বিজয়নগরের লালি গুড় দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে

বিজয়নগর, 15 January 2024, 475 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের উৎপাদিত আখের রসের লালি দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। কৃষি নির্ভর বিজয়নগর উপজেলায় গত কয়েকযুগ ধরে উৎপাদিত হচ্ছে আখের রসের লালি। মূলত শীতকালেই এই লালি উৎপাদিত হয়। এই লালি পিঠা-পুলির সাথে খেতে পছন্দ করেন ভোজন রসিকরা। আবার অনেকে মুড়ির সাথেও খান এই লালি।

চলতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার লালি বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টতা।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, বিজয়নগর উপজেলা, কসবা উপজেলা ও আখাউড়া উপজেলার কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে লালি উৎপাদন করেন চাষীরা।

চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। এই আখ থেকে অন্তত ১শ টনেরও বেশি লালি উৎপাদন হবে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুর ও বক্তারমুড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বংশ পরস্পরায় বাণিজিক্যভাবে লালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে শুরু হয় লালি তৈরির কাজ। মূলত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনা-বেচা। প্রতি কেজি লালি বা তরল গুড় খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে মানুষ লালি তৈরী দেখতে যায় বিজয়নগরে। অনেকে ফিরে যাওয়ার সময় লালি নিয়ে যাওয়া সহ আখের রস খেয়ে যান। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযন্ত চলে লালি তৈরির কাজ।

প্রথমেই চলে আখ মাড়াই। পরে মহিষের ঘানি দিয়ে আখ মাড়াই করে আখের রস সংগ্রহ করা হয়। পরে রস ছাকনি দিয়ে ছেকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরবর্তীতে এই রস দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। জ্বাল দিয়ে রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক লালি বা তরল গুড়।

লালি নিতে আসা বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের শারমিন আক্তার জানান, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে তিনি দুলালপুর থেকে লালি কিনে নিয়ে যান। তার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই লালি খুবই পছন্দ করেন। তিনি জানান, পিঠার সাথে লালি খেতে খুবই ভালো লাগে।

দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও লালি উৎপাদনকারী মোহাম্মদ আলী ও রাকিব মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আখ চাষ করতো। বর্তমানে কমে যাচ্ছে আখ চাষীর সংখ্যা। আবার আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ঘানি টানানোর জন্য লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দিয়ে মহিষ কিনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে লালি তৈরিতে যে খরচ পড়ছে, সে অনুযায়ি দাম পাওয়া যায় না।

একই গ্রামের আরেকজন লালি চাষী সহিদ মিয়া জানান, বংশ পরস্পরায় তিনি লালি তৈরি করে আসছেন। তবে ভালো লাভ না হওয়ায় বিগত সময়ের চেয়ে এবার কম জমিতে আখ চাষ করেছেন।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাব্বির আহমেদ জানান, লালিগুড় তৈরিতে কোন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয় না। ক্ষতিকর কোন উপাদান ব্যবহার না করায় সারাদেশেই লালির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, লালি গুড় উৎপাদনের সংশ্লিষ্টদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক…

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির Read more

নাসিরনগর উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক…

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লতিফ Read more

বিজয়নগরে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ৪০

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগরে পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর Read more

জেলা প্রশাসকের সাথে হেফাজত ইসলামের নেতৃবৃন্দের…

চলারপথে রিপোর্ট : হেফাজতে ইসলামের সংগ্রামী মহাসচিব আল্লামা শেখ সাজিদুর Read more

বিজয়নগরে ১১ হাজার ৮৭৫ পিস ইয়াবাসহ…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা থেকে ১১ হাজার Read more

নাসিরনগরে ডাকাত গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সদস্য দুর্র্ধর্ষ ডাকাত Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক…

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে Read more

আখাউডড়ায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া সড়ক বাজার ও বাইপাস এলাকায় রেলওয়ে Read more

সাড়ে ৩’শ চক্ষুু রোগীর ফ্রি চিকিৎসা…

চলারপথে রিপোর্ট : রোটারি ক্লাব অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাসের উদ্যোগে সাড়ে Read more

