চলারপথে রিপোর্ট :
থানচিতে অভিযান চালিয়ে কাঠ পোড়ানোর অপরাধে এসবিএম নামের একটি ইটভাটা মালিকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ ১৫ জানুয়ারি সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের থানচি সদরের হেডম্যানপাড়া এলাকার এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেন্টু কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্বে উপজেলার থানচি হেডম্যানপাড়া এলাকার এসবিএম ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ইটভাটায় অবৈধভাবে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সেন্টু কুমার বড়ুয়া সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর অপরাধে এসবিএম ব্রিকস ফিল্ডকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভবিষ্যতে এরূপ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
অনলাইন ডেস্ক :
আজ পহেলা বৈশাখ। পাহাড় থেকে সমতল। মেঠোপথ থেকে রাজপথ। নববর্ষের আনন্দে ভাসছে সারা দেশ। আজকের দিনটি শুধুই বাঙালির। এই দিনে সে তার অস্তিত্বের জানান দেয় প্রাণে প্রাণে, উৎসবে। বিশ্বকে বলে দেয়-আমি বাংলাদেশি, আমি বাঙালি; আমার আছে গর্বের ইতিহাস। সংকল্প জানায় এক নতুন আগামীর; অতীত বেদনাকে ভুলে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার। এ জাতির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। বিগত বছরের জরাকে দূরে ঠেলে আজ বাংলাভাষীদের স্বপ্ন দেখার দিন, নতুন আলোয় অবগাহনের দিন, আনন্দে মেতে উঠারও দিন। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে প্রায় ১৬ বছর। এ সময়ে আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর ভাবের প্রকাশ করতে হয়েছে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত এক পরিবেশে। ফ্যাসিবাদী সরকারের মর্জিমতো। বাঁধভাঙা উল্লাসে সবাই তখন ভাসতে পারেনি। সেই ফ্যাসিবাদের নাগপাশ কাটিয়ে এ বছর এক মুক্ত আবহে, মুক্ত বাতাসে বাঙালির জীবনে এসেছে পহেলা বৈশাখ।
আর তাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করতে আজ লাখো মানুষ ঘরের বাইরে ছুটবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মানুষ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে। বঙ্গাব্দ ১৪৩১-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে নতুন পথচলা শুরু হবে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’ বাংলার গ্রাম, শহর-বন্দর, পথঘাট সব জায়গায় দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সম্প্রতি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছিলেন, এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন হবে সর্বজনীন। আর তাই এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজনও দুই দিন, যার শুরুটা হয় গতকাল চৈত্রসংক্রান্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কনসার্টসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বারোটি জেলায় চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী সাধুমেলার আয়োজন শুরু হয়েছে শনিবার থেকে।
এবারের পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। শোভাযাত্রাটির আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা। এবার শোভাযাত্রা হবে অনেক অন্তর্ভুক্তিমূলক। ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবেন। অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে-বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, রাখাইন, খিয়াং, বানাই, সাঁওতাল, ওঁরাও, তুরী, মাহালি, মালপাহাড়িয়া, কোল, মাহাতো, মণিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও মালো।
এছাড়াও শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন এবং পৃথিবীর শান্তি কামনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে গাইবেন গান ‘ফ্রম দ্য রিভার টু সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ গানটি।
রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের বার্তা দেওয়া হবে শোভাযাত্রা থেকে।
আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজনে থাকবে বড় মোটিফ, মাঝারি মোটিফ, ছোট মোটিফ। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। শোভাযাত্রায় বড় মোটিফের মধ্যে থাকবে কাঠের বাঘ, ইলিশ, ৩৬ জুলাই (টাইপোগ্রাফি), পালকি, জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল।
এছাড়া অন্যান্য মোটিফের মধ্যে থাকবে ১০টি সুলতানি ও মোগল আমলের মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, ৮টি তালপাতার সেপাই, পলো ১০টি, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছের চাঁই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস ১০০ ফুট থাকবে।
চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এ সময় শাহবাগ এবং টিএসসির মেট্রোরেল স্টেশনে ট্রেন থামবে না, তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে শাহবাগ হয়ে টিএসসি, শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করবে। এবারের শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সামনে না থেকে দুই পাশে হাঁটবেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো রকম শঙ্কাও নেই বলে জানানো হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিকাল ৫টার পর প্রবেশ করা যাবে না। নগরীর অন্যান্য স্থানে বর্ষবরণের আয়োজন সন্ধ্যার পরও থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকাল ৫টার মধ্যেই আয়োজন শেষ করা হবে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজন করা হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো ও কনসার্ট। সোমবার বিকাল ৫টায় ড্রোন শো দেখানো হবে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। শুক্রবার সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ড্রোন শো উপভোগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঢাকাবাসীকে। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এই আমন্ত্রণ জানান তিনি। ফারুকী লিখেছেন, ড্রোন শোয়ের আগে দর্শকদের জন্য থাকছে মনোমুগ্ধকর এক কনসার্ট। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিন বেলা ৩টায় পুরো আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা লিখেছেন, এ আয়োজনটি ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ সহযোগিতার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, বন্ধু-পরিবারসহ সবাইকে আমন্ত্রণ, চলে আসুন, একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই।
বরাবরের মতো বর্ষবরণ আয়োজন করবে ছায়ানট। এবারের আয়োজনটি ২ ঘণ্টার। এই ২ ঘণ্টায় মূলত মুক্তির গান গাইবে তারা। ভোরবেলা বৈরভীতে রাগালাপ দিয়ে হবে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণের সূচনা। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি এবং মানুষকে ভালোবাসবার গান, দেশপ্রেম-মানবপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। ছায়ানট এবার ৫৮তমবার বর্ষবরণের এ আয়োজন করছে।
এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চ্যানেল আই-সুরের ধারা হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ। তবে বিগত বছরগুলোর মতো নয়, এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন সুরের ধারার শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে বিভিন্ন লোকজ মেলার স্টল। মেলায় বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজনসহ থাকবে দেশীয় নানা ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের দোকান।
পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটির দিন। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বাংলা নববর্ষের ওপর বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টিভি, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
অনলাইন ডেস্ক :
‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
আজ ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় এই বৈঠক হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আইনটি বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে।
এত আরো উল্লেখ করা হয়, বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ (২০০৯ সালের ৬৩ নম্বর আইন) প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের ১৫ মে ওই আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি দেওয়ার গেজেট জারি করা হয়। কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছিল যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব বৈষম্য দূরীকরণে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। ‘বর্তমানে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায়’ রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই আইনটি রহিত করতে অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়, জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
একই বৈঠকে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এর কয়েকটি বিধান বাতিল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ এবং ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১’ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচ আর এস) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান এ রিট আবেদন করেন।
এ বিষয়ে আদালতে এখনও শুনানি হয়নি।
চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো ঘটনার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা ভুলে না যেতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, কারণ তারা অন্য কোনো রূপে এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা ভুলে যাবেন না। কারণ, তাদের অগ্নি সন্ত্রাস অন্য কোন উপায়ে আছে কি-না বা তারা বিভিন্ন উপায়ে তা ঘটিয়েছে কিনা-সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
আজ ১৫ এপ্রলি শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নগরীর বাজারগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াত চক্রের অতীত অপকর্মের কথা মাথায় রেখে শুধু ঢাকাসহ সারাদেশের সকল শহরে বসবাসকারী সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সরকার প্রধান সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘আগুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে তারা (বিএনপি-জামায়াত) ভিন্ন পথ বেছে নিচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ষড়যন্ত্র নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখতে বলেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেককে নিজ উদ্যোগে নিজের স্থাপনা পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর সময় বিনা প্রয়োজনে ভিড়ের অনুমতি দেয়া যাবে না ও এ ব্যাপারে কেউ কোনো বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, যখন প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তখন ধারণা করা হয়েছিল যে এটি একটি দুর্ঘটনা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু প্রথমটির একই সময়ে আরও কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে সকাল ৬টার পরে। নজরদারি বাড়াতে হবে এবং অন্যান্য মার্কেটগুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, এটি লক্ষণীয় যে, ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা যখন আসে তখন তারা কিছু লোকের বাধার সম্মুখীন হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘কেন তারা বাধার সম্মুখীন হবে? সেই সময় আগুন নেভাতে গিয়ে কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে দমকল কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এই লোক গুলো কারা?’
শেখ হাসিনা বলেন, যে কেউ এই চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নিয়ে একটু চিন্তা করলেই তার মনে এই প্রশ্ন আসবে যে-‘এগুলো কী সাধারণ দুর্ঘটনা, নাকি এসব ঘটনার পেছনে কোনো কারসাজি আছে?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি- কিছু রাজনৈতিক দল ঈদের পর আন্দোলন করতে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে ও সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। হ্যাঁ, আপনি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেন-তবে এই সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের কী দোষ?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ, তারা তাদের ব্যবসার জন্য এই মৌসুমের অপেক্ষা করতেন। ‘যারা এসব করেছে তারা সহজে রেহাই পাবে না, আমরা এই বিষয়ে আমাদের নজরদারি বাড়িয়েছি।’
দেশবাসীকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
অতীতে বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, তারা অন্য পথও বেছে নিতে পারে এবং এটি সঠিকভাবে তদন্ত করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে তারা সাধারণ মানুষকে পুড়িয়েছে ও এখন তারা অর্থনীতিকে পঙ্গু করার পথ নিয়েছে কিনা-আমাদের এই রহস্য বের করতে হবে।’
তিনি সবাইকে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের কৌশল পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান। কারণ, তারা ৩,৫০০টিরও বেশি যানবাহন, ২৯টি ট্রেন এবং ৮/৯টি লঞ্চ, ৫০০ স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস এবং ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা ৩ হাজারের বেশি লোক আহত ও ৫শ’ জনকে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এটি নজরে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে কামাল হোসেন (১৮) নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় সালমান (২১) নামের আরেক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়।
আজ ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ সরকারি প্রাইমারি স্কুল ভবনের তিনতলার একটি কক্ষের নির্মাণ কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কামাল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার শেরপুর গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে ও আহত সালমান একই উপজেলার কামালপুর গ্রামের লোকমান মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার ছাদে কাজ করার সময় লোহার রড বৈদ্যুতিক তাঁরের স্পর্শে আসলে শ্রমিক কামাল ও সালমান বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। এসময় অন্যান্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কামালকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় সালমানকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছমি উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ময়না তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।