চলারপথে রিপোর্ট :
ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীরে কামেলে মোকাম্মল হযরত শাহসূফী আলহাজ¦ সৈয়দ আবদুস ছাত্তার নকশে বন্দী (রঃ) ও পীরে কামেলে মোকাম্মেল হযরত শাহসূফী আলহাজ¦ সৈয়দ নাছিরুল হক (মাসুম) নকশে বন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রঃ) দ্বয়ের বার্ষিক ইছালে ছওয়াব উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী ফান্দাউকের সভা আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্র ও শনিবার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
দু‘দিনব্যাপী মাহফিলের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে শুক্রবার বিকেল থেকে। মাহফিল উপলক্ষে প্রায় ১৫ দিন ধরে সামিয়ানা টানানোসহ অন্যান্য কাজ চলছে। বিশাল প্যান্ডেল টানানো হয় আশেকানদের জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, নাসিরনগর, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের সুবিধার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। শতাধিক শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ হাজার লোক এক সাথে খাবার খাওযার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে প্যান্ডেল নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে। আর এর পুরোটাই করা হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। এক পাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এ মাহফিলকে ঘিরে এলাকার লোকজনের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারও লাখো মুসল্লির অংশগ্রহনে মূখরিত হবে ফান্দাউক দরবার শরীফ। মাহফিলে তা‘লীম তারবিয়াত প্রদান করবেন ফান্দাউক দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন আলহাজ¦ মাওলানা সৈয়দ ছালেহ আহ্মাদ (মামুন)। ওই মাহফিলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ উপস্থিত হয়ে দু‘জাহানের অশেষ ছওয়াব হাসিলের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাদ ফজর আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন ফান্দাউক দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন আলহাজ¦ মাওলানা সৈয়দ ছালেহ আক্ষাদ (মামুন)।
উল্লেখ্য, মাহফিলে দরবার শরীফের আওতায় পরিচালিত প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফান্দাউক মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে পাগড়ি প্রদান করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গোকর্ণ সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সংগঠনের (প্রাছাস) আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, স্মরণ সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার বিকালে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজ হল রুমে প্রাছাসের সভাপতি ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী শরীফের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুবিনা আকতার, গোকর্ণ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন, চাপরতলা ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ ভূইয়া, প্রাছাসের প্রধান উপদেষ্ঠা ও সাবেক উত্তরা ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ সালাউদ্দিন মুকুল, প্রাছাসের সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্ঠা কে.এম.খালেদ, মো: জসিম উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম বেলায়েত, সাবেক আহবায়ক ও উপদেষ্টা হুসাইন আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান।
সভায় বক্তব্য রাখেন প্রাছাসের যুগ্ম সম্পাদক মো: আশরাফুল ইসলাম, মোসাব্বির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ আহমেদ, প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মিসির উদ্দিন মাষ্টার, ইঞ্জিনিয়ার সোহাগ মিয়া, মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী সোহাগ প্রমুখ।
এসময় সংগঠনের উপদেষ্টা,কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
প্রতীক বরাদ্দের পর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার ও মোড় ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে মাঠে ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েন। উপজেলার সবর্ত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রার্থী ও সমর্থকরা বিরামহীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন শেষ মুর্হূতের প্রচারণা। প্রায় প্রতিদিনই প্রার্থীরা হাট-বাজার-পাড়া-মহল্লায় চষে বেড়াচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং সেই সাথে নিজেদের সৎ ও দূনীর্তিমুক্ত রেখে এলাকার উন্নয়নে ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতার আশ্বাস সকলের কাছে দোয়া ও ভোট চাইছেন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সবর্ত্রই চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। প্রার্থীদের নিয়ে চলছে শেষ মুর্হূতের হিসাব-নিকাশ। তবে মুখ খুলছেন না ভোটাররা। কে চেয়ারম্যান নিবার্চিত হবেন তা নিয়ে চায়ের দোকানে, হাট-বাজার, অফিস-আদালত ও গ্রামাঞ্চলে সবর্ত্রই এখন আলোচিত হচ্ছে। তবে এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে ভোটারদের হিসাব-নিকাশ।
নাসিরনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা খাকলেও অসুস্থতার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায়ের প্রতীক দোয়াত-কলম, তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার পেয়েছেন কৈ মাছ প্রতীক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমা আক্তারের প্রতীক ঘোড়া, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: ওমরাও খানের প্রতীক আনারস, শ্রী প্রমোদ রঞ্জন সূত্রধরের প্রতীক মোটরসাইকেল।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নেতা আবু আহাম্মদ কামরুল হুদার প্রতীক টিউবওয়েল, হুমায়ুন কবীরের প্রতীক চশমা, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ভানু চন্দ্র দেবের প্রতীক মাইক, সৈয়দ সাজ্জাদ মোর্শেদের প্রতীক তালা ও শাহজাহান চকদারের প্রতীক টিয়া পাখি।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। তারা হলেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুবিনা আক্তারের প্রতীক কলস, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা হামিদা লতিফ পান্নার প্রতীক প্রজাপতি, সাবেক মহিলা মেম্বার রিটা আক্তারের প্রতীক ফুটবল ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাহিদা আক্তারের প্রতীক বৈদ্যুতিক পাখা।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপজেলায় ৯৩টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ভোটার ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৬৬ জন। পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫‘শ ১৯ জন ও মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ২০ হাজার ৭‘শ ৪৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ ২ জন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
