নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন : ট্রাম্পের উপদেষ্টা থাকার সময় নিয়মিত মাদক নিয়েছেন ইলন মাস্ক

আন্তর্জাতিক, 1 June 2025, 216 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২৯ মে হঠাৎ করেই ট্রাম্প প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের ইতি টানেন মাস্ক। বিদায় বেলায় তাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা অবস্থায় নিয়মিতভাবে কেটামিন, এক্সট্যাসি এবং সাইকেডেলিক মাশরুম সেবন করতেন।

banner

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাস্কের মাদক গ্রহণের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটি তার মূত্রথলির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জানা যায়, তিনি প্রায় প্রতিদিনই কেটামিন সেবন করতেন এবং প্রায় ২০টি ওষুধের একটি বাক্স সব সময় সাথে রাখতেন। ওই বাক্সে অ্যাডেরলের মতো উত্তেজক ওষুধের অস্তিত্বও ছিল।

একটি ছবিতে দেখা যায়, ওষুধের বাক্সটিতে অ্যাডেরল চিহ্নিত বড়ি ছিল। মাস্ক অবশ্য দাবি করেন, তার কেটামিন সেবন চিকিৎসকের পরামর্শে হতাশা দূর করার জন্য এবং সেটি তিনি প্রতি দুই সপ্তাহে একবার গ্রহণ করতেন।

২০২৩ সালের বসন্ত নাগাদ তার কেটামিন সেবনের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মাস্ক তখন ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দেন এবং প্রচারণায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার দান করেন। একই সময় তিনি ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্ণমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)’ নামে একটি বিশেষ প্রশাসনিক ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব পান।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মাস্ক হোয়াইট হাউসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। বাজেট ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসে তার ভূমিকা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস তার মাদক সেবনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কিংবা তাকে ড্রাগ টেস্টে অংশ নিতে বলেছে কি না, তাও জানা যায়নি।

মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেখানে কর্মীদের জন্য মাদকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। কর্মীদের ওপর ড্রাগ টেস্ট চালালেও মাস্ক আগেভাগেই সে বিষয়ে সতর্কবার্তা পেয়ে যেতেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে মাস্কের ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনও উঠে এসেছে। বলা হয়, তিনি একাধিক নারী সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক এবং সন্তানদের নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়েছেন। তার প্রাক্তন সঙ্গিনী গায়িকা গ্রাইমস তাদের সন্তানকে নিয়ে মাস্কের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, শিশুটিকে জনসমক্ষে নিয়ে যাওয়া তাদের চুক্তিভিত্তিক গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে এবং শিশুটির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

এক নারী লেখক অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ারও দাবি করেছেন, মাস্কের সাথে গোপন সম্পর্কে তার একটি সন্তান হয়েছে এবং মাস্ক চাইছিলেন বিষয়টি গোপন রাখতে। পরে মাস্ক তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলা বন্ধ করতে আদালতে গ্যাগ অর্ডার চেয়ে আবেদন করেন।

মাস্কের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের কিছু বন্ধু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফিলিপ লো বলেন, ইলন তার খারাপ আচরণের সীমা ক্রমাগত অতিক্রম করে চলেছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

Leave a Reply

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

কানাডায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুমিনুল হক : কানাডার টরেন্টোতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। Read more

মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 18 April 2024, 1371 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবার উদ্বোধন আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার করা হয়েছে। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের সাউথগেটে অবস্থিত কমার্শিয়াল সেন্টারের আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের অফিসে এই সেবা উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। তার কাছ থেকে ১ জন নবজাতক ও ২ জন তরুণ বাংলাদেশির আবেদন স্লিপ নেওয়ার মাধ্যমে এই সেবার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

banner

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ২০২০ সালে প্রথম ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়। এ পাসপোর্টে রয়েছে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা কোড। এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট চালু করা হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট সেবার মান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ন্যায় স্মার্ট ও দ্রুততর হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট সেবায় গুনগত পরিবর্তন আসবে। এ পাসপোর্টের মাধ্যমে উন্নত দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিরাও শিগগিরই নিজে স্ক্যান করে অভিবাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। সংখ্যার বিচারে যা সৌদি আরবের পর বিশ্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কমিউনিটি। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত ই-পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা হাইকমিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ক্রমান্বয়ে দাবি জানিয়ে এসেছেন। যা বাস্তবে এখানে একটি বড় দাবিতে পরিণত হয়েছিল।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ই-পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরুস ছালাম, ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর ও ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল প্রমুখ।

