চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১ মার্চ শুক্রবার বাড়িতে এসে মায়ের সাথে দেখা করার কথা ছিলো সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের। ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন মা। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য বাজার সদাই করে প্রস্তুত ছিলেন মা। কাউছার বাড়িতে ফিরেছেন। তবে জীবিত নয়। লাশ হয়ে। স্ত্রী, তিন সন্তানও কাউছারের নিথর দেহের সঙ্গী হয়ে ফিরেছেন। মায়ের সাথে ছেলের শেষ কথা না শোকে পাথর হয়ে আছেন কাউছারের মা। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তখন চলছে এক সারিতে পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজ। আঙ্গিনায় রাখা আছে ৫টি খাটিয়া। আগত লোকজন বলছেন জীবনে কখনো এই গ্রামে এক সাথে পাঁচ কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখিনি। আল্লাহ তাও দেখাইলেন। শুক্রবার বিকেলে সাইরন বাজিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে ৫ লাশ নিয়ে ৪ এম্বোলেন্স প্রবেশ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামে। ওদিকে কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে পাথর হয়েছিল গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়নের নারী পুরূষ। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘেরাও করে ফেলে লাশবাশী গাড়ি গুলোকে। অঝরে কান্না ও আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ওই গ্রামের পরিবেশ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে কাউছানসহ এক পরিবারের ৫ জন নিহতের ঘটনাটি।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ার প্রয়াত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন। এলাকায় তিনি সবার কাছে কাউছার নামেই পরিচিত ছিলেন। কাউছার দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতো ঢাকার মধুবাগে। কাউছারের স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে সেটেলড হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছিল। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয়ার মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেল। গত প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কাউছার দেশে এসেছিলেন। কারণ পরিবারের সবার ইতালির ভিসা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরিবারের ৫ সদস্যেরই ইতালির ভিসা হয়েছে। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর কাউছারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। আনন্দে কাউছার পরিবারের সকলকে নিয়ে রাতে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন ডিনার করতে। এই ডিনারই যে কাল হবে সেটা তো জানা ছিল না কাউছারের। খাবার শুরূ করার পরই ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ যেন আরেক কেয়ামত। লোকজনের চারিদিকে ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার, আহাজারি আর বাঁচার আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে বেইলি রোডের পরিবেশ। অগিকান্ডের লেলিহান শিখা দেখে হোটেলে আটকে পড়াদের অনেকেরই পালস বন্ধ হয়ে যায়। শেষ রক্ষা হলো না ইতালি প্রবাসী কাউছার ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের। একে একে আগুনে পুঁড়ে মৃত্যুবরণ করলেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন কেড়ে নিল কাউছারের পরিবারের সকল সদস্যের তাজা প্রাণ। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তাদের ধূঁলোয় মিশে গেল। কাউছারের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল। পরিবারের সকলকে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো তাদের। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেল। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না। গোটা পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গ্রাম তথা গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়ন। চারিদিকে চলছে আহাজারি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কাউছারদের খালি বাড়িতে ছুটে আসছেন শতশত নারী পুরূষ। সকলের চোখেই অশ্রু। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, খুবই ভাল মানুষ ছিলেন কাউছার। এমন একটি পরিবারের সকল সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। শোকাহত হয়ে পড়েছে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ।
৪ এম্বোলেন্সে ৫ লাশ:
