চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে।
আজ ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সরাইল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. মঈন উদ্দিন মঈন এম.পি।
সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ইসমত আলী, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রোকেয়া বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজ আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. আমিন খান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শরীফ উদ্দিন।
বক্তারা বলেন, ৭১ এ ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনের মায়া ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আর ৫৩ বছর এখন রাজাকারের উত্তরসূরি ও তাদের স্বজনদের দ্বারা বিনাকারণে অন্যায় ভাবে হেনস্থা হচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে রাজাকার হলে কোটি কোটি রোজগার করতে পারতাম। আওয়ামী লীগের বড় নেতা হতে পারতাম। কারণ এখন দেখছি সরাইলে মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে রাজাকারের উত্তরসূরিদের কদর ও সম্মান বেশী। এমন একটি গুরূত্বপূর্ণ দিবসের আলোচনা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা অনুপস্থিত। তাড়াহুড়া করে ফুল দিয়ে পালিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার মতো নেতাদের দলে কোন প্রয়োজন নেই। সরাইলে আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের স্বার্থে দল করেন। দলীয় জাতীয় অনুষ্ঠানের কোন গুরুত্ব উনাদের কাছে নেই। বক্তারা বলেন, ভাল না লাগলে দল ছেড়ে দিন। ষড়যন্ত্র আর কায়দা কানুন করে আওয়ামী লীগ করলে তৃণমূলে আপনাদের স্থান হবে না।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে জেলা আমীর মাওলানা মোবারক হোসেন আখন্দকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ মে শুক্রবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা সদরের মডেল মসজিদের হল রুমে ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সরাইল উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সভায় এ ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সৎ শিক্ষিত যোগ্য দুর্নীতিমুক্ত আদর্শবান খেতাবে ভূষিত করে এই প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনার জন্য এখনই মাঠে নেমে পড়ার আহবান জানিয়েছেন নেতারা। বলে দিয়েছেন ভোট চাওয়ার নানা কৌশল।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম সরাইল উপজেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় মডেল মসজিদের সভা কক্ষে সরাইল উপজেলা আমীর মো. এনাম খাঁর সভাপতিত্বে দলটির এক কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক নেতা কর্মীর অংশ গ্রহণে জেলার সেক্রেটারী মাওলানা আমীনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলার দাওয়া সম্পাদক লেখক গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার।
বক্তব্য রাখেন- জেলা শাখার আমীর মাওলানা মোবারক হোসেন আখন্দ, প্রফেসর মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. ফজলুর রহমান, তিন উপজেলার সঞ্চালক এডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান, সরাইল উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. এনাম খাঁ ও সেক্রেটারী মো. জাবেদুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশের সর্বত্র শান্তি স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন সকলের প্রত্যাশা অনিয়ম দুর্নীতি চাঁদাবাজি সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও দেশ। এ জন্য প্রয়োজন কোরআনের আইন ও শাসন। সেটা নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কোন বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন-‘হতাশ হইয়ো না, দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হইয়ো না, যদি তোমরা মুমিন হও।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সদস্যরা মুমিন। তাই সাহস রেখে আমাদেরকে কাজ করে যেতে হবে। সফলতা আল্লাহ দিবেন। চরিত্র ও শিক্ষা সবার উপরে। কারো চাকচিক্য আর টাকা দেখে হতাশ হওয়া যাবে না। মোবারক হোসেন একজন আদর্শবান শিক্ষিত যোগ্য সৎ চরিত্রবান লোক। জামায়াতে ইসলাম ইসলামী ব্যাংক ও ইবনেসিনা হাসপাতাল করেছেন। ২০০১-২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জামায়াতের দুইজন নেতা বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ছিলেন। মন্ত্রীও ছিলেন। কোন সংস্থা তো তাদের দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেননি। এতে সহজেই প্রমাণিত হয় জামায়াতে ইসলামের প্রার্থীরা সৎ। তিনি নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার ছাত্র শিবিরের সাবেক সফল সভাপতি ছিলেন। তিনি এমপি হতে পারলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনকে দুই চোখে দেখবেন না। এক চোখ থাকবে সরাইল আরেক চোখ আশুগঞ্জে। এসব যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মোবারক হোসেনের জন্য ভোট চেয়ে জয়ী করতে হবে। দেশের মানুষ বাবা মেয়ে স্বামী স্ত্রীর শাসন দেখেছেন। এখন ইসলামী শাসন দেখতে চাই। দেশের সকল ইসলামী দল এক প্ল্যাটফর্মে চলে আসছে। আমরা আর কাউকে কলা ক্ষেতে দিব না।
বক্তারা বলেন, ৫ আগষ্টের পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের মন্দির মন্ডপ পাহাড়া দিয়েছেন জামায়াতের লোকজন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে আমাদের সকল প্রকার কৌশল প্রয়োগ করে জনগণের ভোট / সমর্থন আনতে হবে। সততা ও ঈমানী শক্তির বলে ৫ আগষ্ট আমরা জয়ী হয়েছি। আগামী সংসদ নির্বাচনেও ঈমানী শক্তির বলে আমরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের নির্বাচন পরিচালনার কৌশল ব্যাখ্যা করে প্রধান অতিথি বলেন, দুই উপজেলায় পৃথক দু’টি পরিচালনা কমিটি হবে। তারা নিজ উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে কমিটি করবেন। ইউনিয়ন কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে। নারী পুরুষ সকল ভোটারের কাছে মোবারক হোসেনের ছালাম পৌঁছাতে হবে। সমর্থন/ভোট চাইতে হবে। এভাবে সকল প্রকার কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। সবশেষে তারা আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরাইলে ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সিলেকশন করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে বেপরোয়া গতির ট্রাক্টর চাপায় মো. আবদুর রহিম মিয়া (৫০) এক মাদ্রাসার কর্মচারী নিহত হয়েছে। আজ ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা ১টার দিকে সরাইল- নাসিরনগর- লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইল সদরের বড্ডাপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ ঘাতক ট্রাক্টরটি আটক করলেও পালিয়ে গেছে চালক ও হেলপার।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সরাইল রাহমাতুল্লিল আল আমীন মাদ্রাসার অফিস সহায়ক আবদুর রহিম। তার বাড়ি মাদ্রাসা সংলগ্ন বড্ডাপাড়া গ্রামে।
শনিবার বেলা ১টার দিকে তিনি সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছনের দিক থেকে বালু বোঝাই বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক্টর রহিমকে চাপা দেয়। ট্রাক্টরের চাপায় ঘটনাস্থলেই রহিম মারা যান। এসময় ট্রাক্টরটি ফেলে চালক ও হেলপার দ্রুত পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাক্টরটি আটক করে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই সড়কে হাল চাষের ট্রাক্টর গুলো এখন ইট, বালু ও মাটি টানছে। অধিকাংশ চালক ও ট্রাক্টর গুলোর কোন বৈধ কাগজ বা অনুমতি নেই। শিশু ও কিশোর চালকরা কানে মুঠোফোন লাগিয়ে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালিয়ে থাকে। এমন অনিয়ম যখন নিয়ম তখন তো ট্রাক্টর গুলো মানুষকে চাপা দিবেই।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ট্রাক্টরটি আটক করা হয়েছে। চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা কায়ছানকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ ২৬ মার্চ বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফেসবুক পোস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পোস্টটি প্রকাশের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন এসিল্যান্ড সিরাজুম মুনিরা কায়ছান।
এসিল্যান্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পোস্টে লেখা ছিল- “পৃথিবীর বুকে বাংলার নাম আজ উজ্জ্বল, লড়াইয়ের ইতিহাসে লেখা হলো অনন্য মহিমা, সেখানে বীরত্বের গান বাজে নিঃশব্দে, শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির সীমানা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন! এরপর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়, কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২৬ মার্চেই। তাই এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সংগ্রামের চেতনা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। আমাদের স্বপ্ন একটি দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত বাংলাদেশ। যেখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে, শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে, অর্থনীতি হবে স্বনির্ভর, এবং সর্বোপরি-গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার থাকবে সুসংহত। অর্জিত স্বাধীনতা কেবল একটি ঘটনা নয়, জীবনধারার প্রাত্যহিকতায় মুক্তির আবেশ দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি সন্তানের কাঁধে, আগামী দিনে গড়তে হবে সোনার বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা…”। পোস্টটি মূহুর্তে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পরই সরাইল উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানান এবং এসিল্যান্ডের অপসারণ দাবি করেন।
পরে তিনি দাবি করেন, তিনি নিজে পোস্টটি করেননি। তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। পরবর্তীতে আইডি ফিরে পেয়ে পোস্টটি মুছে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এসিল্যান্ড জানিয়েছেন তার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড অনেকের কাছে ছিলো। জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন আপাতত তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠাতে। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১ মার্চ শুক্রবার বাড়িতে এসে মায়ের সাথে দেখা করার কথা ছিলো সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের। ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন মা। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য বাজার সদাই করে প্রস্তুত ছিলেন মা। কাউছার বাড়িতে ফিরেছেন। তবে জীবিত নয়। লাশ হয়ে। স্ত্রী, তিন সন্তানও কাউছারের নিথর দেহের সঙ্গী হয়ে ফিরেছেন। মায়ের সাথে ছেলের শেষ কথা না শোকে পাথর হয়ে আছেন কাউছারের মা। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তখন চলছে এক সারিতে পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজ। আঙ্গিনায় রাখা আছে ৫টি খাটিয়া। আগত লোকজন বলছেন জীবনে কখনো এই গ্রামে এক সাথে পাঁচ কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখিনি। আল্লাহ তাও দেখাইলেন। শুক্রবার বিকেলে সাইরন বাজিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে ৫ লাশ নিয়ে ৪ এম্বোলেন্স প্রবেশ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামে। ওদিকে কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে পাথর হয়েছিল গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়নের নারী পুরূষ। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘেরাও করে ফেলে লাশবাশী গাড়ি গুলোকে। অঝরে কান্না ও আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ওই গ্রামের পরিবেশ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে কাউছানসহ এক পরিবারের ৫ জন নিহতের ঘটনাটি।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ার প্রয়াত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন। এলাকায় তিনি সবার কাছে কাউছার নামেই পরিচিত ছিলেন। কাউছার দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতো ঢাকার মধুবাগে। কাউছারের স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে সেটেলড হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছিল। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয়ার মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেল। গত প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কাউছার দেশে এসেছিলেন। কারণ পরিবারের সবার ইতালির ভিসা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরিবারের ৫ সদস্যেরই ইতালির ভিসা হয়েছে। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর কাউছারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। আনন্দে কাউছার পরিবারের সকলকে নিয়ে রাতে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন ডিনার করতে। এই ডিনারই যে কাল হবে সেটা তো জানা ছিল না কাউছারের। খাবার শুরূ করার পরই ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ যেন আরেক কেয়ামত। লোকজনের চারিদিকে ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার, আহাজারি আর বাঁচার আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে বেইলি রোডের পরিবেশ। অগিকান্ডের লেলিহান শিখা দেখে হোটেলে আটকে পড়াদের অনেকেরই পালস বন্ধ হয়ে যায়। শেষ রক্ষা হলো না ইতালি প্রবাসী কাউছার ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের। একে একে আগুনে পুঁড়ে মৃত্যুবরণ করলেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন কেড়ে নিল কাউছারের পরিবারের সকল সদস্যের তাজা প্রাণ। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তাদের ধূঁলোয় মিশে গেল। কাউছারের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল। পরিবারের সকলকে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো তাদের। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেল। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না। গোটা পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গ্রাম তথা গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়ন। চারিদিকে চলছে আহাজারি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কাউছারদের খালি বাড়িতে ছুটে আসছেন শতশত নারী পুরূষ। সকলের চোখেই অশ্রু। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, খুবই ভাল মানুষ ছিলেন কাউছার। এমন একটি পরিবারের সকল সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। শোকাহত হয়ে পড়েছে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ।
৪ এম্বোলেন্সে ৫ লাশ:
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে তাদের লাশ নিয়ে রওনা দেয় নিজ গ্রাম শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাটায় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর প্রথম গেইট থেকে বাম দিকে প্রবেশ করছে এক সাথে ৪টি লাশবাহী এম্বুলেন্স। এক সাথে ৪টি গাড়ির হৃদয় বিদায়ক সাইরন আর লাল বাতির জ্বলকানিতে কেঁপে ওঠেছে গ্রামবাসী। কারণ এর আগে এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ নয় তারা। চারিদিক থেকে নারী পুরূষ ও শিশুরা আসছে গাড়ির দিকে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে কাউছারদের বাড়িতে। বুঝতে বাকি নেই কাউছারদের পরিবারের পাঁচ লাশ এসে গেছে। গ্রামীণ সড়কে মানুষের জটলা। একে একে গাড়ি ৪টি চলে আসল কাউছারের বসতবাড়িতে। বাদ আছন জানাযা। লাশ মসজিদের দিকে নেয়ারও একটা তাড়া। ৫ জনের লাশকে একনজর শেষ দেখা দেখতে শুধু শাহবাজপুর থেকে নয়। পাশের ইউনিয়ন শাহজাদাপুরের দেওড়া শহজাদাপুর ও মলাইশ থেকেও লোকজন এসেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও স্বজন ও পরিচিত জন এসেছেন। বাদ আছর অর্থাৎ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় হবে জানাযা। তাই চতুর্দিকে মানুষজন জানাযা করার প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। রবিবার বাড়ি এসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছেলে মেয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য যাওয়ার কথা ছিল কাউছারের। আগামী ১৮ মার্চ তাদের ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। তাদের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ায়। পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেন স্বজনরা।
৫ কবর ৫ খাটিয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের সৈয়দ মোবারক হোসেন। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। আগামী ১৮ মার্চ তারা আকাশ পথে ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। কিন্তু বেইলি রোড ট্রাজেডি তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখন তাদের জন্য উপজেলার শাহবাজপুর নিজেদের কবরস্থানে এক সারিতে খোঁড়া হচ্ছে ৫ টি কবর। বাড়ির পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৫ টি খাটিয়া। স্বজন আর গ্রামবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠছে ওই বাড়ির পরিবেশ। কি হৃদয়বিদায় দৃশ্য। শান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে গেছে গ্রামবাসীর। স্থানীয়রা জানায়, কাউছারের বসত ঘর ফাঁকাই থাকতো। বলতে গেলে তাদের বাড়িতে লোকজন খুব একটা নেই। সব সময় ওই বাড়িতে বিরাজ করতো সুনসান নীরবতা। বাড়িতে নড়াচড়া করতো কাউছারের চাচাত ভাইয়েরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে কাউছারদের বাড়িতে। কাউছার সহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। চারিদিকে হ্যাঁ হুতাশ আর চোখের জল। সকলেই জানতে চাচ্ছেন কখন আসবে তাদের মরদেহ। বিভিন্ন জায়গা থেকে সকলেই শুধু পথের দিকে নজর দিচ্ছেন বারবার। জানতে চাচ্ছেন তাদের লাশ বহনকারী গাড়ি কোথায় আছে? কখন আসবে? জানাযা কখন কোথায় হবে? ওদিকে বাড়ির ও গ্রামের লোকজন কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে এক সাথে ৫ টি কবর খোঁড়ার কাজ শুরূ করেছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কবর খোঁড়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে পাঁচটি খাটিয়া। দেখলে গা শিউরে ওঠে। আর বাড়ির ভেতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি। একই কবরস্থানে এক সাথে ৫ কবরের দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বলেন, এই অগ্নিকান্ড শুধু কাউছারের পরিবারকে নয়, আমাদের গোটা ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।
শোকাহত উপজেলা প্রশাসন:
কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের নির্মম মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন সরাইল উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলে কাউছারদের বাড়িতে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতান। তিনি শোকাহত পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সাথে সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জানাযায় সহস্রাধিক লোক:
বাদ আছর খন্দকার পাড়া জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ওই ৫ লাশের জানাযা। জানাযায় সাবেক এমপি মৃধাসহ অংশ গ্রহন করেন সহস্রাধিক লোক। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই এক সারিতে তাদের ৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জেতায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে। ১৯ নভেম্বর রবিবার রাতে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মিষ্টি বিতরণ করেন সমর্থকরা। এসময় আতশবাজি ফাটিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন তারা।
সুফল নামের এক যুবক জানান, খেলা আনন্দের বিষয়। ইন্ডিয়া নিজেদের দেশে খেলা বলে বেশিরভাগ খেলায় দুর্নীতি করেছে। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পিচ পাল্টানো অন্যতম। আশা ছিল অস্ট্রেলিয়া একটি শক্ত দল তাদের সঙ্গে ভারত হারবে। আর সেটাই হলো। ভারত হারার প্রত্যাশায় আমি আগে থেকেই মিষ্টি ও আতশবাজি কিনে রেখেছিলাম।
তিনি দাবি করেন, বেশিরভাগ মানুষ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করেছে। ক্রিকেট একটি ভদ্র খেলা তাই ভদ্র দল কে সাপোর্ট করা প্রয়োজন।
এর আগে রবিবার ভারতের আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয়।