সরাইলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

সরাইল, 5 May 2024, 603 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
কালেমা পাঠ ও অর্থকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে এক সময়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের হেমেন্দ্র দেবনাথ এখন মো. হিমেল তালুকদার নামে পরিচিত।

banner

গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল সদরের শাহী জামে মসজিদে (হাটখোলা) হিমেল জুম’য়ার নামাজ আদায় করে উপস্থিত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল মুসল্লিদের সহায়তা চেয়েছেন।

এ সময় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কুতুব উদ্দিন, খতিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আল হুদা, পেশ ইমাম মাওলানা শেখ মো. আমান উল্লাহ হিমেলকে গ্রহন করে নেন। আজ থেকে সকলকে হিমেলের পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। হিমেল জানায়, সরাইল সদরের নাথপাড়ায় তার বাসা। পিতা রামধন দেবনাথ। শিশুকাল থেকে হিমেল ইসলাম ধর্মের লোকজনের সাথে চলাফেরা উঠাবসা করে আসছে। ইসলামের পারিবারিক, সামাজিকসহ সকল রীতিনীতিই শান্তি ও কল্যাণের। তাছাড়া পবিত্র কোরআনের বাংলা কপি পাঠ করে বুঝতে ও উপলদ্বি করতে পেরেছি, ইহার বিধি বিধান ঠিক ভাবে পালন ইহকাল ও পরকালে শান্তি নিশ্চিত। আখেরাতের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি জান্নাতেও প্রবেশ করা যাবে। তাই ইসলাম ধর্মকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে একজন মুসলমান হওয়ার স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। গত ১২ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখে জনৈক মাওলানা’র মাধ্যমে ইসলামের মূল বাণী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পাঠ ও অর্থ মনে প্রাণে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ ক্রমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। নোটারী পাবলিক রেজি: নম্বর-১২৫, তারিখ-১২.০১.২০২৩ খ্রি.। ওইদিন থেকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করছি কিয়ামত, ফুলসেরাত, মিজান, হাসর, বেহেস্ত, দোযখ, ভালমন্দ সব কিছুই আল্লাহর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পূর্বের নাম বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে আমার নাম রেখেছি মো. হিমেল তালুকদার। আমি ইসলামের বিধি অনুসারে ধর্মকর্ম প্রতিপালন করব। এই কাজে কেউ বিঘ্নের বা বাঁধার সৃষ্টি করতে পারবে না। তিনি জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহন করায় তাকে এক বছরেরও অধিক সময় আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে। এখনও অনেক চাপে আছেন। বেশী সমস্যা হলে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাইদের সহযোগিতা চাইবেন।

Leave a Reply

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর Read more

প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া মামলার আসামিরা রেহাই…

অনলাইন ডেস্ক : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন Read more

গাজীপুরে শফিক, তারিক, পাপনের ১০ তলা…

জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদরের চান্দনা Read more

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ…

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা Read more

ইসরাইলি হামলায় একদিনে আরো ৮১ ফিলিস্তিনি…

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৮১জন ফিলিস্তিনি Read more

কৃষি বীজ সংরক্ষণাগার ভেঙে দোকান নির্মাণের…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলি Read more

মিথ্যা মামলা করলে কী কী শাস্তি?

অনলাইন ডেস্ক : দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো মিথ্যা মামলা। Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বহিস্কার

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা Read more

আখাউড়ায় অবৈধ চায়না রিং জাল ধ্বংস

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় তিতাস নদীতে অভিযান পরিচালনা Read more

রেলপথে মাদক পাচার প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশের…

চলারপথে রিপোর্ট : মাদক চোরাচালান, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ দমন Read more

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 7826 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।

সরাইলে ৭ সন্তানের জনক বৃদ্ধের আত্মহত্যা

সরাইল, 17 January 2023, 1460 Views,
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ৭ সন্তানের জনক বৃদ্ধ সমাজ আলী (৬০) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গত রোববার গভীর রাতে উপজেলার অরূয়াইল ইউনিয়নের শোলাকান্দি গ্রামে নিজের বসতঘরের তীরে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছেন। ময়না তদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রয়াত শমসের আলীর ছেলে সমাজ আলীর মূল বাড়ি ধামাউড়া গ্রামে। ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের জনক সমাজ আলী ৫-৭ বছর আগে জায়গা ক্রয় করে শোলাকান্দি (উত্তর পাড়া) গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করছেন। ৩ ছেলেই প্রবাসী। মেয়েদেরকেও বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে নতুন ঘর করায় এখন ২টি ঘর রয়েছে। সমাজ আলী ও তার স্ত্রী জোৎস্না বেগম (৫৫) পুরাতন ঘরটিতেই থাকতেন। অন্যান্য দিনের মত গত সোমবার খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রাত ৯টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। রোববার রাত ১২টা ৩০ মিনিটে প্রকৃতির ডাকে সাড়া বের হন সমাজ আলী।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আর ঘরে ফিরছেন না। চিন্তিত হয়ে পড়েন স্ত্রী জোস্না। ঘর থেকে বেরিয়ে স্বামীকে খুঁজতে থাকেন। কোথাও সন্ধান পাননি। সবশেষে রাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে নতুন ঘরে প্রবেশ করেন। ওই ঘরে দেখতে পান রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তীরের সাথে ঝুলছে সমাজ আলীর লাশ।

পরে তিনি মুঠোফোনে সকল স্বজনকে জানান। সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা সমাজ আলীর লাশটি উদ্ধার করেন। থানাকে বিষয়টি লিখিত জানিয়েছেন সমাজ আলীর চাচাত ভাই আক্তার মিয়া।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ছেলেরা বিদেশ। ৪ মেয়ের সবাই স্বামীর বাড়িতে। তারপরও কেন বৃদ্ধ সমাজ আলী আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিল?

