অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়দিনের সফরে থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন। আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর আনুমানিক ১টা ৮ মিনিটে ব্যাংককের ডং মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি। বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে।
ব্যাংককে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন। থাইল্যান্ডের গভর্ণমেন্ট হাউসে আজই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর।
এর আগে সকাল ১০টা ১২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে তার এ সফর।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফর। এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।
সফরকালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এর মধ্যে সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরো দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
শুধু সার্টিফিকেটের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়া নয় মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকারের চেয়ে শিক্ষিত বেকারের বোঝা পরিবার এবং সমাজের জন্য অনেক বেশি কষ্টের।
আজ ২ মার্চ শুক্রবার বিকালে কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমের ফলক উন্মোচন করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ- বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সময় এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। শুধু শিক্ষার জন্য শিক্ষা বা সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন না।
তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা বা সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য নয়; বরং শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তাদের প্রতিভা তেমনভাবে বিকশিত হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মনে রাখবেন শুধু জ্ঞানদান শিক্ষার উপজীব্য হতে পারে না। এমন শিক্ষা দিতে হবে- যাতে শিক্ষার্থীরা বিকশিত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সমাজের বাতিঘর, যা থেকে সবসময় আলো ছড়ায়, মানবিকতার বিকাশ ঘটায় এবং সমাজকে আলোর পথ দেখায়।
বিশ্ববিদ্যালয় অর্জিত জ্ঞানের গুদাম ঘর নয় উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা থেকে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের আবির্ভাব ঘটে, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। আজ থেকে কিশোরগঞ্জে সেই বাতিঘরের যাত্রা শুরু হলো। তাই একে লালন করতে, পৃষ্ঠপোষকতা দিতে এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্র-শিক্ষকের বাইরে স্থানীয় জনগণকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই গুণে-মানে সমৃদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে হবে। দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক বিভাগ রয়েছে, যেখানে লেখাপড়া করলে হয়ত জ্ঞানার্জন সম্ভব হবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ একেবারেই সীমিত। শিক্ষার্থীরাও বুঝে না বুঝে- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, এই ভাব ধরার জন্য এসব বিভাগে ভর্তি হয়।
কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেডএম পারভেজ সাজ্জাদের সভাপতিত্বে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সামাদ, কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. ইমান আলী, কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম মুশতাকুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইংরেজি, গণিত, হিসাববিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স- এ চারটি বিভাগে ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার বৌলাই এলাকায় ১০৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া তেওয়ারী হাট বাজারের বিভিন্ন রাইচ মিলে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় রাইচ মিলগুলোতে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন অমান্য করায় ৫ টি চালের দোকানীকে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়েছে।
আজ ৫ জুলাই বুধবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ শাহজাহান।
অভিযানকালে পাট পরিদর্শক বাবুল চন্দ্র দাস, লোহাগাড়া থানার এসআই মোজাম্মেল হকসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহজাহান জানান, উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তেওয়ারিহাট বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন অমান্য করায় বাহাদুর অটো রাইচ মিল, আল মক্কা অটো রাইচ মিল, আল ছাফা অটো রাইচ মিল,শাহজালাল অটো রাইচ মিল সহ মোট ৪ টি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২০হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন কাল। জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।
আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।
বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়ার পালা। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।
মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।
অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হল মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।
অনলাইন ডেস্ক :
তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করার বিষয়ে আজ নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রাথমিকের বিষয়ে এ ধরনের কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা আসেনি।
তবে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে সংশ্লিষ্ট জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. উত্তম কুমার দাশ।
আজ ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে প্রশ্নের জবাবে উত্তম কুমার বলেন, স্কুল বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। আমরা প্রতিদিন আবহাওয়ার বুলেটিন দেখছি। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে তখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে, তীব্র শীতে শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল বন্ধে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে বলে ওই নির্দেশনায় বলা হয়।
১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মর্মে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে যাবে, আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ওই সব জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ্ব না হওয়া পর্যন্ত) রাখার নির্দেশনা প্রদান করবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ মনে করে না, তারা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ মনে করে। আর আমাদের লড়াই হচ্ছে তার বিরুদ্ধে, যাতে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পারি।
আজ ২ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহসচিবসহ আলেম উলামাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের দুর্ঘটনাকবলিত একটি বাস নিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচার সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম আমরা যাতে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি এটাই আমাদের লক্ষ্য। হিন্দুত্ববাদীরা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়েছে, তারা মিথ্যা দিয়ে পৃথিবীকে জয় করতে চায়। আল্লাহর আইন হচ্ছে সত্যের জয় হবে এবং মিথ্যা পরাজিত হবে।
আজ সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের স্থানীয় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চ ময়দানে ঐতিহাসিক শহীদ বাবরী মসজিদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদী কনফারেন্সে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতের আন্দোলনে গণহত্যা, ২০২১ সালের মোদি বিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা বিচার দাবি ও বাবরী মসজিদ দিবস উপলক্ষে জামিয়া ইসলামীয়া ইউনুছিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতী মুবারক উল্লাহ’র সভাপতিত্বে প্রতিবাদী কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিম নির্যাতনসহ মসজিদ ধ্বংস করা হচ্ছে। যারা নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলার। তিনি ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে মুসলিমদের নির্যাতন নীপিড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন, এদেশের তৌহিদি জনতা ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে ভারতীয় হেজেমনিকে উৎখাত করেছে। তারা আর কোনোদিন ভারতীয় হেজেমনি বা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে এদেশে প্রত্যাবর্তন করতে দিবেনা।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে বিভাজন থাকতে পারে কিন্তু দেশের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে পারবেনা। যদি ফাটল থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ আবারো প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাও: জুনাইদ আল হাবিব, কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক মুসা আল হাফিজ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আতাউল্লাহ আমিন, লেখক ও গবেষক রুহুল আমীন সাদী, আলী হাসান তৈয়ুব, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আশরাফ মাহদী প্রমুখ।
এসময় ড. মাহমুদুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে আমাদের দেশে এখন অপপ্রচার হচ্ছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন আমাদের দেশে হিন্দুদের চাকরী বেশী। বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদে আছে। আমাদের দেশের আলেমগণ তাদের বক্তব্যে হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা বলেন। মন্দির পাহারা দেন। আর ভারতীয়রা মুসলমানদের হত্যার কথা বলে, কী পার্থক্য এবার বুঝেন। ভারতে মুসলমানদের প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে আমরা বারবার ব্যর্থ হয়েছি। অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুব ফোরামের উদ্যোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।