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে তাদের লাশ নিয়ে রওনা দেয় নিজ গ্রাম শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাটায় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর প্রথম গেইট থেকে বাম দিকে প্রবেশ করছে এক সাথে ৪টি লাশবাহী এম্বুলেন্স। এক সাথে ৪টি গাড়ির হৃদয় বিদায়ক সাইরন আর লাল বাতির জ্বলকানিতে কেঁপে ওঠেছে গ্রামবাসী। কারণ এর আগে এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ নয় তারা। চারিদিক থেকে নারী পুরূষ ও শিশুরা আসছে গাড়ির দিকে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে কাউছারদের বাড়িতে। বুঝতে বাকি নেই কাউছারদের পরিবারের পাঁচ লাশ এসে গেছে। গ্রামীণ সড়কে মানুষের জটলা। একে একে গাড়ি ৪টি চলে আসল কাউছারের বসতবাড়িতে। বাদ আছন জানাযা। লাশ মসজিদের দিকে নেয়ারও একটা তাড়া। ৫ জনের লাশকে একনজর শেষ দেখা দেখতে শুধু শাহবাজপুর থেকে নয়। পাশের ইউনিয়ন শাহজাদাপুরের দেওড়া শহজাদাপুর ও মলাইশ থেকেও লোকজন এসেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও স্বজন ও পরিচিত জন এসেছেন। বাদ আছর অর্থাৎ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় হবে জানাযা। তাই চতুর্দিকে মানুষজন জানাযা করার প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। রবিবার বাড়ি এসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছেলে মেয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য যাওয়ার কথা ছিল কাউছারের। আগামী ১৮ মার্চ তাদের ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। তাদের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ায়। পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেন স্বজনরা।
৫ কবর ৫ খাটিয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের সৈয়দ মোবারক হোসেন। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। আগামী ১৮ মার্চ তারা আকাশ পথে ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। কিন্তু বেইলি রোড ট্রাজেডি তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখন তাদের জন্য উপজেলার শাহবাজপুর নিজেদের কবরস্থানে এক সারিতে খোঁড়া হচ্ছে ৫ টি কবর। বাড়ির পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৫ টি খাটিয়া। স্বজন আর গ্রামবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠছে ওই বাড়ির পরিবেশ। কি হৃদয়বিদায় দৃশ্য। শান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে গেছে গ্রামবাসীর। স্থানীয়রা জানায়, কাউছারের বসত ঘর ফাঁকাই থাকতো। বলতে গেলে তাদের বাড়িতে লোকজন খুব একটা নেই। সব সময় ওই বাড়িতে বিরাজ করতো সুনসান নীরবতা। বাড়িতে নড়াচড়া করতো কাউছারের চাচাত ভাইয়েরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে কাউছারদের বাড়িতে। কাউছার সহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। চারিদিকে হ্যাঁ হুতাশ আর চোখের জল। সকলেই জানতে চাচ্ছেন কখন আসবে তাদের মরদেহ। বিভিন্ন জায়গা থেকে সকলেই শুধু পথের দিকে নজর দিচ্ছেন বারবার। জানতে চাচ্ছেন তাদের লাশ বহনকারী গাড়ি কোথায় আছে? কখন আসবে? জানাযা কখন কোথায় হবে? ওদিকে বাড়ির ও গ্রামের লোকজন কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে এক সাথে ৫ টি কবর খোঁড়ার কাজ শুরূ করেছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কবর খোঁড়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে পাঁচটি খাটিয়া। দেখলে গা শিউরে ওঠে। আর বাড়ির ভেতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি। একই কবরস্থানে এক সাথে ৫ কবরের দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বলেন, এই অগ্নিকান্ড শুধু কাউছারের পরিবারকে নয়, আমাদের গোটা ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।
শোকাহত উপজেলা প্রশাসন:
কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের নির্মম মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন সরাইল উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলে কাউছারদের বাড়িতে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতান। তিনি শোকাহত পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সাথে সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জানাযায় সহস্রাধিক লোক:
বাদ আছর খন্দকার পাড়া জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ওই ৫ লাশের জানাযা। জানাযায় সাবেক এমপি মৃধাসহ অংশ গ্রহন করেন সহস্রাধিক লোক। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই এক সারিতে তাদের ৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল বিশ্বরোডে মোড়ে নিত্যদিনের যানযট মুক্ত করতে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ ইট দিয়ে ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী করেছে খাটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশ। এতে নিত্যদিনের অল্প সময়ের জন্য যানযটও অনেকাংশে নিরসন হয়েছে।
আজ ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে অংশে বড় বড় গর্তে ইটের ভাঙ্গা সুরকি ও ইট দিয়ে ভরাট কাজ শুরু করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন খাটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মারগুব তৌহিদ, এস আই মোঃ সারোয়োর হোসেন, সার্জেন্ট সুজা ইসলাম, এএসআই মো: শাহিন মিয়া, এটিএসআই মৃণাল কান্তি দেব প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়ের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন যাতায়াত করে। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর জেলায় নির্মাণাধীন ফোরলেন মহাসড়কের প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সড়কে খানাখন্দে ভরপুরে কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশ। এতে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি।
সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মারগুব তৌহিদ বলেন, নির্মাণাধীন ফোরলেন মহাসড়কের প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার কারণে বৃষ্টি পানি জমে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে বিশ্বরোড মোড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানযট। আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল জায়গায় যোগাযোগ করে সংস্কারের জন্য বলেছি। রাস্তার সংস্কার কাজ দেরি হচ্ছে বলে হাইওয়ে থানা পুলিশ যানজট নিরসনসহ দুর্ঘটনা রোধে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন খানাখন্দ ও গর্তগুলো সংস্কারে উদ্যোগ নিয়ে যাত্রাপথকে আরও নিরাপদ করবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কালেমা পাঠ ও অর্থকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে এক সময়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের হেমেন্দ্র দেবনাথ এখন মো. হিমেল তালুকদার নামে পরিচিত।
গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল সদরের শাহী জামে মসজিদে (হাটখোলা) হিমেল জুম’য়ার নামাজ আদায় করে উপস্থিত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল মুসল্লিদের সহায়তা চেয়েছেন।
এ সময় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কুতুব উদ্দিন, খতিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আল হুদা, পেশ ইমাম মাওলানা শেখ মো. আমান উল্লাহ হিমেলকে গ্রহন করে নেন। আজ থেকে সকলকে হিমেলের পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। হিমেল জানায়, সরাইল সদরের নাথপাড়ায় তার বাসা। পিতা রামধন দেবনাথ। শিশুকাল থেকে হিমেল ইসলাম ধর্মের লোকজনের সাথে চলাফেরা উঠাবসা করে আসছে। ইসলামের পারিবারিক, সামাজিকসহ সকল রীতিনীতিই শান্তি ও কল্যাণের। তাছাড়া পবিত্র কোরআনের বাংলা কপি পাঠ করে বুঝতে ও উপলদ্বি করতে পেরেছি, ইহার বিধি বিধান ঠিক ভাবে পালন ইহকাল ও পরকালে শান্তি নিশ্চিত। আখেরাতের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি জান্নাতেও প্রবেশ করা যাবে। তাই ইসলাম ধর্মকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে একজন মুসলমান হওয়ার স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। গত ১২ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখে জনৈক মাওলানা’র মাধ্যমে ইসলামের মূল বাণী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পাঠ ও অর্থ মনে প্রাণে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ ক্রমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। নোটারী পাবলিক রেজি: নম্বর-১২৫, তারিখ-১২.০১.২০২৩ খ্রি.। ওইদিন থেকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করছি কিয়ামত, ফুলসেরাত, মিজান, হাসর, বেহেস্ত, দোযখ, ভালমন্দ সব কিছুই আল্লাহর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পূর্বের নাম বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে আমার নাম রেখেছি মো. হিমেল তালুকদার। আমি ইসলামের বিধি অনুসারে ধর্মকর্ম প্রতিপালন করব। এই কাজে কেউ বিঘ্নের বা বাঁধার সৃষ্টি করতে পারবে না। তিনি জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহন করায় তাকে এক বছরেরও অধিক সময় আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে। এখনও অনেক চাপে আছেন। বেশী সমস্যা হলে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাইদের সহযোগিতা চাইবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে আগুনে পুড়ে একটি বসতঘর ও একটি রান্না ঘর ছাই হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা কর হচ্ছে।
১১ অক্টোবর বুধবার বিকালে রাজাবাড়িয়া কান্দি গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমানের বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সরাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে বসতঘর ও রান্না ঘরে থাকা মালামাল ভস্মিভূত হয়ে যায়।
সরাইল ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রিয়াজ বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ টাকার মত হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের সীল-সাক্ষর জালিয়াতি
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পীকে (২৯)কে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা (সিআইডি)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারকের সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে গতকাল সোমবার ভোরে তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রাব্বি উপজেলার নিজ সরাইল গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।
গতকাল সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারকের সীল-সাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে মোটর সাইকেলের লাইসেন্স করে আসছিল। সম্প্রতি একটি মোটর সাইকেল আটকের পরে দেখা যায় ওই মোটর সাইকেলের সীল ও সাক্ষর ভূয়া। পরে ওই চক্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পী ৫নং আসামী। সোমবার ভোরে তার নিজ বাড়ি থেকে বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন শোভনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাপ্পীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।