দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি নবীনগর-আশুগঞ্জ নির্মিত সেতুগুলো

নবীনগর, 16 March 2024, 913 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নের সড়ক নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও গত তিন বছর আগে সড়কের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

banner

ভূমি অধিগ্রহনে জটিলতা, ঠিকাদারের গাফিলতি এবং প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারনে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। এতে দিন দিন বাড়ছে স্থানীয়দের ক্ষোভ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে মহাসড়কটি নির্মাণ কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাশ হওয়ার পর গত ২০১৮ সালের ১লা জুলাই মেঘনা-তিতাস ও পাগলা নদীর তীর ঘেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার সাথে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক সড়কটির নির্মান কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ।

প্রকল্পের সময় সীমা অনুযায়ী গত ২০২১ সালের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে ভ‚মি অধিগ্রহণে জটিলতা ও প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারনে মাঝ পথেই থমকে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ।

প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় মোট ৪২১ কোটি ধরা হলেও সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সড়কটির নির্মাণ ব্যায় বাড়ানো হয় আরো ১৮৩ কোটি টাকা। এতে সর্বশেষ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৬০৪ কোটি টাকা।

এদিকে সড়কটি নির্মাণের আগেই ২০ কিলোমিটার পথে পাগলা ও তিতাস নদীর উপর ২টি বড় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়ক নির্মাণের আগেই ৯টি মাঝারি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় সেতু ও কালভার্ট গুলো জমির উপর দৃশ্যমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়দের দাবি জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রæত সময়ের মধ্যে সড়কটি নির্মাণ কাজ যেন দ্রæত বাস্তবায়ণ করা হয়।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা গ্রামের মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তা না করার কারনে আমাদের গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এখানে ব্রীজ আছে তবে রাস্তা নেই। মানুষ পায়ে হেটে কষ্ট করে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যদি দ্রুত রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

নবীনগর উপজেলার গাজীরকান্দি গ্রামের মোঃ সাজন মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে মোটর সাইকেল যাওয়ার রাস্তা নেই । অথচ এখানে নাকি ফোর-লেন রাস্তা হবে। রাস্তার রামে খোঁজ নেই, অনেক গুলো ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের দাবি এই রাস্তার কাজ যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তাহলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।

একই গ্রামের হাজেরা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, রাস্তা না থাকার কারনে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হচ্ছে। পায়ে হেঁটে তাদের চলাফেরা করতে হয়। তিনি বলেন, রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগে কেন ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এই ব্রীজগুলো আমাদের কোন কাজে আসছেনা।

এদিকে নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কাজের ধীরগতির জন্যে সচেতন মহল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফলতি এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারসাজিকেই দায়ী করেছেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ নির্মানাধীন রাস্তাটির কাজ প্রায় ৫বছর ধরে ঝুলে আছে। আমি মনে করি যারা প্রাথমিকভাবে রাস্তার জন্য ব্যয় ধরেছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারন তারা তখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভ‚মির বাজার দর না জেনেই এই ব্যয় ধরেছেন। তাই এখন প্রকল্পের কাজ যেমন দেরি হচ্ছে, সেই সাথে প্রকল্পের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, সড়কটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায়, আগের যে ভ‚মি অধিগ্রহণ করা ছিল সে জায়গা এবং যেখানে রাস্তা ছিল সেখানে কাজ করার সুযোগ ছিল।

কিন্তু ঠিকাদার তার সময় বাড়ানোর কোন আবেদন না করায় আমরা সেটির দরপত্র বাতিল করে দিয়েছি। আমরা পরবর্তীতে নতুন করে দরপত্র আহবান করেছি। সেটির মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুণঃ দরপত্র আহবানসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দ্রæত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ২০ কিলোমিটার লম্বা সড়টিতে ২টি বড় সেতু, ৭টি মাঝারি সেতু এবং ১৩টি কালভার্ট রয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

নবীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রাইভেটকার ও ট্রাক্টরের সঙ্গে Read more

প্রতিপক্ষের হামলায় নারী নিহত, দুইজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খাইরুন Read more

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

নবীনগরে সাংবাদিকদের সাথে শাহ আলমের মতবিনিময়

নবীনগর, 26 February 2024, 960 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে স্থানীয় জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে মতবিনিময় করেছেন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহ আলম।

banner

মতবিনিময় সভায় তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নবীনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শাহ আলম বলেন, ছাত্র রাজনীতি শেষ করে আমি আমার প্রিয় জন্মভূমি নবীনগরে এসেছি ভালোবাসা নিতে এবং দিতে।

নবীনগরবাসীর সেবা ও এলাকার উন্নয়নে নিয়োজিত করার লক্ষ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবার ইচ্ছা পোষণ করছি। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে ফয়জুর রহমান বাদল ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় সকল কাজ করে যাবো ইনশাহ্ আল্লাহ্।

যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি

নবীনগর, 6 August 2023, 1268 Views,

কমিউনিস্ট নেতা প্রদীপ সাহার স্মরণসভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার মূল মন্ত্র ছিল ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না-তা হবে না।’ সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্যই দেশ স্বাধীন করেছিলাম। দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ। তাদের সেই ত্যাগের সুফল ভোগ করছে পুঁজিবাদী একটি শ্রেণি।’

banner

নবীনগর উপজেলা কমিউনিস্ট নেতা প্রদীপ সাহার স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পৌর সদর বড়বাজার প্রাঙ্গণে এ সভা হয়।

ডাকসুর প্রথম ভিপি সেলিম বলেন, ‘মাথাপিছু আয়ের হিসাব ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। সেই পরিমাণ টাকা কি আমারা পাচ্ছি? দেশ আজ ঋণগ্রস্ত, মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ১ লাখ টাকা। আজ দেশের অর্থ এক শ্রেণির হাতে জিম্মি। ১৬ বছরে দেশ থেকে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে, যা ফেরত আনার কোনো সুযোগ নেই।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে নীতিতে দেশ চালাচ্ছে, তার আগে বিএনপি, এরশাদসহ সব সরকাই একই নীতিতে দেশ চালিয়েছে। তারা দেশকে আজ দেওলিয়াপনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

প্রদীপ সাহার স্মৃতিচারণ করে তাঁর নামে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি সড়ক নামকরণের দাবি জানান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

সিপিবির নবীনগর উপজেলা শাখার সভাপতি ইসহাকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান তারিখ চৌধুরী, সিপিবির জেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ মো. জামাল, সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম, প্রয়াত নেতার সহধর্মিণী সবিতা রানী সাহা প্রমুখ।

নূরজাহানপুর আশ্রয়ণের ঘর ২০ হাজারে বিক্রি

নবীনগর, 31 January 2023, 1754 Views,

নবীনগর প্রতিনিধি :
জনপ্রতি ২ শতাংশ জমি ও প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে সুবিধাভোগীরা সে ঘর বিক্রি করে দিচ্ছেন মাত্র ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। নবীনগরে ভূমিহীনদের জন্য দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এভাবে বেচাকেনা চলছে। বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তবে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

banner

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নূরজাহানপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৫টি ঘরের মধ্যে ছয়টি বিক্রি হয়ে গেছে। অন্তত ৩০টিতে ঝুঁলছে তালা। কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা ঘরে বসবাস করছেন। গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের ২ নম্বর গলির ৩ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান মৃত আফছার উদ্দিনের স্ত্রী সাধনের নেছা। তাঁর ছেলে রুবেল মিয়া স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকায় শাহনাজ বেগমের কাছে বিক্রি করে দেন। রুবেল মিয়া বলেন, টাকার প্রয়োজনে ঘরটি বিক্রি করেছেন তাঁরা।

গলির ২ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান গাজী মদনের স্ত্রী জুলেখা বেগম। ৩৫ হাজার টাকায় ইমন মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম ঘরটি কিনেছেন। ৯ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত ফজলুল মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগম। তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনে ঘরে বসবাস করছেন মৃত হামিদ মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম। ১৭ নম্বর ঘর বরাদ্দ পাওয়া ধরাভাঙা গ্রামের হাবিব মিয়া ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন থোল্লাকান্দি গ্রামের নার্গিস বেগমের কাছে। বড়িকান্দি গ্রামের ইকবাল হোসেন ১ নম্বর গলির ৯ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। তিনি ৩৫ হাজার টাকায় একই গ্রামের কালন মিয়ার ছেলে মো. মোক্তার হোসেনের কাছে বিক্রি করেছেন।

২ নম্বর গলির বাম পাশের ৯ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন জমেলা বেগম। এ ঘর ৩০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন হক মিয়া ও তাঁর পরিবার। এদিন প্রকল্পের প্রায় ৩০টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্য বাসিন্দারা জানান, বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা ঘরে থাকেন না, আসেনও না। আর বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কেনার কথা স্বীকার করে জানান, তাঁদের কোনো বাড়িঘর নেই। আবেদন করেও ঘর বরাদ্দ পাননি। এ জন্য স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনে বসবাস করছেন।

২ নম্বর গলির ১৭ নম্বর ঘর কিনে মালিক হওয়া অসহায় নারগিস বেগম বলেন, তাঁর ঘরবাড়ি নেই। কষ্ট করে ২২ হাজার টাকা জোগাড় করে তিনি হাবিব মিয়ার কাছ থেকে ঘর কেনেন। তাঁর নামে দলিল করে দেবে বলে জানিয়েছে। ২ নম্বর গলির ২ নম্বর ঘর কেনা মালিক রহিমা বেগম বলেন, বরাদ্দের জন্য আবেদন করেও ঘর না পেয়ে কিনেছেন।

