নাসিরনগর প্রতিনিধি :
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের বিশেষ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৮ জানুয়ারি শনিবার সকালে স্থানীয় ডাকবাংলো মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রায়হান আলী ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক ভানু চন্দ্র দেবের পরিচালনায় কর্মী সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. রাফিউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসিম কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিতু মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লিয়াকত আব্বাস টিপু। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবলীগ নেতা আল কাউছার।
কর্মী সভায় উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন করার লক্ষ্যে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কর্মী সভায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে নািসরনগর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিনের সভাপতিত্বে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহিম আরফিনের সঞ্চালনায় সভায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ার, সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো: রেজাউল ইসলাম,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: দিবাকর ভাট, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো: হাসান জামিল খান,উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সায়না বেগম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান, বুড়িশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী,সদর ইউপি চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস, গোকর্ণ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন, কুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট নাছির উদ্দিন ভূইয়া, ধরমন্ডল ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম, দাতঁমন্ডল এরফানিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইলিয়াছ মিয়া, জামায়াতে ইসলামির প্রতিনিধি অধ্যাপক মো: সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আবদুর সাত্তার, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক সবুজ,উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আকতার হোসেন ভূইয়া, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অনাথবন্ধু দাস, গুনিয়াউক ইউপি সচিব মো: শাখাওয়াত হোসেন, চাতলপাড় ইউপি সচিব মো: আলমগীর হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সসদ্যগণ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা নাসিরনগর উপজেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি মাদক-জুয়া,চুরি-ডাকাতি বন্ধসহ আইনশৃংখলা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী বইমেলার সমাপনী, বিকালে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উৎসকৃষ্ট বই মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। আর এই বইয়ের যোগান দেয় বইমেলা। তাইতো পছন্দের বই কিনতে বইপ্রেমীরা মুখিয়ে থাকেন অমর একুশে বইমেলার দিকে। কিন্তু সেই বইমেলা যদি বাসার পাশেই হয় তবে তো কথাই নেই। গ্রন্থের সাহচর্যেই মানুষ অগ্রসর হয়ে চলে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রম-অগ্রযাত্রার পথে। এর ধারা অব্যাহত রাখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করে ৭দিন ব্যাপী প্রাণের বইমেলা। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলা মঞ্চে প্রতিদিন আলোচনা সভা,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে,কবিতা আবৃত্তি,সাধারণ জ্ঞান,কুইজ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রায় এক যুগ পর অনুষ্ঠিত বইমেলায় উচ্ছ্বাস দেখা গেছে অনেকের মাঝেই। প্রতিদিনই পাঠকের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরাও মেলায় বই কিনতে আসে।মেলায় শিশুদের উপযোগী বইও এনেছেন বিক্রেতারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়ার সভাপতিত্বে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রাফিউদ্দিন আহমেদ। গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ বইমেলায় দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই দিয়ে সাজানো ছিল ২০টি বইয়ের স্টল। মেলায় সকাল থেকে শতশত বইপ্রেমী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বইপ্রেমীরা এসে পছন্দের বই কিনে ঘরে ফিরেছেন। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে বইমেলা। বইমেলায় বিক্রি সন্তোষজনক ছিল বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে গত সাতদিনে ২০টি স্টলে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকার বই বিক্রি হয়েছে। শেষদিন ছিল ক্রেতাদের অনেক সমাগম। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিবলী চৌধুরী বলেন বই কিনতে আগে ঢাকায় যেতে হতো। ঢাকা যাওয়া কষ্টকর। এখানে ঘরের পাশেই পছন্দের বই পাওয়া যাচ্ছে আমাদের প্রাণে বইমেলায়। তাই দীর্ঘ একযুগ পর নাসিরনগরে বইমেলার আয়োজন করায় নবাগত উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবদুর রহিম বলেন,বই হচ্ছে প্রাণের খোরাক। আমার মনে হয় প্রতিটি মানুষের মাসে অন্তত ১টি বই কেনা উচিত এবং সেটা পড়া উচিত। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়াকে আমার বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিনন্দন এমন চমৎকার বইমেলার আয়োজন করার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়া বলেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ তৈরী ও অভ্যাস গড়ে তোলার জন্যই বইমেলার আয়োজন করা। কিন্তু এত মানুষের ভালবাসা ও আগ্রহ বইমেলার প্রতি এটা আমার ধারণা ছিল না। সবাই পছন্দের বই কিনছে এটা দেখে আমি খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতেও আমরা এই বইমেলা অব্যাহত রাখবো।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
১১ জুন মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার মাওলানা আবু আহমেদ কল্যাণ ট্রাষ্ট নামে একটি শিক্ষা ও সেবামূলক সংস্থার উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবু আহমেদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক মনিরুল হোসাইন ও তম্ময় আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি কাজী রবিউস সারোয়ার, জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য এম.বি কানিজ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আজহারুল ইসলাম ভূইয়া, তুরস্কের মানবিক সেচ্ছাসেবী সংস্থা রিভাত এর প্রতিনিধি মোস্তুফা ইরোগলু, বিল্লাল ইরোগলু, হাফেজ মোহাম্মদ যুগনিউল হাসান ও প্রেসক্লাব সভাপতি সুজিত কুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু আহমেদ কল্যাণ ট্রাষ্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক।
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে স্কুল ব্যাগ, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর ইসরাইলের আগ্রাসন এবং নির্বিচারে নিরপরাধ নারী ও শিশুসহ মুসলিমদের হত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
আজ ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে নাসিরনগর উপজেলা উলামা পরিষদ এবং তৌহিদী জনতার ব্যানারে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি বের হয়। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় কলেজ মোড় প্রাঙ্গনে সমাবেশ ও দোয়ার মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।
নাসিরনগর উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার, উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদের খতিব মুফতি মুখলেছুর রহমান, মাওলানা তামজিদুল হক এনামী, হাফেজ ইকবাল, হাফেজ হোসাইন আহমেদ, মাওলানা আব্দুল কাদির, মাওলানা নাসির উদ্দিন, মুফতি সাইদুর রহমান, এস এম শহীদুল্লাহ, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন ফারুকী, মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা মোবারক উল্লাহ, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আব্দুল করিম, মুফতি মুজিবুর রহমান, হাফেজ কামরুল ইসলাম, মাওলানা নুর আহমদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুফতি সুলাইমান, মুফতি ফিরোজ আহমদ, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা ইসমাইল, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, মাওলানা মঞ্জুরুল হক, মাওলানা হুজাইফা, মাওলানা শরিফ উদ্দিন, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মাওলানা নুরুল আমিন, মাওলানা ইউসুফ বিন ইকবাল, মোঃ ইমরানুর রশীদ, মাওলানা জয়নাল আবদিন, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা সফিউল্লাহ, মাওলানা জুবায়ের আহমদ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ইসরাইল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। তারা ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রত্যেক মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব অসহায় নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো।
এছাড়াও দেশের সকলের প্রতি ইসরাইলি সমস্ত পণ্য বয়কট করা সহ ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সকল মুসলমানদের এক হয়ে ইসরাইলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বক্তারা।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।
৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।
জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’
তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।
নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।
জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’
জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’
জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।
বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।