চলারপথে ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এমন মুচলেকার কথা নির্বাহী আদেশে মুক্তির আবেদনে ছিল না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার বাংলাদেশ বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের ‘১১তম ওরিয়েন্টেশন কোর্সের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল, সেখানে মুচলেকায় ছিল, তিনি রাজনীতি করবেন না। তার ভিত্তিতে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।
মুচলেকায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি না করার বিষয়টি ছিল কি-না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, একজন সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা একদম ভুল না। তবে আমার যতদূর মনে পড়ে এমন কথা ছিল না।
আনিসুল হক বলেন, আমি পত্রিকার মাধ্যমে শুনেছি, তার (খালেদা জিয়া) ভাই শামীম ইস্কান্দার বিএনপিকে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রোগ্রামে খালেদা জিয়াকে যেন জড়িত না করা হয়। সেক্ষেত্রে কেউ যদি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাহলে খুব একটা ভুল বক্তব্য দেননি।
এদিকে, রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ডাটা সুরক্ষা আইন পাস হলে অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এই আইন পাস করা থেকে পিছিয়ে আসবে কিনা? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, ডাটা সুরক্ষা আইন প্রত্যেক দেশের জন্য প্রয়োজন। সেটা তিনিও (পিটার হাস) বলেছেন। এ বিষয়ে ফের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে কোনো অসুবিধা যদি এই খসড়া আইনে থেকে থাকে, তাহলে তা সংশোধন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি আশা করবো, ডাটা সুরক্ষা আইন পাস হলে অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান চলে যাবে- ঢালাওভাবে এমন কথা বলা থেকে সবাই বিরত থাকবো।
এর আগে বিচারকদের অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগ প্রায় ৩৭ লাখ মামলার বোঝা নিয়ে যথাসম্ভব স্বল্প সময় ও খরচে বিচারিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। বিচারাধীন মামলার জট কমিয়ে আনা বিচার বিভাগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচারকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে কীভাবে এই মামলার জট কমিয়ে এনে দ্রুত মানসম্পন্ন বিচার সেবা প্রদান করা যায় সেই পরামর্শ দেনমন্ত্রী।
বিচারপতি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
চলারপথে রিপোর্ট :
চাঁদপুর নৌ পুলিশের অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরায় ১৯ জেলেকে আটক এবং ৭ লাখ ২০ হাজার ৩০০ মিটার কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে।
জেলেদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক মামলা এবং দুইজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সময় নিয়ম লঙ্ঘন করে নদীতে বাল্কহেড চলাচল করায় ১৩টি বাল্কহেড জব্দ করে নৌ পুলিশ।
আজ ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
আটককৃত জেলেরা হলো-পারভেজ (১৯), শাকিল গাজী (১৯), কালাম মিজি (২৭), মামুন ছৈয়াল (১৯), মো. মহসীন (৩০), মো. লায়াজ মিয়াজ (৫০), নবী হোসেন (৩৫), রিয়াজুল (৪২), সজিব (২৮), ছোটন মিয়া (২২), বিল্লাল মিয়া, (২২) আবু বক্কর (৩২), জিয়াউর রহমান (৩৫), কামরুজ্জামান (৩৯), আলী হোসেন (২৯), কুদ্দুস আলী (৩৫) ও মো. হারুন (৩৯)। এসব জেলেদের বাড়ী লক্ষ্মীপুর, ভোলা, কিশোরগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
ওসি কামরুজ্জামান বলেন, সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নৌ-পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা ধরা অবস্থায় তাদেরকে হাতে-নাতে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। দুইজন জেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত কারেন্টজাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয় এবং জব্দকৃত ৫৫ কেজি জাটকা স্থানীয় গরীব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
ওসি আরো বলেন, অভিযানের সময় চলাচলের জন্য সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ১৩টি বালুবাহী বাল্কহেড জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ১১টি সুকানির জিম্মায় প্রদান করা হয় এবং বাকি দুটি বাল্কহেড নৌ থানায় মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
মানুষের চোখের অন্ধত্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে গ্লকোমা। তবে গ্লকোমা কোনো একটি মাত্র অসুখ নয়। এটি আসলে চোখের অনেক সমস্যার একটি সমষ্টি। যার ফলে চোখের মধ্যে থাকা এবং দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ মুহূর্তে দেশে গ্লকোমা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজার। গ্লকোমা সাধারণত দুই চোখে একসঙ্গে হয়।
উপসর্গ
রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন উপসর্গ না থাকায় রোগী বুঝতে পারেন না যে তিনি ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পরে রোগীরা বুঝতে পারেন।
এই রোগের প্রথম উপসর্গটি হলো পার্শ্ববর্তী দৃষ্টি প্রায় হারিয়ে ফেলা। এ ছাড়া—
✍ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া।
✍ চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা।
