চলারপথে রিপোর্ট :
পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ায় পুরস্কৃত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় ১২ শিক্ষার্থীকে। এপ্রিল মাসে লাইব্রেরিতে সর্বাধিক উপস্থিত হয়ে বই পড়ায় পুরস্কৃত করা হয় তাদের।
আজ ১৫ মে বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের হাতে এ পুরষ্কার তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বালিকা ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন ছাত্রী সাদিয়া বুশরা, হাফসা বেগম, সুমাইয়া আফরিন, ২য় হয়েছেন ইসরাত জাহান ও সৃষ্টি রায় এবং ৩য় হয়েছে সানিয়া আক্তার ও মহিমা রায়। বালক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন পৃথিবী দাস সূর্য্য, ২য় স্নেহাল গোপ পান্না, সৌমক রায়, গগনদীপ কুন্ডু, ৩য় হয়েছেন শয়ন গোপ। জানা যায়, আগে উপজেলার লাইব্রেরিতে আগে তেমন পাঠক ছিলো না। জরাজীর্ণ ভবনে নানান রকমের বই থাকলেও গড়ে এক বা দুইজন শিক্ষার্থী এখানে আসতেন। পাঠক ফেরাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী বই মেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়েছিলেন লাইব্রেরিতে সর্বাধিক উপস্থিত ব্যক্তি পাবেন পুরস্কার। সেই ঘোষণায় বেড়েছে নাসিরনগর পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক উপস্থিতি।
এ উপলক্ষে পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাতলপাড় ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মানিরুল হোসাইন, নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম, নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার দাস, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ সিদ্দীক, গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সুজিত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
এ সময় মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের অনেক উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নেই। এটি নাসিরনগরের সৌভাগ্য যে উপজেলায় একটি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। আমি উপজেলায় যোগদানের পর লাইব্রেরি ভিজিট করতে গিয়ে দেখতে পাই প্রতিদিন পাঠক সংখ্যা খুবই কম। পরে ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে যারা সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বই পড়বেন, তারা আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার পাবেন। পাশাপাশি লাইব্রেরিটি সংস্কার করা হচ্ছে। ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিল মাসে সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বইয়ের পাঠকদেরকে আমরা পুরস্কৃত করেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব সৈয়দ এ.কে. একরামুজ্জামান।
তিনি আজ ২৭ নভেম্বর সোমবার বেলা তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এদিকে তিনি সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে পুলিশের করা একটি বিস্ফোরক মামলায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
সৈয়দ একরামুজ্জামান গত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে “কুলা” প্রতিক, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আলহাজ্ব সৈয়দ এ.কে. একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা এবং আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
নাসিরনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর রাত আটটার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরের কাঁশফুল রেস্তোরার সামনে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে ৩৮জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুপন নাথ। সরকারি কাজে বাধা প্রদান, হত্যার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার ও পুলিশ সদস্যের আহতের ঘটনায় হওয়া ওই মামলায় একরামুজ্জামানকে চার নম্বর আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতে আসনে একরামুজ্জামান। একরামুজ্জামানের সাথে ঢাকা থেকে ব্যারিষ্টার আনিছুর রহমান ও আইনজীবী বিপ্লব কুমার চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন।
দুপুর ১২টার দিকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে (নাসিরনগর আমলী আদালত) বিস্ফোরক আইনের ধারার মামলায় হাজিরা দেন। আদালতে তার পক্ষে আইনজীবী আলী আজমের নেতৃত্বে ১৫-২০জন আইনজীবী শুনানীতে অংশ নেন।
আলহাজ্ব সৈয়দ এ.কে. একরামুজ্জামানের পক্ষের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবী আলী আজম বলেন, বিস্ফোরক আইনের মামলার তারিখ গত ২ নভেম্বর। কিন্তু ঘটনার সময় একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপস্থিত ছিলেন না। কারণ গত ২ নভেম্বর ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি একটি মামলায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানী শেষে ঢাকার ওই আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এই প্রমাণপত্রসহ আরো অন্যান্য প্রমাণপত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পেশ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত সবকিছু বিবেচনা করে বিস্ফোরক আইনের ওই মামলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয় আদালত) রকিবুল হাসান তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান বলেন, আমি জামিন পেয়েছি। ঢাকায় যাচ্ছি। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এই মুহুর্তে বলার মতো কিছুই নেই। এখনই সবকিছু স্পষ্ট করতে চাচ্ছি না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন। তিনি তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এই আসনে মাঠ পর্যায়ে একরামুজ্জামানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
সৈয়দ একরামুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনরা বলেন, একরামুজ্জামান নির্বাচনে অংশ নিতেই উপজেলার তিন হাজার ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বি.এম. ফরহাদ হোসেন নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ১ হাজার ১১০ হাজার ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান ধানের শীষ প্রতীকে পান ৬০ হাজার ৭৩৪ ভোট। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী প্রয়াত ছায়েদুল হক পেয়েছিলেন ৯৯ হাজার ৮৮৬। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী একরামুজ্জামান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ কাউছার আহমদ বলেন, দুপুর তিনটার দিকে মোঃ বকুল মিয়া নামে একজন সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়ার সভাপতিত্বে সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা ডাঃ রাফিউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ফজলে ইয়াজ আল হোসাইন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুবিনা আক্তার, থানার অফিসার্স ইনর্চাজ (ওসি) মো: সোহাগ রানা, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জামিল ফোরকান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইকবাল মিয়া, জেলা পরিষদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া হাকিম রাজা, গুনিয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান মো: জিতু মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস, ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক, কুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন ভূইয়া, ধরমন্ডল ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম, চাপরতলা ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমদ ভূইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক চন্দ্র দাস, প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ চন্দ্র দেব, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আকতার হোসেন ভূইয়াসহ আইনশৃংখলা কমিটির সসদ্যগণ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি মাদক-জুয়া, চুরি-ডাকাতি বন্ধসহ আইনশৃংখলা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর :
মো. রাসেল মিয়া- পরিবারকে স্বচ্ছলতার আলো দেখানোর স্বপ্ন নিয়ে ২০২৪ সালে পাড়ি জামান লিবিয়া। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে যে এক নিষ্ঠুর ফাঁদ অপেক্ষা করছিল, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। অবশেষে মাফিয়া চক্রের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিভে গেল এক তরুণ প্রাণ। তার মৃত্যুর খবরে এখন পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
রাসেল উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের ধরমন্ডল গ্রামের লাউস মিয়া আউলিয়া বেগম দম্পতির বড় ছেলে। পরিবারের দাবি, ২১ ফেব্রæয়ারি লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের লোকজন বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে রাসেলকে হত্যা করে। ২২ ফেব্রুয়ারি এক প্রবাসীর মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে পরিবার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে রাসেল সবার বড়। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে পরিবারের শেষ সম্বল, পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন একই গ্রামের মানব প্রাচারকারী লিলু মিয়ার হাতে। কথা ছিলো লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানো হবে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পৌঁছে তার কপালে জোটে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। সেখানে গিয়ে তাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় লিবিয়ার একটি স্থানীয় দালাল চক্রের হাতে। এর পরই শুরু হয় দুঃস্বপ্নের অধ্যায়। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৩০ লাখ টাকা। সবশেষ আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।
নিহতের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন,‘ আমার জীবনের শেষ সম্বল বসত ভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েক ধাপে ৫০ লাখ টাকা দিছি। আরো টাকা চাইত। কিন্তু পরবর্তীতে টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলেরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।
