ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ত্রিমুখী লড়াই

আশুগঞ্জ, সরাইল, 20 December 2023, 864 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল–আশুগঞ্জ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন জামাতা ও শ্বশুর। তবে এ আসনে ভোটারদের মধ্যে আলোচনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঞা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের নাম বেশি চাউর হচ্ছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে জাপার প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঞা ও তাঁর শ্বশুর স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল) নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নজর কাড়ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাঁরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

এখানকার প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি), জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঞা, তাঁর শ্বশুর জাপার দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির (রওশন) সহসভাপতি জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল প্রতীক), সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসানাত আমিনী ও বিএনপির দলছুট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কদ্দুছ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন। সমঝোতার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলমকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, রেজাউল ইসলাম ভূঞা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। একই আসনে তাঁর শ্বশুর সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তখন তাঁরা একে অপরের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান। রেজাউল তখন মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন। সে সময় ভোটের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন রেজাউল। তবে শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা সিংহ প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। গত ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনেও জিয়াউল হক অংশ নিয়েছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বর্তমানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে ৩৯ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। কোনো কোনো নেতা-কর্মীর ভাষ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ও জনপ্রিয়তার কারণে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মঈন উদ্দিন।

রেজাউল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল সারা দেশে ২৬টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে, যার একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। আশা করি, আওয়ামী লীগের সভাপতির আদেশ এখানে পালিত হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে হতাশ করবেন না।’

জাপার সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘কে নির্বাচন করল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমি এ জনপদে দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নির্বাচন করব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে যেতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর কোনো চাপ নেই।’

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের এজিএম গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী Read more

একজন শিক্ষকও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ায়নি…

চলারপথে রিপোর্ট : ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, Read more

সন্ধ্যা রাতে নেশাসক্তদের আড্ডা, দেয়াল ভেঙ্গে…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতি চর্চার প্রধান অঙ্গন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ Read more
ফাইল ছবি

চিকিৎসা শেষে শেষে কাজে ফিরেছেন ড.…

অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Read more

কবির কলম এর ১৫ বছর পূর্তিতে…

চলারপথে রিপোর্ট : সাহিত্য সংগঠন কবির কলম এর ১৫ বছর Read more

সাংবাদিক আলতাফ হোসেন চৌধুরী স্মরণে দোয়া…

চলারপথে রিপোর্ট : জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী Read more

বিজয়নগরে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে পুরস্কার…

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান (কলেজ) নির্বাচিত Read more

জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ৯ ঘণ্টা পর…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুতের কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে দীর্ঘ Read more

ঈদুল ফিতরে ৫ দিন, ঈদুল আযহায়…

অনলাইন ডেস্ক : আগামী বছরের (২০২৫ সাল) সরকারি ছুটির তালিকা Read more

৩০ লাখ টাকা করে পাবে ছাত্র…

অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য Read more
ফাইল ছবি

২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক : ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন করেছে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ড বিষয়ক মহড়া…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দূর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের Read more

সরাইলে মিনি ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত

বিনোদন, সরাইল, 7 July 2024, 359 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামে- বুড্ডা মৃধা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিনি ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ আজ ৭ জুলাই রবিবার বিকেলে বুড্ডা মৃধাবাড়ি সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, দৈনিক ফ্রনটিয়ার পত্রিকার সম্পাদক, এ এম টিভি বাংলা ও এ মালেক গ্রুপের চেয়ারম্যান এই সময়ের মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আব্দুল মালেক।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মনসুর আহমেদ।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আমজাদ মৃধা, মো: অলি আহাদ মৃধা মেম্বার, মো: সোহাগ মেম্বার, মো: মোহাম্মদ আলী, ব্যবসায়ী মো: বকুল মেম্বার, মো: আহাদ চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মো: সাদেক মিয়া, মো: বিল্লাল মিয়া, মো: সাইকুল মিয়া, মো: আরমান মিয়া, মন্নাফ মৃধা প্রমুখ।

আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, আনিছ মৃধা, ফরিদুল ইসলাম মৃধা, বিছু মিয়া, অলি মৃধা, আলী আজ্জম মৃধা, জাহার মৃধা, রুফন মৃধা, খালেক মৃধা, হামিদ মৃধা, শামিম মিয়া, স্বপন মৃধা, জাহার আলী মিয়া, লাল মিয়া, আলী রহমান, দ্বীন ইসলাম মৃধা, আল আমিন উল্লাহ প্রমুখ। পরিচালনায় ছিলেন জীবন মৃধা, রিপন মৃধা, জুম্মান মৃধা, রঙিণ চন্দ্র দাস, কানু চন্দ্র দাস, শহিদ মিয়া, আবু উল্লাহ, হারুনুর রশিদ মাষ্টার,তারা মিয়া, শিল্প চন্দ্র দাস, স্বপন চন্দ্র দাস, নান্টু চন্দ্র দাস, নারু চন্দ্র দাস, নুরু মিয়া প্রমুখ।

খেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করেন মো: হানিফ মিয়া।

ফুটবল খেলায় বুড্ডা একাদশ বনাম শাহবাজপুর টাইগার বয়েস ক্লাব অংশগ্রহন করে। খেলায় ২-১ গোলের ব্যবধানে শাহবাজপুর টাইগার বয়েস ক্লাব জয়লাভ করেন। খেলা শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আব্দুল মালেক অন্যান্য অতিথিদেরকে সাথে নিয়ে বিজয়ী দল ও অন্যান্য খেলোয়ারদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ করেন।

এসময় প্রধান অতিথি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের যুবসমাজকে সুস্থ রাখতে হলে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যারা সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজে আছি, আমাদের উচিৎ খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করা। তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তিনি অত্র এলাকায় শিক্ষা ও খেলাধুলার প্রসারে তাঁর সকল প্রকার সহযোগিতার কথা পূণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার এসব খেলাধুলা আমাদেরকে নির্মল আনন্দ দেয়। যুবসমাজকে মাদকমুক্ত করতে খেলাধুলার পরিমাণ বাড়াতে হবে। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে হাজার হাজার দর্শক এই ফুটবল খেলাটি উপভোগ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং রেডক্রিসেন্ট ইউনিট সেক্রেটারিকে সংবর্ধনা

আশুগঞ্জ, 2 July 2024, 131 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান মোঃ বিল্লাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মোঃ শাহজাদা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিটের সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ায় সংবর্ধনা প্রদান করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ আশুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি। ২ জুলাই জেলা পরিষদ মিলনায়তনে তাদেরকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ আশুগঞ্জ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইঞ্জিঃ আব্দুর রহিম, সহ-সভাপতি মোঃ ইস্কান্দার মিয়া, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, প্রচার সম্পাদক আব্দুল করিম মাস্টার, সদস্য মোঃ মোর্শেদুল আলম, মোঃ রফিকুল ইসলাম, সেলিম রেজা, কাজী শাহ আলম, মোঃ ইদ্রিস মিয়া, আরএমপি জাকির হোসেন, হাসান সাব্বির প্রমুখ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ বিল্লাল মিয়া ও রেড ক্রিসেন্ট সেক্রেটারী মোঃ শাহজাদা। পরিশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ আশুগঞ্জ কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ বিল্লাল মিয়া ও রেড ক্রিসেন্ট সেক্রেটারী মোঃ শাহজাদাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন : শিক্ষা ও সম্পদে সাত্তার, মামলায় এগিয়ে আসিফ

আশুগঞ্জ, সরাইল, 23 January 2023, 1661 Views,

বিশেষ প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি । নির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে টাকা ও শিক্ষায় আবদুস সাত্তার এবং মামলার দিক থেকে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ। চার বছরে সাত্তারের নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের মধ্যে আবদুস সাত্তার ছাড়া বাকি তিন প্রার্থী আগে কখনো সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চার বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় সাত্তার জেলা শহরের একতলা পাকা ভবনের মূল্য ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবারের হলফনামায় তিনি একই ভবনের মূল্য উল্লেখ করেছেন পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরাইলে তাঁর ২৭ কানি (৩০ শতকে এক কানি) জমির অর্জনকালীন দাম ২৭ হাজার ও বিয়েতে উপহার পাওয়া ৪০ ভরি সোনার দাম ৪০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি।

হলফনামা অনুযায়ী, দু’জন প্রার্থী উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে সাত্তার স্নাতকোত্তর ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল হামিদ এলএলবি পাস। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ উচ্চমাধ্যমিক ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম স্বশিক্ষিত।

প্রার্থীদের হলফনামায় দেখা গেছে, সাত্তারের পেশা আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১০ সালে মামলা হলেও ২০২১ সালে তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে তাঁর কাছে নগদ ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫২ টাকা আছে। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর কাছে নগদ ছিল ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে তাঁর নগদ টাকা বেড়েছে ৭০ লাখ ২০ হাজার ৪০৮ টাকা।