বন্যার্ততের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পী সমাজের ১…

চলারপথে রিপোর্ট : বন্যার্ততের সহায়তার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পী সমাজ কর্তৃক Read more

ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত হলেন শাহ মোঃ…

চলারপথে রিপোর্ট : দীর্ঘ ১৬ বছর পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে Read more

সাবেক এমপি ফজলে করিমকে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে আটক চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ Read more

বিজয়নগরে গৃহবধু অপহরণের ঘটনায় শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ গ্রেফতার

বিজয়নগর, 18 February 2024, 406 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে খাদিজা আক্তার ময়না (২৫) অপহরণের মামলায় গৃহবধূর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করেছে বিজয়নগর থানার পুলিশ।

তবে, এখনো অপহৃত গৃহবধুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, প্রধান আসামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া বিভিন্ন তথ্য সূত্রে ভিকটিম উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভোর রাতে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ও মাধবপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় এক আত্মীয় বাড়িতে থেকে প্রধান আসামী নিখোঁজ গৃহবধূর ননদ ইয়াছমিন আক্তার পপি (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এর আগে শনিবার বিকালে উপজেলার আমতলী বাজার থেকে গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ময়নার শ্বশুর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার মো.আজিজুল ইসলাম রমজান (৫৫), শ্বাশুড়ি রহিমা বেগম (৫১) কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। পরে নিখোঁজ গৃহবধূর মা সুমি বেগম সন্ধ্যায় বাদী হয়ে বিজয়নগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, অপহরণ মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। অপহৃত গৃহবধু উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অপহৃত গৃহবধূর মা ও মামলার বাদি সুমি বেগম জানান, আমার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্য পুলিশের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

বিজয়নগরে বছরে ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতের ফল বিক্রি

বিজয়নগর, 12 July 2023, 767 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ভারতীয় সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক ও নৈর্সগিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজয়নগর উপজেলার টিলা ভূমির মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করা হয়।

উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন, ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টা, ৪২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা ও ১৬ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা ও প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিনত করতে থাকেন চাষীরা।

চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। বিজয়নগরে চাষ করা হয় পাঁচ ধরনের লিচ। এর মধ্যে রয়েছে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু।

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় রয়েছে এই লিচুর বাগানগুলি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছে।

উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানে থাকা ৭০ টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, তার ৪টি বাগানে থাকা ১৭০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।

উপজেলার মহেশপুর গ্রামের লিচুর চাষী মাসুদুল হাসান বলেন, তার বাগানে থাকা ৬০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।

২০১৫ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টার চাষ শুরু হয়। গত বছর উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ২০১৬ সাল থেকে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের।

বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫৪টি মাল্টার বাগান। গত বছর বাগানগুলোতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।

উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের মালটা বাগানের মালিক মোঃ সোহাগ ভূইয়া জানান, তার বাগানে ১২০টি মালটা গাছ আছে। গত বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে।

উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হয়েছে।

গত দুই বছর ধরে বিজয়নগরে লটকনের চাষ হলেও চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হলেও শুধু উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান।

মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭/৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এনিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এবছর সব গাছে লটকন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপর লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বানিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করবো।

উপজেলার সিঙ্গার বিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

একই এলাকার আবদুল হাসিম বলেন, তার বাগানে ১০০টি লটকন গাছ আছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০/২৫ জন চাষী ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশাকরি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষীরা।

তিনি বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। “মিয়াজাকি” আম গাছও আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।

উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় দেশীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন উৎপাদরের পাশাপাশি বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদিও চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে “মিয়াজাকি” আম। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সূর্যডিম আম চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছি । এই আমটিকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাজারজাত করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকি। প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় করা হয়।

গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক আশিক

বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 10 January 2023, 2101 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নিহত সাংবাদিক ও সেচ্চাসেবক আশিকুল ইসলাম আশিকের (২৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বাদ আছর আশিকের গ্রামের বাড়ি জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর বন্দরবাজারে সংলগ্ন গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে আশিকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের পর পরই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশিকের প্রিয় সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা শেষ গোসল করান। গোসল শেষে কাফনের পর শহরের ট্যাংকের পাড় মাঠে বাদ যোহর আশিকের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার আগে বক্তব্যে নিহত আশিকের পিতা আশরাফ উদ্দিন তার বক্তব্যে খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। জানাজায় ইমামতি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এতে সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করে। জানাজা শেষে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন আশিকের সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র আমরাই জেলার সব অজ্ঞাত উদ্ধার হওয়া মরদেহ কবর দিয়ে আসছি। এই পর্যন্ত শতাধিক কবর আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি রক্তদান তো নিয়মিত বিষয়। প্রতিটি কাজেই আশিক সক্রিয় ছিল। অথচ আমাদের সংগঠনের মিটিং শেষে ফেরার পথে তাকে হত্যা করা হলো। আমরা মানুষের জন্য বিনামূল্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার ফল বুঝি নির্মমভাবে নিহত হওয়া!
পরবর্তীতে আশিকের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন মনিপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় বন্দর বাজার এলাকায় বালুর মাঠে আশিকের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে আশিকের বাবা আশরাফ উদ্দিন ও পত্তন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তারা খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। পরে মাঠের পাশেই কবরস্থানে আশিককে কবরে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।
গত সোমবার (০৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিক ও সেচ্ছাসেবী আশিকুল ইসলামকে স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হানের নেতৃত্বে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। আশিক ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পর্যবেক্ষণের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও আশিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একমাত্র অজ্ঞাত মরদেহ কবর ও রক্তদানকারী সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আজহার উদ্দিন জানান, আশিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। অজ্ঞাত লাশ কবর ও রক্ত দেওয়ায় আশিক সবসময় সামনের সাড়িতে থাকতো। সোমবার বিকেলে শহরের অবকাশ পার্ক আমাদের সংগঠনের মাসিক সভা ছিল। সভা শেষে আমরা দুইটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও রিকশাযোগে ফিরে আসছিলাম। আশিক আমার অটোরিকশার পেছনে একটি রিকশায় ছিল। সামান্য যাওয়ার পর পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে রায়হান নামের একটি ছেলে সহ আরও কয়েকজন দৌঁড়ে এসে আশিকের শরীরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন জানান, আশিককে হত্যার প্রধান অভিযুক্ত রায়হান মিয়া ওরফে সোহান ও সাফিন আহমেদ জুনায়েদকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আশিকের বাবা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

বিজয়নগরে ইটভাটার শ্রমিকের মৃত্যু

বিজয়নগর, 18 February 2024, 409 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা জাপান ইটভাটার শ্রমিকের লাশ পাওয়া গেছে।

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকালে স্থানীয়রা ধানের জমিনের আইলে লাশ পরে থাকতে বিজয়নগর থানা পুলিশকে অবহিত করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শ্রমিক মোঃ ফজলুল হক (৫৫) এর লাশ উদ্ধার করে।

সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের মৃত মোঃ হেলাল উদ্দিন ছেলে।

জাপান ইটভাটার মালিক পক্ষ দাবি করেন, শ্রমিকের দায়িত্ব সর্দারের। আর তাদের খোঁজ রাখার দায়িত্বও সর্দারের। শনিবার সন্ধ্যায় ওষুধ আনতে ডাকবাংলো মোড় যাওয়ার জন্য বের হয়।

বিজয়নগর থানার এস.আই মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, জমিতে লাশ পরে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

৩৮৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিজয়নগরে যুবক গ্রেফতার

বিজয়নগর, 21 June 2023, 775 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে ৩৮৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কাজী রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ২১ জুন বুধবার ভোরে উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর-সহদেবপুর সড়কে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত কাজী রফিকুল ইসলাম উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের কাজী তাজুল ইসলামের ছেলে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে মির্জাপুর-সহদেবপুর সড়কের আবু তালেব মিয়ার বাড়ির পাশে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার শরীরে তল্লাশী চালিয়ে ৩৮৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।