যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ধর্ম, 24 June 2025, 221 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো হিংসা ও অহংকার। হিংসা এবং অহংকার মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে করে তুলে বিষময়। হিংসা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ ও বিষময়।

banner

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর জমিনে তোমরা দম্ভ ভরে চলো না, কেননা তুমি কখনই এ জমিন বিদীর্ণ করে এর নিচে যেতে পারবে না, আর উচ্চতায় তুমি কখনো পর্বতসমানও হতে পারবে না। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৭)।

সুরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ, তোমাদের কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়েও উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়েও উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।

ইমানের পর মন্দ নামে ডাকা কতই না নিকৃষ্ট। যারা এ আচরণ থেকে ফিরে না আসবে তারা জালেম। আমাদের মনে রাখতে হবে হিংসা-বিদ্বেষ একটি মারাত্মক ব্যাধি। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য।

মানুষ কেন একজন আরেকজনকে হিংসা করে? সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে তা হলো- পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা, দাম্ভিকতা, একে অপরকে ঈর্ষা করা, নেতৃত্ব পাওয়া, নিজেকে যোগ্য ভাবা, ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল করা, ক্ষমতা পাওয়া ইত্যাদি।

হিংসুক ব্যক্তি মনে করে সে-ই সমাজে সম্মানিত ও দামি আর সবাই তার চেয়ে নগণ্য। এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হিংসা-বিদ্বেষ থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

সুরা ফালাকের ৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- ‘হিংসুক ব্যক্তির হিংসার অনিষ্ট থেকেও আমি তোমার আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে। ’

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাঠের টুকরাকে খেয়ে ফেলে। (জ্বালিয়ে দেয়)। (আবু দাউদ, মিশকাত)।

হিংসুটেকে সমাজে কেউ পছন্দ করে না। সবাই তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। সমাজে সবার সঙ্গে বসবাস করলেও কেউ তাকে ভালো জানে না।

সুরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও ঈর্ষাকারীকে পছন্দ করেন না। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অহংকারও অনেক বড় গুনাহের কাজ। আমাদের মনে রাখতে হবে অহংকারের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছিল প্রথম পাপ।

অহংকারীকে আল্লাহতায়ালা কখনো পছন্দ করেন না। কবিরা গুনাহর মধ্যে অহংকার অন্যতম। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা বুঝে না বুঝেই অহংকার করি। যা কাম্য নয়। কারণ অহংকাই পতনের মূল।

আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, যারা আমার ইবাদত নিয়ে অহংকার করে তারা শিগগিরই অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা মুমিন (৪০), আয়াত ৬০)।

অহংকারবশত ইবলিশ আল্লাহর আদেশ অমান্য করল এবং আদমকে সেজদা না করার দরুন জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হলো।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

কানাডায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুমিনুল হক : কানাডার টরেন্টোতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। Read more

ইসরায়েলকে ধরাশায়ী ইতালির

অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বকাপ বাছাইয় পর্বের ম্যাচে ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার Read more

রেলওয়ে স্টেশনে এসি বিস্ফোরণে সিগন্যাল অচল…

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন সিগন্যাল কেবিনে এয়ারকন্ডিশন Read more