ব্রাজিলে ভারী বৃষ্টি-বন্যা, ১০ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক, 2 May 2024, 717 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ভারী বৃষ্টির পর ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার সৃষ্ট হয়েছে। আকস্মিক এই বন্যায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, প্রায় ২৪ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

banner

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল রাজ্যে বন্যার কারণে শতাধিক পৌরসভার প্রায় ৩ হাজার ৩০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেককেই আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত স্থান পরিদর্শন করবেন তিনি। রাজ্যের গভর্ণর এডুয়ার্ডো লেইট জানিয়েছেন, ওই রাজ্যে ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

আগামী কয়েকদিনে আরো ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টির মধ্যেও নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

ভারী বৃষ্টিতে বেশ কিছু ব্রিজ ভেঙে পড়েছে এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সূত্র: ফক্স নিউজ, এএফপি

বেইজিংয়ের বাঁধ নির্মাণের খবরে উদ্বিগ্ন ভারত

আন্তর্জাতিক, 4 January 2025, 464 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
চীনের তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো নদে (ভারত-বাংলাদেশে যার পরিচিতি ব্রহ্মপুত্র) বেইজিংয়ের বাঁধ নির্মাণের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের মতামত ও উদ্বেগের কথা চীনকে জানানো হয়েছে। অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে ভাটির দেশেরও কিছু অধিকার আছে।

banner

৩জানুয়ারি শুক্রবার চীনের বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। রণধীর জয়সোয়াল বলেন, রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সেই অধিকারের কথা বারবার জানানো হয়েছে। সেই অধিকার ও স্বার্থের বিষয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণ জারি আছে। সরকার সেইমতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, এই বাঁধ নির্মাণে চীনের খরচ হবে আনুমানিক ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দেশটির ‘থ্রি গর্জেস’ বাঁধের চেয়ে বড় প্রস্তাবিত এই বাঁধ। এটি নির্মিত হলে তা হবে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ। প্রস্তাবিত বাঁধ নিশ্চিতভাবেই দুই ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের নদীপ্রবাহে প্রভাব ফেলবে। দুই দেশই এ বিষয়ে চিন্তিত।

এ নিয়ে জয়সোয়াল বলেন, ওই তল্লাটে চীনের দখলদারি ভারত কখনো মেনে নেয়নি, নেবেও না। তাদের ওই ঘোষণা ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ওই এলাকা ভারতের ছিল, ভারতেরই থাকবে। কূটনৈতিক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হবে। সূত্র : এনডিটিভি

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ক্ষুব্ধ জাতিসংঘ মহাসচিব

আন্তর্জাতিক, 19 March 2025, 273 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতেই নিহত হয়েছেন চার শতাধিক ফিলিস্তিনি। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো বর্বর এ হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের অনেকেই নারী ও শিশু।

banner

এমন অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় এই তাণ্ডব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি ক্ষুব্ধ বলেও জানিয়েছেন।

একইসাথে যুদ্ধবিরতি মেনে চলতেও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে নিজের অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি একথা বলেন।

গুতেরেস আরো বলেন, আমি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার, নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং আটক থাকা অবশিষ্ট বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে আবেদন করছি। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

আন্তর্জাতিক, 18 December 2023, 1044 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

banner

বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”

শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।

বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।

তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।

শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।

তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।

প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা