মতো হয়ে পড়ছে। এই এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি আক্রান্ত হয়েছে। কেটে আনলে হাঁস মোরগের খাবার হবে। গ্রামের দোকানদার থেকে ১০ কেজি ওজনের বীজ ধানের প্যাকেট ৬ থেকে ৭শ’ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছিলাম। প্যাকেটের উপরে লেখা ছিল ‘কুমিল্লা’ও ‘চুয়াডাঙ্গা’। ধান নেই তারপরও এক কানি জমি কাটতে ৩৬শ’ টাকা লাগে। এবার কি খেয়ে বাঁচবো জানি না? দেওড়া গ্রামের কৃষক মো. জয়নাল মিয়া, ধাউরিয়া গ্রামের কৃষক ক্ষিরোদ মজুমদার, লিল মহন সরকার, নিরঞ্জন সরকার, জগদিশ সরকার বলেন, আমাদের এখানে প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা জমি শেষ। এখন কেটে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। কালিকচ্ছ বাজারের ‘কৃষকবন্ধু’ দোকানের মালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় কৃষকরা লাইন ধরে পোকা মাকড় ধ্বংস ও আগাছা নাশক ওষুধ ক্রয় করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরাম হোসেন ২৮-২৯ জাতের ধান আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক পুরাতন হওয়ায় প্রকৃতিগতভাবেই এই জাতের ধানে জীবাণু আক্রমণ করে থাকে। এই ধান চাষে আমরা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে থাকি। লেটেস্ট ও ভালো বীজ হচ্ছে ৮৮, ৮৯ জাতের ধান। আমরা প্রণোদনায়ও আধুনিক বীজ দিয়ে থাকি।