অনলাইন ডেস্ক:
উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার থেকে আগামী ১০ মে শুক্রবার পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। গত ৬ মে সোমবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রথম ধাপে ৪১৮ প্ল্যাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আগামীকাল ৮ মে বুধবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রথম ধাপে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোট দানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন সদস্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রথম ধাপে দেশের ৫৯টি জেলার ১৪১টি উপজেলার ১০ হাজার ৬০৫টি ভোটকেন্দ্রে প্রথম ধাপে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আর প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোট ১৩ জন বা ততধিক আনসার ও ভিডিপি সদস্য সোমবার থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করছেন। তাদের মধ্যে একজন প্ল্যাটুন কমান্ডার (পিসি) ও দুজন সহকারী প্ল্যাটুন কমান্ডার (এপিসি)-এর নেতৃত্বে ছয়জন পুরুষ ও চারজন মহিলা আনসার-ভিডিপি সদস্য রয়েছেন। কোনো কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ৬টির বেশি হলে বুথ প্রতি অতিরিক্ত আরও একজন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পিসি ও এপিসিরা (তিনজন) অস্ত্রসহ এবং আনসার-ভিডিপি সদস্য অস্ত্রবিহীন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। তারা সবাই ৬ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত মোট পাঁচ দিনের জন্য ভোটের মাঠে মোতায়েন থাকবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পানিতে ডুবে রাফি আহমেদ হিমেল (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
আজ ১৩ অক্টোবর শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কেরানীগঞ্জের সারিঘাট এলাকার খালে এ ঘটনা ঘটে।
মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে রাফির বাবা গাড়িচালক রায়হান মিয়া জানান, তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায় থাকেন। দুপুরে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে সারিঘাট খালে গোসল করতে যান। সেখানে গোসলের এক পর্যায়ে সাঁতার না জানা রাফি পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর তার নজরে এলে পানির নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনরা জানায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় রাফি। সে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। আজ লাইলাতুল কদর। এটি একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সুরা কদর)।
এ রাত কোরআন নাজিলের রাত। মহত্ব ও গুরুত্বসহকারে মহান আল্লাহর ইবাদতের রাত। এ রাত হলো হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই ব্যক্তির চেয়েও ভাগ্যবান আর কে হতে পারে, যে এ রাতে নির্ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ পেয়েছে। এ পবিত্র রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে আসে মানবজাতির জন্য বরকত, রহমত ও কল্যাণ নিয়ে।
সূর্যাস্তের পরপরই এ রাতে মহান আল্লাহ তার আরশ থেকে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। মায়া আর দয়া নিয়ে, প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে মানবজাতিকে ডাকেন আর বলেন, ‘কে আছ পাপী! তুমি ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছ দুঃখী! আমি তোমার দুঃখ মোচন করব। কে আছ রোগী! আমি তোমাকে সুস্থ করে দেব। কে আছ দায়গ্রস্ত! আমি তোমাকে দায়মুক্ত করে দেব। তোমাদের কার রিজিকের প্রয়োজন! আমার কাছে চাও, আমি তার রিজিক বৃদ্ধি করব।’ মহান আল্লাহ এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়, তারা কল্যাণকামী হয়। সৌভাগ্যবান হয়।
শবে কদরের রাতে কুরআন নাজিল সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘উজ্জ্বল কিতাবের শপথ! নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল ও এ উভয়ের মাঝে যা আছে সে সবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সে দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-১০)।
শবে কদর ও কোরআন অবতরণ এবং এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে দয়াময় আল্লাহ কোরআনে ‘সুরা কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেছেন। তাতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষার উদয় পর্যন্ত। (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।
শবে কদরের রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ রাত গুনাহ মাফের রাত। হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
কিয়ামুল লাইল: ‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়েও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সুরা ফুরকান : ৬৪)।
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’ (সুরা সিজদা : ১৬-১৭)। নবীজি (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সামনে বনি ইসরাইলের এক উপাসকের কথা বলছিলেন। সে ব্যক্তি এক হাজার মাস ধরে আল্লাহর ধ্যান ও সাধনায় লিপ্ত ছিল। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আফসোস করতে লাগলেন আর বললেন, আমরা এত বছর ইবাদত করব কীভাবে? তাছাড়া আমাদের অনেকে তো এত বছর বেঁচেও থাকি না। ঠিক তখনই জিবরাইল (আ.) এ রাতের সুসংবাদসহ সুরা কদর নিয়ে নবীজির (সা.) কাছে হাজির হলেন এবং এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে প্রমাণ করে দিলেন। (তাফসিরে মাজহারি)।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি)। এ রাত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে কী দোয়া করব? তখন নবীজি (সা.) বললেন, তুমি এ দোয়াটি করবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমাশীল! ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস। অতএব, আমাকে তুমি ক্ষমা কর।
নবীজির (সা.) সময় অনেক সাহাবী (রা.) রমজানের ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর হিসেবে স্বপ্ন দেখেছেন। সাহাবীরা (রা.) নবীজিকে (সা.) স্বপ্নের কথা জানালে নবীজি (সা.) বলেন, আমিও এমনটা স্বপ্নে দেখেছি। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি-নবীজি (সা.) ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত বলেছেন।’ অন্য হাদিসে রয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা কোনো কারণে অক্ষম হয়ে থাকে, সে যেন রমজানের ২৭ তারিখ রাতে ইবাদত করে।’ (মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে-নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেতে চায়, সে যেন তা রমজানের সাতাশতম রাতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমদ)।
অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা পৌঁছেছে জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে দেশজুড়ে সংঘটিত হয় নৃশংসতা। সেই সময়ের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্যই ২১ আগস্ট বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় এসে পোঁছায় দলটি। প্রাথমিক ভাবে এই দলটি বাংলাদেশে প্রায় এক সপ্তাহের সফরে এসেছে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের আজ ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালেই যাওয়ার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহর সাথে বৈঠক করার কথা। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করছেন। প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল।
এ সময় ঢাকায় এসে অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবে।
ফলে ঢাকায় যে দলটি এসেছে, সেটিই যে জাতিসংঘের মূল তথ্যানুসন্ধানী দল, এটা এখনো বলার সময় আসেনি। এনিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জাতিসংঘের দলটি উপদেষ্টাদের সাথেও দেখা করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করবে।
অন্যদিকে প্রথমে জাতিসংঘের কারিগরি, নাকি তদন্ত দল আসবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বিষয়টি এখনো জাতিসংঘ থেকে আমাদের জানানো হয়নি। আশা করছি, প্রাথমিক দল হিসেবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দলটি আলোচনা করবে। মূলত বাংলাদেশের কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা লাগবে এবং একই সঙ্গে জাতিসংঘের দলটি বাংলাদেশে এলে তাদের কী ধরনের সহযোগিতা লাগবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা।
১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৫ সালে ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনা কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসে দুঃসহ জীবন কাটে তাদের।
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে গত ৪২ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
কেবল তাই নয়, বিশ্বের সমস্যা ও সংকট নিরসনের পাশাপাশি শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখায় তাঁকে এখন বিশ্বনেতার মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।
তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্যগাথার এই কর্মময় জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাঁকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেয় তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। এ নিয়ে মোট চারবার সরকারপ্রধানের দায়িত্বে এলেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার টানা প্রায় ১৫ বছরে দেশের বিশাল অগ্রগতি ও বিস্ময়কর উন্নতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ুসহিষ্ণু বদ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে মাদার অব হিউম্যানিটি, চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ, লেডি অব ঢাকাসহ দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন করবে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের দু’দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে– আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল; বাদ আসর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া এবং মিলাদ মাহফিল, সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, সকাল ৯টায় মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার ও সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে বিশেষ প্রার্থনা এবং আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা।
আওয়ামী লীগের সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সারাদেশের দল ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থার নেতাকর্মী-সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।