গত নির্বাচনের সময় সাত্তারের দুটি ব্যাংকে জমা ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকে জমা আছে ১৮ হাজার ৯২২ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে ব্যাংকে জমার পরিমাণ কমেছে। এবারের হলফনামায় গাড়ির জায়গায় তিনি ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করলেও গতবারের হলফনামায় তিনি প্রায় ১৪ লাখ টাকার একটি ১৫০০ সিসির গাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় সংসদ সদস্য হিসেবে সাত্তার বাৎসরিক সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেতেন। এবার ব্যবসা থেকে কোনো আয় না দেখালেও গত নির্বাচনের সময় ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৮০৬ টাকা।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হামিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। কৃষি খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যবসা থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় পৌনে চার লাখ টাকা। আইন পেশা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা আছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। নিজের নামে সোনা আছে ৪০ ভরি ও স্ত্রীর নামে আছে ৩৭ ভরি। নিজের নামে মূলধন আছে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে আছে ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকা। তাঁর ৯০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরগাড়ি এবং সরাইলে ১০ বিঘা কৃষিজমি আছে।

আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলমান। তাঁর পেশা ব্যবসায়। তাঁর বার্ষিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৮ লাখ ৪২ হাজার ২০০ এবং ব্যবসা থেকে ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার ১২০ টাকা। তাঁর কাছে নগদ আছে ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তাঁর ১৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার, নিজের নামে ১১ লাখ টাকার সোনা এবং স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা ও ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার আসবাব আছে। আশুগঞ্জে তার ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি আছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৭৬ কোটি ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫১ টাকার তাঁর দায়দেনা আছে।

জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুলের নামে মামলা নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাঁর কাছে নগদ ২ লাখ ও ২ লাখ টাকার সোনা আছে। স্ত্রীর কাছে নগদ ২ লাখ ও ২ লাখ টাকার সোনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর নামে পৈতৃক সম্পত্তি আছে ৩০ শতক। ব্যবসার পুঁজি হিসেবে প্রায় ১৮ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আবদুস সাত্তার ভূইয়া

আশুগঞ্জ, রাজনীতি, সরাইল, 4 January 2023, 2031 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জাতীয় সংসদ ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া। গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা নির্বাচন অফিসে তিনি তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া এই আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির অন্যান্য এমপিদের সাথে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর গত রোববার রাতে (১ জানুয়ারি) বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। রোববার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। দল থেকে বহিষ্কারের পর গত ২ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে সরাইল উপজেলা বিএনপি ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া ১৯৭৯ সালে প্রথম তৎকালীন কুমিল্লা -১ (নাসিরনগর ও সরাইলের একাংশ) বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া -১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ দুটি নির্বাচনে ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া দলের মনোনয়ন পাননি। ওই আসন থেকে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াকে টেকনোক্রেট কোটায় প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

মা-বাবার ঝগড়া থামাতে থানায় শিশু

সরাইল, 29 April 2024, 247 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ছোটখাটো বিষয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া করেন বাবা-মা। ছয় বছরে শিশু সিয়াম তাদের কাছে আকুতি-মিনতি করেও ঝগড়া থামাতে পারে না। অবশেষে এ অভিযোগ দিতে থানায় হাজির হয় শিশু সিয়াম।

সিয়ামের চোখের সামনেই মাদকাসক্ত বাবা প্রায়ই তার মাকে মারধর করতেন। বিষয়গুলো সহ্য করতে না পেরে সে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে। পরে পুলিশ তাকে চেয়ারে বসিয়ে অভিযোগ শোনে। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। ডেকে আনা হয় সিয়ামের বাবাকে। তাৎক্ষণিকভাবেই মা-বাবাকে তারা আর কখনও ঝগড়া না করার অঙ্গীকার করান। এতে খুশি সিয়াম পুলিশকে হাসিমুখে বিদায় দেয়।

ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায়।

শিশু সিয়াম প্রাতবাজার নামক এলাকার জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে।

২৮ এপ্রিল রবিবার বেলা ২টার দিকে সরাইল থানায় উপস্থিত হয় সিয়াম। থানায় বসেই তার কথা শোনেন ওসি মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম। শিশু সিয়ার তার বাবা-মায়ের প্রতি অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করে। বিষয়টি সমাধানে উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে নিয়ে তার বাড়িতে যান। ডেকে পাঠান তার বাবাকে। একই সঙ্গে বাড়িতে থাকা তার মাকেও থাকতে বলেন। পরে সিয়ামের উপস্থিতিতে মা-বাবাকে আর ঝগড়া না করার অঙ্গীকার করানো হয়।

ওসি মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, দুপুরে হঠাৎ করেই শিশুটি এসে থানায় হাজির হয়। সে তার বাবা মায়ের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে ও নানা অভিযোগ করে। তার কথা শুনে পুলিশ পাঠিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। সিয়ামের বাবা মা জানিয়েছেন, তার আর কখনও ঝগড়া করবেন না। এতে তাদের সন্তানও বেশ খুশি হয়।