চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রাম। নদী ভিত্তিক গ্রাম হওয়ায় সবসময় এখানে ধরা পরে দেশী প্রজাতির মাছ। আর এই মাছ দিয়েই গ্রামটিতে উৎপাদন হয় শুঁটকি। নদীর তীরবর্তী স্থানে আট-দশ ফুট উঁচু বাঁশের মাচা বানিয়ে চলে এই শুঁটকির ব্যবসা। প্রতিবছর এখানে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এই মৌসুমে নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিক্রি কমার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর সহজশর্তে ঋণ পেলে শুঁটকি ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের এই মেঘনা পাড়ের শুঁটকি ব্যবসা শত বছরে ঐতিহ্য। এই শুঁটকি পল্লিতে বর্তমানে ২৬টি মাচা রয়েছে, যেটাকে স্থানীয় লোকজন বলেন ডাঙ্গি। তাদের দাবি, গোটা গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি ডাঙ্গি রয়েছে। এসব ডাঙ্গিতে সময়ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। ২০ আড়তদারসহ প্রায় ১৫০ জন এখানে শুঁটকির ব্যবসা করেন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। লবণযুক্ত ও লবণ ছাড়া মানভেদে কয়েক ধরনের শুঁটকি উৎপাদন হয় এই পল্লিতে।
যে-সব মাছের শুঁটকি করা হয়- পুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, ঘইন্না, টেংরা, চাপিলা, লাসু, পাঙাশ, রুই, গজার, শোল, পাবদা, কাইক্কা, পুঠা মাছ। গুণে মানে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় লালপুরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা এনে যার যার ডাঙ্গির নিচে রাখে। তারপর সেখানকার মহিলারা বসে পরে মাছ কুটা-কুটিতে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নয়, শিশু-কিশোরেরাও এসে তাদের অভিভাবককে সহযোগিতা করে। তারপর এগুলো কেটে সেই বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দেওয়া হয় শুকাতে। পরে সেই মাছগুলো কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। তারপর এগুলো সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা হয়।
শুঁটকি ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানান, তিন কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণযুক্ত ও পৌনে চার কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণ ছাড়া শুঁটকি হয়। প্রতি কেজি লবণযুক্ত পুঁটি শুঁটকির পাইকারি দাম ৬০০ টাকা ও লবণ ছাড়া প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে পুঁটি শুঁটকি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হয়। তাছাড়া শোল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাইম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গনিয়া ৮০০ টাকা, মাঝারি গনিয়া ৬০০ টাকা ও ছোট গনিয়া শুঁটকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তবে চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় উর্ধ্বমুখী মাছের দাম। তাই মানভেদে শুটকির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে জানিয়েছে সুকমল দাস।
ব্যবসায়ী তপন দাস বলেন, এ মৌসুমে মাছের দাম চড়া। তাই ব্যবসার লাভের জন্য শুটকির দামও বাড়াতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ফলে লাভের বড় অংশ তুলে দিতে হচ্ছে সমিতি ও এনজিওর হাতে।
ব্যবসায়ী লিটন চন্দ্র দাস জানান, গত ৫ বছর ধরে তিনি শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। তার ডাঙ্গিতে পুঁটি, বাইম ও চাপিলা শুকটি চাষ করেন তিনি। তবে মাছ সংকট ও অতিরিক্ত দামের কারণে উৎপাদন কমে এসেছে। আর যতটুকুই উৎপাদন হবে তা আগের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী আব্দুল কাইয়ূম খাদেম জানান, শুঁটকি পল্লির ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা রয়েছে। তারা জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা নিতে পারবে।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ও খালবিলে পানি কম থাকায় এবার মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের নাওঘাট গ্রামের ফসলি জমির মাঝখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের জমিগুলো।
বালু উত্তোলন বন্ধে আনিছুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মো. মাসুদ মিয়া নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তার মালিকাধীন জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। যার চারদিকে অনেক কৃষকের জমি রয়েছে। অনেক বার নিষেধ করার পরও তিনি কারও কথা তোয়াক্কা করছেন না। ফলে আশপাশের ফসলি জমিগুলো ভেঙ্গে বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অবৈধ ড্রেজার দ্বারা ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন নাওঘাট গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির মাঝখানে বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে খনন যন্ত্রের সাহায্যে তোলা হচ্ছে বালু। সে বালু জমানো হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বাজারের একটি খালি জায়গায়। ফলে আশপাশের অন্যান্য জমিগুলোর আইল ভাঙ্গনসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কৃষকরা দুঃচিন্তায় পড়েছেন। এর আগেও বেশ কয়েকটি ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে পুকুর বানানো হয়েছে।
বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি মাসুদ কাউকে তোয়াক্কা না করেই দিনে রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এতে কোনো কৃষকই ফসল করতে পারবে না। মাসুদ মিয় লাভবান হবেন। কারণ, তিনি পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করবেন। কিন্তু আশপাশের কোনো কৃষক লাভবান হবেন না। ড্রেজার দিয়ে অতিরিক্ত মাটি কাটার ফলে জমি গভীর হয়। ফলে অন্য জমিগুলোর পাড় ভেঙ্গে যায়। এই চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই কাজটি করছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে কৃষকদের ফসলি জমিগুলো যাতে রক্ষা করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ মিয়া বলেন, আমি এখানে পুকুর বানাব, সেজন্য বালু উত্তোলন করছি।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন বলেন, ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এভাবেই ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় (২৪) ও পঞ্চান্ন রায় (২৪) নামে দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ ১৭ নভেম্বর রোববার সকাল ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত গোপাল রায় সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের মুদ্ধতেশ্বর রায়ের ছেলে ও পঞ্চান্ন রায় একই গ্রামের হারা কুমার রায়ের ছেলে। আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ মিডিয়া উইংস থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদেও ভিত্তিতে সকালে আশুগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার সামনে অভিযান চালিয়ে একটি মিনি পিকআপভ্যান আটক করা হয়। পরে পিকআপভ্যানে তল্লাশী চালিয়ে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
চালের বস্তায় ধানের জাত, মিলগেটের মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। এমনকি প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান (জেলা ও উপজেলা) উল্লেখ করতে হবে। থাকতে হবে ওজনের তথ্যও। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে ডায়ার মিল পরিদর্শন করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) আলমগীর কবির। এ সময় অন্যান্যদের মাঝে আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিযন্ত্রক আব্দুর রউফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ তকদির হোসেন, সরাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নূর আলী, কসবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউছার সজীব, আশুগঞ্জ খাদ্য গোদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) মোহাম্মদ সোলাইমান মিয়া ও রজনীগন্ধা এ্যাগ্রোফুডের স্বত্বাধিকারী হাসান ইমরান উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) আলমগীর কবির বলেন, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্য ও পছন্দমত জাতের ধানের চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন।
এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজার মূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে খাদ্য মন্ত্রনালয় এ নির্দেশনা জারি করেছে। যা গত পহেলা বৈশাখ থেকে কার্যকর হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী চালের উৎপাদনকারী মিলমালিকদের গুদাম থেকে বাণিজ্যিক কাজে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্য, ওজন এবং ধান বা চালের জাত উল্লেখ করতে হবে। বস্তার ওপর এসব তথ্য কালি দিয়ে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে মিলগেট দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।