অনলাইন ডেস্ক :
দীর্ঘ চার মাস পর দেশে ফিরে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ ৬ মে মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছালে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে, আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমিরের বিশেষ ফ্লাইটটি অবতরণ করে। তাঁর সাথে এসেছেন বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।
বেগম খালেদা জিয়া স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর এলাকায় ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। বিমানবন্দর সড়ক থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে অপেক্ষা করেন দলটির হাজারো নেতাকর্মী। তারা বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পুরো পথে বেগম জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান।
এসময় ‘বেগম খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ নানা শ্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। তাদের কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউ-বা বেগম জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে ছিলেন।
এদিন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে সকাল থেকেই বিএনপির শত শত নেতাকর্মী গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি ‘ফিরোজা’র সামনে জড়ো হন। বেগম জিয়ার আগমনকে ঘিরে আজ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে, ৫ মে সোমবার বাংলাদেশে সময় ৯টা ৩৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। মাঝে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাদ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে এক ঘণ্টার জন্য বিরতি ছিল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির।
অনলাইন ডেস্ক :
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্দোলনের নামে দেশে কেউ সহিংসতা করলে বরদাশত করা হবে না। যে কেউ রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে পারে, সরকারের পদত্যাগও চাইতে পারে। কিন্তু দিনক্ষণ ঠিক করে সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলবে- এমনটা বলা সমীচীন নয়, এটি রাজনীতির ভাষা নয়।
আজ ১ অক্টােবর রবিবার বিকেলে সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করলে এ কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, যে ভাষায় বিএনপি কথা বলছে, সেই ভাষা ইঙ্গিত দেয় তারা দেশে সহিংসতা, নাশকতা করতে চায়। সেটি করতে কাউকে দেওয়া হবে না। আমি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বলছি, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে কীভাবে কাকে মোকাবিলা করতে হয়- সেটি আমরা জানি।
হাছান মাহমুদ বলেন, গত ৫২ বছরে বাংলাদেশের পথচলায় জাপান অর্থনৈতিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে আমাদের যেভাবে সহায়তা করেছে- সেজন্য জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে যেন আমরা আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি, সে বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
একই দিন দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি আগামী ১৩ অক্টোবর সারাদেশে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন তথ্যমন্ত্রী।
এ সময় তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি সিনেমা নয়, এটি বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক। ‘মুজিব- দ্য মেকিং অব আ নেশন’, ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ ছবিতে বাংলাদেশের ইতিহাস, অভ্যুদয়ের ইতিহাস আছে; কারণ বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র গঠিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। এই চলচ্চিত্রটি জাতির জন্য একটি দলিল।
অনলাইন ডেস্ক
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে খাদ্যমূল্য, সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছুই আছে। আমরা এখনও উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।
ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আজ ৭ জুন শুক্রবার বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার বাজেট দিয়েছি, বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য তারপর দেশীয় শিল্প, সেগুলো এবং সামাজিক নিরাপত্তা, এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড ১৯ এর অতিমারি দেখা দিয়েছিল, এই অতিমারির ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর আসল ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেটা কোনো উন্নত দেশ করেনি, বিনা পয়সায় কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি। সেটা করেছি কেন? মানুষকে বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো, এভাবে পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও আমি কিনে নিয়ে এসেছি। ঠিক সেইভাবে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
কালো টাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসাব, সেই হিসাবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে, এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় তালাক দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক স্ত্রী সুমা আক্তারকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী রাসেল মিয়া (৩২)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এবং র্যাব-৯-এর সদস্যরা রাত ঢাকার পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত রাসেল মিয়া কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।
গতকাল বুধবার বিকেলে র্যাব-৯-এর কার্যালয়ে থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। নিহত সুমা আক্তার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়া মেয়ে।
র্যাবের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে মোঃ রাসেল মিয়ার সাথে সুমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সুমা আক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে ১ টি অটোরিক্সাসহ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল ও ১ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার দেয়া হয়।
বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় সুমা আক্তারকে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে দেয়ার জন্য চাপ দিতো রাসেল মিয়া। এনিয়ে মাঝে মধ্যে সুমা আক্তারকে বেদম মারধোর করতো রাসেল মিয়া। ঘটনার ৭/৮ মাস আগে রাসেল মিয়া ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য সুমা আক্তারকে মারধোর করলে সুমা তার বাবার বাড়িতে চলে যায়।
গত ২০১৫ সালের ৩১ মে সুমা আক্তার তার স্বামী রাসেল মিয়াকে ডিভোর্স দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল মিয়া সুযোগ খুজতে থাকে।
২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর সুমা আক্তার তার বাবার বাড়ির একঘর থেকে অন্যঘরে যাওয়ার সময় পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা রাসেল মিয়া এলোপাথারী সুমাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
পরে তার পরিবারের লোকজন সুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমাকে মৃত ঘোষনা করেন। তবে মারা যাওয়ার আগে সুমা আক্তার হামলাকারী রাসেলের নাম বলে যায়।
এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা কুদ্দুস মিয়া বাদী হয়ে কসবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন তদন্ত শেষে ডিসেম্বর মাসে রাসেলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সুমা তালাক দেয়া ক্ষুব্দ রাসেল মিয়া তাকে হত্যা করেন।
এদিকে সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রাসেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ৬ আগষ্ট দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার আসামী রাসেলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করেন। আসামী পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে জেল ওয়ারেন্ট ইস্যুর আদেশ দেন ।
অনলাইন ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে তিন স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ২৫ জুন রবিবার দুপুরে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হোরগাও এলাকায় পুকুরে পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।
মৃত স্কুল শিক্ষার্থীরা হলো-রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার গন্ধব্যপুর এলাকার রুকন উদ্দিনের মেয়ে আফসানা আক্তার মারিয়া, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর এলাকার সালাম মিয়ার মেয়ে সুবর্না আক্তার, হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলার রোমান মিয়ার মেয়ে মারিয়া।
তারা সবাই বর্তমানে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হোরগাও এলাকার আক্তার মিয়া ও সোমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং হোরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।
মৃতের পরিবারের বরাত দিয়ে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হোরগাও এলাকার একটি পুকুরে তিনজন স্কুল শিক্ষার্থী গোসল করতে যায়। তাদের কেউই সাঁতার না জানায় পুকুরের পানিতে ডুবে যায়।
পরে স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই বাংলায় এসেছে সেই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। আর আজ বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।
বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকেরা শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তারা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।
প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে গোটা জাতি। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।
এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠেছিল জেনারেল আইয়ুবের গদি। জনতার সাগরে সৃষ্টি হয়েছিল তাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গ্রাম-শহর, জনপদ। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’।
কিন্তু ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় মুক্তির দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ছবি।
কিন্তু বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।
সেই কালরাত্রি থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।