✍ ঘন ঘন মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া।
✍ দৃষ্টিশক্তি কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যপ্তি কমে আসা।
✍ কম আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
✍ চোখে লাল ভাব।
✍ বমি বমি ভাব এবং বমি করা।
কারণ
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও চোখের উচ্চচাপ এই রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়।
তবে চোখের স্বাভাবিক চাপেও কিন্তু এই রোগ হতে পারে। পরিবারের অন্য কোনো নিকট আত্মীয় যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা, মামা, খালা বা ফুপুর এই রোগ থাকলে, চল্লিশের বেশি বয়স হলে কিংবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, স্টেরয়েড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে, চোখে ছানি অপারেশন না করলে বা করতে দেরি হলে অথবা জন্মগত চোখে ত্রুটি থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসা
✍ চোখে ড্রপ ব্যবহার করা।
✍ মুখে ওষুধ সেবন করা।
✍ লেজার থেরাপি।
✍ সার্জারি।
প্রতিরোধ
✍ নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করুন।
✍ আপনার পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জানুন। যাঁদের বয়স ৪০ বছরের বেশি এবং যাঁদের গ্লকোমার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাঁদের প্রতি এক থেকে দুই বছর অন্তর চক্ষু বিশেষজ্ঞের দ্বারা চোখ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
✍ জিংক, কপার, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন এ, ই, সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন : শাক-সবজি।
✍ কফি পানের পরিমাণ কমাতে হবে।
✍ একবারই বেশি করে পানি খাওয়া যাবে না বরং অল্প পরিমাণ পানি বারবার খেতে হবে।
✍ শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
✍ চোখের প্রেসার বেশি থাকলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
মনে রাখবেন, গ্লকোমার কোনো প্রতিকার নেই, প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
চলারপথে রিপোর্ট :
মাদক চোরাচালান, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ দমন করতে রেলওয়ে পুলিশকে আরো সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের সেবার মান বাড়ানোর বিষয়েও কাজ চলছে। আজ ২৬ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি সরদার তমিজউদ্দীন আহমেদ একথা বলেন। এর আগে তিনি আখাউড়া ও গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, রেলপথ ব্যবহার করে মাদক পাচার প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশের উপস্থিতি আরো বাড়ানো হবে। যেসব স্টেশনে এখনো পুলিশ মোতায়েন নেই, সেসব স্থানে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, কসবা রেলস্টেশনে একটি অস্থায়ী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন এবং আখাউড়া রেলস্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এতে করে রেলপথে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে। সরদার তমিজউদ্দীন বলেন, এখন থেকে রেলওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ একসঙ্গে কাজ করবে। আমরা সবাই মিলে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করব।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (এইচআরএম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স), রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স শেখ মো. রেজাউল হায়দার, ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা, রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মো. গোলাম রউফ খান, পিপিএম (বার), সিলেট রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার
মোহাম্মদ মেহেদী হাসান,আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের তদারকি কর্মকর্তা মোঃ এরশাদুর রহমান,আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম. শফিকুল ইসলাম, স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মো: নূর নবী,আখাউড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী চৌকির (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে চলতে পারে।’
‘এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, আব্দুল হাই-এর মতো ত্যাগী নেতাকর্মীদের কারণে। তাদের অবদানের ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা আনা সম্ভব হয়েছে।’
ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে আজ ২ মে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উপস্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তৌহিদুজ্জামান, নাসির শাহরিয়ার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঝিনাইদহ এমন একটা সন্ত্রাসী এলাকা ছিল, যেখানে গ্রামের মানুষ টিকতে পারত না। সেখানে নির্বাচন করা, রাজনীতি করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সেই অবস্থার মধ্যেও আব্দুল হাই অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সংগঠন ধরে রাখেন এবং সংগঠনকে সুংগঠিত করেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন, ভালো সংগঠক ছিলেন। তাই সফলতার সঙ্গে তিনি সংগঠনকে দাঁড় করাতে পারেন। একসময়ে ওই এলাকায় গ্রামে মানুষ টিকতে পারত না, অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। বিএনপি নামক যে দলটি সৃষ্টি