আজ ৫ মার্চ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়ার নেতৃত্বে উপজেলা সদরের বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।এতে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মোট ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানকালে এক্সরে টেকনিশিয়ান না থাকা, লাইসেন্স নবায়ন না থাকা ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনার কারণে নাসিরনগর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা,বন্ধন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড কনসালটেশন সেন্টারকে ১০ হাজার জরিমানাসহ এক্সরে রুমটি সিলগালা করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মো: সাইফুল ইসলাম,ডা: শাকিল,গাইনী বিশেষঞ্জ ডা: নাফিজা জাফরিন,ডা: ফৌজিয়া,পুলিশ উপ-পরিদর্শক রুপন নাথ, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার সিএ বিল্লাল হোসেনসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইমরানুল হক ভূইয়া অভিযানের কথা স্বীকার করে জানান, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কোন ধরনের অনিয়ম চলতে দেয়া যাবে না। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১২ মার্চ রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ৩২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক দরবার শরিফের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল হয়। সেখানে আতুকুড়া গ্রামের দুই যুবক মোতাব্বির ও বাদল মিয়ার মধ্যে বসার জায়গা নিয়ে তর্ক হয়। পরদিন সন্ধ্যায় আতুকুড়া গ্রামে গিয়ে সেই ঘটনায় আবার তর্কে জড়ায় দু’জন। এর জেরে এক পর্যায়ে দুই ওয়ার্ডের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ থামাতে গেলে পুলিশ সদস্য, গ্রামবাসীসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার দিন রাতে অভিযান চালিয়ে দুই পক্ষের ৩২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া শতাধিক লোককে আসামি করে একটি মামলাও করা হয়েছে।
আতুকুড়া গ্রামের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ফান্দাউক দরবার শরিফে ওয়াজে গিয়ে ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের দু’জনের মধ্যে ঝগড়ার জেরে পরদিন আকুতুড়া বাজারে গেলে ৮নং ওয়ার্ডের লোকজন আমাদের লোকদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই পরে সংঘর্ষে জড়ায়। ৯নং ওয়ার্ডের ২৫ জন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে পুলিশ সবাইকে আটক করে।’ তবে এ ব্যাপারে ৮নং ওয়ার্ডের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাসিরনগর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সঠিক তদারকির অভাবে এবং অযত্ন ও অবহেলায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল কালের সাক্ষী হয়ে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর জমিদার বাড়ি। ৭৫ বছর ধরে বেদখলে ছিল বিশালাকার বাড়িটি।
সম্প্রতি হরিপুর বড় বাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর এবার শীঘ্রই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
১৮শ শতাব্দীতে জেলার নাসিরনগর উপজেলায় তিতাস নদীর পাড়ে প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমিতে জমিদার কৃষ্ণপ্রদাস রায় চৌধুরী ও গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরী দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদার পরিবারের লোকজন বাড়িটিতে কয়েকজন পুরোহিতদের রেখে কলকাতায় চলে যান। এরপর পুরোহিতদের বংশধরদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু মুসলিম পরিবার দখল নিয়ে বসবাস শুরু করেন সেখানে। সেই থেকে প্রায় ৭৫ বছর ধরে বাড়িটি ছিল বেদখলে। এতে বাড়িটি দিনের পর দিন বিলুপ্তির পথে যেতে থাকে। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িটির দখলে থাকা পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা হয়। এরপরই নেওয়া হয় বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। কারুকাজ খচিত ৬০টি কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িটিতে রং মহল, দরবার হল, নাচ ঘর, পুকুর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। তবে এর অনেক অংশ ভেঙে ফাটলও ধরেছে। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দু’পাশে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর দুটি সমাধি সুউচ্চ মঠ রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে এসে ঘুরে ঘুরে পুরো রাজবাড়ির সৌন্দর্য দেখছেন। অনেকে আবার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাপ মিয়া বলেন, হরিপুর রাজবাড়ি এটি আমার জন্মের আগে নির্মিত। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। বাড়িটিতে বহিরাগত লোকেরা থাকতেন। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দখলে থাকা বহিরাগতদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। আমাদের দাবি, এই বাড়ি যেন পুনঃসংস্কার করে দেয়। তাহলে আমাদের তিতাসের পূর্ব পাড়ে অতীতের একটি স্মৃতি থাকবে।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বাড়িটি পরিত্যক্ত। এই বাড়িটি চুনকাঠ ও বীমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় একটি বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি চাই, সরকার যেন দ্রুত এই বাড়িটি সংস্কার করে দেয়। বাড়িটি সংস্কার করে দিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে। আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে।
ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক বলেন, আমরা হরিপুর জমিদার বাড়ি দেখতে এসেছি। দেখলাম এখানে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। রাজমহল, রঙমহল, দরমহলসহ প্রতিটি দেওয়ালে বিভিন্ন প্রকার কারুকাজ করানো রয়েছে। বাড়িটি অনেক পুরোনো হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তবে বাড়িটির ফটকের সামনে যদি এর ইতিহাস লিখে রাখা হয় তাহলে পর্যটকরা এসে এর সঠিক তথ্য জানতে পারবে। বাড়িটি যদি দ্রুত সংস্কার করা যায় তাহলে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, হরিপুর জমিদার একটি দর্শনীয় স্থান। এটা প্রত্নতত্ত্বের একটা গুরুত্ব আছে। জমিদার বাড়িতে যেসব বহিরাগত পরিবার ছিল তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে ওখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল তারা নিজেরাই চলে গেছেন।
বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে বলেন, আমাদের যে সরকারি রাজস্ব ফান্ড আছে তা থেকে এই বছরই আমরা বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করব। আমরা প্রকল্প তৈরির চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত প্রকল্পটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠিয়ে দেব। আসা করছি প্রকল্পটা অনুমোদন হলে একটা বড় আকারের কাজ করতে পারব। বাড়িটি যেভাবে আছে আমরা ঠিক সেই ভাবে রেখেই সংস্কার কাজ করব।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষার একটি আইন বা ব্যবস্থা আছে যা সারা বিশ্বে একই নিয়ম। সেভাবেই আমরা এটি সংস্কার করব।