চলারপথে রিপোর্ট :
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে আন্তঃনগর ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন জান্নাতুন (৩০) নামের এক মা।
২৪ মার্চ রবিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর এলাকার মাঝামাঝি চলন্ত ট্রেনে ওই প্রসূতি সন্তানের জন্ম দেন। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিলে মা ও নবজাতককে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জান্নাতুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার বাসিন্দা ও ইকবাল মিয়ার স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সস্ত্রীক ট্রেনে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন ইকবাল। ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে জংশন অতিক্রম করার পর ইকবালের স্ত্রীর প্রসবব্যথা ওঠে। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ স্টেশন অতিক্রম করার পর ওই বগিতে থাকা এক নারী চিকিৎসকসহ অন্যান্য যাত্রীদের সহায়তায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন ওই মা।
নবজাতকের বাবা ইকবাল মিয়া বলেন, আমরা ‘ড’ বগিতে ছিলাম। ভাগ্য সহায় থাকায় এ বগিতে একজন নারী চিকিৎসক ছিলেন। ট্রেনেই আমার স্ত্রী সন্তানের জন্ম দেন। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ রয়েছে। এটি আমার দ্বিতীয় সন্তান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার জসিম উদ্দিন বলেন, প্রসূতি সন্তানপ্রসব করায় ঢাকা কন্ট্রোল রুমের নির্দেশে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাত্রাবিরতি দেয়। পরে মা ও সন্তানকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে দুই মণ গাঁজাসহ মো. হুমায়ুন কবির (৪৫) ও মো. হানিফ (১৯) নামে দুইজন মাদক বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ ২৫ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরচারতলা নতুন ফেরিঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গাঁজাসহ তাদের আটক করা হয়।
আটক হুমায়ুন জেলার সদর উপজেলার পূর্ব মেড্ডা শান্তিবাগ এলাকার মো. জজ মিয়ার ছেলে ও হানিফ আশুগঞ্জ উপজেলার চর চারতলা (মহরম পাড়া) এলাকার মস্তু মিয়ার ছেলে।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাহিদ আহাম্মেদ বলেন, সকালে চরচারতলা নতুন ফেরিঘাট আসিফ এন্টারপ্রাইজের পাশে রাস্তার ওপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে রাস্তার ওপর থেকে ট্রাকসহ তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের ট্রাকে তল্লাশি করে ৮৪ কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার অচল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে নদী বন্দরের কার্যক্রম। চাঁদপুরে জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ ২৮ ডিসেম্বর শনিবারও চলছে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের কারণে জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দরে আটকা পড়েছে মালবাহী কার্গো জাহাজ। বন্ধ রয়েছে পণ্য ওঠা-নামা। এতে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দরের শত শত শ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে বন্দরে সার, রড, সিমেন্ট নিয়ে আসা কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
আশুগঞ্জ নদীবন্দরে প্রতিদিন সার, রড, সিমেন্ট, ধান, চাল, পাথর, কয়লাসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অর্ধশত জাহাজ নোঙর করে। এসব পণ্য আশুগঞ্জ থেকে নদীপথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মোংলা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশে যায়।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে হরিনা ঘাটের কাছে মাঝেরচর এলাকায় এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে মাস্টারসহ সাতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা, সকল নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এজন্য বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে তৈল-গ্যাস, বালুসহ সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার এক নারী বিয়ের দেড় বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় মুক্তা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভোররাতে মুক্তার লাশ শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থেকে বাবার বাড়িতে এনে দেওয়া হয়।
সকালে আশুগঞ্জ থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করেছে। এর আগে ভোর চারটার দিকে নিহতের লাশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ওই আত্মীয়কে লাশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত মুক্তা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর (কুড়ের পাড়) গ্রামের গোলাম মিয়ার মেয়ে। তার ৭ মাস বয়সী এক ছেলে রয়েছে। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের শ্বশুর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও শাশুড়ি খোশনাহার বেগমকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী খোশনাহার বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত মুক্তা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়। রাত ২টার দিকে স্বামী আব্দুল্লাহ মুক্তাকে মুখে হাত চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা আড়াল করতে মুক্তার লাশ তার পরিবারের কাছে অসুস্থতার খবর দিয়ে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মুক্তাকে মৃত ঘোষণা করলে খায়েশ মিয়া নামে আত্মীয়কে দিয়ে সিএনজিতে লাশটি মুক্তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তার বুকের ব্যথার কথা বলে তারা ওই আত্মীয়কে সহযোগিতা করতে সঙ্গে নিয়েছিল।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিগত দেড় বছর আগে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে মুক্তার বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ মিষ্টির দোকানের কারিগর। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের লোকজন মিষ্টির দোকান দেয়ার জন্য মুক্তার বাবার কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত মুক্তাকে মানসিক নির্যাতনসহ মারধর করত। এ নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে বিগত এক বছরে বেশ কয়েকটি সালিশ হয়েছে। মুক্তার বাবা গোলাপ মিয়া মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দেয়ার আশ্বাস দিলেও অক্ষমতার জন্য ব্যবস্থা করতে না পারায় দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে মুক্তার একটি ছেলে শিশুর জন্ম হয়। যার বয়স বর্তমানে ৭ মাস। গোলাপ মিয়া মেয়ের জামাইকে মিষ্টির দোকান দিতে টাকা দিতে না পারলেও তার মেয়ের ও নাতির চিকিৎসা, সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ প্রদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মুক্তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে তারা বাবা গোলাপ মিয়াকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে গোলাপ মিয়া জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছার আগেই তার লাশ নিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তিনি বাড়িতে এসে তার মেয়ের লাশ দেখতে পান। এদিকে সকালে নিহতের শ্বশুর ও শাশুড়ি মুক্তার লাশ দেখতে এলে পুলিশ তাদের আটক করে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজল কান্তি দাস বলেন, নিহতের লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে। তার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের শ্বশুর শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল নরসিংদী উপজেলার রায়পুরায় তাই নিহতের স্বজনদের রায়পুরা থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ ও নবীনগরে বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন।
আজ ১৩ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের ভবানীপুর ও নবীনগর উপজেলার বাইশমোজা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কালু মিয়া আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে ও সরাইল উপজেলার পানিশ্বর এলাকার বাসিন্দা জনি মিয়া।
জানা যায়, বাজার থেকে গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন চাচা কালু মিয়া ও ভাতিজা হোসেন মিয়া। পথে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের ভবানীপুরে বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে চাচা-ভাতিজা গুরুতর আহত হলে দ্রুত তাদের আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক কালু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন এবং হোসেন মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করে।
এদিকে, বিকেলে নবীনগর উপজেলার বাইশমোজা বাজারের বৃষ্টি শুরু হলে জনি মিয়া নদীর পাশে বালুর নৌকায় উঠে। এ সময় বজ্রপাতে জনি গুরুত্বর আহত হন। পরে স্থানীয়রা জনিকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুগঞ্জ থানার ওসি নাহিদ আহম্মেদ জানান, বিকেলে গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে ভবানীপুরে বজ্রপাতে চাচা-ভাতিজা গুরুতর আহত হন। পরে চাচা মারা যান। ভাতিজাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভর্তি করা হয়েছে। তবে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
গত ৫ নভেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের ফলাফল গেজেট স্থগিত করে নির্বাচনের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির উপর অনাস্থা দিয়েছেন নির্বাচনে কলার ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড: জিয়াউল হক মৃধা।
গতকাল বুধবার তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে তদন্ত কমিটির উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। অ্যাড: জিয়াউল হক মৃধা নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের বিচার বিভাগীয় কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানান।
এদিকে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের বিষয়ে অনিয়ম নিয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত দ্বিতীয় দিনের মতো আজ ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিলো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গত দুইদিনে তদন্ত কমিটি কমপক্ষে সংশ্লিষ্ট দুইশত জনের সাথে কথা বলেছেন।
জেলা প্রশাসনের তদন্তকারি কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন আর জেলা পুলিশের কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোঃ জয়নাল আবেদীন। গতকাল বুধবার তদন্ত কমিটি আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদে সংশ্লিষ্টদেরকে ডেকে কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি অভিযোগ উঠা কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির লোকজন ওইসব জায়গায় যাওয়ার আগেই ওইসব কেন্দ্রের সামনে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় কাউকেই অনিয়মের কথা বলতে শুনা যায়নি।
এদিকে, আশুগঞ্জের একটি ভোট কেন্দ্রের অনিয়ম নিয়ে দুই মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় একাধিক সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার (নারী) ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে তুলে দিচ্ছেন তাদের সামনে জটলা বেঁধে থাকা যুবকদের হাতে। যুবকরাও ওই কর্মকর্তার সামনেই সিল মারছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন তদন্ত কার্যক্রম বিষয়ে বুধবার বিকেলে একজন সাংবাদিকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, পত্রিকায় প্রকাশিত ভেতরের ক্লোজ ছবিতে কারা রয়েছেন তা স্পষ্ট না হওয়ায় এবং অন্য তিনটি কেন্দ্রের অনিয়মের কোনো ছবি না থাকায় পত্রিকার বক্তব্য পড়ে নির্বাচনের অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ চিত্র সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছেনা। চিঠিতে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর হাফেজিয়া নূরানীয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের সম্পূর্ণ চিত্র ও অন্য তিনটি কেন্দ্রের কোনো ডকুমেন্টরি ভিডিওচিত্র অথবা স্থিরচিত্র থাকলে তা সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান। চিঠির প্রেক্ষিতে ওই গণমাধ্যমকর্মী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একাধিক ভিডিও ও স্থিরচিত্র সরবরাহ করেন।
গত ৫ নভেম্বর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান আলম ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির সাবেক এম.পি জিয়াউল হক মৃধা কলারছড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। তবে আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
তবে, কমিশনের তদন্তে নিজের আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন জিয়াউল হক মৃধা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া অভিযোগ ও সাংবাদিকদের কাছে তিনি উল্লেখ করেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট ছাপা হয়েছে। আশুগঞ্জের শরীফপুর কেন্দ্রের ভোট ছাপার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে নানা অনিয়ম বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই যারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করলে কোনো লাভ হবেনা। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হবেন বলে সংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন মুখ খুলতে রাজি নন। তবে তিনি জানান, তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ি তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিবেন।