জাওয়াদ তাহের :
ইসলামের ইতিহাসে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলোর গুরুত্ব বোঝাতে কোরআনে এর নামে শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ ফজর কালের। এবং ১০ রাতের।’ (সুরা : ফজর, আয়াত : ১-২)
মুফাসসিরদের মতে, এখানে ফজর বলতে বিশেষভাবে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর বোঝানো হয়েছে। আর যে ১০ রাতের শপথ করা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত।
১০ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ :
হজ ও কোরবানি, আরাফাহ দিবস—এসব মিলিয়ে এই দিনগুলোর রয়েছে বিশেষ ফজিলত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই, যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজ মাসের এই ১০ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়।
সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জানমাল নিয়ে যদি কোনো লোক আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনোটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে আসতে না পারে তার কথা (অর্থাৎ সেই শহীদের মর্যাদা) ভিন্ন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৭)
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের এই ১০ দিনের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো, এ সময় শরিয়তের মৌলিক কিছু ইবাদতের সম্মিলন ঘটে। শরিয়তের প্রধান ইবাদত হলো নামাজ, রোজা, সদকা ও হজ।
এ ধরনের সমাবেশ বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না।
(ফাতহুল বারি, আসকালানি : ২/৪৬০)
১০ দিনের বিশেষ কিছু আমল :
সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও কোরবানি ছাড়া এই মাসে আছে বিশেষ কিছু আমল, যার মাধ্যমে সে রাঙিয়ে নিতে পারে নিজের জীবন। যারা হজ আদায় করবে তারা নির্ধারিত স্থান থেকে হজের বিধানাবলি পূরণ করবে। এ ছাড়া অন্যরা এসব আমল বেশি বেশি করবে।
বেশি পরিমাণে তাকবির বলা :
এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখা; বিশেষ করে তাকবির বলা।
আমাদের মাঝে এই আমলটি প্রায় ছুটে গেছে। তাই এই দিনগুলোতে তাকবিরের প্রতি গুরুত্বারোপ করা চাই। ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল, এই ১০ দিন তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাঁদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো আমল নেই। সুতরাং তোমরা এ সময় অধিক পরিমাণে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ করো। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৭৫৮)
রোজা রাখা :
এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমাল হচ্ছে, জিলহজের প্রথম ৯ দিন আল্লাহর জন্য রোজা রাখা। আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কোনো স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৪১৭)
আরাফাহর দিনের রোজার বিশেষ ফজিলত আলাদাভাবে এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আরাফাতের দিনের রোজা সম্পর্কে আশা করি যে তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৯)
নখ-চুল না কাটা :
এই ১০ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে জিলহজের চাঁঁদ ওঠার পর নখ, চুল এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কর্তন না করা; বরং কোরবানি দেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করবে। এই আমল সবার জন্য প্রযোজ্য, চাই সে কোরবানি করুক বা না করুক। ঈসা ইবনে হিলাল আস-সাদাফি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ এক ব্যক্তিকে বললেন, ইয়াওমুল আজহাকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য এ দিনকে ঈদে পরিণত করেছেন। তাই তুমি তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ ছোট করবে এবং তোমার নাভির নিচের পশম মুড়ে ফেলবে। আল্লাহর নিকট এটাই তোমার পূর্ণ কোরবান। (তাহাবি শরিফ, হাদিস : ৬১৭২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মো. আমিনুল ইসলাম :
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমরা এ ইবাদত কতটুকু ঠিকভাবে করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি তা ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা কীভাবে ইবাদত করলে আমরা তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারব তা আমাদের সবার জানা উচিত। সুরা মায়েদার ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’সুরা হুজুরার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ সুতরাং যারা দুনিয়ার বুকে বিচার করেন তারা যেন অবশ্যই সুবিচার করেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।
সুরা বাকারার ৩ ও ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তিনি যা কিছু দান করেছেন তার থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে এবং তাদের রবের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতের ওপর রয়েছে এরাই হচ্ছেন সফলকাম।’ সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নামাজ আদায়, জাকাত আদায়, গায়েবের ওপর ইমান আনা এবং সর্বোপরিভাবে আল্লাহ-প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করা। ধৈর্যশীলরাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় সত্য কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী তাদের পুরস্কার প্রায় অগণিত।’ সুরা জুমার আয়াত ১০। যারা তওবাকারী ও গুনাহ করার পর আল্লাহর স্মরণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান তারাও আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে কিংবা এর দ্বারা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে?’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৫।
যারা আল্লাহর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসে তারাও দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার (নবীর) কথা মেনে চল, আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ আয়াত ৩১। সুবহানাল্লাহ! এ আয়াতটি কত মর্যাদাপূর্ণ।
আল্লাহর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া ও গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী ও মুত্তাকি হওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি।
সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলগুলো পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও এতে কোনো নেকি নিহিত নেই, বরং বড় সত্য কাজ বা নেকির কাজ হচ্ছে ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং নবী-রসুলদের ওপর। আর সম্পদের ওপর তার ভালোবাসা থাকার পরও তা ব্যয় করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ভিক্ষুক ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী ও তাকওয়া অবলম্ব^নকারী মানুষ।’ আয়াত ১৭৭।
– লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
চলারপথে রিপোর্ট :
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতীয় পুরোহিতের কটূক্তি এবং সেই বক্তব্যকে বিজেপির এক নেতার সমর্থন দেওয়ার প্রতিবাদে আশুগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৪ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও ছাত্র জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি বের আশুগঞ্জ রেলগেইট হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার গোল চত্বর এসে মিছিলটি শেষ করে শুরু হয় প্রতিবাদ সমাবেশ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আহ্বায়ক এফরান সিদ্দিকি ঈশানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মুফতি রেদোয়ান হোসেন আল কাদ্বেরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন আশুগঞ্জ উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ্ব কাজী মোঃ মহিউদ্দিন মোল্লা।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা জোবায়ের আল মাহমুদ, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, ক্বারী আল আমিন আল ক্বাদেরী, ফখরুল ইসলাম নিহামী, খন্দকার আনিসুর রহমান আল ক্বাদেরী, খন্দকার বাবুল শাহ, মিজানুল রহমান, সোহাগ মিয়া, জোবায়েদ মোল্লা, নুর মোহাম্মদ জামান, আলাউদ্দিন আহম্মেদ, ফয়সাল আহমেদ, মোহাম্মদ মারুফ, আদিব, শ্রাবণ, রাসেল ইসলাম, মারুফ খান, রাহাদ, আমানত উল্লাহ, মোহাম্মদ মোহন, ফাহিমসহ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘গত আগস্ট মাসে রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন ভারতের মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ। তাঁকে সমর্থন করেছেন বিজেপির বিধায়ক নীতেশ রানে। এ দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও এখনো রাজ্য সরকার তাঁদের গ্রেফতার করেনি। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্রের মুসলিম জনতা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মহানবীকে অবমাননাকারীদের গ্রেফতার করে সঠিক বিচারের দাবি জানাই।’
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ৩০ মার্চ রবিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ৩১ মার্চ সোমবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে।
সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।
এদিকে, সৌদি আরবে আজ পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। গতকাল শনিবার হিজরি ১৪৪৬ সালের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পবিত্র রমজান। দুই মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইট দ্য হারামাইন ও ফেসবুক পেজ হারামাইন শরিফাইনে এ ঘোষণা আসে।
অনলাইন ডেস্ক :
ইবাদত, পর্দা, পবিত্রতা, সাজ-সজ্জা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে নারীদের। শরিয়তের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে আলাদা এসব মাসয়ালা জানা নারীদের জন্য জরুরি। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল তুলে ধরা হলো।
অজু-গোসলে নারীদের যেসব মাসয়ালা জানা জরুরি
* শিশুকে দুধ পান করানোর কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নামাজ অবস্থায় কোনো শিশু দুধ পান করে নিলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬২৫)
* দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৩৭)
* অজু-গোসলের সময় মহিলাদের নাক-ফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৮০)
* ফরজ গোসলে মহিলাদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। কেবল চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। (শরহু মুশকিলিল আসার, হা. : ৩৮৫৪)
* ফরজ গোসলে মহিলাদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় মহিলাদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৫২)
* গর্ভাবস্থায় সন্তান হওয়ার আগে শেষের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে পানি বের হয়ে মহিলাদের শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, এতে মহিলার ওপর গোসল ফরজ হবে না, তবে অজু ভেঙে যাবে এবং নির্গত পানি থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা সেগুলো নাপাক। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৫৯, ইমদাদুল ফতোয়া: ১/১০৭)
* যেসব নারী ধাতুরোগে আক্রান্ত, তাদের অজু নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি কেউ টিস্যু বা তুলা ধাতু আসার রাস্তায় এমনভাবে রাখে, যাতে ধাতু বাইরে আসতে না পারে, তাহলে এমতাবস্থায় সব ইবাদত আদায় করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এটিই রোগীর জন্য উত্তম পন্থা। হ্যাঁ, তুলা বা টিস্যু পেপারের বহিরাংশ যদি ভিজে যায়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০)
* মহিলাদের ‘হায়েজ’ তথা মাসিক রক্তস্রাবের ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির বেশি হলে তখন তা ‘ইস্তিহাজা’ বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫ দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারো যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে হবে এবং অতিরিক্তগুলোকে ইস্তিহাজা। অনুরূপ কারো যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তাহলে তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয় হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২৮৯)
* কোনো কারণে আগের মাসের অভ্যাস খেয়াল না থাকলে দশের বেশি হলে তার বিধান হচ্ছে, যেহেতু হায়েজের শেষ সীমা ১০ দিন, তাই ১০ দিনের পর নিয়মিত নামাজ-রোজা শুরু করবে। এক্ষেত্রে আগের মাসের পরিমাণ খেয়াল না থাকলে খুব চিন্তাভাবনার পর প্রবল ধারণা অনুযায়ী যত দিনের অভ্যাস খেয়াল হবে, ততদিনই হায়েজ হিসেবে গণ্য হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৮৬)
* সন্তান প্রসবের পর জরায়ু থেকে যে রক্ত আসে, তাকে নিফাসের রক্ত বলা হয়। এর সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। এর সর্বনিম্ন সীমা নেই, অল্প কিছুক্ষণও হতে পারে। ‘নিফাস’ অবস্থার সব বিধান মাসিক স্রাবের অনুরূপ। নারীরা মাসিক ও প্রসবজনিত বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ-রোজা পালন করতে পারবে না। পরে এসব নামাজের কাজাও নেই, তবে রোজা কাজা করে নিতে হবে। ইস্তিহাজা অবস্থায় শরিয়তের বিধিবিধান যথা—নামাজ, রোজা ইত্যাদি পূর্ণরূপে পালন করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনেও কোনো অসুবিধা নেই। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/১৫৪-১৫৫)
* অনুরূপ হায়েজ-নিফাস অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকা একান্ত অপরিহার্য। তবে অপারগতাবশত গুনাহ থেকে বাঁচার মানসে হাঁটু থেকে নাভির মধ্যবর্তী অংশ বাদ দিয়ে অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা যৌনস্পৃহা নিবারণ করার অবকাশ আছে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৯২)
* তদ্রূপ বিশেষ দিনগুলোতে কোরআন শরিফ পড়া এবং স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ওই সময় শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা না দেওয়াই শরিয়তের প্রকৃত বিধান, তথাপি প্রয়োজনবশত একেক শব্দ ভিন্ন ভিন্ন করে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওই অবস্থায় তাদের কোরআন পড়া শোনা যাবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮)
* বই-পুস্তক বা দ্বীনি কিতাবাদি, যেখানে কোরআন শরিফের আয়াতও লিখা থাকে, এ অবস্থায় পড়া বা স্পর্শ করা জায়েজ। তবে কোরআনের আয়াত পড়া বা স্পর্শ করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৭৬)
* তদ্রূপ ওই সময়ে দোয়ার অর্থবহ আয়াত বা সুরা দোয়ার নিয়তে পড়া জায়েজ। যেমন দোয়ার নিয়তে আয়াতুল কুরসি বা সুরায়ে নাস ও ফালাক ইত্যাদি পড়া জায়েজ হবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৭২, আহসানুল ফতোয়া: ২/৭১)