এ ছাড়া মোক্তার হোসেন, নাজমা বেগম, হক মিয়া ও শাহনাজ বেগমও ঘর কেনার কথা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে ঘর বিক্রি করা সুবিধাভোগী কাউকে না পাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লাল মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সুপারিশ করা হবে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী আক্তার হোসেন বলেন, ঘরগুলো বিক্রি হয়েছে। অনেকে আবার থাকেন না। অনেকের বাড়িঘর আছে। অথচ ভূমি ও ঘরহীন অনেকে বরাদ্দ পাননি। ঘর বরাদ্দের ব্যাপারে অনিয়ম হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানালেও আমলে নেননি।
এ বিষয়ে বড়িকান্দি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রোকসানা বেগম পরে কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এটি ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাজ। এ বিষয়ে তাঁরাই ভালো জানেন। তিনি তালিকা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান বলেন, তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি বিষয়টি অবগত হয়েছেন। বড়িকান্দি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন

নবীনগর, 18 April 2025, 274 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
তিতাস এবং মেঘনা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুটি প্রধান নদী। এ দুটি নদীর অববাহিকায় কৃষক আবাদ করছে বাদাম, টমেটো, শাক সবজি সহ নানাবিধ ফসল। তারমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে মিষ্টি আলু।

banner

এখানে কৃষি জমিতে যতদূর চোখ যায় এ যেনো এক টুকরো মিষ্টি আলুর রাজ্য। নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নবীনগরে ২২৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে। এখানে মিষ্টি আলুর স্থানীয় জাতের পাশাপাশি কৃষকরা ওয়াকিনাওয়া জাতের জাপানি মিষ্টি আলুর চাষাবাদ শুরু করে সফল হয়েছেন। এ জাতের মিষ্টি আলু অন্য জাত থেকে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, রোগ বালাইয়ের প্রকোপও কম হয়। যার ফলে এ জাতের মিষ্টি আলু চাষে স্থানীয় কৃষকদের সফলতা দেখে এখন আশেপাশের অনেকেই মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তারা ওয়াকিনাওয়া জাতের মিষ্টি আলু আবাদে অল্প বিনিয়োগে যেমন ভাল ফলন পাচ্ছে তেমনি তারা আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হচ্ছেন।

নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমীন জানান, অধিকাংশ স্থানীয় জাতে উৎপাদন কম হয়, ওয়াকিনাওয়া জাতের মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, রোগ বালাই প্রকোপ কম। আমরা এই জাত নিয়ে আশাবাদী। কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠে এসে তদারকি করছেন।

নবীনগর উপসহকারী কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম এনি জানান, স্থানীয় জাতের পাশাপাশি এখানে গত কয়েক বছর ধরে আবাদ হচ্ছে জাপানি মিষ্টি আলু ওয়াকিনাওয়া। স্থানীয় আলুর তুলনায় এই আলুর আকার বেশ বড় এবং ভিতরের অংশ কমলা রঙের। এ জাতের মিষ্টি আলু অন্য ফসলের তুলনায় উৎপাদন যেমন বেশি, বাজার দরও ভাল। এখানে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলু আবাদ হয় নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের নবীপুর, লাপাং, চর লাপাং, দড়িলাপাং গ্রামের নদীর অববাহিকায়। তাছাড়া বীরগাঁও, কৃষ্ণনগর, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় জাপানি মিষ্টি আলু ওয়াকিনাওয়া অনেক বেশি ফলন হয়। যার ফলে এ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

নবীনগরে ৩ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি উদ্ধার

নবীনগর, 16 March 2024, 921 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে সরকারি জলাশয় ভরাট করে নির্মিত মার্কেট উচ্ছেদ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

banner

১৫ মার্চ শুক্রবার দুপুরে নবীনগর পৌর এলাকার নারায়ণপুর এলাকায় নবীনগর ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ঐ সরকারি জায়গা উদ্ধার করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নবীনগর ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম জানান, নবীনগর পৌর এলাকার নারায়ণপুর এলাকায় ১ বিঘা (৩৩ শতক) সরকারি জলাশয় ভরাট করে অবৈধ ভাবে দখল করে দোকান নির্মাণ করে আসছিল একটি প্রভাবশালী মহল। শুক্রবার দুপুরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে নির্মিত ২টি মার্কেট ও ১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। উদ্ধারকৃত সরকারি জায়গার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।

তিনি আরো জানান, পাশাপাশি আশপাশের সরকারি জায়গায় আর কেউ যেন কোনো দোকান নির্মাণ না করে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়। সরকারি জমি উদ্ধারে এ ধরনের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় নবীনগর থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলো।