ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

আন্তর্জাতিক, 18 December 2023, 553 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”

শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।

বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।

তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।

শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।

তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।

প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা

Leave a Reply

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

সামান্য ভোটে আটকে গেলেন তুরস্কের সুলতান

আন্তর্জাতিক, 15 May 2023, 1031 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
স্থানীয় সময় ভোর ৫ টায় দিকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ভোটের ফলে পার্লামেন্টে বড় জয় পেয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল একে পাটি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এখনো তিনি ৫০ %-এর বেশি ভোট পাননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি ৪৯.৪৪ % ভোট পেয়েছেন। অন্য দিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি পেয়েছেন প্রায় ৪৫% ভোট।

গতকাল রবিবার এশিয়া ও ইউরোপের দেশ তুরস্কে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারারাত ভোট গণনার পর দেখা যায় পার্লামেন্টের ভোটে বড় জয় পেয়েছে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল একে পার্টি ও তার জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। তবে এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কি না সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এখনো ২ % ভোট গণনা বাকী রয়েছে।

বেসরকারি প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, সংসদে ৬০০ আসনের মধ্যে পিপলস অ্যালায়েন্স জোট পেয়েছে ৩২২ আসন। এর মধ্যে এরদোয়ানের দল একে পার্টি পেয়েছে ২৬৬ সিট। এছাড়া বিরোধী নেসন্স অ্যালায়েন্স জোট পেয়েছে ২১২ সিট। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে ৬৬ সিট।

এদিকে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি ভোটের ফলাফল প্রকাশ করছে। সেখানের হিসাবে সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৯৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ ব্যালট গণনা হয়েছে। এতে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯.৪৩ শতাংশ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারুগলু পেয়েছেন ৪৪.৯৮ শতাংশ।

কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে রানঅফ বা দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে ২৮ মে। তবে এরদোয়ান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ফাইনাল রেজাল্টে তিনি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন।

প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেন, ‘প্রথম দফা ভোটে নির্বাচন শেষ হবে কি না আমরা এখনো তা জানি না।কিন্ত দেশের মানুষ ইচ্ছায় দ্বিতীয় দফায় লড়তে প্রস্তুত রয়েছি আমি।’

সাধারণত ইস্তাম্বুলে থেকে ভোটের ফল জানেন তিনি। তবে এবার ভোটের ফল প্রকাশের আগেই রাজধানী আঙ্কারায় পৌঁছে গেছেন এরদোয়ান। দলের সদরদফতের বারান্দায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাও দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় জাতীয় ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়েছি। এই নির্বাচন ও আগামী নির্বাচনেও আমরা জাতীয় ইচ্ছাকেই সম্মান জানাব।’

এদিকে ফল ঘোষণায় বিলম্বের অভিযোগ তুলেছেন কামাল কিলিচদারুগলু। তার দাবি, ভোটগণনা এতক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্ত নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণায় বিলম্ব করছে। বিশেষ করে যেসব কেন্দ্রে তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

কিলিচদারুগলু বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খুব শিগগিরই ভোটের ফল জানা যাবে। দেশের জনগণ আর বেশিক্ষণ এ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চায় না। ভোটে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিয়ে কেউ শঙ্কিত হবেন না।’

এবারের নির্বাচনে তুরস্কের নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৪১ লাখ। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫ কোটি ৩৯ লাখের বেশি মানুষ ভোট দিয়েছে। মোট হিসাবে এটি ৮৮.৮৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে গ্রহণযোগ্য ভোট পড়েছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি। ব্যালট বক্স ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার ২১৪টি।

অপরদিকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ ভোট বাতিল হয়েছে। ব্যালট বক্স ছিল দুই লাখের বেশি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৮.১০ শতাংশ।

তুরস্কে নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কতটা এগিয়ে এরদোয়ান। কত ভোট পেলেন এরদোগান, এরদোয়ান। জিততে পারবেন কি এরদোয়ান। তুর্কি ভোট। তুরস্কে নির্বাচনের ফলাফল। সূত্র: আনাদুলু, টিআরটি

রাশিয়ার বিরোধী নেতা নাভালনির কারাগারে মৃত্যু

আন্তর্জাতিক, 16 February 2024, 416 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
গত এক দশকে রাশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিরোধী নেতা আলেক্সাই নাভালনি আর্কটিক সার্কেলের ভেতরে কারাগারে মারা গেছেন। জেল পরিষেবার বরাত দিয়ে বিবিসি আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

নাভালনিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক হিসেবে দেখা হতো। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবেচিত অভিযোগে তিনি ১৯ বছরের জেলের সাজা খাটছিলেন।

তাঁকে গত বছরের শেষের দিকে আর্কটিক পেনাল কলোনিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যাকে বলা হয় রাশিয়ার সবচেয়ে কঠিন জেলগুলোর মধ্যে একটি।

