চলারপথে রিপোর্ট :
ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি মন্তব্য করে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, যে কোন ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে দেশে এক অসন্তোষ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং এই চেষ্টা যদি কেউ করে সেই চেষ্টাকে আপনারা জানতে পারলে আইনের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ নিবেন। আশা করি, আমরা যদি সজাগ থাকি, সচেতন থাকি বাংলাদেশ কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
আজ ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে প্রদত্ত গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। টানা তিন বার কসবা-আখাউড়া আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবং তৃতীয় মেয়াদে আইনমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিএনপি-জামাতের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকবার যখন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচন দেই তখন বিএনপি-জামাত ষড়যন্ত্র শুরু করে। যাতে তারা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে। নির্বাচন যাতে বাংলাদেশে না হয়। গণতন্ত্র যেন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা না পায়। জনগণের সমর্থনে প্রত্যেকবার শেখ হাসিনা তাদের ষড়যন্ত্র ধ্বংস করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রমান করেছে তারা শেখ হাসিনার সরকার চায়। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটা উন্নত দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসবে। আপনারা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করে রাখলেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো।
বিপুল ভোটে নির্বাচিত করায় আনিসুল হক কসবা-আখাউড়াবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনার আমার জন্য দোয়া করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি জনগণের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন আনিসুল হক।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আশুগঞ্জ-সরাইল আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ড. অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। এসময় আওয়ামলীগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল।
এর আগে বিকালে সংবর্ধনাস্থলে এসে পৌঁছলে মন্ত্রীকে ফুল বরণ নেয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফরিদপুরে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করেছে। আজ ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ সময় শহরের হাজী শরীয়তউল্লাহ বাজারের বিভিন্ন দোকানে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ সোহেল শেখের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বাজারে আলু প্রকারভেদে পাইকারি ৩৭-৩৮ টাকা এবং খুচরা ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সেট অভিযানের আগে খুচরা ও পাইকারি বাজারে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতো।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ সোহেল শেখ জানান, গত ১ সপ্তাহের তুলনায় আলু পাইকারি পর্যায়ে ৪ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অভিযানের সময় পাকা ক্রয়-বিক্রয় মূল্যে তালিকার হাল নাগাদ রশিদ না পাওয়ায় এবং দাম বেশি নেওয়ার জন্য মেসার্স সিকদার ট্রেডার্সকে ১ হাজার টাকা, মেসার্স মিতা বাণিজ্যালয়কে ১ হাজার টাকা এবং মেসার্স হাবিব স্টোরকে ৩ হাজার টাকাসহ মোট ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে পাকা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ ও মূল্য তালিকা হালনাগাদ টানানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বিশেষভাবে সচেতন হতে বলেন তিনি।
অভিযানের সময় সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা পুলিশের ১টি টিম এবং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান সহকারী পরিচালক মোঃ সোহেল শেখ।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরো অগ্রসর হতে হলে দেশের নারী ও পুরুষকে সমভাবে শ্রম দিতে হবে। কারণ সমাজের অর্ধেক জনশক্তি নারী।
আজ ৮ মার্চ শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নানা প্রতিবন্ধকতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ে পাঁচ নারীকে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার’ প্রদান করেছেন।
নারীরা সমাজের অর্ধেক অংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের অর্ধেক কাজ না করলে সেই সমাজ দাঁড়াতে এবং সামনে অগ্রসর হতে পারে না।
তিনি বলেন, নারী ও পুরুষ সমানভাবে কাজ করলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। আজ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কারণ আমরা নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের নারীরা কখনই পিছিয়ে থাকবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত নারীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দলই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা সংবিধান ও ইশতেহারে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করেছে।
তিনি বলেন, শুধু বলার জন্য নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। তার সরকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তবে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে থাকবেন না। কারণ সমাজের জন্যও নারীদের অনেক কাজ করতে হবে।
এক পরিসংখ্যানে নারীদের ৪৩ শতাংশ শ্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (নারীরা) আরো অতিরিক্ত কাজ করেন এমনকি অফিস থেকে বাড়ি ফিরেও কাজ করতে হয় যা হিসাব করা হচ্ছে না।
এ বছর সেরা জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- আনার কলি (অর্থনীতি), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও চাকরি), কমলি রবি দাশ (সফল মা),জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ) এবং পাখি দত্ত হিজড়া (সামাজিক উন্নয়ন)।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পুরস্কার গ্রহণের পর জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে কল্যাণী মিঞ্জি তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, ও সনদপত্র গ্রহণ করেন। শুরুতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রর্শন করা হয়।
‘জয়িতা’ (বিজয়ী), একজন নারী যিনি সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন, এটি সংগ্রামী ও অদম্য নারীর প্রতীকি নাম। সরকার পাঁচটি বিভাগে জয়িতাদের পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার,স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তোলা।
তিনি বলেন,যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রায় নারীদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে আমরা দ্রুত আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
দেশে প্রথম মুন্সীগঞ্জ জেলায় মহিলা পুলিশ সুপার নিয়োগ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) নারীদের নিয়োগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যদি নারীদের এই সুযোগ দেওয়া না হতো তাহলে এই সাফল্য আসতো না।
তিনি বলেন, আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সব সময় বলতেন, অর্থনৈতিকভাবে মেয়েদের মুক্তিই সবচেয়ে বড় মুক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের যেখানে নিয়োগ দিয়েছি তারা সেখানে তাদের কাজের ক্ষেত্রে বিরাট দক্ষতা প্রদর্শন করেছে, আমি তাদের প্রশংসা না করে পারি না।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্বব্যাংকে দুই নারীর নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুই নারী সচিব এই সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। আমি সেটা প্রমাণ করতে চাই বাংলাদেশি নারীদের শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করার দক্ষতা রয়েছে। তারপর থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি।
চলারপথে ডেস্ক :
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর পরদিনই (২৪ এপ্রিল) নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
এর আগে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ ঘোষণা দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ওই ধারায় উল্লখ করা আছে, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকলে নির্বাচন কমিশনার উক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন।
সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে একজনই মনোনয়ন দাখিল করেন। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিলের সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ এর ৭ ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
সিইসি আরো বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে মো. সাহাবুদ্দিনের নামে দুটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। আজ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণরূপ বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়নপত্র গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল না।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রস্তাবের সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রবিবার রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের নাম নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত কমিশনের প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামে বেশি পরিচিত।
মো. সাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ছিনতাই করা মালামালসহ দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার রাত ৮টার দিকে অভিযানটি চালায় র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল।
র্যাব সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের দলটি ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুর মধ্যপাড়ায় অভিযান চালায়। এ সময় দুজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন ভৈরবের কমলপুর এলাকার জলিল মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৭) ও জগন্নাথপুর এলাকার মৃত বুলবুল মিয়ার ছেলে রাসের মিয়া (২৫)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোনসেট ও নগদ ৭৫০০ টাকা।
র্যাবের স্কোয়াড কমান্ডার মুহা. জাহিদ হাসান গ্রেফতার দুই জনকে ছিনতাইকারীচক্রের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবত ছিনতাই করে আসছেন এবং উদ্ধার করা মালামালগুলোও ছিনতাই করে আনা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
পরে তাদেরকে ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৮ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল। বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা। সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনায় কবি রফিক আজাদ তার ‘এই সিঁড়ি’ কবিতায় লিখেছেন- ‘সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-/ স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে/ সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে/ অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে॥’
সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও পারভীন জামাল রোজী। পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
প্রতি বছর দিনটি আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে।
আজ জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতা ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিকজান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এ স্বাধীন বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণা। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা পাঁয়তারা করে। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে, বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরো কয়েকজন খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি।