চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে প্রতীক বরাদ্দের পর গণসংযোগে এসে গাড়িবহর নিয়ে সড়ক পথে নির্বাচনীর এলাকার আখাউড়া থেকে ছতুরা শরীফের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পথিমধ্যে মোগড়া এলাকায় পৌঁছার পর হঠাৎ দেখেন মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এসময় আইনমন্ত্রী গাড়িবহর থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করে। ছাত্রছাত্রীরাও মন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখতে বিস্মিত হয়। এসয় মন্ত্রী শিশু সুলভ ভঙ্গিমায় হাসিমুখে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের সকলকে আসসালামু আলাইকুম। ছাত্রছাত্রীরাও সালামের উত্তরে সমস্বরে বলে ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম’। এসময় মন্ত্রী দু’হাত করজোড় করে বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের ৭ তারিখের সংসদ নির্বাচনে আমি কসবা-আখাউড়া আসনে আমি নৌকা মার্কার প্রার্থী। আমি তোমাদের কাছে ভোট ভিক্ষা চেয়ে গেলাম। যারা ভোটার হও নাই আমার জন্য দোয়া করো। এসময় উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা সম্মতি জানিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে ইনশাল্লাহ।
পরে তিনি মোগড়া বাজারে লোকজনের সাথে গণসংযোগ করেন। জনগণকে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া আহবান জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল, মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. এ. মতিন, যুবলীরে যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল প্রমুখ।
এর আগে মন্ত্রী বেলা ১২টায় ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনে এসে পৌঁছেন। এসময় ষ্টেশনে সহস্রাধিক আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীলা তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি খড়মপুর মাজার ও তারাগন দরবার শরীফ জিয়ারত করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূইয়া বলেছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছেন। এই ৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের সব কিছু বলা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রশাসন সব কিছুই এই রাষ্ট্র কাঠামোর ৩১ দফার মধ্যে আছে। তাহলে আপনারা কেন এই সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করে দেশকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাচ্ছেন।
আজ ৭ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চ ময়দানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ জহিরুল ইসলাম চৌধুরী লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সেলিম বলেন, পাশের একটি দেশ প্রতিনিয়ত আমাদের দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা প্রতিটি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিব। কারণ বিএনপি এ দেশের জনগণের যখন বিপদ আসে, জনগণের যখন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়, জনগণের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, তখনই বিএনপি জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়। ভারতীয় কোন কিছুকে আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভারতের সাথে হাসিনা সরকারের গত ১৫ বছরে যত চুক্তি হয়েছে সমস্ত চুক্তি বাতিল করতে হবে। আমরা বাংলাদেশীরা তাদের প্রভুসুলভ আচরণ কখনোই মেনে নিতে পারি না। তিনি বলেন, তারা ভয় পেতো আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। কারণ জিয়াউর রহমান কখনো ভারতের আধিপত্য মেনে নেয়নি। মেনে নিতে পারেনি বলেই তারা আমাদের নেতাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে। তাই আজকে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্মেলন থেকে আমরা বলতে চাই, এই দেশে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। এ দেশ জিয়াউর রহমানের দেশ। এই দেশ বেগম খালেদা জিয়ার দেশ। এই দেশ তারেক রহমানের দেশ। এই দেশের জনগণ কিভাবে ভালো থাকবে তার কাজ বিএনপি আগেও করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, আগামী দিনের যে নির্বাচন, সেই নির্বাচন হবে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা। এর আগে আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। নিজেদেরকে সংযমী রাখতে হবে। যে কষ্ট আপনারা করেছেন, এই কষ্ট যদি আমরা ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট না আনতে পারি, তাহলে সকল কষ্ট বৃথা যাবে।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকেই সম্মেলন স্থলে মিছিল এবং রং বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। যেসব আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন সেগুলোর একটি। এখানে জাপা তথা জোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (লাঙ্গল প্রতীক)। তবে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা জাপার প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন না। তাঁরা এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের (কলার ছড়ি প্রতীক) পক্ষে থাকবেন।
গত সোমবার রাতে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের একটি হোটেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাশেদের নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুগঞ্জের একটি হোটেলে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুর সভা করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁরাও জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন না। তবে তাঁরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নয়, এ নির্বাচনে কাজ করবেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জাপার বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল প্রতীক) পক্ষে। ওই সভায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়া। জিয়াউল হক মৃধা রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক মৃধা এ আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত (লাঙ্গল) হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এ আসনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাপাকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধার জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দেওয়া হয়েছিল লাঙ্গল প্রতীক। তবে সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন মঈন উদ্দিন। তিনি এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম। তিনি মাত্র ২ মাস আগে গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমে ৫০ বছর পর এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয় পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা পান ৩৭ হাজার ৭৫৮ ভোট।
জাপার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে শাহজাহান আলমকে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রত্যাহার করে নিলে লাঙ্গলের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া হন জোটের প্রার্থী। তবে শুরু থেকেই তাঁকে মেনে নিচ্ছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং জাপার একটি অংশ।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সাবেক সদস্য জয়নাল উদ্দিন, অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, পাকশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চুন্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হাবিবুর রহমান, পানিশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হাসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসেন মিয়া, বাবুল হাসেন প্রমুখ।
আবু তালেব বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বর জোটের প্রার্থীর (লাঙ্গল) জন্য আমাদের নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে লাঙ্গল প্রতীক প্রার্থীর শ্বশুরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের দ্বন্দ্ব শেষ হচ্ছে না। তাঁদের বিরোধের কারণে আমরা জামাই-শ্বশুর কারও পক্ষেই থাকতে পারছি না। এ ছাড়া আমরা ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কেন্দ্র বা জেলা থেকে কোনো নির্দেশনা আসে কি না। এমনকি উপজেলা থেকেও কোনো নির্দেশনা পাচ্ছিলাম না। ২৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা কলার ছড়ির পক্ষে কাজ শুরু করি। এরপর ২৮ ডিসেম্বর উপজেলার তিন নেতা আমাদের বলেন ঈগলের নির্বাচন করার জন্য। তাঁরা আমাদের ওপরের নির্দেশ আছে বলে জানান। আমরা তখন তাঁদের লিখিত নির্দেশনা দেখাতে বলেছি। তাঁরা তখন মৌখিক নির্দেশনার কথা বলেন। আমরা বলেছি, চারটি ইউনিয়নের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে কলার ছড়ির পক্ষে নেমে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। আমাদের এখন ঘোষণা হচ্ছে, আমরা কলার ছড়ির নির্বাচন চালিয়ে যাব।’
আবদুর রাশেদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের পক্ষে আছি। দলের নেতা-কর্মী এবং এলাকার লোকজন তাঁকে নিয়েই আছেন।’
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া স্থলবন্দরে গত দুই বছর ধরে গুদমে পড়ে থেকে পচে নষ্ট হয়ে গেছে ভারত থেকে আমদানি করা ২২৮ টন গম। যা এখন পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহারের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। ফলে গমের আমদানিমূল্য বাবদ ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৮০ লাখ টাকা। দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পরও আমদানিকারক গমগুলো ছাড়াতে আগ্রহী না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় গমগুলো ধ্বংসকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। যদিও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দাবি, শুল্ক কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কারণেই নির্ধারিত সময়ে গমগুলো খালাস করা যায়নি।
সংশ্লষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে প্রথমবারের মতো আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি শুরু হয়। মূলত ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকায় অনুমোদিত পণ্য আমদানি করে ভালো মুনাফা করতে না পারায় বন্দর দিয়ে কম পণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা।
তবে, শুল্কমুক্ত হওয়ায় ২০২১ সালের আগস্ট থেকে গম আমদানির মাধ্যমেই সচল ছিল আমদানি বাণিজ্য। যদিও ২০২২ সালের মে মাসে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। তবে নিষেধাজ্ঞার পরও কয়েক মাস পর্যন্ত পূর্বের খোলা এলসির গমগুলো আমদানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮৮ হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন গম আমদানি হয়।
২০২২ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টন গম আমদানি করে চট্টগ্রামের আলম ট্রেডার্স। প্রতিটন গমের আমদানি মূল্য ছিল ৩২৫ থেকে ৩৫০ মার্কিন ডলার। বাজারে চাহিদা থাকায় আমদানির পরপরই গমগুলো খালাস করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তবে ওই বছরের জুনে ভারতের ভারী বর্ষণের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আগস্ট থেকে আবারও বন্দরে আসতে থাকে আটকে পড়া গমের চালান।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ভালো গমের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজা গমও পাঠায়। যার পরিমাণ প্রায় ২২৮ টন। তাই ভালো গমগুলো প্রথমে খালাস করে পরবর্তীতে ভেজা গমগুলো ছাড়াতে গেলে আটকে দেয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ। তাদের গড়িমসির কারণে নির্ধারিত সময়ে খালাস না করতে পারায় দীর্ঘসময় গুদামে পড়ে নষ্ট হতে থাকে গমগুলো। এসব গমে পোকা ধরেছে এবং পচে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আলম ট্রেডার্সের আখাউড়া স্থলবন্দর প্রতিনিধি মো. আক্তার হোসেন বলেন, গমগুলো ভেজা হওয়ায় রফতানিকারকের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুল্ক কর্তৃপক্ষ ছাড় দিব-দিচ্ছি করতে করতে গমগুলো আর নির্ধারিত সময়ে খালাস করা যায়নি। ফলশ্রুতিতে অবহেলায় গুদামে পড়ে থেকেই সবগুলো গম পচে নষ্ট হয়েগেছে। এগুলো এখন আর ছাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহারের উপযুক্ত নেই গমগুলো।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে গমগুলো গুদামে ফেলে রাখায় বিপাকে পড়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। গুদাম ভাড়া বাবদ পাওনা হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। যা আর আদায়ের কোনো সম্ভাবনাও দেখছে না কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গুদামে অন্য কোনো পণ্যও রাখা যাচ্ছে না। তবে গুদাম খালি করার লক্ষ্যে গমগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সবগুলো গমে পোকা ধরেছে এবং দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। তবে আমদানিকারক গমগুলো আর ছাড়াতে আগ্রহী নয়। ফলে গুদামও খালি করা যাচ্ছে না। এতে করে বন্দর কর্তৃপক্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বন্দরের বিদ্যমান সড়কটি চারলেন উন্নীতকরণ কাজের জন্য গুদামটি ভাঙা পড়বে। তাই দ্রুত গুদাম খালি করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ইমরান হোসেন বলেন, গমগুলো ভেজা এবং নিম্নমানের ছিল। তাই আমদানি নীতিবর্হিভূত হওয়ায় তখন ছাড় দেওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আমদানিকারককে চিঠি দেওয়া হলেও গমগুলো খালাসে আগ্রহী নয় বলে জানায়। গমগুলো পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী কিনা- সেটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষার রিপোর্টে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করায় আবার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। নতুন রিপোর্ট এলেই গমগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হবে।