ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামী ধরতে গিয়ে নারীর কপালে পিস্তল ঠেকানো ও গুলির ঘটনায় তোলপাড় ॥ তদন্ত কমিটি গঠিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 12 May 2024, 269 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামী ধরতে গিয়ে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে নারীর কপালে ঠেকানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে প্রবাসীকে ধরতে গিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এমন ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্য দিবসে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত করে এর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের মামলা হয়। এতে অভিযোগ আনা হয়, নূরুল আলম সৌদি আরব থেকে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি।

এ ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। গত শুক্রবার বিকেল ৫টার প্রবাসী নূরুল আলমকে গ্রেপ্তারের জন্য সাদা পোশাকে তার বাড়িতে যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এস.আই রেজাউল করিমসহ আরো কয়েকজন। এ সময় নূরুল আলমের বাড়িতে তার ভাতিজার সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একদল লোক নূরুল আলমকে খুঁজতে আসে। তারা তাকে না পেয়ে আক্রমানাত্মক হয়ে উঠে। এসময় অনুষ্ঠানে আসা বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তারা নূরুল আলমের স্ত্রী, সন্তান, পিতাসহ পরিবারের লোকজনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে এস.আই রেজাউল প্রবাসীর স্ত্রী বন্যার কপালে দিকে প্রকাশ্যে পিস্তল তাক করে। পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা ঘরে থানা নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগীরা তখন তারা গোয়েন্দা পুলিশ নাকি ডাকাত বুঝে উঠতে পারিনি।

ঘটনার সময় উপস্থিত নুরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, সাদা পোশাকে যাওয়া লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করেই তার ভাইকে খোঁজ শুরু করে। ভাই বাড়িতে নেই বলা হলেও তারা মানতে নারাজ। এ সময় সাদা পোশাকে আসা লোকজন নুরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করে।

তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বর্ণ নিয়ে মামলা হয়েছে। স্বর্ণ আমার ভাই আনেনি। আমার ভাইকে ধরতে হলে কেন আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা হবে। বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করব। তিনি বলেন, সাদা পোশাকে আসা লোকজন পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাও আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে খোসা কার।

এ ব্যাপারে নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, প্রবাসে আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যবসায়ীক অংশীদার না করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খাৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় ৫/৬ জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছ থেকে আলমারির চাবি নেয়। এ সময় তারা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের ঘরে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকাসহ গলায় থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ব্যাপারে ডিবি পুলিশের এস. আই রেজাউল করিম বলেন, বাদী পক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়ি চিল্লাফাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। আমার হাতে পিস্তল ছিলো। তবে কারো দিকে তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামী ধরা সেহেতু সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশানে যাইনি। সদর উপজেলা বিশ্বরোড এলাকার বাদী এসে বাড়িতে আসামীর অবস্থানের কথা জানালে সেখানে যাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। যারা প্রবাসীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্ত কাজ শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দিব।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো অফিসার যদি আসামী ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টির গভীরভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্য দিবসে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত করে এর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

অনুমোদন ছাড়াই অফিস চত্বরের গাছ কাটলেন সরকারি কর্মকর্তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 30 January 2023, 1259 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পানিবিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে থাকা ১২টি গাছ কেটে ফেলেছেন প্রকৌশলী। সম্প্রতি অফিস চত্বরে থাকা আকাশি, মেহগনি ও কড়ই গাছগুলো কেটে ফেলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা শহরের পুনিয়াউট বাইপাস সড়কের মোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানিবিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়টি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার পর স্টাফরা নিজ খরচে অফিস চত্বরে নারিকেল, আকাশি, মেহগনি ও কড়ই গাছ রোপণ করেন। দীর্ঘদিনে গাছগুলো অনেক বড় হয়। পরবর্তী সময়ে অফিসটি সম্প্রসারণ করে সংস্কার করা হয়। এসময় বেশকিছু গাছ কাটা পড়ে।
সম্প্রতি এ অফিসের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কারের জন্য দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে মৌখিক অনুমোদন নেন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ছগির উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তিনি ঝোপঝাড় পরিষ্কারের পাশাপাশি অফিস চত্বরে থাকা ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ গাছ কেটে ফেলেন।
সরকারি কোনো অফিসের গাছ কাটতে গেলে বনবিভাগে লিখিত আবেদন করতে হয়। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর গাছ কাটা যায়। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানিবিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ে গাছ কাটতে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানিবিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ছগির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্যারেরা বলেছেন ছোট ছোট গাছগুলো কেটে ফেলতে। আমি ছোট গাছগুলো কেটেছি। বড় কোনো গাছ কাটা হয়নি।’

দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. এ বি এম খান মোজাহিদী বলেন, ‘আমাকে অফিস পরিষ্কারের জন্য ছোট ছোট গাছগুলো কাটার কথা বলা হয়েছিল। বড় কাছ কেটেছে কি না জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহকারী বন সংরক্ষণ কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সরকারি অফিসের ছোট বা বড় যে কোনো গাছ কাটতে গেলে আমাদের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি আছে। উনারা এ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। গাছের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানিবিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে কোনো আবেদন আমরা পাইনি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 14 August 2024, 145 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে পুকুরের পানিতে ডুবে আরিয়ান নামে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কুড়াবাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আরিয়ান একই গ্রামের ভূইয়া বাড়ির কামরুল ভূইয়ার ছেলে।

নিহত শিশু আরিয়ানের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, আরিয়ান দুপুরে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে কয়েকজন শিশুর সাথে খেলাধুলা করছিল। এর কিছুক্ষণ পর আরিয়ানকে আর পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন প্রতিবেশীদের বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে পুকুরে খোঁজাখুজি করে একপর্যায়ে পুকুর থেকে আরিয়ানের লাশ উদ্ধার করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আদালত বর্জন অব্যাহত

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 8 January 2023, 1976 Views,

॥ বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারকের অপসারণ ও জেলা জজ কোর্টের প্রধান নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে আইনজীবীদের আদালত বর্জন অব্যাহত রয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচার প্রার্থীরা। এই ঘটনা এখন এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিনত হয়েছে।
নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন কর্মসূচীর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার আইনজীবীরা দুই বিচারকের অপসারন ও আদালতের নাজিরের বিচার দাবিতে নতুন করে তিন কার্যদিবসের কর্মসূচী ঘোষনা করে। আইনজীবীরা বলছেন স্বেচ্ছায় দুই বিচারক চলে গেলেই তারা আদালতে ফিরে যাবেন।
আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে একজন আইনজীবী বিলম্বে একটি মামলা দাখিল করেন। কিন্তু বিলম্ব হওয়ার কারণে ওই আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেননি। তখন উপস্থিত আইনজীবীরা বিচারককে বলেন, মামলার বাদী আইনজীবীদের মতো আইন জানেন না। তাই দেরিতে আদালতে এসেছেন। এখন (১ ডিসেম্বর) মামলাটি না নিলে এক মাস পর মামলার আবেদন করতে হবে। এতে বাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পরে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও মামলাটি নেয়ার জন্য বিচারককে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি শুনেননি। সর্বশেষ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই বিচারকের এজলাসে গিয়ে মামলাটি নেয়ার অনুরোধ করেন। তখন বিচারক তাঁদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতি সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ি রোববার (১ জানুয়ারি) থেকে আইনজীবীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন শুরু করেন। পহেলা জানুয়ারি আদালত খোলার পর আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেয় বিচারক মোহাম্মদ ফারুক। পরদিন ২ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূইয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আইনজীবী বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে গিয়ে আইনজীবীদের বর্জন সত্ত্বে তিনি কেন এজলাসে বসেছেন তা নিয়ে বিচারকের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। ওই সময়ে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিচার বিভাগের কর্মচারিরা ক্ষুব্দ হয়ে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিচারকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগ তুলে তারা গত চার জানুয়ারি বুধবার আদালতের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে আদালত চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারের অপসারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অপসারণ এবং জেলা জজ কোর্টের প্রধান নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে তিন কর্ম দিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে গালিগালাজ ও তার সাথে অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মোঃ আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি তাদেরকে আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
বোববার আইনজীবীদের আদালত বর্জনের দ্বিতীয় দিন। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূর-দুরান্ত থেকে আসা বিচার প্রার্থীরা।
বিজয়নগর থেকে আসা বিচার প্রার্থী সেলিম চৌধুরী বলেন, আদালতে আমার একাধিক মামলা আছে। উকিল আর জজ সাবদের মধ্যে ঝামেলার কারণে কোর্ট হচ্ছেনা। গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে বিষয়টি দ্রুত সমাধান জরুরি।
কসবা থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ভোগান্তিতে আছি। জজ সাব আর আইজীবীদের বিরোধের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের বিচার প্রার্থীদের। এভাবে আদালতে চলতে পারেনা।
আশুগঞ্জ থেকে আসা বিচার প্রার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, আদালতে কোন উকিল যাচ্ছে না। তাই মামলা নিয়ে ঝামেলায় আছি।