হয়েছিল, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির বেশির ভাগ লোক কিন্তু এই বিএনপিই করত। সেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা হতো, কত লাশ যে পড়েছে, তার হিসাব নেই। সেই অবস্থায় সংগঠনকে গড়ে তোলা এবং বারবার নির্বাচিত হয়ে এসে একটা বিরাট দক্ষতার পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটাই সবচেয়ে কষ্ট লাগছে, তিনি এই সংসদে বসতে পারলেন না। তাকে একসময় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। আবার একজন রিট করল, তার সংসদ সদস্য পদ স্থগিত করা হলো। সেটা আবার আপিল করে স্থগিত করা হয়েছিল বলেই তিনি এই সংসদে বসতে পেরেছিলেন। যিনি বারবার নির্বাচিত হয়ে আসেন, তার ওপর এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরে তিনি আসতে পেরেছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিলেন।’ নতুন প্রজন্মকে আব্দুল হাইয়ের মতো ত্যাগী নেতাদের অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি।
সংসদ সদস্য আব্দুল হাই ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভূঁইয়া, আবুল হাসেম খান, পিনু খান, নজির হোসেন ও মোখলেছুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর একুশের পদকপ্রাপ্ত গোলাম আরিফ টিপু, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে সংসদ অধিবেশনে শোক প্রকাশ করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
নিজের পায়ে ভর করে হাঁটতে পারতেন না। কখনো মা-বাবা ও বন্ধুদের কোলে চড়ে, কখনো হুইলচেয়ার বা স্টিলের লাঠিতে ভর করে পড়াশোনা শেষ করেন মো. ইমতিয়াজ কবির (২৪)। এরপর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইমতিয়াজ আর অফিসে যাবেন না। কখনো মায়ের কোলে চড়ে বসবেন না। প্রাণ খুলে হাসবেন না। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ইমতিয়াজ কবিরের ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ইমতিয়াজ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সর্বশেষ ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এসব রোগ নিয়ে তাঁকে ৫ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আর আজ মৃত্যু হয়েছে। মাহমুদুর রহমান জানান, ইমতিয়াজের মৃত্যুর পর তাঁর মা–বাবার আহাজারি থামছেই না। একমাত্র বোন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ভাইকে হারিয়ে বোনটিও দিশাহারা। এখন ইমতিয়াজের ঘরজুড়ে কেবলই স্মৃতি। পড়ে আছে জামা, জুতা ও বইপত্র।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন ইমতিয়াজ। গত জুন মাসে প্রতিবন্ধকতা জয়ী ইমতিয়াজ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক জাপানি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কোডল্যাব এফজেডসির ঢাকা অফিসে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছিলেন ইমতিয়াজ। গত বছরের ১ আগস্ট জাতীয় দৈনিকে ‘বাবা ও বন্ধুদের কোলে চড়ে পড়াশোনা করা ইমতিয়াজ এখন পেশাদার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’ শিরোনামে ইমতিয়াজকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
ইমতিয়াজদের বাড়ি নড়াইলে। তবে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছেন। ইমতিয়াজের ঢাকায় চাকরি হওয়ার পর তাঁর সবকিছু গুছিয়ে দিতেই মা চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার নাম ইনামুল কবীর। ইমতিয়াজের ফুফাতো ভাই মাহমুদুর রহমান জানান, দুই মাস ধরে ইমতিয়াজ চট্টগ্রামে থাকছিলেন। অসুস্থতার কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে এসেছিলেন তিনি। এখন ইমতিয়াজের মরদেহ নড়াইলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ইয়াসমিন নাহার ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রামের কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তবে তাঁর চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। তাঁর স্বামী ইনামুল একসময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালের পর তাঁর পক্ষে পূর্ণকালীন এই চাকরি আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি খণ্ডকালীন একটি কাজ করছেন। ছেলে ইমতিয়াজ চাকরি পাওয়ায় পরিবারটি নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তব হলো না।
জন্মগতভাবেই ইমতিয়াজের ডান পা বাঁকা ছিল। পরে দেশে-বিদেশে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। পায়ে দেওয়া হয় প্লাস্টার। প্লাস্টার খোলার সময় তাঁর পা ভেঙে যায়। পরে তাঁর দুই পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। মেরুদণ্ডের হাড়েও সমস্যা দেখা দেয়। এইচএসসি পরীক্ষার আগে একবার তাঁর শরীরের পুরো বাঁ পাশ অবশ হয়ে গিয়েছিল। ইমতিয়াজ সোজা হয়ে বসতে পারেন না। হাতেও পুরোপুরি শক্তি পান না।
মা ইয়াসমিন বলেছিলেন, একপর্যায়ে ছেলের শারীরিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মেনে নেন। মনস্থির করেন, প্রতিবন্ধকতার কারণে ছেলে যাতে কোথাও পিছিয়ে না পড়ে। ছেলেকে ভালো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। নিজের শারীরিক কষ্ট ভুলে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে কোলে নিয়ে পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছেন। আর ছেলের মধ্যেও জীবনে ভালো কিছু করার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি সব সময় কাজ করছিল।