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। তবে সমাজ আলীর লাশটি ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

হাতির চাঁদাবাজি, অতিষ্ঠ ব্যবসায়িরা

সরাইল, 31 January 2024, 725 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে নিয়মিত বেড়েই চলছে হাতির চাঁদাবাজি। ভয়ে চাঁদা দিলেও হাতির ঘনঘন আগমনে অতিষ্ঠ এখানকার ব্যবসায়িরা। সড়কে হঠাৎ করে হাতি দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

banner

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড় থেকে সকাল বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে চাঁদা উত্তোলন করেছে একটি হাতি। স্থানীয় ব্যবসায়ি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সম্প্রতি সরাইল সদরে হাতির সহায়তায় চাঁদা উত্তোলনের চিত্র প্রায়ই চোখে পড়ছে। হাতির উপরে বসে থাকেন মালিক। মালিকের ইশারায় বা সিগনালে হাতি প্রধান সড়কে ধীর গতিতে হাঁটে। হাঁটার সময় মালিকের সিগনালে হাতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা অটোরিকশার যাত্রীদের কাছে শোর বাড়িয়ে দিয়ে চাঁদা দাবি করে। টাকা দিলে শৌর উঁচু করে ঘুরিয়ে পিঠে বসা মালিকের কাছে টাকাটা দ্রুত পৌঁছে দেয়। হাতির শৌর বাড়িয়ে দিলে অনেক ব্যবসায়ি ও পথচারী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। আকৃতি বড় হওয়ায় চাঁদা উত্তোলনের সময় সড়কের বিশাল অংশ দখল করে দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট লেগে যায়।

ব্যবসায়ি নাদির হোসেন, আসমত আলী, জুলফিকারসহ অনেকেই বলেন, ২/৩ বা ১ মাস পরপর যদি আসে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিমাসে ঘুরে ফিরে ৪-৫ বার আসছে। এমন নিয়মিত চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ। টাকা না দিলে অথবা বিলম্ব হলে হাতিটি এমন ভাব ধরে মনে হয় শৌরের সাহায্যে মানুষকে উঠিয়ে নিবে। এটাতো আসলে মালিকরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আমরা জানি না মালিক পিঠে বসে থেকে হাতিকে দিয়ে এভাবে চাঁদা উত্তোলন বিধি সম্মত কিনা। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।

বাবা-মাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়ি ফিরলেন প্রবাসী ছেলে

সরাইল, 14 September 2023, 1023 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল তাদের ছেলে হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। অবশেষে বাবা-মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন সৌদি আরব প্রবাসী একমাত্র ছেলে মো. হাসান আলী।

banner

হাসান আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের মো. তৈয়ব আলী ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে।

হাসান আলী একা নন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ঢাকা থেকে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে সরাইলের ইসলামাবাদ গ্রামে ফেরেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর ছোট বোনের স্বামী সাইদুলের নেতৃত্বে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এলাকাবাসী।

আজ ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের বালুর মাঠে অবতরণ করে। এমন দৃশ্য দেখে খুশি তাদের স্বজন ও গ্রামবাসী।

স্থানীয়রা জানান, জীবিকার তাগিদে ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করেন হাসান আলী। তার আয়ে সচ্ছল এখন পুরো পরিবার। শুধু তাই নয়, তার সহায়তায় উপকৃত হয়েছেন নিকটাত্মীয়স্বজনসহ এলাকার মানুষও।

তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল একমাত্র ছেলে হাসান আলী হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়ি ফিরবেন। অবশেষে ছেলে পূরণ করলেন তাদের সেই আশা। হেলিকপ্টারে বাবা-মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে বাড়ি ফেরার খবরে সহস্রাধিক মানুষ ইসলামাবাদ বালুর মাঠে ভিড় জমান।

এ বিষয়ে হাসান আলী জানান, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন এটাই তার কাছে বড় পাওয়া। গ্রামের মানুষ হেলিকপ্টার দেখেছেন। তাতেই ভালো লাগছে। সঙ্গে বাবা-মা খুশি, এলাকার মানুষ খুশি এবং তিনিও খুশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

সরাইল, 25 June 2025, 101 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির সময় তিন জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। ২৪ জুন মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়।

banner

সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট সাইফের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি করার সময় তিনজনকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের মৃত সৈয়দ হাবিব মিয়া ছেলে মোঃ মোকলেস মিয়া (৫৫), মৃত শামসু মিয়ার ছেলে নয়ন (৩০) এবং আব্দুল আলীর ছেলে মোঃ আরাফাত আলী।

অভিযানে গ্রেফতার করার পর তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ অভিযানকে ঘিরে স্থানীয় জনগণের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

খাটিহাতা এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন যানবাহন থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি চাঁদা তুলে আসছে। একাধিক নিরাপত্তা সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি সড়ক দখল সন্ত্রাসী প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান আব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড (খাটিহাতা) নামক স্থানে চাঁদা আদায় করার একটি ভিডিও ধারণ করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেওয়া হয় এবং সাথে সাথে এই ভিডিওটি সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওতে এক চাঁদাবাজকে বলতে শোনা যায় ৪০ বছর ধরে এভাবেই গাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। ভিডিওটি সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসলে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এদের পিছনে কারা এই চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে এটি খতিয়ে দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার (খাটিহাতা) বিশ্বরোডের গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গাটিকে চাঁদাবাজমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও যাত্রী সাধারণ।