চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে খাদিজা আক্তার ময়না (২৫) অপহরণের মামলায় গৃহবধূর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করেছে বিজয়নগর থানার পুলিশ।
তবে, এখনো অপহৃত গৃহবধুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, প্রধান আসামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া বিভিন্ন তথ্য সূত্রে ভিকটিম উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভোর রাতে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ও মাধবপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় এক আত্মীয় বাড়িতে থেকে প্রধান আসামী নিখোঁজ গৃহবধূর ননদ ইয়াছমিন আক্তার পপি (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এর আগে শনিবার বিকালে উপজেলার আমতলী বাজার থেকে গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ময়নার শ্বশুর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার মো.আজিজুল ইসলাম রমজান (৫৫), শ্বাশুড়ি রহিমা বেগম (৫১) কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। পরে নিখোঁজ গৃহবধূর মা সুমি বেগম সন্ধ্যায় বাদী হয়ে বিজয়নগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, অপহরণ মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। অপহৃত গৃহবধু উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অপহৃত গৃহবধূর মা ও মামলার বাদি সুমি বেগম জানান, আমার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্য পুলিশের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাটির ঘর ধসে রাফিন (১২) ও মিশু (১০) নামে আপন দুই ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। আজ ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোরে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত দুই ভাইবোন ওই গ্রামের মন্নাফ মিয়ার সন্তান। এ ঘটনায় বাবা মন্নাফ (৪৫), মা রোকসানা (৩০) ও বোন ইশু (১০) আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ইশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, মন্নাফ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে থাকতেন। গতকাল রাতে অন্যান্য রাতের মতোই সবাই একসঙ্গে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হলে মাটির ঘরটি ধসে পড়ে। এতে তারা পাঁচজনই মাটির নিচে চাপা পড়েন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাফিন ও মিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত তিনজনের মধ্যে ইশুকে আশঙ্কাজক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
মনিপুর এলাকার আতকাপাড়া গ্রামে প্রতিবেশীদের সংঘর্ষ দেখতে গিয়ে টেটাবিদ্ধ হয়ে ময়না (১২) নামে এক কিশোরী নিহত হয়েছে। নিহত ময়না আক্তার ওই গ্রামের ফারুক মিয়ার কন্যা। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর আতকাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর আতকাপাড়া গ্রামের শাহজাহানের মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের হানিফ মিয়ার মেয়ে তাইবা আক্তার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের আয়োজন ছিল বৃহস্পতিবার। এ বিয়ের অনুষ্ঠানে বিকেলে পাশের গ্রাম চাউরাখোলা গ্রামের ছেলেরা গানবাজনা শুনতে আসে বরপক্ষের বাড়িতে। উচ্চশব্দে গান বাজনাকে কেন্দ্র করে বর পক্ষের সঙ্গে চাউরাখোলা ছেলেদের ঝগড়া হয়। পরে চাউরাখোলার ছেলেরা বিষয়টি মীমাংসার জন্যে কনের চাচা হোসেন মিয়া মিয়াকে জানায়। হোসেন মিয়া বিষয়টি মীমাংসা না করে উলটো চাউড়াখোলা ছেলেদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। এক পর্যায়ে চাউড়াখোলা গ্রামের বেলাল মিয়া নামে এক যুবককে চর থাপ্পড় দেয়।
পরে চাউরাখোলা গ্রামের যুবকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মনিপুর আতকাপাড়া গ্রামে কনেপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ময়না আক্তার নামে ১২ বছরের এক শিশুকন্যা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় ইট পাটকেলের আঘাতে আরো অন্তত পাঁচজন আহত হয়। আহতদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার ওসি রওশন আলী জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা থেকে ১১ হাজার ৮৭৫ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) এর বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর বিওপির টহলদল অভিযান পরিচালনা করে ১১ হাজার ৮৭৫ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। যার সিজার মূল্য ৩৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।
আটককৃতরা হলেন বিজয়নগর উপজেলার কামালমোড়া গ্রামের মৃত মুলু হোসের ছেলে মোঃ রাকিব হোসেন (২৫) ও একই উপজেলার গণেশরামপুর গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ অন্তর (১৮)। বিজিবির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতির মাধ্যমে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকাল ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার কামালমোড়া নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মামলার পাওয়া যায়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে উদ্ধারকৃত মাদকসহ বিজয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হবে জানানো হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ভারতীয় সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক ও নৈর্সগিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজয়নগর উপজেলার টিলা ভূমির মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করা হয়।
উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন, ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টা, ৪২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা ও ১৬ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা ও প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিনত করতে থাকেন চাষীরা।
চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। বিজয়নগরে চাষ করা হয় পাঁচ ধরনের লিচ। এর মধ্যে রয়েছে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু।
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় রয়েছে এই লিচুর বাগানগুলি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানে থাকা ৭০ টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, তার ৪টি বাগানে থাকা ১৭০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।
উপজেলার মহেশপুর গ্রামের লিচুর চাষী মাসুদুল হাসান বলেন, তার বাগানে থাকা ৬০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।
২০১৫ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টার চাষ শুরু হয়। গত বছর উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ২০১৬ সাল থেকে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের।
বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫৪টি মাল্টার বাগান। গত বছর বাগানগুলোতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের মালটা বাগানের মালিক মোঃ সোহাগ ভূইয়া জানান, তার বাগানে ১২০টি মালটা গাছ আছে। গত বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হয়েছে।
গত দুই বছর ধরে বিজয়নগরে লটকনের চাষ হলেও চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হলেও শুধু উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান।
মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭/৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এনিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এবছর সব গাছে লটকন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপর লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বানিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করবো।
উপজেলার সিঙ্গার বিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
একই এলাকার আবদুল হাসিম বলেন, তার বাগানে ১০০টি লটকন গাছ আছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০/২৫ জন চাষী ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশাকরি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষীরা।
তিনি বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। “মিয়াজাকি” আম গাছও আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় দেশীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন উৎপাদরের পাশাপাশি বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদিও চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে “মিয়াজাকি” আম। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সূর্যডিম আম চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছি । এই আমটিকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাজারজাত করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকি। প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা থেকে ২২৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে র্যাব।
র্যাব-৯ এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর একটি আভিযানিক দল ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউপির কাশিনগর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৫৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ ১ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ময়মনসিংহ জেলার গরীপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের (মানিক খানের বাড়ি) মো. মোহন খানের ছেলে নয়ন খান (২০)।
অপর অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ২২ ডিসেম্বর আনুমানিক সকাল সাড়ে ৭টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউপির উথারিয়াপাড়া এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৭০ বোতল ফেনসিডিলসহ ১ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের উথারিয়া পাড়া (সরদার বাড়ি) এর মো. সাজু মিয়ার ছেলে মো. নিঝুম মিয়া (১৯)।
পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ও জব্দকৃত আলামত বিজয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে র্যাব-৯ এর গোয়েন্দা তৎপরতা এবং চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।