চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে চুরির অপবাদে জাহিদুল ইসলাম পরশ-(২১) নামে এক যুুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরশ মারা যায়। নিহত পরশ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবেদ মিয়ার ছেলে।
আজ ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত দুইদিন আগে পাশের বাড়ির আলমগীর মিয়ার বাড়িতে টিউবওয়েলের একটি পাম্প চুরি হয়। সেই চুরির অপবাদেবৃহস্পতিবার সকালে সন্দেহজনকভাবে পরশকে প্রতিবেশী শফিক, মঈনুদ্দিন, বাবুসহ বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করে।
আহতবস্থায় পরিবারের লোকজন পরশকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি ভর্তি করে। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরশ মারা যায়।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এমরানুল ইসলাম জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। আমরা তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে জাল টাকার নোটসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার ভূঁইশ্বর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে ৭২ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন উপজেলার ভূঁইশ্বর গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া (৩০) ও অরুয়াইলের আলী হোসেনের ছেলে মো. ইমন মিয়া (২৩)।
তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। যোগদানের ৪/৫ দিন পরই গ্রহন করেন ব্যতিক্রম উদ্যোগ। দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে ছুঁটে চলেছেন মাঠে। টিআর কাবিখা কাবিটা ও ঠিকাদারী কাজ সরজমিনে নিয়মিত তদারকি করে আলোচনায় আসেন তিনি। কাজের অনিয়ম ও ভুলক্রটি সংশোধনে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ তিনি। কিছুটা নড়েচড়ে সতর্ক অবস্থানে এখন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। স্বস্থিতে আশার আলো দেখছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্র জানায়, সকল নির্বাহী কর্মকর্তাই নিজ উপজেলার সুনাম খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। চেষ্টা করেন নিজের সবটুকু দিয়ে। তাদের মধ্যেও কাজে কর্মে কিছু ব্যতিক্রম ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের উদ্যোগ ও কর্মকা- মানুষের নজর কাড়ে। মনে স্বস্তি দেয়। এমনই একজন ইউএনও মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। তিনি সরাইলে যোগদান করেছেন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর। যোগদানের ৪-৫ দিন পরই দাপ্তরিক ও প্রশাসনির কাজের বাহিরে ওঁর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকার সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে।
তিনি সকাল বিকাল দুপুর কোন নোটিশ ছাড়াই ছুটে যান ঠিকাদারদের কাজ তদারকি করতে।
সরজমিনে হাজির হয়ে ইষ্টিমিট আর ওয়ার্ক অর্ডার ধরে কাজের স্বচ্ছতা ও মান দেখেন। তদারকি করতে থাকেন টিআর, কাবিখা আর কাবিটা’র কাজ। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ফিতা ধরে মেপে দেখেন। অনিয়ম, অস্বচ্ছতা বা কোন ধরণের ক্রুটি পেলে দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দেন। সরাইল সদরের আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ধরা পড়লে ঠিকাদারকে দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দেন ইউএনও। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজটি পুনরায় করতে বাধ্য হন ঠিকাদার। সরজমিন তদারকিতে এখন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী সতর্ক অবস্থানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঠিকাদারী কাজের মান অনেকটা ভাল হচ্ছে। টিআর কাবিখা’র টাকা লুটপাটের সুযোগ পাচ্ছেন না এক শ্রেণির লোকজন। এতে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন ও গ্রামের লোকজন স্বস্তি বোধ করছেন। ইউএনও’র পরিশ্রমের বদৌলতে মানসম্মত কাজ পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, একসময় কাজের নামে লেফপুজ করে বিল উত্তোলন করে ফেলতো। কাজ না দেখেই বিল দিয়ে দিতেন। বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের সরজমিন তদারকির ফলে সেটা আর হচ্ছে না। কাজে ক্রটি থাকলে তিনি বিল আটকে দিচ্ছেন। এই উদ্যোগ জনগণ ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে। কাজের মানে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমার এই উদ্যোগের ফলে সরকারের দেয়া পাবলিক মানির অপচয় রোধ ও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সরকারি অর্থে আমার তত্ত্বাবধানে নির্মিত কাজের মান ভালো হবে। সরকারের উন্নয়ন জনগণের কাছে ভালভাবে দৃশ্যমান হবে। জনগণ এর উপকার ভোগ করতে পারবেন। একই সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্বও যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলায় স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহিদা আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরে দগ্ধ হয়েছে দেড় বছর বয়সী মেয়ে সন্তানটি। দগ্ধ হয়েছেন গৃহবধূর স্বামী আল-আমীন (৩০)। তাঁদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ওই গৃহবধূ মারা যান।
গত সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আল-আমীনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাহিদার ছোট ভাই আবিদ মুন্সি। আল-আমীন ও তাঁর মেয়ে আলিফা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছে। শাহিদার লাশ গতকাল রাতে গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ, মামলার এজাহার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট বছর আগে উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের আলাই মুন্সির মেয়ে শাহিদা আক্তারের সঙ্গে মধ্যপাড়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আল-আমীনের বিয়ে হয়। তাঁরা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। প্রথমে আল-আমীনের পরিবার বিয়ে মেনে নিতে না চাইলেও পরে যৌতুক পেয়ে মেনে নেয়। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বিয়ের পর আল–আমীনকে যৌতুক দেওয়া হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ টাকায় আল-আমীন মধ্যপ্রাচ্যে যান। তিন বছর আগে দেশে ফিরে তিনি ভবঘুরে স্বভাবের হয়ে পড়েন। টাকার অভাব হলেই তিনি স্ত্রীকে মারধর করতেন। শাহিদার পরিবার থেকে একাধিকবার টাকাও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। শাহিদাকে নিয়মিত মারধরের কারণে গ্রামে একাধিকবার সালিসও হয়েছে।
সোমবার সকালে টাকার জন্য শাহিদা আক্তারকে মারধর করতে থাকেন আল-আমীন। একপর্যায়ে নিজের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রল বের করে শাহিদার গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। অগ্নিদগ্ধ শাহিদা যখন চিৎকার করছিলেন, তখন তাঁর দেড় বছরের শিশু আলিফাও চিৎকার দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। এতে শিশু আলিফা দগ্ধ হয়। নিজের দেওয়া আগুনে আল-আমীনও দগ্ধ হন। গ্রামের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তিনজনকেই সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলার বাদী শাহিদার ছোট ভাই আবিদ মুন্সি বলেন, ‘যৌতুকের জন্য পাষণ্ড আল-আমীন আমার বোনকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে। আমরা তার ফাঁসি চাই।’
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, অগ্নিদগ্ধ আল-আমীন শঙ্কামুক্ত হলেও তাঁর মেয়ে শঙ্কামুক্ত নয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পুলিশের নজরদারিতে আল-আমীনের চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।