রাসেলের মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে দালাল লিলু মিযার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবার ও সে পলাতক আছে। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ধরমন্ডল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, রাসেলকে বাঁচাতে তার পরিবার প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। কিন্তু টাকা দিয়েও বাঁচাতে পারেনি। যারা মানব প্রাচারের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। রাসেলের মতো আর কোন তরুণ যেন অকালে প্রাণ হারায়।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা মানব প্রাচারের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বেঙ্গাউতা গ্রামে বাস করেন এক হাজার পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামে শিশু রয়েছে অন্তত ৫০০। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের জন্য কোনো বিদ্যালয় নির্মিত হয়নি গ্রামটিতে। সবচেয়ে কাছের যে বিদ্যালয়, সেই কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থানও প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। রাস্তাঘাট বেহাল হওয়ায় বছরের প্রায় ছয় মাস নৌকা ছাড়া যাতায়াত করতে পারেন না বাসিন্দারা। এ সময় চলাচলে ঝুঁকি থাকায় শিশুরাও দূরের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এ গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন খান পড়েন রাজধানী ঢাকার তিতুমীর কলেজে। সেখানকার অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র বোরহান আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘আমাদের গ্রামে স্কুল নেই, রাস্তাঘাট নেই। মানুষের চেহারা নিয়ে কেবল বেঁচে আছি। শিক্ষার অভাবে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগছে না।’ বোরহান আরও বলেন, এখানে শিক্ষিত কোনো মানুষ থাকেন না। যাঁদের অবস্থান একটু ভালো, তাঁরা চলে যান শহরে। ফলে বাসিন্দাদের সবাই নিরক্ষর।
মো. আমির বলেন, রাস্তাঘাট না থাকায় পাশের গ্রামেও যেতে হয় ফসলি জমি মাড়িয়ে। বর্ষায় তা-ও ডুবে যায়। যে কারণে ছয় মাস কোথাও যেতে পারেন না। নৌকার পথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশুরা পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।
কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুবনা আক্তার বলেন, বেঙ্গাউতায় আনুমানিক পাঁচ শতাধিক শিশু রয়েছে। নদী পার হয়ে বছরের তিন-চার মাস কিছু শিশু বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। সম্প্রতি তাদের আসা কমে গেছে। তিনি শুনেছেন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে অনেকে।
এর ইঙ্গিত মেলে বিদ্যালয়টির দুই ছাত্রীর কথায়। চতুর্থ শ্রেণির আফরোজা আক্তার বলল, ‘আমরার গ্রামে একটা ইস্কুল হইলে ভালা হইতো। এতো দূরের ইস্কুলে যাইতে মন চায় না। আব্বায় কইছে মাদ্রাসায় ভর্তি কইরা দিবো।’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বিলকিস আক্তারের আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। তাঁদের মতো সে ভবিষ্যতে শিক্ষাদান করতে চায় অন্যদের। তবে এ পথে যে বাধা অনেক। বিলকিস বলে, ‘এতো দূর থেকে ইস্কুলে আইতে পারি না। বৃষ্টি আইলে বইখাতা ভিইজ্জা যায়। বন্যার সময় নৌকা দিয়া আইতে ডর (ভয়) লাগে।’ তাই স্থানীয় খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিও জানায় সে।
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে এ গ্রামের মানুষ বঞ্চিত বলে স্বীকার করেন চাপরতলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনসুর। তিনি বলেন, এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও রাস্তাঘাট তৈরি জরুরি।
জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার ১৩২টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৪টি। তবে ১৭টি গ্রাম বিদ্যালয়হীন। এর একটি এই বেঙ্গাউতা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, বিদ্যালয় স্থাপনে ৩৩ শতক জায়গার প্রয়োজন। জায়গার খোঁজ পেলে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।
ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেনেছেন। ওই গ্রামে বিদ্যালয় নির্মাণে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত দিবস ৭ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে নাসিরনগর উপজেলাকে শত্রুমুক্ত করেন। জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিবাহিনীরা।
১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী নাসিরনগর উপজেলায় তাদের বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও দেশীয় দোসর, রাজাকার, আলবদর ও আলসামস বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামবাসীর উপর চালায় নিষ্ঠুর অত্যাচার ও নির্যাতন। উপজেলার ফুলপুর, নুরপুর, কুলিকুন্ডা, সিংহগ্রাম ও তিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পাকবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনে বহুলোক নিহত ও আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী জনতা পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই করে ৭ ডিসেম্বর থানা অভ্যন্তরে (পুলিশ স্টেশন) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নাসিরনগরকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন।