চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে অব্যাহত তীব্র তাপদাহে প্রাণী ও পরিবেশ ক্রমশ: উত্যপ্ত হয়ে উঠছে। যেখানে একটু ছায়ার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে মানুষ, সেখানে শুধু মাত্র পেটের দায়ে এক শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ তীব্র রোদে পুড়ে শ্রম বিক্রি করছে।
জানা যায়, জেলার নাসিরনগর, সরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। এসব ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য বিপুল পরিমান শ্রমিকের প্রয়োজন। মাথা পিছু দাম দর যাই থাকুক না কেন পাকা ধান ঘরে আনতে হবে তাই শ্রমিক প্রয়োজন। এদিকে বাধ্য হয়ে প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে মাঠ থেকে ধান কেটে বাড়িয়ে নিয়ে আসছেন শ্রমিকরা বিনিময়ে পাচ্ছেন কিছু টাকা। কিন্তু এই গরমে তাদেরও রয়েছে প্রাণনাশের ঝুঁকি।
অপরদিকে জেলা শহরের আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ভবন নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। এ সমস্ত নির্মাণ শিল্পে কাজ করছেন বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ। চলমান তাপদাহের প্রচন্ড গরম তাদের কাছে যেন কিছুই না। অথচ জীবিকার প্রয়োজনে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারাও কাজ করছেন এই গরমে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে গত ৩ দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৪৯ জন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে। এই আসনের জন্যে সর্বোচ্চ ১৩ জন দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক গত একবছর ধরে আলোচনায় এই আসন। একাদশ সংসদের মেয়াদকালে ৩ বার নির্বাচন হয়েছে এখানে। এরমধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এবং ৫ই নভেম্বর দুটি উপনির্বাচন হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সংসদ থেকে তার পদত্যাগে শূন্য হয় এই আসন। সেখানে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনি স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর পর আবার ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় উপনির্বাচন।
ছয়টি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে দলের মনোনয়নের জন্যে ফরম নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এমএ করিম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম আলমগীর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা নাজির মিয়া ও তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মোছাম্মৎ রোমা আক্তার, ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফারুক, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. ইখতেশামুল কামাল, প্রভাষক ইমরান হাই জাবেদ, কৃষক লীগ নেতা আদেশ চন্দ্র দেব, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ নেতা এডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের জন্যে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সদ্য উপনির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মাইনুদ্দিন মঈন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল হান্নান রতন, কামরুজ্জামান আনসারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডাক্তার আশীষ কুমার চক্রবর্তী, সরাইল আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট নাজমুল হোসেন, আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী ছফিউল্লাহ মিয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, সরাইল যুবলীগ নেতা এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু, জাপান যুবলীগ নেতা আবু শামীম পিয়ার পলাশ, সরাইল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. জালাল মিয়া।
এ ছাড়া এই আসনে তৃণমূল বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়েছেন প্রয়াত আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল ইসলাম তুষার। এর আগে পিতার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে তুষার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের জন্যে মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, সুইডেন প্রবাসী জহিরুল হক চৌধুরী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আলহাজ্ব মো. শাহআলম, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এ কেএম বদিউল আলম জামাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ন সাহা মনি, জেলা যুবলীগ নেতা তসলিমুর রেজা, কসবা যুবলীগের সাবেক নেতা হাজী মো. লুৎফুর রহমান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী অধ্যাপক নূরুন্নাহার বেগম, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মো. কবির আহমেদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. আলামিনুল হক। এই আসনে জাসদের মনোনয়নপ্রার্থী এডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অব. এ বি তাজুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম আবুল ও এডভোকেট দিদার হোসেন রেজভী, বাঞ্ছারামপুর আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ আহমেদ বাবু, এডভোকেট হাবিবুর রহমান বাদল ও মো. গোলাম মোস্তফা কামাল, ঢাকা বাড্ডা আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান ধীরন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডাক্তার এ কে মাহবুবুল হক দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
খ্রীষ্টিয় মাস এপ্রিল এবং বাংলা বৈশাখের চলমান প্রায় অসহনীয় তাপপ্রবাহে দিবা রাত যখন সারা দেশেই মানুষ ও অবোধ প্রাণী কূলে হাঁসফাঁস অবস্থা চলছে, তখন আজ ২৯ এপ্রিল সোমবার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবহাওয়ার তাপপ্রবাহ বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছুঁইছুঁই অবস্থা বিরাজ করে।
শহর গ্রামে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও ক্ষুদ্র যানবাহন চালকদের মধ্যে প্রায় দিশেহারা অবস্থা দেখা যায়। সবাই যেন একটু ছায়া পেলেই বাঁচে। রোবহার হতেই আবহাওয়ায় বেশি তাপপ্রবাহ অনুভব হয় গত ৩ সপ্তাহের অধিক সময় হতে। মাথা ও শরীরে অত্যাধিক গরমের ছোঁয়া লাগা মাত্রই যেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল শরীর। সকাল হতেই বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারী শিশু হতে সকল বয়সী ছাত্র ছাত্রী অভিভাবক এবং ৮০ বছর পর্যন্ত বয়সী বৃদ্ধ বৃদ্ধাদেরকে। সূর্যের দিকে তাকানোর মতো পরিবেশ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ এবং দাপ্তরিক কক্ষগুলোর পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বাসা বাড়িতে তীব্র গরমে টেকা দায়। রাতেও আর্দ্রতা বেশি থাকায় ঘুমানো কষ্টকর। এর মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর কারণে, বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসায় এবং ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা কমে গেছে। দিনের বেলায় রাস্তায় জনচলাচল কমে গেছে। মানুষ ও অবোধ প্রাণীকূল একটু ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা পরিবেশ খুঁজছে সর্বত্র।
এই অবস্থায় মানবিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে তৃষ্ণার্ত পথচারী এবং ক্ষুদ্র যানবাহন চালকদের শরবত পান করানোর মহতী উদ্যোগ। সোমবার দুপুর হতে বিকেল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের তোফায়েল আজম (টি.এ) রোডস্থ ইউনাইটেড সাইকেল সেনিটারী এন্ড মেশিনারীজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী হাজী মোঃ কামাল উদ্দিনের ব্যবস্থাপনায় ফ্রুটিকা স্যালাইন, লেবু, বরফ, চিনি মেশানো তাৎক্ষনিক তৈরী করা ড্রাম ভর্তি ঠান্ডা স্যালাইন শরবত পানে আপ্যায়ন করানো হয় বিপুল সংখ্যক পথচারী, যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। আরেকজন সকালে কালীবাড়ি মোড়ে একই ধরণের শরবত আপ্যায়ন করান। এতে সেবা সহযোগিতা করেন উদ্যোক্তার স্বজনরা। মানব সেবায় এই উদ্যোগ সকলের প্রশংসা অর্জন করেছে। অপর দিকে, ভ্যানগাড়ীতে দিবা রাত লেবু ও ইস্পি পাউডার, বরফ যুক্ত ঠান্ডা পানি বিক্রি জমে উঠেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত এলাকা বড়জ্বালায় অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিকে আটক করেছে বিজিবি। গতকাল ২৪ নভেম্বর রবিবার আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে সীমান্ত এলাকা বড়জ্বালার দেবনগর থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, সতীষ চন্দ্র (৬৫) মৃত কার্তিক এর ছেলে, স্বপন দেবনাথ (৩২) সতীষ চন্দ্র এর ছেলে, সুকলা দেবী (৩০) স্বপন দেবনাথের স্ত্রী, কাকন বালা দেবনাথ (৫০) সুরেশ দেবনাথের স্ত্রী। উভয়ের ঠিকানা কিশোরগঞ্জ জেলার আমিরগঞ্জের মহিনন্দ।
আটককৃত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভারতের আগরতলায় বসবাসরত সুকলা দেবীর কাকার বাসায় বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় রবিবার (২৪ নভেম্বর) বড়জ্বালা বিওপির টহল দলের নিকট আটক হয়।
আটককৃত ব্যক্তিদের নিকট হতে ভারতীয় ৯০০ রুপি, বাংলাদেশি ৩১৭৫ টাকা, বিভিন্ন প্রকার শাড়ি ৩ পিস, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ১টি, কানের দুল ১ জোড়া (ইমিটেশন) এবং বাংলালিংক সিম কার্ড-১টি পাওয়া যায়।
আটককৃত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি টাকা, শাড়ি, মোবাইল, কানের দুল এবং সিমকার্ডসহ মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং মাধবপুর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, সীমান্ত দিয়ে যাতে অবৈধভাবে কোন প্রকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে। সে ব্যাপারে সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) বদ্ধ পরিকর। সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) এর অভিযান চলমান থাকবে।
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুনরায় আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জনের ঘোষণা দিলেন আইনজীবীরা। আজ ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবীর সমিতিরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভা ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে তাদের সকল আদালত বর্জন কর্মসূচি শুরু হবে চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জেলা আইনজীবী সমিতির সূত্রে জানা গেছে, আদালতের শীতকালীর ছুটির আগে গত ১ ডিসেম্বর আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন তিনটি মামলা না নেয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল -১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন শুরু করেন আইনজীবীরা। ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সাথে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে বিচারকের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগে গত ৪ জানুয়ারি আদালতের কক্ষে ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে একদিনের কর্মবিরতি ও মানববন্ধন পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।
এ ঘটনার পর গত ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের কর্মসূচি শুরু করেন আইনজীবীরা। তারা জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ ও জজ আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে বিচারকের সাথে অশোভন আচরনের অভিযোগে সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এছাড়াও আন্দোলন চলাকালে জেলা ও দায়রা জজের বিরুদ্ধে অশালীন শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি ২১ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১২ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় আইনমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আইনজীবীদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আদালতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীরা।
মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ ও ও জজ আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই আদালত ব্যতিত (জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত) সকল আদালতে ফিরে যান আইনজীবীরা। এতে আদালতের অচলাবস্থা দূর হয়।
গত ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আইনজীবীদের দাবি পূরন না হওয়ায় তারা ওইদিন বিশেষ সাধারণ সভা করে তারা তাদের কর্মসূচি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ৩০ জানুয়ারি মধ্যে তাদের দাবি পূরন না হওয়ায় তাদের কর্মসূচি আবার ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবীরা তাদের দাবি পূরন না হওয়ায় বিশেষ সাধারণ সভা করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ তানবীর ভূঞা জানান, গত ৩০ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভা করে তাদের কর্মসূচি ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ওই সভায় বলা হয়েছিল উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে পুনরায় বিশেষ সাধারণ সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে।
কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা মঙ্গলবার পুনরায় সাধারণ সভা করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। সকল আইজীবীর মতামতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার থেকে তাদের সকল আদালত বর্জনের কর্মসূচি শুরু হবে।
বিশেষ প্রতিনিধি :
“স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাদেশে উদ্যাপিত হয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৩। এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার এর যৌথ আয়োজনে এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকেলে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের হলরুমে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথিা বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জয়নাল আবেদিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, কবি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জয়দুল হোসেন। বাচিকশিল্পী ও সাংবাদিক মোঃ মনির হোসেন এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারি পরিচালক সাইফুল ইসলাম লিমন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার জেলা কমিটির সভাপতি, কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। এই বাংলাদেশকে আগামীতে নেতৃত্ব দিবে যে তরুণ প্রজন্ম তাদের সত্যিকারের দেশ্রপ্রেমিক ও আর্দশ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য বই পড়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, শুধুমাত্র চাকরির জন্য নয়, বই পড়তে হবে আলোকিত মানুষ হতে। এইজন্য শুধু পাঠ্যবই পড়লেই হবে না। পাঠ্য বইয়ের বাহিরে অন্যান্য বইও পড়তে হবে। বাংলাদেশকে এবং পৃথিবীকে জানতে হবে। বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ আমাদের জিততে হবে। আর এই চ্যালেঞ্জ জিততে হলে একটি সক্ষম জনগোষ্ঠি তথা স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তুলতে হবে। তারজন্য শুধু ভালো রেজাল্ট করা ছাত্র-ছাত্রী নয়, আমাদের ভালো মানুষও লাগবে। এই ভালো মানুষ গড়ে তুলতে পারে কেবলমাত্র বই।
প্রধান অতিথি নিজের শিক্ষা জীবনের নানান স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমাদের সময়ে পাঠ্যবইয়ের পাশাপশি আমরা প্রচুর আউট বই পড়েছি। জ্ঞান যতটুকু অর্জন করেছি তা এই আউট বই পড়ে। নিজের রুমকে লাইব্রেরি বানিয়ে। তিনি রাষ্টের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উদ্যোগে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার উপর গুরুত্তারোপ করেন। তিনি পাঠাগার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ পাঠউপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। এসময় তিনি পাঠাগার এবং বই সংশ্লিষ্ট যে কোন কার্যক্রম পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগীতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভা শেষে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ও জেলা শিশু একাডেমি কর্তৃক বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মী মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ। সহযোগিতায় ছিলেন জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান মোঃ আনিছুর রহমান। অনুষ্ঠানে লেখক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন গ্রন্থাগার প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।