ইয়ামালো-নেনেটস জেলার জেল পরিষেবা এক বিবৃতিতে বলেছে, শুক্রবার হাঁটার পরে নাভালনি ‘অসুস্থ বোধ করেছিলেন’। তিনি ‘প্রায় অবিলম্বে জ্ঞান হারিয়েছিলেন’। জরুরি মেডিক্যাল টিমকে অবিলম্বে ডাকা হয়েছিল। তবে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘জরুরি চিকিৎসকরা বন্দিকে মৃত ঘোষণা করেছেন। মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা হচ্ছে।’

নাভালনির আইনজীবী লিওনিড সলোভিভ রুশ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি এখন কোনো মন্তব্য করবেন না।

তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিওনিড ভলকভ এক্সে লিখেছেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ একটি স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছে তারা আলেক্সাই নাভালনিকে কারাগারে হত্যা করেছে। আমাদের কাছে এটি নিশ্চিত করার বা প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই যে এটা সত্য নয়।’

এদিকে জেল পরিষেবা নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া প্রতিপক্ষের সাহসকে স্বাগত জানায়। এ ছাড়া ফ্রান্স বলেছে, তিনি রুশ ‘নিপীড়ন’ প্রতিরোধে তাঁর জীবন দিয়েছেন। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর জন্য একটি বড় দায় বহন করেছে।

চেলিয়াবিনস্ক শহরে সফরে থাকা পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুধু বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কথা ‘প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়েছে’।

ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তিনি রাশিয়া থেকে আসা খবরে দুঃখিত ও বিরক্ত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, নাভালনির মৃত্যু একটি ভয়ংকর সংবাদ। তাঁর মতে, রাশিয়ার এ বিরোধী নেতা আজীবন অবিশ্বাস্য সাহস দেখিয়েছেন।

লাটভিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিজানিস কারিনস এই খবরে ‘গভীরভাবে বিচলিত’ জানিয়ে বলেছেন, নাভালনির ‘মৃত্যু সম্পূর্ণরূপে পুতিনের অপরাধমূলক সরকারের বিবেকের ওপর নির্ভর করছে’।

বিবিসির তথ্য অনুসারে, রুশ প্রেসিডেন্টের অধিকাংশ সমালোচক রাশিয়া থেকে পালিয়ে গেছেন। তবে কয়েক মাস চিকিৎসার পর আলেক্সাই নাভালনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফিরে যান। ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়া ভ্রমণের শেষে তাঁকে নোভিচক নার্ভ এজেন্ট দিয়ে বিষ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর দল তাঁকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিয়ে যেতে সফল হয়। পরে তিনি মস্কোতে ফিরলে তাঁকে অবিলম্বে হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তী ৩৭ মাসে তিনি আর কখনো জেল ত্যাগ করেননি।

নাভালনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যালট বাক্সে ভ্লাদিমির পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যুদ্ধবিরোধী প্রার্থী বরিস নাদেজদিনকে তাঁর প্রার্থিতার সমর্থনে জমা দেওয়া হাজার হাজার স্বাক্ষরের মধ্যে অনুমিত অনিয়মের কারণে নির্বাচনে দাঁড়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

ড. ইউনূসের সরকারের কাছে জাতিসংঘের যে প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 21 August 2024, 231 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে হত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

২০ আগস্ট মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন ডুজারিক। এ সময় তিনি ইউনূস সরকারের কাছে জাতিসংঘের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশে হতাহত হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস ব্রিফিংয়ে তার কাছে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ৮১৯ জন মানুষকে হত্যা ও ২৫ হাজার মানুষের আহত হওয়ার জন্য যারা দায়ী, জাতিসংঘ মহাসচিব কি তাদের বিচার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডুজারিক বলেন, হ্যাঁ।

এই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর করার আগে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতিসংঘের মহাসচিবের আন্তোনিও গুতেরেসের দেওয়া একটি চিঠির বিষয়ে কথা বলেন।

আন্তোনিও গুতেরেসকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, চিঠিতে মহাসচিব বাংলাদেশে শান্তি ফেরানো এবং সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

মহাসচিব বলেছেন, জাতিসংঘ প্রত্যাশা করে যে ড. ইউনূসের সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা গ্রহণ করবে। সেখানে তরুণদের পাশাপাশি নারী, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণও বিবেচনা করা হবে।

এই মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশের সব নাগরিক, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ভরসা করছেন মহাসচিব।

লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিলেন বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী

আন্তর্জাতিক, 29 July 2024, 158 Views,

অণলাইন ডেস্ক :
এক দশক পর ভারতের লোকসভায় ফিরেছে বিরোধী দলনেতার পদ। বাজেট অধিবেশনে আজ ২৯ জুলাই সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিলেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্যে বিজেপি-শাসিত সরকারকে তুলোধুনো করেছেন রাহুল।

