চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে একটি প্রভাবশালী মহল রাতের আঁধারে জলাশয় ভরাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি জলাশয় ভরাট। এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ জালশুকা গ্রামের মোঃ শওকত, আলি মিয়া, রহিম মিয়া, নান্টু মিয়া ও খবির উদ্দিন জলাশয় ভরাট বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিএস, আরএস ও বিএসসহ সকল কাগজপত্রে উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামে পানি প্রবাহিত হওয়ার খাল বিদ্যমান রয়েছে। এক সময় এই খাল দিয়ে পুরো ইউনিয়নের লোকজন কৃষি পন্য নৌকা দিয়ে জমি থেকে বাড়িতে আনা-নেওয়া করত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালটির বিভিন্ন অংশে দখল করেছেন।
উপজেলার জালশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের জলাশয় ভরাটের দায়ে গত ১৬ ফেব্রæয়ারি নবীনগর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচালনা করেন। অভিযানকালে অভিযুক্তদের একজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। অভিযানের সময় বালু ভরাট কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম পাইপ নষ্ট করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের ১ সপ্তাহ পর থেকে জলাশয়টি ব্যক্তি মালিকানার জায়গা দাবি করে রাতের আধারে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। জালশুকা গ্রামের আবেদ হোসেন ও তার ভাই মোঃ রহমান জলাশয়টি ভরাট করছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি জলাশয়ের পাশে মানুষের চলাচলের জন্য থাকা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৭শতক জায়গাও ভরাট করা হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের (২০০০) ৫ ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেনী পরিবর্তন করা যাবে না।
এ ছাড়া এ ধরনের জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর করা যাবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।
জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি আইন অমান্যকারীর নিজ খরচে সেটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার বিধানও রয়েছে।
ভূমি কার্যালয়ের একটি নথিতে দেখা গেছে, ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১২১ দাগে মানুষের চলাচলের জন্য ১৭শতক চলার পথ রয়েছে। ইতোমধ্যে জায়গাটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, জালশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি জলাশয় রয়েছে। ওই জলাশয়ের নিচের দিকে বেশিরভাগ অংশ বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এর দক্ষিণদিকে গোকর্ণ-কৃষ্ণনগর সড়ক সংলগ্ন একটি খাল রয়েছে। তবে ওই খালেরও অনেকটা জায়গা বালু ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ভরাট করার পরও কিছু অংশে পানি দেখা যায়। ওই জায়গা বেশ কিছু শিশু শিক্ষার্থীকে খেলা করতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের নায়েব মো. রাসেল জানান, অনুমতি না নিয়ে জলাশয় ভরাটের অভিযোগে জরিমানা করা হয়। তবে যতদূর জানি জরিমানা করার পর জায়গাটিতে আর বালু ফেলা হয়নি।
ভরাটের সাথে যুক্ত আবেদ হোসেন বলেন, প্রশাসনের অভিযানের পর আমরা আর বালু ফেলিনি। জায়গাটি আমাদের নিজস্ব। স্কুলের মাঠের জন্য এখান থেকে মাটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন জলাশয় হয়ে যাওয়ায় অনুমতি না নিয়ে ভরাটের কারণে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। তারা বলছে ভরাটের অনুমতি লাগবে।
এ ব্যাপারে মোঃ রহমান বলেন, ‘এটি খাল বা জলাশয় নয়। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া এখানে আমাদের ৪০শতক জমি রয়েছে। আমাদের জমির মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ এবং গোকর্ণঘাট-কৃষ্ণনগর সড়ক নির্মানের জন্য দেয়া হয়েছে। খালের কোনো জায়গা ভরাট করা হয়নি। বরং আমাদের জমির উপর দিয়ে সেচের পানির নালা গিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এলাকায় থাকি না। একটি চক্র আমাদের জমি ভরাটকে জলাশয় ভরাটের নাম দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, আমি শুনেছি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পর থেকে জলাশয় ভরাট বন্ধ রয়েছে। তবে আমি যতদূর জানি এটি তাদের ব্যক্তিগত জায়গা। একসময় জমি ছিল। স্কুলের মাঠ ও রাস্তা নির্মাণের সময় তাদের জমি থেকে মাটি নিয়েছিল। এটাকে এলাকায় মরা ডোবা বলে। বর্তমানে ভরাট বন্ধ আছে। শুনেছি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর ফরহাদের সাথে যোগাযোগগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৮ অক্টোবর ভারত উপমহাদেশের রাগ সঙ্গীতের কিংবদন্তি সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৬১তম জন্মদিন।
১৮৬২ সালের আজকের এই দিনেই তিনি তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে, যা বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
তার বাবা সবদর হোসেন খাঁ এবং মা সুন্দরী বেগম। শিশুকাল থেকেই সুরের প্রতি তার এক অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। বাল্যকালে বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয়। সুরের প্রতি তার এতটাই মোহ ছিল এই সুরের জ্ঞান অর্জনে তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন।
কিশোর বয়সে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কলকাতার প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের শিষ্যত্বে সাত বছর সরগম সাধন করে যন্ত্রসংগীত সাধনায় নিযুক্ত হন। এরপর থেকেই তিনি ভারতে বসবাস শুরু করে বাদ্যযন্ত্রের তালিম নিতে থাকেন। তিনি তার সুরের মূর্ছনায় তৎকালীন ব্রিটিশ রানী থেকে সুর সম্রাট উপাধিসহ ভারত উপমহাদেশে দুর্লভ উপাধি ও সম্মানে ভূষিত হন।
এদিকে, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের দিনটি পালনে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নিজ জন্মভূমি শিবপুর গ্রামে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাগসঙ্গীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এই সঙ্গীতজ্ঞ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পুর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতবর্ষী উদযাপন কমিটির আয়োজনে এ উপলক্ষে দিনব্যাপী ২২ জুন শনিবার বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৫ আসনের সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহন, এএসপি বিল্লাহ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোনাহর আলী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কৃষিবিদ মোঃ সাজিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম, উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ভিপি আব্দুল রহমান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হক সরকার, নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, জসিম উদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান, জাকারুল হক চেয়ারম্যান, মেহেদী জাফর দস্তগীর, চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান শাহিন সরকার, প্রফেসর আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
শত বছর উৎসব অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনায় করেন সালাউদ্দিন বাবু আব্দুল মাজেদ।
এ সময় বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
প্রধান অতিথি ফয়জুর রহমান বাদল এম.পি বলেন, সাংস্কৃতিক রাজধানী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার আলো বিস্তারে শতবছরের পুরনো এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পরে এক মনোগ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এসে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সবাই।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।
গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।
স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।
এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।
উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।
নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।
উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর পূর্বাঞ্চলে নবীনগর টু রাধিকা সড়ক ও বিটঘর টু রসুলপুর মহেশ রোডে সিএনজি ভাড়া অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
জানা যায়, মহেশ রোড ও রাধিকা সড়ক পূর্বে বেহাল দশা ছিল, তাই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতো যাত্রীদের কাছ থেকে। বর্তমানে রাধিকা সড়ক ও মহেশ রোড এর রাস্তার কাজ হয়েছে, যার ফলে অল্প সময়ে জেলা সদরে ও নবীনগর সদরে যাতায়েত করা যায়।বর্তমানে এই নতুন সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অনিচ্ছুক যাত্রীরা। ভাড়া নিয়ে ড্রাইভার আর যাত্রীদের মধ্যে তর্কবিতর্ক যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ড্রাইভার আর যাত্রীদের মধ্যে তর্ক বিতর্কই থেমে যায় না, হাতাহাতি— মারামারির ঘটনাও অনেক সময় হয়ে থাকে এই অতিরিক্ত ভাড়া কে কেন্দ্র করে। তাই অতিবিলম্ব এই রাধিকা সড়কে ও মহেশ রোডের যাতায়াতের জন্য বিটঘর, শিবপুর, ব্রাহ্মণহাতা, কুড়িঘর স্টেশনের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করিয়া দিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোরালো দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।
বিটঘর ইউনিয়নের গুড়িগ্রামের মোশারফ হোসেন বলেন, আমি বিটঘর পুকুরপাড় সিএনজি স্টেশন থেকে ৪৫ বা ৫০ মিনিটে নতুন রাধিকা সড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যায় কিন্তু ভাড়া দিতে হয়েছে সেই চারগাছ—তিললাখপীর সড়ক হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ঘন্টা সময় লাগার ১৩০ টাকা ভাড়া। ৪৫/৫০ মিনিটে আসা ভাড়া কিভাবে ১৩০ টাকা নিল, তা আমার বোধগম্য নয়। আমি মেনে নিতে পারছি না, তবুও ১৩০ টাকা ভাড়া দিলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা যাত্রী বলেন, আগে বিটঘর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতাম,তখন রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়া নিয়েছে ১৩০ টাকা। এখন মহেশ রোড ও রাধিকা রোড এর রাস্তার কাজ হয়েছে। এখন বিটঘর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে সময় লাগে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট কিন্তু ভাড়া কমানো হয়নি পূর্বের যে বাড়া নির্ধারন ছিল, সেই ভাড়া নিচ্ছে তারা। কখনো কখনো অতিরিক্ত টাকাও দিতে হচ্ছে তাদের। এই লাগামহীন ভাড়া আদায়ের, যেন দেখার কেউ নাই। এই রোডে সঠিক তদারকির অভাব বলে দাবি করছি আমরা। তাই এই রোডের সিএনজি ভাড়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী জাফর দস্তগীর এবিষয়ে বলেন, এই অতিরিক্ত ভাড়া কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়, এখানের মত এত বেশি ভাড়া বাংলাদেশে কোথাও নাই আমার জানা মতে। এই রোড পরিচালনায় দায়িত্বরত সকলকে নিয়ে ও শিবপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ কামাল হোসেন ভাইকে সাথে নিয়ে বসব, সকলের পরামর্শক্রমে অচিরেই নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে কাকডাকা ভোরে, ঝড়-বৃষ্টি-তুফান উপেক্ষা করে যথা সময়ে নবীনগরের পাঠকদের হাতে সংবাদপত্র তুলে দেওয়া সেই লোকমান হেকিম চৌধুরী (৭২) জীবনের শেষ দিনও দুপুর পর্যন্ত পাঠকের হাতে পত্রিকা তুলে দিয়ে রাতেই চিরতরে পাঠকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পরপারে চলে গেলেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না … রাজিউন)।
জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার নবীনগর উপজেলার একমাত্র সংবাদপত্র এজেন্ট ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও মারা যাওয়ার দিনও বিক্রি করেছেন পত্রিকা। মুত্যুকালে স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান।
আজ শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর কনিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা নামাজ শেষে চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।
জানা যায়, লোকমান হেকিম চৌধুরী নবীনগর লঞ্চ ঘাটে বসে দীর্ঘ প্রায় ৫৭ বছর যাবৎ নবীনগরবাসীকে সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, সংবাদপত্র ক্রয় করার জন্য লঞ্চ ঘাটে ছুটে আসতো নানা শ্রেনীর সংবাদ পাঠক। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান উপেক্ষা করে যথা সময় মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। যাকে নবীনগর প্রশাসনেরসহ সর্বস্তরের মানুষ কাছে চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। উনার একমাত্র ছেলে খান জাহান আলী চৌধুরী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। মারা যাওয়ার দিনও পত্রিকা বিক্রি করেছেন লোকমান হেকিম চৌধুরী। বিকেলে ঘুরে ফিরে দেখেছেন নিজের জমি জমা। রাতে একমাত্র ছেলে খান জাহান আলীকে সাথে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঔষধ খেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। এর পর আর জেগে উঠেননি তিনি। নবীনগরের লঞ্চ ঘাটের সামনে উনার সংবাদপত্র এজেন্টের দোকানে সব সময় মানুষের একটা আড্ডা থাকতো। সদা রসিক এবং আড্ডা প্রিয় মানুষ ছিলন। তিনি পত্রিকার একজন সুনামধারী এজেন্ট হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। উনার কাজের সন্তুষ্টির কারনে উপজেলা প্রশাসন, প্রেসক্লাব, বিভিন্ন সাংবাদিক এবং সামাজিক সংগঠন ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রত্যেক বছরই নানারকম পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
লোকমান হেকিম চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদে নবীনগরে শোকে ছায়া নেমে আসে। শোক প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম, নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম, নবীনগর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন আহমেদ, নবীনগর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় সংবাদকর্মী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।