স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জরিপের বিষয়ে প্রচারের নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

জাতীয়, 23 April 2024, 288 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিডিএস জরিপ এলাকার মধ্যে থাকা জমির মালিকদের চলমান জরিপ সম্পর্কে পর্যাপ্তভাবে অবহিত করা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজধানীর ভূমি ভবনে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের (বিডিএস) কার্যক্রমের ইডিএলএমএস প্রকল্প (এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প) প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সংশ্লিষ্টদের তিনি এই নির্দেশ দেন। এ সময় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) জিয়াউদ্দীন আহমেদ, ইডিএলএমএস প্রকল্পের পরিচালক মো. জহুরুল হকসহ ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ও ইডিএলএমএস প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া হতে আগত প্রকল্পের সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী জরিপ প্রক্রিয়া চলাকালীন জমির মালিকদের অজ্ঞাত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রায়শই দেখা যায় যখন জরিপ করার সময় প্রকৃত মালিক অনুপস্থিত থাকেন। তাদের অজান্তে জরিপ কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়।’

অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জমির মালিকরা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জমি বিক্রির সময় আবিষ্কার করেন যে ভুলভাবে জরিপ করা হয়ে গিয়েছে এবং অন্য কারো নামে জমির খতিয়ান গেজেট হয়ে গিয়েছে। ফলস্বরূপ, বৈধ মালিকদের তাদের সম্পত্তির অধিকার পুনরুদ্ধারের বছরের পর বছর আইনি ও অর্থনৈতিক ঝামেলায় পড়তে হয়।’

মন্ত্রী বিডিএস জরিপ কর্মকর্তাদের স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জরিপের বিষয়ে প্রচারের নির্দেশ দেন, যাতে এলাকার ও এলাকার বাইরে বসবাসকারী মানুষ জানতে পারেন তাঁদের এলাকায় জরিপ হচ্ছে। মূল্যবান সম্পদ তথা নিজ জমির বিষয়েও নিয়মিত খোঁজখবরও রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ভূমিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ২০২৬ সালের মধ্যে ইডিএলএমএস প্রকল্পের আওতায় ছয়টি এলাকায় চলমান জরিপের প্রথম পর্যায়ের বিডিএস কার্যক্রম শেষ হবে। প্রথম পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় আউটপুট নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে সারা বাংলাদেশে একযোগে বিডিএস প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের (এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প) মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সভায় বিডিএস কর্মকর্তারা ভূমি মন্ত্রীকে জানান, উল্লিখিত এলাকায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল পয়েন্ট স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির-ই বিমান, ড্রোনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে ম্যাপ তৈরির কাজ শেষ শুরু হবে।

Leave a Reply

আইসিসির পরোয়ানা : নেতানিয়াহু কানাডায় গেলে…

অনলাইন ডেস্ক : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ Read more

মামলায় কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির…

অনলাইন ডেস্ক : ৫ আগস্টের পরে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে Read more

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের সংঘর্ষে…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষক দলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে Read more

সাহিত্যের আড্ডায় গুণীদের মিলনমেলা

চলারপথে রিপোর্ট : প্রাণবন্ত এক হঠাৎ আড্ডায় মেতে উঠেছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। Read more

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী আজ

জাতীয়, 17 March 2024, 358 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।

সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।

বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।

পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।

বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।

১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।

যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।

একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।

১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।

আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।

৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।

মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।

এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।

১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।

১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।

জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।

বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।

১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।

১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।

৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।

এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।

একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।

সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।

হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে জনপদ

জাতীয়, 4 January 2023, 1168 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
ভোর থেকে কুয়াশার প্রকোপ কম থাকলেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। একদিকে অধরা সূর্য অন্যদিকে উত্তরের বাতাস- সব মিলিয়ে শীতে জবুথবু ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের সব জেলার জনপদের মানুষজন। গত দুই দিন ধরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সারাদেশ। তাপমাত্রার পারদ নামছে। পৌষের শেষার্ধে কনকনে ঠান্ডায় শীতার্ত হয়ে পড়েছে প্রাণীকুল। সারাদিন সূর্যের দেখা নেই।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী তিন দিন শীতের দাপট অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা কমে আবার নামবে। থেমে থেমে এভাবেই জানুয়ারি মাসটাই শীতে পার হয়ে যাবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া কখনও উঞ্চ, কখনও আর্দ্র এবং এর বাইরে সমভাবাপন্ন। সমুদ্র, পাহাড়, নদ-নদী, সবুজ-বনানী ও সমতলভূমির কারণে এখানকার আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয় না। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে এতে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন অসময়ে বর্ষা খরা ও শীতের প্রবণতা বাড়ছে। এখনকার আবহাওয়া পঞ্জিকার হিসাব মানছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে শীতের তীব্রতা থাকায় বিপাকে পড়ছেন কর্মজীবীসহ সাধরাণ মানুষেরা। বিশেষ করে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শীতের কারণে মাঠ-ঘাট প্রায় ফাঁকা। ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে তেমন একটা দেখা যায়নি দিনমজুরদের। রিকশাভ্যান-ইজিবাইকের সংখ্যাও কম রয়েছে রাস্তায়। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল পর্যায়ের হাট-বাজারেও লোক সমাগম কম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কালিসীমা এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন, শীতের কারণে আজ কাজে যেতে পারিনি। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর। আমাদের চেয়ে বয়স্করা আরও বেশি কষ্টে আছেন। হাড়ভাঙা শীতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
এদিকে শীতের কারণে জেলায় শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ বিক্রি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শেরপুরের ওষুধের দোকানি মো. সানাউল হক বলেন, বিকেল হলেই দোকানে শিশুদের ঠাণ্ডা-কাঁশির ওষুধ নিতে ভিড় পড়ে যায় মায়েদের। গত কয়েক দিনে ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ বিক্রি বেড়েছে।
উত্তরের হিমেল বাতাস আর মেঘে ঢাকা সূর্য। দুইয়ে মিলে কনকনে শীত বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। আর এই কনকনে ঠাণ্ডায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের জন সাধারণ আর ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে এই বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করতে থাকলে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে বলে জানান খেটে খাওয়া মানুষেরা।
ঢাকার আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের একজন সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষা মওসুম যাত্রাবিরতি দিলে নভেম্বর মাস থেকে উত্তরে বায়ুপ্রবাহ শুরু হয়। হিসাবে তখন থেকেই বাতাসে ঠান্ডার প্রভাব বাড়তে থাকে। কিন্তু শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়- তার বেশ পরে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি। বর্ষাকালে ২৬ দশমিক ৭ এবং শীতে ১৮ দশমিক ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার দিনগত শেষরাতে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৬ ও সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং আট ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ছয় থেকে আট ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মাঝারি এবং তারও নিচে নেমে এলে তখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে শীত সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলতে নারাজ আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের উপ-পরিচালক বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান দুপুরে বলছিলেন, চলতি শীতের বড় কারণ কুয়াশা। তিনি বলছিলেন, শীতকালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে শীতল থাকে। রাত-দিনে সময়ের ব্যবধান বেড়ে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ানো জলীয়বাষ্পকণা ঘনীভূত হয়ে ধূলিকণার সাথে মিশে কুয়াশা তৈরি করে। এই কুয়াশা সূর্যকিরণকে ভূপৃষ্ঠে নামতে বাধা দেয়। দিনের তাপমাত্রা কমে যায়। আর এতে করে ঠান্ডার অনুভূতি তীব্র হয়।
আগামী তিন দিন কুয়াশার তীব্রতায় শীতের পূর্বাভাস জানিয়ে হাফিজুর রহমান জানান, এখন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। ঢাকা শহরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেখানে ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়া, সেখানে শেষরাতের তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল প্রায় একই রকম শীতল থাকছে। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার বড় কারণ এটাই। গত দুই দিন ধরে কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা এক কিলোমিটারেরও নিচে নেমে এসেছে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সবধরনের যান্ত্রিক কিংবা অযান্ত্রিক বাহন চলাচল সীমিত হয়ে গেছে।
১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলার ঢাকায় আবহাওয়া অফিস চালু হয়। পুরনো রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ৪০ বছর পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে বিরাজমান জলীয়বাষ্পকনা উষ্ণতার কারণে বরফে পরিণত হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এখানে শীতের তীব্রতা সত্ত্বেও পেঁজা তুলোর মতো বরফ জমে না। ১৯৬৮ সালে সিলেট অঞ্চলে পানির উপরিভাগে পেঁয়াজের খোসার মতো পাতলা আবরণ তৈরি হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ঢাকায় ১৯৬৪ সালের ১৮ ও ২০ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আবহাওয়া বিভাগের কাছে সংরক্ষিত সর্বনিম্ন রেকর্ড।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো থেকে তাপমাত্রার যে রেকর্ড জানা গেছে তাতে ঢাকায় সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১, টাঙ্গাইলে ১৮ দশমিক ৫, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ২ এবং সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৯, রংপুরে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৪ সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১৩, সিলেটে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১২, চট্টগ্রামে ২৫ দশমিক ৭ ও ১৪ দশমিক ৯, খুলনায় ২১ দশমিক ৫ ও ১৩ দশমিক ৫, যশোরে ১৭ দশমিক ৪ ও ১৪, বরিশালে ২৫ দশমিক ৪ ও ১৩ দশমিক ১, কুমিল্লায় ২৬ দশমিক ৩ ও ১৫, নোয়াখালীতে ২৫ দশমিক ৩ ও ১৫ দশমিক ৫, চাঁদপুরে ২৪ দশমিক ২ ও ১৫ দশমিক ৪, কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ২৭ ও সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কোথাও বৃষ্টিপাতের খবর নেই। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে।

বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 1 February 2024, 490 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমারা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি। বাংলা একাডেমি আমাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা।

আজ ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সত্তা জাগ্রত হয়। এই পথ বেয়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আমারা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি। এই অধিকারটাও আমাদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে।

বই হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ আলাদা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও এখন আমাদের যুগ হয়ে গেছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগ। তবু বই প্রকাশ অবশ্যই থাকবে, এটা যাবে না। কারণ, হাতে নিয়ে বই পড়ার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ আছে। তবে আজকালকার ছেলে-মেয়েরা ট্যাবে বই পড়ে, আবার ল্যাপটপেও পড়ে।

এসময় নিজের স্কুল-কলেজ জীবনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বেশ আফসোস করে বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বইমেলায় আসায় কোনো মজা নেই। কারণ, স্বাধীনতা নেই। ডানে তাকাব নিরাপত্তা, বাঁয়েও নিরাপত্তা, পেছনে গেলে নিরাপত্তা, সামনে নিরাপত্তা; এই নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে। এখানে আসলে মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, ছোটবেলার কথা। এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন সেই স্বাধীনতাটা নেই। জানি না কবে আবার স্বাধীনতা পাব।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর যখন জাতিসংঘ আমাদের স্বীকৃতি দিল, তিনি কিন্তু তখন সেখানে গিয়ে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় ভাষণ অর্থাৎ বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করে এই পর্যন্ত যতবার ভাষণ দিয়েছি, বাংলায় ভাষণ দিয়েছি।

ভাষা-সাহিত্য সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশকদের অনুরোধ করে বলব— শুধু কাগজে প্রকাশ করলে হবে না, ডিজিটাল মাধ্যমেও প্রকাশক হতে হবে। ডিজিটাল প্রকাশক হলে এটা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও পৌঁছাবে। মনমানসিকতা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিও রপ্ত করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আমার এগিয়ে যাব।

অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় দাবি উঠেছিল— অনুবাদ করা যাবে না। কিন্তু আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয় পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কোথা থেকে জানব। একটা দেশকে, তার সংস্কৃতিকে জানতে হলে তার ভাষার মধ্য দিয়ে জানতে হবে।

এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে মেলার আয়োজন।

মেলায় ৬৩৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে ৯৩৭টি ইউনিট। এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০ প্রতিষ্ঠান ১৭৩টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭৬৪ ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে ৫১৫ প্রতিষ্ঠান।

বইমেলার সময়সূচি

এবারের বইমেলা অধিবর্ষের বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবার বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

হাবীব ইমন বাংলাদেশে যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত

জাতীয়, 18 January 2023, 1035 Views,
স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশে যুব ইউনিয়নের দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালীর সন্তান হাবীব ইমন। এর আগে তিনি বিদায়ী কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া হাবীব ইমন যুব ইউনিয়নের অবিভক্ত ঢাকা মহানগরের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন। হাবীব ইমন এক সময়ে নোয়াখালীতে সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, কলাম লেখক।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি ) ঢাকার বিএমএ ভবনে যুব ইউনিয়নের দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪০০ জন কাউন্সিলের উপস্থিতিতে সভাপতি পদে খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক পদে জাহাঙ্গীর আলম নান্নু ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মো. ইব্রাহিম নির্বাচিত হন।

নিবন্ধিত হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদন শুরু ১৬ এপ্রিল

জাতীয়, 12 April 2023, 1154 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
চলতি বছরের হজের জন্য নিবন্ধিত হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদন ১৬ এপ্রিল থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে। যেসব হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন সৌদি আরবের ভিসার জন্য কেবল তাদের বায়োমেট্রিক কার্যক্রম শুরু হবে।

আজ ১২ এপ্রিল বুধবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা সব জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্স, ঢাকা ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় এবং আশকোনার হজ অফিসে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ সময় পাসপোর্ট জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) অফিসে বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হজ এবং ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি ভিসা পেতে হলে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক নিবন্ধন (আঙুলের ছাপ ও মুখমণ্ডলের ছবি) সম্পন্ন করার নিয়ম চালু করে সৌদি সরকার। এজন্য ‘সৌদি ভিসা বায়ো অ্যাপ’-এর মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডেটা দিতে হবে। গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপে নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ছাড়া ভিসা মিলবে না।