অনলাইন ডেস্ক :
পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ বা শবেমেরাজ আজ। লাইলাতুন বা শব অর্থ হলো-রাত আর মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। শবেমেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজের অর্থ দাঁড়ায়-ঊর্ধ্বগমনের রাত। ব্যাপক অর্থে রাসূল সা:- এর বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ এবং আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সাথে কথা বলাকেই মেরাজ বলে। রাসূল সা:-এর ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের ১২তম সনে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
শবেমেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত। মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন-‘মহামহিম পরম পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতেরবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যাতে আমি তাকে দেখিয়ে দেই, এর চারপাশের নিদর্শনগুলো, যা বরকতময়। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’
হাদিস সূত্রে জানা যায়, রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে রাসূল সা: এশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানি রা:-এর ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিবরাইল আ: আল্লাহ তায়ালার হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতা নিয়ে রাসূল সা:-এর কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, হুজুর! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এ মুহূর্তেই আপনাকে সেখানে যেতে হবে। মুহাম্মদ সা: প্রস্তুত হলে জিবরাইল আ: রাসূল সা:-কে নিয়ে কাবা শরিফের হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজুর পর বোরাক নামক বাহনে জেরুসালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। সেখান থেকে প্রথম আকাশে পৌঁছান মহানবী সা:। সেখানে হজরত আদম আ:-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাক্ষাৎ করেন হজরত ঈসা আ:, হজরত ইয়াহইয়া আ:, হজরত ইদ্রিস আ:, হজরত হারুন আ:, হজরত মুসা আ: এবং হজরত ইবরাহিম আ:-এর সাথে। সপ্তম আকাশ থেকে হজরত মুহাম্মদ সা:-কে বায়তুল মামুর পরিদর্শনে নেয়া হয়, যেখানে প্রতিদিন (সকাল-সন্ধ্যায়) ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আর সেখানে আসার সুযোগ পান না। এরপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহার কাছে যান। সেখান থেকে রফরফ নামক বিশেষ বাহনে আরশে আজিম যান। এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সাথে কথোপকথন হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, তাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথার ব্যবধান রইল অথবা আরো নিকটে। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যা করার ছিল।
হাদিসের বর্ণনা মতে, শবেমেরাজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয় মহানবী সা:-এর উম্মতদের জন্য। এছাড়া দেখেছেন অনেক নিদর্শন। দেখেছেন জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় উঠে আসা কয়েকটি শাস্তির বিবরণ তুলে ধরা হলো- বেনামাজির শাস্তি: বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে, আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, আবার ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার আঘাত করা হচ্ছে। জাকাত না দেয়ার শাস্তি : তাদের সামনে ও পেছনে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুর মতো চরবে আর নোংরা আবর্জনা ময়লা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত আঠালো বিষাক্ত ফল খাবে, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে। চোগলখোরের শাস্তি : তাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে; আর বলা হচ্ছে, যেভাবে তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে, সেভাবে এটা ভক্ষণ করো।
গিবতকারীদের শাস্তি: তাদের অগ্নিময় লোহার নখর দিয়ে তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ বিদীর্ণ করছে। এসব দেখে রাসূল সা: বললেন, হে জিবরাইল আলাইহিস সালাম! এরা কারা? তিনি (জিবরাইল) বললেন, এরা হলো সেসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের গোশত খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)। সুদখোরের শাস্তি: সুদখোরদের বড় বড় পেট, যার কারণে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সাথে রয়েছে ফেরাউন সম্প্রদায়, তাদেরকে অগ্নিতে প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে। ব্যভিচারী নারী ও পুরুষের শাস্তি: জেনাকার বদকার নারী, যারা ব্যভিচার করেছে এবং ভ্রƒণ ও সন্তান হত্যা করেছে, তাদের পায়ে আংটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; তারা আর্তচিৎকার করছে। এক সম্প্রদায় তাদের সামনে একটি উত্তম পাত্রে উপাদেয় তাজা ভুনা গোশত এবং অন্য নোংরা একটি পাত্রে পচা মাংস। তারা উত্তম পাত্রের উন্নত তাজা সুস্বাদু গোশত রেখে নোংরা পাত্রের পচা মাংস ভক্ষণ করছে। রাসূল সা: বললেন, হে জিবরাইল! আ: এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো ওই সব পুরুষ যারা স্বীয় বৈধ স্ত্রী রেখে অন্য নারীর কাছে গমন করেছে এবং ওই সব নারী যারা স্বীয় বৈধ স্বামী রেখে পরপুরুষগামিনী হয়েছে।
মেরাজ শেষে পৃথিবীতে ফিরে রাসূল সা: পুরো ঘটনা হজরত আবু বকর রা:-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। রাসূল সা: তাকে সিদ্দিক বা বিশ্বাসী খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসূলের মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন : শবেমেরাজ উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ বাদ জোহর ‘পবিত্র শবেমেরাজ’র ‘গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা, দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা: বশিরুল আলম। আলোচনা করবেন মিরপুরের জামিয়াহ মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতি দমনে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবা অব্যাহত রাখার এবং এ জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলব, আপনারা দেশের মানুষের সেবা করেন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, এটা হচ্ছে পুলিশের মূলমন্ত্র। কাজেই পুলিশ বাহিনী মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে―এটাই সব সময় আমাদের কাম্য।’
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ছয় দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’-এর উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষ পুলিশের প্রতি সে আস্থা রাখতে পারছে। কাজেই আপনারা আন্তরিকতার সাথে মানুষের সেবা করবেন, সেটাই আমরা চাই। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর এই ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হলে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ যখনই কোনো বিপদে পড়ে তখনই আশ্রয় খোঁজে পুলিশের কাছে। কাজেই পুলিশ জনগণের বন্ধু, এটা সব সময় চলে আসছে এবং এটাকেই প্রতিষ্ঠা করা একান্তভাবে দরকার। সে কারণেই আমি মনে করি আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের সততা, পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেম ও মানবীয় মূল্যবোধ নিয়েই জনগণের সেবা করবে। পুলিশ বাহিনীকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলছি।’
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জনগণের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে আরো একনিষ্ঠ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও। তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও।
তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা। বাংলার মানুষ চায় তারা শান্তিতে ঘুমাক। তোমাদের কাছ থেকে আশা করে যে, চোর, বদমাশ, গুণ্ডা, দুর্নীতিবাজ তাদের ওপর অত্যাচার না করে। তোমাদের কর্তব্য অনেক বেশি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার ভাষণের এই মর্মবাণী ধারণ করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কাজ করে যাবে, এই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে চড়ে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন পুলিশ বাহিনী বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী সাহসী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৫ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-বীরত্ব) এবং ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-বীরত্ব) প্রদান করেন।
এ ছাড়া ৯৫ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম সেবা পদক এবং ২১০ জন পিপিএম সেবা পদক পেয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সূত্র : বাসস
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানানা জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার। তিনি জানান, বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৩ আগস্ট বুধবার ভোর থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়। পরে তা কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটারে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আজ ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় আবারো তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ৩৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো সূত্র জানায়, আগামী দুই-তিন দিন এই অঞ্চলে ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদিপশু, পাখি, বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপারের হাজারো মানুষ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতর মাচাং বানিয়ে সারা দিনের রান্না একবারে করছেন গৃহকর্মীরা। কেউ কেউ পাশের উঁচু রাস্তার বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ আর রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু সাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলো। সবচেয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারের নারীরা। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নারীদের।
তিস্তাপারের গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, দুদিন ধরে চরাঞ্চলের প্রায় বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির কারণে সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। গরু ছাগল রাখার মতো শুকনো জায়গাটুকুও মিলছে না।
আদিতমারী মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কাচুয়া শেখ বলেন, বন্যার পানিতে ৫ দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। ত্রাণ নয়, চাই পানি যেন আর ভারত থেকে না আসে।
তিস্তা তীরের উত্তর গড্ডিমারী গ্রামের মোন্তাজ মিয়া, বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু কিংবা কোমরপানি।
