অনলাইন ডেস্ক :
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মাছ-মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই দাম অনুযায়ী পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে কাজ করবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতা বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত দামে কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ করা হলো।
নতুন এ দাম তিনটি স্তরে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি পণ্য উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম, পাইকারি বাজারে এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা দাম কতো হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৯৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৯৮ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। মসুর ডালের খুচরা পর্যায়ে দাম হবে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং মোটা দানার মসুর বিক্রি হবে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায়। খেসারি ডালের খুচরায় সর্বোচ্চ দাম হবে ৯৩ টাকা। এছাড়া মাসকালাই ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডাল খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ছাগলের মাংসের দাম ১ হাজার ৩ টাকা। আর মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। এছাড়া প্রতি পিস ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা এবং রসুন ১২০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হবে। এছাড়া শুকনো মরিচের সর্বোচ্চ দাম হবে ৩২৭ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় খুচরা বাজারে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
অন্যদিকে সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতিকেজি বেগুণ ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি জাহেদী খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
স্টাফ রিপোর্টার:
আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীমতে, সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউতলীস্থ সৌধ হিরন্ময়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বেলা ১১টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। এছাড়া কাল বাদ জোর জেলার সকল মসজিদে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে তিতাস আবৃত্তি সংগঠন। এদিকে জাতীয় কর্মসূচীমতে, দিবসটিতে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন। এদিন সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। অন্যদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভাঙ্গায় স্মার্ট মাদ্রাসা বিনির্মাণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৩ জুন মঙ্গলবার বিকালে ভাঙ্গার ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসার উদ্যোগে মাদরাসা চত্বরে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আবু ইউসুফ মৃধার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিমউদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জালালউদ্দিন, মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান, ভাঙ্গা উপজেলা একাডেমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রহ্লাদ বিশ্বাস, কাউলিবেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম প্রমুখ।
সভায় মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষা ও গণমাধ্যমসহ আরও কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সে অনুযায়ী রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। রূপরেখা অনুযায়ী কমিশনের কার্যক্রম চলবে।
আজ ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ শেষে বাংগাখাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর যেভাবে নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সে ফ্যাসিস্টদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। সে যেই হোক না কেন। যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোক। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ ধীরে ধীরে ফিরে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেন এই কার্যক্রমগুলো দ্রুত শেষ করা হয়। দেশে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। অনেক মামলা গ্রহণযোগ্য নয়।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে মামলাগুলোর কার্যক্রম যেন শেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন নাহিদ ইসলাম।
অনলাইন ডেস্ক :
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি যে, কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। তেমনি অযৌক্তিকভাবে যে কোটা সংরক্ষণ করা আছে, এগুলোকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি এবং করব। আমাদের সংবিধানে কোটার কথা বলা আছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অগ্রসরতার জন্য কোটার প্রয়োজন আছে।
আজ ১৩ জুলাই শনিবার দুপুরে মাদারীপুর জেলার শিবচরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ‘দাদাভাই হাউজিং এস্টেট’ এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তো আর কোটার দরকার নাই। তাদের সন্তানেরাও কোটার বাইরে চলে গেছে। এখন অন্যদেরকে কোটা দেওয়া হবে কিনা তা আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সরকার সেভাবেই কাজ করবে। এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলব, আপনারা আরেকটু অপেক্ষা করুন, ধৈর্যধারণ করুন। এভাবে আপনারা পড়াশোনা নষ্ট করে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদের প্রতি সিমপ্যাথি থাকা স্বত্বেও আমরা মনে করি আপনারা নিজেদের ক্ষতি করছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা মাঠ থেকে উঠে আসুন, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুন। সেই সঙ্গে আপনাদের দাবির ব্যাপারেও সোচ্চার থাকুন। আমরা আপনাদের অভিভাবক, আমরা আপনাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব নাই। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিও সংবেদনশীল। আমাদের সরকার অবশ্যই সব দিকেই বিচার বিশ্লেষণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলার দাদা ভাই উপশহরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগদান করেন। এসময় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিবচরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ২০২৪ বাস্তবায়নের জন্য ছাতিয়ান, কাঠবাদাম, জারুল, চেরি, কাঁঠাল, জলপাই, জামরুল, পলাশ, গাব, জাম্বুরা, দেশী টগর, রাধাচূড়া, নারকেল, সোনালু, নিম, বকুল, করবি, আলমন্ডা, মৌসুন্দা গোলাপি, চালতা, চাইনিজ টগর, সিজিমাস, গোল্ডেন সাওয়ার, ল্যাংড়া আম রঙ্গন গোলাপি, বোতল ব্রাশ, কৃষ্ণচূড়া, পেয়ারা, মেহেদী, শিউলি, লটকন, মেহগনি, বড়ই, আম, ফলসা, জাম, হরতকি,বয়রা, অর্জুন, হিজল, ডেউয়া, আমলকী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমান খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.আব্দুল মতিন, যুগ্ম সচিব শাহনাজ সামাদ, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক(যুগ্ম সচিব) মো.শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব -শেখ নূর মোহাম্মদ, মো.সোহেল হাসান, আবুল কালাম আজাদ, ফরিদুল ইসলাম, মো.জহিরুল ইসলাম, দেবময় দেওয়ান, মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন, মো.আতিউর রহমান।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, পুলিশ সুপার শফিউর রহমান,শিবচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মো. সেলিম মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন, শিবচর পৌর মেয়র মো. আওলাদ হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।
সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।
বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।
৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।
মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।
একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।
সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।