* ওষুধের মাধ্যমে স্রাবের সময় পিছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি বলেন, ‘এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না’, তাহলে প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪)
নারীদের পোশাক ও সাজসজ্জার মাসয়ালা
* পোশাকের মধ্যে শরয়ি নীতিমালা হলো- এমন পোশাক পরবে, যা দ্বারা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সারা শরীর ঢেকে যায় এবং কাপড় এতটুকু মোটা হওয়া চাই, যাতে ওপর দিয়ে শরীর দেখা না যায়। নারীরা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষের ওপর, যারা মহিলাদের আকৃতি ধারণ করে এবং ওই সব মহিলাদের ওপর, যারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।’ (বুখারি: ৫৮৮৫)
* ভ্রু প্লাক, দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁকা করা, শরীর খোদাই করে অঙ্কন করা জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব মহিলার ওপর, যারা নিজের শরীর খোদাই করে ও করায়, যারা ভ্রুর চুল উঠায় ও উঠিয়ে দেয় এবং দাঁত চিকন করে। কেননা তারা সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে ফেলে।’ (বুখারি: ৪৮৮৬)
* কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭৩)
* অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)
* নারীরা হাতে, পায়ে ও গোটা শরীরে মেহেদি দিতে পারবে, বরং তা মোস্তাহাব। তবে এমন কোনো পলিস ব্যবহার করতে পারবে না, যার কারণে অজু-গোসলের পানি শরীরের চামড়ায় পৌঁছে না। নারীরা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে এমন পোশাক ও বোরকা পরে বের হবে, যা শালীনতা নির্দেশ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ (তিরমিজি: ২৭৮৭)
নারীদের পর্দার মাসয়ালা
* নারীরা স্বামী, পিতা, দাদা, নানা ও এদের বরাবর ওপরের দিকের পূর্বপুরুষ, নিজের ছেলে, নাতি ও এর বরাবর নিচের দিকের সব পুরুষ, আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই, এসব ভাইয়ের সন্তান, বোনের ছেলে, মামা, চাচা, স্বামীর বাবা, স্বামীর দাদা-নানা ও এদের বরাবর ওপরের পূর্বপুরুষ, স্বামীর আগের ঘরের সন্তান, মেয়ে ও নাতনি জামাই, দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভাই এবং দুধ-সম্পর্কীয় এসব স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ। এর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ নেই। (সুরা নিসা: ২২, ২৩; বুখারি: ২৬৪৫)
* শরিয়তের বিধানমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় মহিলারা উল্লিখিত মাহরাম পুরুষের সামনে তার মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, পুরো হাত, পায়ের পাতা খুলতে পারবে। অনুরূপ বুক, পায়ের গোছা, বাহু খোলার অনুমতি থাকলেও বিনা প্রয়োজনে না খোলাটাই উত্তম, তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা হলে এগুলোও ঢাকা জরুরি। বর্তমান ফিতনার যুগে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৭)
* প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম পুরুষের সামনেও বাচ্চাদের দুধ দিতে পারবে, তবে ফিতনার আশঙ্কা হলে তা করবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩২৮)
* অতি প্রয়োজনে অনন্যোপায় হলে মাহরাম ছাড়া পরপুরুষের সামনে—যেমন ডাক্তারের সামনে চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ প্রয়োজন অনুপাতে খোলা জায়েজ। (আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৭০)
* এমন বৃদ্ধ নারী, যাদের প্রতি সাধারণত কামদৃষ্টি যায় না, তারা পরপুরুষের সামনে চেহারা খুলতে পারবেন। পুরুষদের জন্য তাদের দেখা বৈধ। (মাবসুতে সারাখসি: ১০/১৫৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম নারীদের তাদের আলাদা মাসয়ালাগুলো জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নারী-পুরুষ সবাইকে ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ৩০ মার্চ রবিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ৩১ মার্চ সোমবার সারা দেশে উদযাপিত হবে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ-উল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জেলা ঈদগাহ ময়দানে। এতে ইমামতি করবেন – জেলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিবগাহতুল্লাহ নূর।
তবে, বৈরী আবহাওয়া থাকলে জেলা জামে মসজিদে নির্ধারিত সময়ে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ জামাত পালনে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন।
এছাড়াও জেলা শহরের ট্যাংকের পর জামে মসজিদ, শেরপুর জামে মসজিদ, কাউতলী নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়াম, ভাদুঘর ফাঁটা পুকুর ঈদগাহ ময়দান, ভাদুঘর শাহী মসজিদ প্রাঙ্গণ, পূর্বমেড্ডা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ, শরীফপুর ঈদগাহ মাঠ, মধ্যপাড়া ভাওয়াল দিঘীরপাড় মসজিদসহ জেলার ৭৮০টি ঈদগাহ ও ৫১০টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।