দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি নবীনগর-আশুগঞ্জ নির্মিত সেতুগুলো

নবীনগর, 16 March 2024, 477 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নের সড়ক নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও গত তিন বছর আগে সড়কের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহনে জটিলতা, ঠিকাদারের গাফিলতি এবং প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারনে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ। এতে দিন দিন বাড়ছে স্থানীয়দের ক্ষোভ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে মহাসড়কটি নির্মাণ কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাশ হওয়ার পর গত ২০১৮ সালের ১লা জুলাই মেঘনা-তিতাস ও পাগলা নদীর তীর ঘেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও আশুগঞ্জ উপজেলার সাথে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক সড়কটির নির্মান কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ।

প্রকল্পের সময় সীমা অনুযায়ী গত ২০২১ সালের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে ভ‚মি অধিগ্রহণে জটিলতা ও প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির ভুলের কারনে মাঝ পথেই থমকে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ।

প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় মোট ৪২১ কোটি ধরা হলেও সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সড়কটির নির্মাণ ব্যায় বাড়ানো হয় আরো ১৮৩ কোটি টাকা। এতে সর্বশেষ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৬০৪ কোটি টাকা।

এদিকে সড়কটি নির্মাণের আগেই ২০ কিলোমিটার পথে পাগলা ও তিতাস নদীর উপর ২টি বড় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সড়ক নির্মাণের আগেই ৯টি মাঝারি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় সেতু ও কালভার্ট গুলো জমির উপর দৃশ্যমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়দের দাবি জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রæত সময়ের মধ্যে সড়কটি নির্মাণ কাজ যেন দ্রæত বাস্তবায়ণ করা হয়।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা গ্রামের মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তা না করার কারনে আমাদের গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এখানে ব্রীজ আছে তবে রাস্তা নেই। মানুষ পায়ে হেটে কষ্ট করে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যদি দ্রুত রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

নবীনগর উপজেলার গাজীরকান্দি গ্রামের মোঃ সাজন মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে মোটর সাইকেল যাওয়ার রাস্তা নেই । অথচ এখানে নাকি ফোর-লেন রাস্তা হবে। রাস্তার রামে খোঁজ নেই, অনেক গুলো ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের দাবি এই রাস্তার কাজ যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তাহলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।

একই গ্রামের হাজেরা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, রাস্তা না থাকার কারনে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হচ্ছে। পায়ে হেঁটে তাদের চলাফেরা করতে হয়। তিনি বলেন, রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগে কেন ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এই ব্রীজগুলো আমাদের কোন কাজে আসছেনা।

এদিকে নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কাজের ধীরগতির জন্যে সচেতন মহল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফলতি এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারসাজিকেই দায়ী করেছেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ নির্মানাধীন রাস্তাটির কাজ প্রায় ৫বছর ধরে ঝুলে আছে। আমি মনে করি যারা প্রাথমিকভাবে রাস্তার জন্য ব্যয় ধরেছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারন তারা তখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভ‚মির বাজার দর না জেনেই এই ব্যয় ধরেছেন। তাই এখন প্রকল্পের কাজ যেমন দেরি হচ্ছে, সেই সাথে প্রকল্পের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, সড়কটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায়, আগের যে ভ‚মি অধিগ্রহণ করা ছিল সে জায়গা এবং যেখানে রাস্তা ছিল সেখানে কাজ করার সুযোগ ছিল।

কিন্তু ঠিকাদার তার সময় বাড়ানোর কোন আবেদন না করায় আমরা সেটির দরপত্র বাতিল করে দিয়েছি। আমরা পরবর্তীতে নতুন করে দরপত্র আহবান করেছি। সেটির মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুণঃ দরপত্র আহবানসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দ্রæত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ২০ কিলোমিটার লম্বা সড়টিতে ২টি বড় সেতু, ৭টি মাঝারি সেতু এবং ১৩টি কালভার্ট রয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

নবীনগরে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা কৃষকরা আগাম স¦প্ন দেখছেন

নবীনগর, 31 January 2023, 1265 Views,

নবীনগর প্রতিনিধি :
নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীবাহিত পলির বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে ব্যাপক ভাবে সরিষা চাষ হচ্ছে। এ বছর সরিষা চাষে সাফল্যে আশানুরুপ সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এ এলাকার কৃষকরা রবি মৌসুমে সরিষা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা করছে। উপজেলার যে সব ইউনিয়নে বেশী সরিষা আবাদ বেশী হয় সে সকল ইউনিয়ন গুলো হল রছুুল্লাবাদ, বীরগাঁও, বড়াইল, সলিমগঞ্জ, কৃষ্ণনগর, বিটঘর, নাটঘর। এ বছর কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা চাষ করেছে প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে। মন প্র্রতি সরিষার মুল্য ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৮-৯ মন সরিষা উৎপাদন হয়। এ বছর বৃষ্টিতে ক্ষতি না হলে প্রায় ২,০০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হত।

কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. আবু তাহের তার চাষকৃত জমির পরিমান- ৫০ শতক। বিটঘর ইউনিয়নের গুড়িগ্রামের হারেছ ভূঁইয়া তার চাষকৃত জমির পরিমাণ- ১০০ শতক। প্রতিটি জমিতেই তরতাজা সবুজ সরিষা গাছ গুলোতে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে ওঠায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। সরেজমিনে এ সমস্ত এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কোন কোন জমিতে তাজা সরিষা ফুল / কোন জমিতে ফুল ঝড়তে শুরু হয়েছে। কোন জমির গাছ গুলোতে সরিষার দানা ও বাঁধতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। রতনপুর ইউনিয়নের ভিটি বিশারা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক মিয়া জানান, এ বছরই তিনি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তার জমিতে সরিষার গাছ গুলো যেভাবে লকলকিয়ে উঠেছে এবং হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে তাতে তিনি এ বছর সরিষার ভাল পাবেন বলে আশাবাদি হয়েছেন। রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের রছুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক খন্দকার ফরিদ মিয়া জানান, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় জমিতে সরিষার ফলন ভাল হবে বলে তিনি আশা করছেন। গত বছর যে সমস্ত জমিতে অন্য ফসল চাষ করেছিলেন এবার সেই জমিতেই অত্যান্ত কম খরচে সরিষা চাষ করেছেন। সরিষার বাড়ন্ত ফুলে ভরা গাছগুলো দেখে তিনি আশান্বিত হয়েছেন । এবারে সরিষা উৎপাদন করে তিনি যথেষ্টই লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার জানান,অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকার চেয়ে উঁচু এলাকার পলি সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে সরিষা ফসলের আবাদ ভাল হচ্ছে। কারণ এ রুপ জমি গুলো অত্যন্ত উর্বর। এ বছর রবি মৌসুমে কৃষকরা মরিচ, সরিষা, ছিটানো পিঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ভুট্টা, ধনিয়া পাতা, গোলআলু – মিষ্টি আলু, বাদামসহ বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে চাই, যা গ্রামাঞ্চলের চিরায়ত অভাব নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নবীনগরে সাপের কামড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

নবীনগর, 17 September 2023, 736 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে বিষধর সাপের কামড়ে সোনিয়া (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ৯টায় নবীনগর উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মৃত সোনিয়া ওই এলাকার মজনু খানের মেয়ে। সোনিয়া বিটঘর উচ্চ বিদ্যালয় ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।

সোনিয়ার বাবা মজনু মিয়া জানান, তার মেয়ে সোনিয়া রাতে শখের বসে হাতে মেহেদী দিচ্ছিল। এসময় সোফায় বসা অবস্থায় একটি বিষধর সাপ তার বাম পায়ে কামড় দিলে সোনিয়া সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তারা সোনিয়াকে রাত ৯টায় জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুজ্জামান হিমেল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোনিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকেরা। সোনিয়ার পায়ে সাপের কামড়ের চিহ্ন ছিল। বিষধর সাপের কামড়েই সোনিয়ার মৃত্যু হয়েছে।

নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাত গ্রেফতার

নবীনগর, 15 October 2024, 70 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক, ৭টি কার্তুজ এবং ২টি দা উদ্ধার করা হয়। গতকাল ১৪ অক্টোবর সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ধারাভাঙ্গা গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এরা হলেন নরসিংদী জেলার অলীপুর গ্রামের আরমান (৪২), একই গ্রামের কাজী তারেক (৩৪), আমজাদ হোসেন (২৭), সাজ্জাদ মনা (২২), আশরাফুল ইসলাম হিমেল (২০) ও আবু সাঈদ (২৭)।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বালু মহালের সামনে থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত স্পিডবোটসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। বালু মহালসহ এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে তারা সংঘবদ্ধ হয়েছিলো। তাদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা ও একটি অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ॥ সংশ্লিষ্টদেরকে নোটিশ

