চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ৭নং তালশহর পূর্ব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা সেন্টার (ইউডিসি)-এর অপারেটর মোজাম্মেল হক বদরুলকে অপসারণের দাবিতে আজ ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক বদরুল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাইমন আহমেদ, শরীফ, জিয়াউল, জুনায়েদ, বাবু, সাব্বির, ফারুক, ওমর, জুবায়ের, মোবাশ্বের, মো: শফিকুল ইসলাম, তানভীর, বাইজিদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম ও মৃত্যুসনদের জন্য অতিরিক্ত ফি আদায়, একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার ভুল জন্ম ও মৃত্যুসনদ প্রদান, সনদ সংশোধনের নামে একাধিকবার অর্থ আদায়, ইউনিয়ন পরিষদে আসা সেবাপ্রত্যাশীদের সাথে খারাপ আচরণ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ। ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে মোজাম্মেল হক বদরুলকে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি নেয়া হবে।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম- খলিলুর রহমান, মায়ের নাম- আমেনা খাতুন কিন্তু জন্ম নিবন্ধনে ইংরেজি অংশে বাবার নাম আসে-AMENA এবং মায়ের নাম-KHALIL লিপিবদ্ধ হয়। এক বছর যাবৎ জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ঘুরেও এ কোন সুরাহা করতে পারেনি। সরকারি বিভিন্ন কাজ করতে পারেনি।
আরেক জন অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ সালে তার ছেলেন নাম ভুল আসে পরে এটি ২০১৭ সালে সংশোধন করা হয় পরবর্তীতে কিভাবে সার্ভার থেকে অটোমেটিক নাম পরিবর্তন হয়ে যায় যা বোধগম্য নয়।
মানববন্ধনে আসা একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, উদ্যোক্তা মোজাম্মেল ইচ্ছা করেই এই কর্মকান্ড করে থাকে কারণ সংশোধন করতে গেলে অনলাইন করতে হয় তখন তাকে অনলাইনের টাকা দিতে হয়। আবার সরকারি ফি তাও দিতে হয়। পরে এর বাইরেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
মানববন্ধন শেষে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম এর কাছে তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় চেয়ারম্যান তাদেরকে ৭ দিনের সময় প্রদান করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, উদ্যোক্তা মোজাম্মেল এর জন্য তাঁর নাকি বদনাম হয় কারণ সে রাতেও নাকি অফিস করে। রাতে কিসের জন্য অফিস করতে হয়। এছাড়া অফিসও ঠিকভাবে করে না।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা আজ ৮ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোঃ কামরুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারি পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক মোঃ আরজু, জেলা হোটেল এন্ড রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শাহআলম, সাংবাদিক নিয়াজ মোঃ খান বিটু, শিহাব উদ্দিন বিপু, এনজিও নেতা এস.এম শাহীন, সাংবাদিক পিযুষ কান্তি আচার্য, মোশাররফ হোসেন বেলাল, মোজাম্মেল চৌধুরী, মোঃ মনির হোসেন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ আতিকুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হোটেল রেস্তোরার কিচেনে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
সভায় বক্তারা শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরায় ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, বরফকল ও আইসক্রীম ফ্যাক্টরীগুলোতে নিয়মিত অভিযান, শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে পশু জবাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত কসাইখানা ও গবাদি পশু জবাইয়ের আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার দাবি জানান।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, সু-স্বাস্থ্যের জন্যই নিরাপদ খাদ্য দরকার। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে হোটেল রেস্তোরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, শিশু খাদ্যের বিষয়ে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
গৌরব ও অহংকারের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির মহান বিজয় দিবস। বিজয় দিবসে জাতি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, জীবন উৎসর্গকারী ও যুদ্ধাহত বীর সন্তানদের, যাঁদের ত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্খিত বিজয়; জাতি অর্জন করেছে লাল সবুজ পতাকা এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে মহান বিজয় দিবস-২০২২ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আজ প্রত্যুষে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফারুকী পার্কে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ফারুকী পার্কস্থ স্মৃতিসৌধে সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিভাগ/সংস্থা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনতা কর্তৃক স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পন, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্ব শাসিত এবং বেসরকারি ভবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে জেলা প্রশাসন। এ সময় কুচকাওয়াজ ও অভিবাদন গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় একই মাঠে মোরগ লড়াই ও বেলা ১১টায় কারাতে প্রতিযোগিতা, একই মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদেরকে সংবর্ধনা প্রদান এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বেলা ১১টায়। বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মূক ও বধির নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি শিশু পরিবারের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জেলার সকল মসজিদে বাদ জোহর জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সকল সরকারি হাসপাতাল, শিশু সদন, জেলখানা, এতিমখানা ও শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিকেল আড়াটায় ব্রাহ্মণবড়িয়া নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন একাদশ বনাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ও মুক্তিযোদ্ধা একাদশ দলের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায় সরকারি মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ করা হবে। বিকেল সাড়ে ৫টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।
মহান এ দিবসের সকল অনুষ্ঠানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশপ্রেমি মানুষের স্ববান্ধব উপস্থিতি কামনা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম।
অনুরূপ কর্মসূচি জেলার সকল উপজেলায় পালিত হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট নিরসন ও ফুটপাতের হকার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ।
আজ ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ও ছাত্রদের নিয়ে পুলিশের এ যৌথ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা পুলিশ সুপার মো: জাবেদুর রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক মো: রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন, সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো: মোজাফ্ফর হোসেন, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্তসহ প্রশাসন ও পৌর কর্মচারীরা।