পানির শোঁ শোঁ শব্দে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কে থাকি শিশু বাচ্চাদের নিয়ে, কখন কে পানিতে পড়ে যায়। নিদারুণ কষ্ট নিয়ে জীবন কাটছে আামাদের।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজারের বেশি পরিবার টানা দুদিন পানিবন্দি। তাদের তালিকা করার পাশাপাশি খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃহস্পতিবার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২ টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিস্তা ব্যারাজের নিবাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার আর দুপুর ১২ টায় পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বিতরণ শুরু করা হয়েছে। আরও কিছু শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, যাতে তারা কষ্ট না পায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে শ্রীশ্রী যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে কালী মাতার মাথার স্বর্ণের মুকুট চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার ৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ১৩ অক্টোবর রোববার তাদেরকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে শনিবার সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম সুজাতা আমিন গ্রেফতারকৃতদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন, ঈশ্বরীপুর গ্রামের মৃত ছেদাম সরকারের স্ত্রী ও মন্দিরের সেবায়েত রেখা সরকার (৪৫), একই গ্রামের অখিল চন্দ্র সাহার ছেলে অপুর্ব কুমার সাহা (৪৬), মৃত গোকুল চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জয় বিশ্বাস ও শ্রীফলাকাটি এলাকার হরেণ বিশ্বাসের স্ত্রী পারুল বিশ্বাস।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়োন্দা পুলিশের এসআই আহমেদ কবির জানান, শনিবার শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবায়ত রেখা সরকারসহ ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিনই সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৫ এ তাদেরকে ৭দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত প্রত্যেকের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রোববার তাদেরকে কারাগার থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনে এসে সোনার মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে মুকুটটি চুরি হয়। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে এক যুবককে মুকুটটি চুরি করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনায় মন্দিরের সেবায়েত জ্যোতিপ্রকাশ চট্রপাধ্যায় বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১২। পরে মামলাটির তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা পুলিশে ন্যস্ত করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে দেশের জাহাজ নির্মাণ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আজ ৪ আগস্ট তাঁর কার্যালয়ে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন বিদায়ী সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি (নেদারল্যান্ডস) যদি চান, তবে আমরা আপনাকে (বাংলাদেশে) ড্রাইডকের জন্য জায়গা দিতে পারি।’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে উভয়েই দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।’
প্রেস সচিব বলেন, “বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘এখানে কাজ করতে পেরে আমি খুশি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে থাকবে।’ লিউয়েন বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান একটি চমৎকার পরিকল্পনা এবং এটি বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন এবং আইসিটি বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে, কারণ এসব খাতে নেদারল্যান্ডের যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে।’ আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাচ রাষ্ট্রদূত।”
প্রেস সচিব আরো বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের মতো জমি পুনরুদ্ধার করতে চায়।’ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মধ্যেও বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে প্রথমে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন এবং পরে তার সরকার এই কর্মসূচির প্রসার ঘটায়।’ বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে।”
অ্যাম্বাসেডর এ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
মেলায় নাগরদোলায় ঘোরার সময় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছেন এক স্বামী। পুলিশ তাৎক্ষণিক তাকে আটক করেছে। ১৪ এপ্রিল সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের হাফেজ মহিন উদ্দিনের ওরস উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত লাকী বেগম (১৯) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কালাপোল এলাকার বেদে পল্লীর মনছুর আলীর মেয়ে। আটক স্বামী মো. শাকিব সদর উপজেলার মান্নান নগর বেদে পল্লীর বাসিন্দা মঙ্গলের ছেলে।
নিহতের মা শেফালী বেগম জানান, এক বছর আগে লাকীর সঙ্গে শাকিবের বিয়ে হয়। বর্তমানে লাকী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রায় পনের দিন আগে তারা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসে। রোববার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে শাকিব লাকীকে মারধর করে, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ভেঙে দেয়। এমনকি নিজের মাথায় নিজেই আঘাত করে।
সোমবার সন্ধ্যায় শাকিব ও তার পরিবারের সদস্যরা একলাশপুরে ওরস মেলায় ঘুরতে যান। সেখানে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নাগরদোলায় ওঠেন।
নাগরদোলায় থাকা এক নারী প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে শেফালী বেগম জানান, নাগরদোলায় ওঠার একপর্যায়ে শাকিব তার স্ত্রীর গলায় ছুরি চালিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় লাকীকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবীবুর রহমান বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।