অনলাইন ডেস্ক :
ব্যাংকক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা তাভিসিনের আন্তরিকতাপূর্ণ একান্ত বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।
গতকাল ২৬ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানীর গভর্নমেন্ট হাউজে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা তাভিসিনের অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ সবিস্তারে অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১.৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এ দিন গভর্ণমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনারে থাই প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলায় ওয়ান শ্যুটারগানসহ মোঃ রাসেল মিয়া (৪২) নামে এক যুবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া পৃথক অভিযানে ৭টি ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও ৩টি চুরি করা গরুসহ ও একটি ট্রাক আটক করা হয়েছে।
সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা এলাকায় থেকে পৃথক অভিযানে এসব আটক করা হয়।
আটক রাসেল নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার চিনিসপুর গ্রামের মৃত মোঃ ফিরোজ মিয়ার ছেলে।
আশুগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, আজ ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভাড়া করা মোটরসাইকেল যোগে ভৈরবের দিকে যাওয়ার সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা থেকে ১ টি ওয়ান শ্যুটারগান ও ১টি রাবার কার্তুজসহ রাসেলকে আটক করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টোল প্লাজা এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ১টি গরুর ট্রাককে পুলিশের সন্ধেহ হলে এর গতিরোধ করা হয়।
এসময় ট্রাকটি দ্রুত উল্টো দিকে ঘুরিয়ে রেলগেইট এলাকায় থামিয়ে ট্রাকে থাকা লোকজন পালিয়ে যায়। পরে ট্রাকে তল্লাশী চালিয়ে ৩টি চোরাই গরু, ৭টি অবিস্ফোরিত ককটেল, ২টি রামদা ও ০৬টি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চুরি করা গরু বহনকারী ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল হোসাইন বলেন, আটক অস্ত্রধারী ও মালামালের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররামে পৃথক গুলির ঘটনায় সাত শিক্ষকসহ আটজন নিহত হয়েছেন। আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার জেলার আপার কুররাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জেলা সদর হাসপাতালের ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কায়সার আব্বাস নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা পুলিশ অফিসার মুহাম্মদ ইমরান জানান, শালোজান রোডে প্রথমে গুলির ঘটনা ঘটে এবং এর কিছুক্ষণ পর তেরি মেঙ্গল স্কুলে গুলির ঘটনা ঘটে।
আব্বাস জানান, শালোজান রোডে গুলিতে একজন নিহত হন। এর কিছুক্ষণ পর স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাতজন শিক্ষক নিহত হন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে। এর বেশিরভাগ খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে।
সূত্র : ডন
অনলাইন ডেস্ক :
প্রায় ৩০০ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের দায়ে ফ্রান্সের অবসরপ্রাপ্ত শল্যচিকিৎসক সার্জন জোয়েল লে স্কোয়ারনেককে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশের একটি আদালত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৭৪ বছর বয়সি স্কোয়ারনেক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শত শত রোগীকে নিপীড়ন করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের সময় অচেতন অবস্থায় বা জ্ঞান ফেরার সময় এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লে স্কোয়ারনেক ইতোমধ্যে ২০২০ সালে চার শিশুকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের দায়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে জেল খাটছেন। ওই চার শিশুর মধ্যে তার নিজেরই ভাতিজি ছিল দুইজন।
ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর জানায়, স্কোয়ারনেক ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ফ্রান্সের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অন্তত ২৯৯ জন রোগীকে (যাদের মধ্যে ২৫৬ জন ছিল ১৫ বছরের নিচে) তিনি যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
তার বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যা তাকে ফ্রান্সের ইতিহাসে অন্যতম ‘সিরিয়াল ধর্ষণকারী’ হিসেবে পরিণত করেছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগীদের পক্ষে আদালতে মামলা লড়েছেন প্রায় ৬০ জন আইনজীবী।
আদালতে প্রসিকিউটর স্টেফান কেলেনবার্গার সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড চেয়ে বলেন, লে স্কোয়ারনেকের মতো অপরাধীকে কেবল কারাগারে রাখলেই হবে না—কারামুক্তির পরেও যেন তাকে মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।
এদিকে, আদালতে লে স্কোয়ারনেক বলেন, আমি দয়া চাই না। শুধু চাই, একজন ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ।
তবে তার এ কথাকে অনেকেই কৃত্রিম বলে মনে করেছেন। কারণ তিনি প্রায় প্রতিটি শুনানিতেই একই ধরনের ‘লোক দেখানো’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে এএফপি জানায়, লে স্কোয়ারনেক নিজের অপরাধগুলো নোটবুকে বিস্তারিতভাবে লিখে রাখতেন। সেখানে তিনি ভুক্তভোগীদের নাম, বয়স, ঠিকানা এবং নিপীড়নের বিবরণসহ সবকিছুই লিখে রাখতেন।
এমনকি তিনি নিজেকে ‘একজন বড় ধরনের বিকৃত মানসিকতার পেডোফাইল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং লিখেছেন, ‘এতে আমি ভীষণ আনন্দিত’।
স্কোয়ারনেক আদালতে আরো বলেন, তিনি মনে করেন তার দুইজন ভুক্তভোগীর মৃত্যুর জন্য তিনি ‘পরোক্ষভাবে দায়ী’।
তাদের একজন হলেন- মাথিস ভিনে, যিনি ২০২১ সালে ওভারডোজে আত্মহত্যা করেন বলে পরিবার দাবি করেছে। অপরজনকে ২০২০ সালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
থমাস ডেলাবি নামের এক আইনজীবী তাকে বলেন, আপনি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর পেডোফাইল, শিশু নিপীড়নের জগতে একটি ‘পারমাণবিক বিস্ফোরণ’।
অন্য এক আইনজীবী বলেন, আপনার এ স্বীকারোক্তিতে কোনো অনুতাপ নেই। আপনার মধ্যে তো এতোটুকুও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
২০০৫ সালে শিশু পর্নোগ্রাফি রাখার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও লে স্কোয়ারনেক ২০১৭ সাল পর্যন্ত সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সহকর্মীরা বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্যদিকে, এএফপি ও রয়টার্স বলছে, এতো বড় কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও মামলাটি ফ্রান্সে পর্যাপ্ত মিডিয়া কাভারেজ পায়নি। যা নিয়ে ভুক্তভোগী ও অধিকারকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মূলত মামলাটি ফরাসি চিকিৎসা ব্যবস্থার এক গভীর গলদকে তুলে ধরেছে—যেখানে একজন দুর্বৃত্ত সার্জন দুই দশক ধরে নিঃশঙ্কভাবে শত শত শিশুকে নিপীড়ন করতে পেরেছে, আর শুধু চেয়ে দেখেছে প্রতিষ্ঠান।
চলারপথে রিপোর্ট :
সৌদি আরবের তাইয়্যেবাহ শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় মো. শেখ ওয়ারু মিয়া (৫৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আজ ২৯ এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ সময় আলমগীর নামের আরেক প্রবাসী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার বাড়ি কুমিল্লার জেলায়।
নিহত ওয়ারু মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামে। তিনি মো. উঞ্জুর আলীর ছেলে।
ওয়ারু মিয়া সৌদি আরবের তাইয়্যেবাহ শহরে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি একটি কোম্পানিতে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন ভোরে তাইয়্যেবাহ শহরে সড়কের পাশে প্রবাসীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকার তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
নিহত ওয়ারু মিয়ার ভাতিজা প্রবাসী গিয়াসউদ্দিন বলেন, মরদেহ বর্তমানে সৌদি আরবের একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ বাংলাদেশে আনা হবে। মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
‘আমাদের কাছে পাবেন অরিজিনাল (এ জে এস কাগজের) গ্লেজিং প্রিন্টের সুতা জলছাপসহ নিখুঁত কাজের মাল। আমাদের কাছে ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট আছে, যা ব্যাংকের মেশিন ছাড়া খালি চোখে বোঝা অসম্ভব।’ ফেসবুকের একটি গ্রুপে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছিল জাল টাকার কারবার। এই চক্রটি জাল টাকা তৈরির টিকটক ভিডিও বানিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রচারণা চালাত। তবে মূলত জাল টাকা সরবরাহের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে আসছিল তারা।
সম্প্রতি এই চক্রের অন্যতম সদস্য সিফাত শেখকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জাল টাকার কারবার ও এই চক্রের বিস্তারিত।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সিফাত ও তার সহযোগীরা নিখুঁত জাল টাকা সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করত। এরপর অগ্রিম টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। ক্রেতাদের দেখানোর জন্য কিছু জাল নোট তারা নিজেদের কাছে রাখত। তবে সেগুলো কাউকে সরবরাহ করত না। এই চক্রে ১০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। তারা কেউ জাল নোট বানায়, কেউ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, কেউ ক্রেতার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে।
উপকমিশনার জানান, চক্রের সদস্যরা সবাই সাধারণ পরিবার থেকে আসা তরুণ। তবে তারা ফ্যাশনেবল ও বিলাসী জীবনযাপনের চেষ্টা চালায়। মাঝেমধ্যেই তারা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। জাল নোট বিক্রির নামে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ তারা মূলত ‘ফূর্তি’র জন্য ব্যয় করে। সিফাতকে গত ২৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে ফেরার পথেই গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে ফুটপাতে ছয় হাজার টাকা বেতনে পোশাক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে সিফাত। সে ইউটিউবসহ অনলাইনে বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে জাল টাকা তৈরি করা শিখেছে। পরে নিজেরা জাল টাকা বানানোর সময় তা ভিডিও করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। মূলত সহজে অধিক অর্থ উপার্জন করতে চাওয়া লোভী ব্যক্তিরা তাদের টার্গেট। তারা এক হাজার টাকার ১০০টি জাল নোটের জন্য ১০ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার ১০০টি নোটের জন্য ১২ হাজার টাকা, ১০০ ও ২০০ টাকার এক লাখ জাল নোটের জন্য ২০ হাজার টাকা দাম নিত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
এই চক্রের একটি ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে জাল টাকার বান্ডিলের ছবি-ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, জাল টাকায় আসল টাকার সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফলে হঠাৎ করে কারও পক্ষে সেটাকে জাল হিসেবে ধরা সম্ভব নয়। গত মাসের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে এ-গ্রেডের নিখুঁত জাল নোট তৈরি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের যে কোনো এলাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে। সেজন্য ৫০ ভাগ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। কুরিয়ার সার্ভিস বা নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো জাল টাকার চালান হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।
একটি ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘মালের (জাল টাকা) স্যাম্পল নিজ হাতে চেক করে তারপর অর্ডার করবেন।’
চারদিন আগে লেখক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির বিজ্ঞাপনের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন– ‘পুলিশ এত কিছু জানে, এটা জানে না? রেট এত ভালো। এক টাকার বদলে নকল আট টাকা।’ তাঁর শেয়ার করা স্ক্রিনশটে লেখা রয়েছে– ‘এক লাখ মালের দাম ১২ হাজার টাকা। সব রকমের নোট। সর্বনিম্ন অর্ডার ৫০ হাজার টাকা।’
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর দক্ষিণ গোড়ান থেকে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে জাল নোটের কারবারে জড়িত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।