অভিযানে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যেসব লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রবেশ করেছে এগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের দু’পাশে যেসব ভ্রাম্যমাণ হকার রয়েছে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক মো: রুহুল আমিন বলেন, যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অচিরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর যানজট মুক্ত করা হবে।
অভিযান শেষে জেলা পুলিশ সুপার মো: জাবেদুর রহমান বলেন, যানজট মুক্ত শহর গড়তে অবাধে অবৈধ রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না। অবৈধ যানচলাচলের সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধ সীমানা প্রাচীর, টিনের ঘর ও চার চালা টিনের ঘর উচ্ছেদ করে প্রায় তিন শতক খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মোশারফ হোসাইন সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের সেন্দ গ্রামে এই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার সুলতানপুর ও রামরাইল ইউনিয়নের অধীনে সেন্দ মৌজায় রামরাইল ইউনিয়নের শিলাউর গ্রামের সৈয়দ জাকির হোসেন বাহারের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা রয়েছে। জাকির হোসেনের জায়গার উত্তর পাশে রয়েছে সরকারি রাস্তা। সরকারি সার্ভেয়ার নিয়োগ করে সরকারি রাস্তার সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জাকির হোসেন বাহার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। ওই বছরের ৮ মার্চ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সার্ভেয়ারকে নিয়ে মাপঝোঁক করে সরকারি রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করেন।
সে সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ও রাস্তার সীমানার উপর ছয়টি পিলার স্থাপন করে জাকিরকে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু সেন্দ গ্রামের চার ভাই সেলিম মিয়া, মনির মিয়া, খোকন মিয়া ও মামুন মিয়া নিষ্পত্তিকৃত সীমানা নির্ধারণ লঙ্ঘণ করে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে বরাদ্দ নিয়ে সরকারি রাস্তাটি বিভাজন করেন। পরে তারা জাকিরের জায়গা দখলের পায়তাঁরা শুরু করেন। এক পর্যায়ের তারা সরকারী রাস্তা দখল করে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করা শুরু করেন। ২০২০ সালের ১২ জুলাই জাকির হোসেন বাহার নকশা অনুযায়ি সরকারি রাস্তাসহ তার ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে কাছে লিখিত আবেদন করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের সেন্দ গ্রামের চার ভাই সেলিম মিয়া, মনির মিয়া, খোকন মিয়া ও মামুন মিয়া সেন্দ মৌজার ১ নং বিএস খাস খতিয়ানভুক্ত ৫৬৩২ দাগে ২ দশমিক ৯৬ শতক খাস জায়গা অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন। সেখানে তারা অবৈধভাবে দুটি সীমানা প্রাচীর, একটি ভিটি পাকা টিনের ঘর ও একটি চার চালা টিনের ঘর নির্মাণ করে বসবসা করে আসছিলেন।
২০২০ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের ( রাজস্ব) আদালতের এক উচ্ছেদ মামলার রায়ের নির্দেশনা এবং জেলা প্রশাসসক কার্যালয়ের এক চিঠি অনুযায়ী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোশারফ হোসাইন অবৈধভাবে দখলদার চার ভাই সেলিম, মনির, খোকন ও মামুনকে প্রথমে গত ১০ এপ্রিল পরে গত ৫ জুনের মধ্যে ২ দশমিক ৯৬ শতক খাস জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও তারা কর্ণপাত না করায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোশারফ হোসাইন সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের চার ভাইয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এসময় দুটি সীমানা প্রাচীর, একটি ভিটি পাকা টিনের ঘর ও একটি চার চালা টিনের ঘর উচ্ছেদ করে ২ দশমিক ৯৬ শতক খাস জায়গা উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা সহকারী কমিমশনার (ভূমি) মোশারফ হোসাইন জানান, অবৈধ স্থাপনাসহ দখল সরিয়ে নিতে তাদের দুই দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দখলকারীরা কোনো কর্ণপাত করেননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ২ দশমিক ৯৬ শতক খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতের উচ্ছেদ মামলা মূলে খাস জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উক্ত অবৈধ স্থাপনা সমূহের কারণে সেখানে সরকারি রাস্তা নির্মান করা যাচ্ছিল না।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানানা জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার। তিনি জানান, বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৩ আগস্ট বুধবার ভোর থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়। পরে তা কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটারে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আজ ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় আবারো তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ৩৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো সূত্র জানায়, আগামী দুই-তিন দিন এই অঞ্চলে ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদিপশু, পাখি, বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপারের হাজারো মানুষ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতর মাচাং বানিয়ে সারা দিনের রান্না একবারে করছেন গৃহকর্মীরা। কেউ কেউ পাশের উঁচু রাস্তার বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ আর রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু সাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলো। সবচেয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারের নারীরা। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নারীদের।
তিস্তাপারের গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, দুদিন ধরে চরাঞ্চলের প্রায় বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির কারণে সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। গরু ছাগল রাখার মতো শুকনো জায়গাটুকুও মিলছে না।
আদিতমারী মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কাচুয়া শেখ বলেন, বন্যার পানিতে ৫ দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। ত্রাণ নয়, চাই পানি যেন আর ভারত থেকে না আসে।
তিস্তা তীরের উত্তর গড্ডিমারী গ্রামের মোন্তাজ মিয়া, বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু কিংবা কোমরপানি।
পানির শোঁ শোঁ শব্দে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কে থাকি শিশু বাচ্চাদের নিয়ে, কখন কে পানিতে পড়ে যায়। নিদারুণ কষ্ট নিয়ে জীবন কাটছে আামাদের।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজারের বেশি পরিবার টানা দুদিন পানিবন্দি। তাদের তালিকা করার পাশাপাশি খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃহস্পতিবার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২ টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিস্তা ব্যারাজের নিবাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার আর দুপুর ১২ টায় পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বিতরণ শুরু করা হয়েছে। আরও কিছু শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, যাতে তারা কষ্ট না পায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।