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

ধর্ম, 30 June 2025, 171 Views,

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান :
ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর দিল মানুষের আয়ত্তের বাইরে। মানুষের অন্তরে বিভিন্ন খেয়াল আসতে পারে, তাতে করার কিছুই নেই। কিন্তু বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছা করলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। চোখ আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে দেখতে পারি, না-ও দেখতে পারি। হাত আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে ধরতে পারি, না-ও ধরতে পারি। চোখ যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণে তাই নামাজের সময় সিজদার স্থানে চোখ রাখতে বলা হয়েছে। রুকু করার সময় চোখকে দুপায়ের ওপর রাখতে বলা হয়েছে। বসা অবস্থায় দৃষ্টি কোলের দিকে থাকবে। সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধ পর্যন্ত যাবে। বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক রাখার বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু নামাজের সময় অন্তরে অনেক খেয়াল আসে, তা ফেরানোর মতো ক্ষমতা মানুষের নেই। তাই নামাজের মধ্যে অন্য কোনো খেয়াল আসতে পারবে না-শরিয়ত এমন কোনো শর্তারোপ করেনি। শরিয়ত বলেছে, দিলের মধ্যে ইখলাস তৈরি কর। নম্রতা ও একাগ্রতা আনয়ন কর। যেহেতু অন্তরের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই নামাজে ইখলাস ও খুশু-খুজুকে ফরজ করা হয়নি। কারণ এটা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহপাক মানুষের ওপর ক্ষমতাবহির্ভূত কোনো হুকুম চাপিয়ে দেন না।’ তবে দিলের মধ্যে খুশু-খুজু তৈরি করার নির্দেশ আল্লাহপাক দিয়েছেন এবং এর নিয়ম-পদ্ধতিও তিনি বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তথা হাত-পা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কর! তাহলে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তোমার অন্তরে ইখলাস ও তাওয়ায়ু সৃষ্টি হবে। সুন্নত তরিকায় আমল করলে প্রিয়তম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হবেন। অন্তরে খুশু-খুজু সৃষ্টি করার জন্য সুন্নত মোতাবেক আমল করা জরুরি। খুশু-খুজু ও একাগ্রতা মানুষের নিয়ন্ত্রণে হলে ইসলামি শরিয়তে এটাকে ফরজ করা হতো। কারণ খুশু-খুজু ও ইখলাস হচ্ছে নামাজের আত্মা। কিন্তু যেহেতু ইখলাস ও খুশু-খুজু মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাই এটাকে ফরজ করা হয়নি। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত ‘কিমিয়ায়ে সায়াদাত’ ও ‘ইহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দীনে’ লিখেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। কারণ খুশু-খুজু মানুষের দিলের ব্যাপার। তাই খুশু-খুজুকে যদি ফরজ বলা হয়, তাহলে খুশু-খুজু না এলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব আমি আমার আগের কথা প্রত্যাহার করলাম। এখন আমি বলছি, নামাজে খুশু-খুজু হচ্ছে মুস্তাহাব।
নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হয়, কিন্তু নিয়ত কী জিনিস, তা অনেকেই জানে না। ফলে তারা পেরেশানি ভোগ করে থাকে। অনেকে আরবিতে সশব্দে নিয়ত করে। অথচ আরবিতে নিয়ত করার সময় তাদের উচ্চারিত আরবি বাক্য ভুল হয়ে যায়। এ ছাড়া নিয়ত হলো দিলের ব্যাপার; মুখের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন জুমার নামাজ পড়তে এসে নিয়ত করলাম, আমি ইমাম সাহেবের পেছনে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার-এতে ফজরের ফরজ আদায় হবে না, জুমার নামাজই আদায় হবে। মুখে যা নিয়ত করেছি, তা হবে না। এমনিভাবে কেউ যদি রমজান মাসে নফল রোজার নিয়ত করে, তাহলেও রমজানের ফরজ রোজা আদায় হবে। নিয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু তা আদায় করা অত্যন্ত সহজ। শুধু মনে মনে খেয়াল করাই যথেষ্ট। সেখানে উচ্চারণের কোনো প্রশ্ন নেই। তবে যদি অন্তরের নিয়তের সঙ্গে মুখের উচ্চারণও সহিহ হয়, তাহলে খুব ভালো। এ ছাড়া মুক্তাদি যদি এ নিয়ত করে যে ইমাম সাহেব যে নামাজ আদায় করছেন, আমিও সেই নামাজ আদায় করছি, তবু তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
কোনো কোনো চটি বইয়ের মধ্যে লেখা আছে নামাজে আরবিতে নিয়ত করা বেদাত। কারণ কিছু লোক মনে করেন যে আরবিতে নিয়ত না করলে নামাজ আদায় হবে না। এ কথাটি বিভ্রান্তিকর। আসল মাসয়ালা হলো কেউ যদি কোনো মুস্তাহাব আমলকে ওয়াজিব মনে করে কিংবা ওয়াজিবকে ফরজ মনে করে, তাহলে সেটা করা নিষেধ। এতে সমাজের মধ্যে মাসয়ালার পজিশন নষ্ট হয়ে যায়। এসব ভুলভ্রান্তির মূল কারণ হলো মাসয়ালা সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকা। আমাদের অবস্থা এই যে ঈদ কিংবা জানাজায় ইমাম সাহেব যদি নামাজের নিয়ত বলে দেন, তবে তো ভালো, আর যদি নিয়ত না বলে দেন, তো মুসল্লিদের হইচই ও সমালোচনা করতে শোনা যায় যে হুজুর আরবিতে নামাজের নিয়তটিও বলে দিলেন না। কারও যদি আগে থেকে নিয়ত মুখস্থ থাকে, তাহলে তো সহজেই মুখস্থ বলতে পারবে। আর যদি আগ থেকে মুখস্থ না থাকে, তাহলে কি এ সময়ে ইমাম সাহেবের মুখে একবার শুনে নিয়ত মুখস্থ করা সম্ভব? এ কথা সত্য যে মুসলমান হিসেবে আরবি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক। তবে উচিত হলো সময় সুযোগে আরবি নিয়ত মুখস্থ করে নেওয়া। শুধু আরবি মুখস্থ নয়, বরং অর্থসহ শিখে নেওয়া উচিত।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

banner

পরপর ৩ জুমা না আদায় করলে যা হয়

ধর্ম, 24 April 2025, 241 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
জুমার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। এই দিনকে আল্লাহ তাআলা সপ্তাহের অন্য সব দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা)

banner

হাদিসে রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮)

হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে এবং নিজেও ভালোভাবে গোসল করবে, ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে মসজিদে হেঁটে আসবে, ইমামের কাছাকাছি বসবে, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং কোনো অনর্থক কাজ করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছর নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ ৩৪৫)

তবে ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ আদায় না করলে রয়েছে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি। রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পরপর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি ১০৫২; তিরমিজি ৫০২, মুসলিম ১৯৯৯)

একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল।’ (মুসলিম)

তবে কিছু শ্রেণির লোক জুমার নামাজে উপস্থিত না হলে তারা দোষী নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ: ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ)

নামাজ প্রসঙ্গে হজরত উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের।’ (বায়হাকি ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না, সে কাফের।’ (বায়হাকি ৬২৯১)

কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন দলিল থেকে বোঝা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করা বড় কুফরি এবং ইসলাম নষ্টকারী কাজ। তাই জুমা ও প্রতিদিনের ফরজ নামাজ যথাসময়ে আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।

৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র মিলাদুন্নবী

জাতীয়, ধর্ম, 24 August 2025, 127 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের আকাশে আজ ২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এজন্য আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। তাই আগামী ৬ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) পালিত হবে পবিত্র মিলাদুন্নবী (স.)।

banner

২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র শাব্দিক অর্থ- মহানবীর (স.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হয়রত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই রাসুলে করীম (স.) ইন্তেকালও করেন। সেই হিসেবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশে মিলাদুন্নবীর (স.) দিন সাধারণ ছুটি।

মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। আরবের মরুপ্রান্তরে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার শুরু করেন তিনি। তার আবির্ভাব এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম ধর্ম প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই মহানবী (স.) মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলমানরা পালন করে থাকেন।

মিলাদুন্নবীর (স.) দিনে মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন যিনি

ধর্ম, 23 December 2024, 684 Views,

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
রাসুলুল্লাহ (সা.) সবার আগে জান্নাতের দরজা খুলবেন। আনাস (রা.) বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)।

banner

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য বলব। তখন দ্বাররক্ষী বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আপনার সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার আগে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭)

জান্নাতের আটটি দরজা হবে। সেগুলো হলো-
এক. বাবুস আস-সালাহ (নামাজের দরজা), যারা আন্তরিকভাবে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম করা হয়েছে বাবুস সালাহ বা নামাজের দরজা।

দুই. বাবুল জিহাদ (জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুল জিহাদ বা জিহাদের দরজা।

তিন. বাবুর-রাইয়ান। যারা মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা রাখবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুর রাইয়ান।

চার. বাবুস-সদকা (দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থ-সম্পদ দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুস সদকা।

পাঁচ. বাবুল আইমান, কেউ কেউ এই দরজাকে বাবুস শাফাআতও বলেছেন। কিয়ামতের দিন যারা নবীজির সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৬৮)।

ছয়. বাবুল কাজিমিনাল গইজা ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগ দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এই দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে। (উমদাতুল কারি : ১৬/২৫৪)।

সাত. বাবুর-রাদ্বিন (সন্তুষ্টদের দরজা), এই দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবু লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহও বলা হয়। যারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮১)।

আট. বাবুত তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তার সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে। এটি তাওবাকারীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে। (জামিউস সগির, হাদিস : ৭৩২০)।

ঘরে প্রবেশের দোয়া

ধর্ম, 15 August 2025, 118 Views,

ধর্ম ডেস্ক:
ঘর থেকে বের হওয়ার যেমন দোয়া রয়েছে, তেমনি ঘরে প্রবেশকালেও বিশেষ দোয়া পাঠ করতে বলেছেন নবীজি। দোয়াতে আল্লাহর স্মরণ, তাঁর ওপর ভরসা ও কল্যাণ কামনা করা হয় এবং এতে করে শয়তানের অনিষ্ট থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।

banner

দোয়াটি হলো— اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ، وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ، بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা মাওলাজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রব্বিনা তাওক্কালনা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উত্তম প্রবেশ ও উত্তম বের হওয়া প্রার্থনা করছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। এবং আমাদের রব আল্লাহর ওপর ভরসা করছি।’ এছাড়া সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেও বলা হয়েছে হাদিসে। (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৬)মূলত আল্লাহ তাআলাকে সবসময় স্মরণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, ‘তোমাদের রাত যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা হলো না।’ কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল।’ (মুসলিম: ২০১৮)