স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্রোকেন স্টোন বা চূর্ণ পাথরের ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২৭০০ টন পাথরের ধুলা (ডাস্ট)। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির অভিযোগে ছাড়পত্র মিলছে না কাস্টমসের। যে কারণে প্রায় এক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দরে এই ডাস্ট বা ধুলাগুলো পড়ে আছে। কাস্টমসের গঠিত তদন্ত কমিটিও ডাস্ট উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা দাবি করেছেন, এতে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরকে। এ জন্য তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো চূর্ণপাথর আমদানি হয় গত ১৩ নভেম্বর। এরপর কয়েক দফায় মোট ২৭০০ টন আমদানি করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজের জন্য পাথর আমদানি করেছে। আমদানিকৃত চূর্ণপাথরগুলো প্রতি টন আমদানি হয়েছে ১৩ মার্কিন ডলারে। এগুলো বন্দর থেকে ছাড়ানোর কাজ পায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজ। তবে কাস্টমস থেকে ছাড়পত্র নিতেই বাঁধে বিপত্তি। প্রথমবারের মতো আমদানি হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানায় কাস্টমস। পরবর্তীতে এগুলো পরীক্ষা করে পাথরের বদলে ডাস্ট আনা হয়েছে জানিয়ে আটকে দেয়া হয়। ফলে প্রতিদিনই বন্দর কর্তৃপক্ষকে মাশুল বাবদ প্রায় ৩৬ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে।

অভিযোগ উঠেছে- আমদারিকারক প্রতিষ্ঠান ভাঙা পাথরের ঘোষণা দিয়ে ডাস্ট এনেছে। এজন্য কাস্টমসের তরফ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেওয়া হয় ডাস্ট হিসেবে। তবে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে চূর্ণ পাথর বা ডাস্ট আমদানির অনুমতি না থাকায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদেরকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজকেও কার্যার্থে একই চিঠি দেওয়া হয়। সিএন্ডএফ এর মালিক হলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো.তাকজিল খলিফা কাজল।
খলিফা এন্টার প্রাইজের প্রতিদিন নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম দফা আনার পর বলা হয় সব আনার পর অনুমতি দেওয়া হবে। এখন বলা হচ্ছে এ ধরণের পাথরের অনুমতি নেই। এখন পাথর আটকে থাকায় আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত করে আমদানি করা পণ্য ডাস্ট হিসেবে পাওয়া গেছে। এ ধরণের পণ্য আমদানির অনুমতি নেই। এখন এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।’

নবীনগরে ঢেঁড়স চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক

নবীনগর, 30 May 2023, 1142 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ঢেঁড়স চাষ করে বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন শিবপুর ইউনিয়নের কাজুলিয়া গ্রামের খাইরুল বাসার ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের (দ. পাড়া) জয়নাল মিয়া। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তাঁরা এখন তাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। স্বল্প সময় ও অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আরও অনেকেই এখন ঢেঁড়স চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খাইরুল বাশার এ বছর ৪০ শতক এবং জয়নাল মিয়া ২০ শতক জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেন। তাঁরা নিজেরাই জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করছেন। আলাপ কালে জয়নাল মিয়া জানান- তার বাবা অসুস্থ্য হওয়ায় ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এরপর আর ভাল কোন চাকরি না পাওয়ায় বাড়ীর পাশের জমিতে শুরু করেন সবজি চাষ। তিনি এক বিঘা জমি নিয়ে শুরু করেন ঢেঁড়সের চাষ। স্বল্প সময়ে এই ঢেঁড়স চাষ করে বেশ লাভবানও হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন- এখানকার মাটি বেশ উর্বর থাকায় তার উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়েছে। তার এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করতে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। একদিন পরপর জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলন করতে হয়। এতে তেমন কোন শ্রমিকের (লেবার) প্রয়োজন হয় না। জমি থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন- “ আমি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে বারি উদ্ভাবিত ‘বারি ঢেঁড়স-১’ জাতের ঢেঁড়সের চাষ করেছি। বাজারে ঢেঁড়সের দাম ভাল থাকায় লাভবানও হচ্ছি। এ বছর ঢেঁড়সের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় খরচও কম হয়েছে ”।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার বলেন- “এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ঢেঁড়সে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। আর ঢেঁড়সের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘বারি ঢেঁড়স-১’ এর ফলন ভাল। এটা চাষ করা লাভ জনক। তবে তার মত শিক্ষিত অনেক যুবকরাই এগিয়ে আসছে। আমরা কৃষি অফিস তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করব”।