রাহুল বলেন, ‌‘হাজার হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রে ছয় জন মিলে অভিমন্যুকে চক্রব্যূহে ফাঁসিয়ে হত্যা করেছিলেন। আমিও একটু পড়াশোনা করে দেখেছি, চক্রব্যূহকে পদ্মব্যূহও বলা হয়। পদ্মের মতো সামরিক গঠনের জন্য।”

এর পরই কেন্দ্রকে বিঁধে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এক নতুন চক্রব্যূহ তৈরি হয়েছে। তাও আবার পদ্ম ফুলের আকারে। যার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী বুকে পরে থাকেন। অভিমন্যুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল, যেভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছিল চক্রব্যূহে, সেটাই দেশের সঙ্গে, দেশের যুব সমাজ, কৃষক, নারী এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে করা হচ্ছে।’ রাহুলের যুক্তি, মহাভারতের চক্রব্যূহের রাশ ছিল ছয় জনের হাতে- দ্রোণাচার্য, কর্ণ, কৃপাচার্য, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা ও শকুনি। বর্তমান সময়ের যে চক্রব্যূহের কথা রাহুল বলছেন, সেখানেও ছয় জনের হাতে রাশ রয়েছে বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। রাহুলের মতে সেই ছয় জন হলেন- নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, মোহন ভাগবত, অজিত ডোভাল, আম্বানি ও আদানি।
লোকসভায় রাহুল এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি জানান স্পিকার ওম বিড়লা। বিজেপি শিবির থেকেও হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। স্পিকার রাহুলকে জানান, যারা লোকসভার সদস্য নন, তাদের নাম ব্যবহার করা যাবে না। সাংবিধানিক পদে থেকে রাহুল যাতে সংসদীয় রীতি-রেওয়াজ মেনে চলেন, সেই বার্তা দেন স্পিকার। এর পর অবশ্য আম্বানী, আদানি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে বাকি তিনটি নামের ক্ষেত্রে নিজের বক্তব্যে অবিচল থাকেন রাহুল।

লোকসভার বিরোধী দলনেতার মতে, বর্তমান কালের এই চক্রব্যূহের নেপথ্য তিনটি শক্তি কাজ করছে। রাহুলের কথায় প্রথম শক্তি হল, ‘পুঁজির উপর একচেটিয়া অধিকারের ভাবনা, যেখানে গোটা দেশের সম্পত্তির উপর দু’জনের অধিকার থাকে।’ সরাসরি কারও নাম না করলেও রাহুলের খোঁচা যে দুই শিল্পগোষ্ঠীর দিকেই ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া রাহুলের যুক্তিতে, দ্বিতীয় শক্তি হল সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং তৃতীয় শক্তি হল রাজনৈতিক নেতারা। এই তিন শক্তিই চক্রব্যূহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বলে আক্রমণ শানান লোকসভার বিরোধী দলনেতা।

এই ‘চক্রব্যূহের’ কারণে দেশবাসীর কী সমস্যা হয়েছে, সে কথাও তুলে ধরেন রাহুল। রাহুলের দাবি, যাঁরা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, তাদের উপর এই চক্রব্যূহের প্রথম কোপ পড়েছে। নোট বাতিল থেকে শুরু করে পণ্য ও পরিষেবা কর এবং ‘কর-সন্ত্রাস’-এর কথা উঠে আসে রাহুলের সোমবারের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, “দেশে যারা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, রাতে তাদের কাছে আয়কর দফতর, পণ্য ও পরিষেবা কর দফতর থেকে ফোন যায়। তারা কর-সন্ত্রাসের শিকার হন। এই কর-সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য বাজেটে কোনও উল্লেখ নেই।”

সাইক্লোন ফ্রেডির আঘাতে মালাউই লণ্ডভণ্ড : অন্তত ৯৯ জন নিহত

আন্তর্জাতিক, 14 March 2023, 1088 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউইতে সাইক্লোন ফ্রেডির আঘাতে কমপক্ষে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ মার্চ সোমবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির আঘাতে ৯৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মালাউইর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার চার্লস কালেম্বা।

কালেম্বার মতে, মালাউইয়ের বাণিজ্যিক রাজধানী ব্লানটায়ারে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আজ ১৪ মার্চ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

কালেম্বা সোমবার সন্ধ্যায় সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমরা প্রায় সাতটি কাউন্সিলে ৯৯ জনের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করেছি। এর মধ্যে ব্লানটায়ার শহরে সবচেয়ে বেশি ৮৫ জন মারা গেছেন এবং এই এক শহরেই প্রায় ১৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’

এছাড়া নিহত ও আহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সিএনএন বলছে, মালাউইয়ের সরকার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ‘দুর্যোগময় অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট লাজারাস চাকভেরা ‘ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি মালাউইয়ের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় যে ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করেছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছেন বলে সরকারি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ইতোমধ্যেই জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিচ্ছে, সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় জরুরি সহায়তা প্রদান করছে এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে।’