এদিকে বর্জনের মধ্যেও বোববার সকালে অ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী সিনিয়র সহাকারী জজ আদালত মোঃ শাহেদুল আলমের আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা পরিচালনায় অংশ নেন। বিষয়টি জানার পর আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে সিনিয়র সহাকারী জজ আদালতের ব্যাঞ্চ সহকারী আপেল মাহমুদ ও ভারপ্রাপ্ত নাজির মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মামলা পরিচালনায় অংশ গ্রহন করেছেন। ( মামলা নং- দেওয়ানী-০৩/২০২৩ এর একটি মামলায় বাদী পক্ষে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন।) এর প্রেক্ষিতে বিবাদী পক্ষকে আগামী ৫দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, জনগনকে জিম্মী করে এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আমরা জেলা জজ শারমীন নিগার, নারী শিশু ট্রাইব্যুনাল -১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ এর অপসারন ও নাজির মমিনুল ইসলামের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আদালতে ফিরে যাব না। আমাদের আদালত বর্জন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন সোমবার আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারন সভা আহবান করা হয়েছে। ওই সভা থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
এদিকে বর্জনের মধ্যেও মামলা পরিচালনায় অংশ নেয়ায় অ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলামকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মামলা পরিচালনার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক আশিক

বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 10 January 2023, 2295 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নিহত সাংবাদিক ও সেচ্চাসেবক আশিকুল ইসলাম আশিকের (২৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বাদ আছর আশিকের গ্রামের বাড়ি জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর বন্দরবাজারে সংলগ্ন গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে আশিকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের পর পরই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশিকের প্রিয় সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা শেষ গোসল করান। গোসল শেষে কাফনের পর শহরের ট্যাংকের পাড় মাঠে বাদ যোহর আশিকের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার আগে বক্তব্যে নিহত আশিকের পিতা আশরাফ উদ্দিন তার বক্তব্যে খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। জানাজায় ইমামতি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এতে সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করে। জানাজা শেষে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন আশিকের সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র আমরাই জেলার সব অজ্ঞাত উদ্ধার হওয়া মরদেহ কবর দিয়ে আসছি। এই পর্যন্ত শতাধিক কবর আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি রক্তদান তো নিয়মিত বিষয়। প্রতিটি কাজেই আশিক সক্রিয় ছিল। অথচ আমাদের সংগঠনের মিটিং শেষে ফেরার পথে তাকে হত্যা করা হলো। আমরা মানুষের জন্য বিনামূল্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার ফল বুঝি নির্মমভাবে নিহত হওয়া!
পরবর্তীতে আশিকের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন মনিপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় বন্দর বাজার এলাকায় বালুর মাঠে আশিকের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে আশিকের বাবা আশরাফ উদ্দিন ও পত্তন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তারা খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। পরে মাঠের পাশেই কবরস্থানে আশিককে কবরে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।
গত সোমবার (০৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিক ও সেচ্ছাসেবী আশিকুল ইসলামকে স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হানের নেতৃত্বে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। আশিক ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পর্যবেক্ষণের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও আশিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একমাত্র অজ্ঞাত মরদেহ কবর ও রক্তদানকারী সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আজহার উদ্দিন জানান, আশিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। অজ্ঞাত লাশ কবর ও রক্ত দেওয়ায় আশিক সবসময় সামনের সাড়িতে থাকতো। সোমবার বিকেলে শহরের অবকাশ পার্ক আমাদের সংগঠনের মাসিক সভা ছিল। সভা শেষে আমরা দুইটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও রিকশাযোগে ফিরে আসছিলাম। আশিক আমার অটোরিকশার পেছনে একটি রিকশায় ছিল। সামান্য যাওয়ার পর পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে রায়হান নামের একটি ছেলে সহ আরও কয়েকজন দৌঁড়ে এসে আশিকের শরীরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন জানান, আশিককে হত্যার প্রধান অভিযুক্ত রায়হান মিয়া ওরফে সোহান ও সাফিন আহমেদ জুনায়েদকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আশিকের বাবা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 8 June 2023, 837 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
‘দেশকে ভালোবাসব, নীতির পথে চলবো’ এই শ্লোগান নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদানের অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

আজ ৮ জুন বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে জেলার ৯টি উপজেলার ১৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সহ সকলকে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ফজলুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোঃ সাইফুল ইসলাম ও জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জুলফিকার হোসেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কবি আবদুল মান্নান সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরজু।

অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশন কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাসুম আলী সহ জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, অভিভাবক ও বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।