চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন শোভনের আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজ ছাত্র আশরাফুল রহমান ইজাজকে হত্যার ঘটনায় হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল ৭ জুন শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়ার গ্রামের একটি ঝোঁপ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
আজ ৮ জুন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ৫ জুন বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন (আনারস প্রতীক) বিজয়ী হওয়ার খবরে তার সমর্থকেরা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে আসলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল রহমান ইজাজ গুলিবিদ্ধ হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফারাবী তাকে গুলি করে কোমড়ে পিস্তল রেখে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাচ্ছে। এ সময় তার (ইজাজের) বন্ধুরা তাকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।
এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের পিতা হাজী আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫জনকে আসামী করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের একটি বিশেষ টিম, সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার দল অভিযান পরিচালনা করে শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেপ্তার করে।
প্রেসব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়, গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের একটি ব্রীজের পাশের ঝোপের মধ্য থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর হাসান আল ফারাবী জয় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী পূর্ব বিরোধের জের ধরে ও এলাকায় তাদের একক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইজাজকে মাথায় পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে।
পুলিশের কাছে দেয়া জয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জালাল হোসেন খোকা এবং জয় খুবই ঘনিষ্ঠ, ইজাজও তাদের সাথে চলাফেরা করতো, তারা একই পাড়ার বাসিন্দা। কলেজপাড়া এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতো খোকা ও জয়। তবে তাদের সব সিদ্ধান্ত ইজাজ ও তার সাথে কয়েকজন মেনে না নিয়ে কিছু কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতো। আর এ কারনেই ইজাজ ও তার কয়েকজন বন্ধুর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলো খোকা ও জয়। এই বিরোধ আস্তে আস্তে চরম আকার ধারন করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়, মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ বিল্লাল হোসেন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেনসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ১১ মে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সভায় এ তথ্য জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, এই ৬৫ দিন দেশি-বিদেশি মৎস্য আহরণকারীদের অবৈধ মৎস্য আহরণ যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৪টি জেলার ৬৭টি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জেলের জন্য প্রথম ধাপে ১৭ হাজার ৪১৯ টন ভিজিএফের চাল এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার উপকরণ সহায়তা দেবে।
মন্ত্রী বলেন, মাছকে বেড়ে উঠতে দেওয়া এবং অবৈধ আহরণ বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কাউকে আইনের বাইরে কিছু করতে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে যে কোনো চাপ মোকাবিলা করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য দেখা গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন নৌবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি, নৌ পুলিশের ডিআইজি, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বেশ কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতি, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা।
অনলাইন ডেস্ক :
আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত। ১৯৭১ সালের এ রাতেই বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর ঘনতমসা। পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের একটি ঘটেছিল আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিতে।
রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো বর্বর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের ওপর। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সম্ভার নিয়ে রাত ১০টার পর সারা দেশে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা শুরু করে তারা।
সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাক-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাক বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন নিরপরাধ বাঙালির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে। পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলার নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ ঢাকাজুড়েই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক, সঙ্গে সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
হানাদাররা চলার পথে রাস্তার দুই পাশে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে ছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখণ্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যুহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। হানাদার বাহিনী এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তার বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের রাতে ১ মিনিট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। অন্ধকারে থাকবে দেশ।
অনলাইন ডেস্ক :
শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার (ইসি) নিয়োগের দায়মুক্তি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন তখনকার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে আইনের পক্ষে প্রস্তাব করে। আওয়ামী লীগও ইসি গঠনে আইনের প্রয়োজন আছে বলে মত দেয়।
সংবিধানে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের নির্দেশনা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে তা হয়নি।
অবশেষে ২০২২ সালে সেই আইন করে ইসি গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর জন্য ওই বছর ১৭ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনটির বিল পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ২৯ জানুয়ারি এ আইনের গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
আইন পাসের পর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ওই বছর ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম দেওয়ার অনুরোধ করে। ব্যক্তিপর্যায়েও নাম আহ্বান করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে কমিটি। অনুসন্ধান কমিটির প্রকাশ করা ৩২২ জনের তালিকা থেকেই নতুন নির্বাচন কমিশনের ৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তাঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে করা হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। আর নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান এবং সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। এই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এই আইনের ৯ ধরায় বলা আছে- ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’
এই ধারাটি চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। তাঁরা হলেন- আব্দুল্লাহ সাদিক, জিএম মোজাহিদুর রহমান, মিসবাহ উদ্দিন, জোবায়দুর রহমান, নোয়াব আলী, আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী, সাজ্জাদ সরওয়ার, মোজাহিদুল ইসলাম, মিজানুল হক এবং একেএম নুরুন নবী। রিটে বলা হয়, সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগ কোনো আইন পাশ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে না। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার আইন, ২০২২ এর ৯ ধারার মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘ধারা ৯ এর মাধ্যমে ইতোপূর্বে নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের ক্ষমতাকেও খর্ব করা হয়েছে। যা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থি। তা ছাড়া এই দায়মুক্তি সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক।’
অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। এর মধ্যে ৪৮টিতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে বলে জানিয়েছেন সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে এই ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আজ ৩১ জানুয়ারি বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন হুইপ স্বপন।
পরে সাংবাদিকদের স্বপন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমরা আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র মিলে সংরক্ষিত ৪৮ আসনে প্রার্থী দেব। বাকি দুজন জাতীয় পার্টির সদস্য হবেন।
হুইপ বলেন, এবার সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নারী নেত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আওয়ামী নেত্রীরা গুরুত্ব পাবেন।
অনলাইন ডেস্ক :
ছুটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৪ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
২০ জুলাই বৃহস্পতিবার মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর সই করা চিঠি স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে মাউশির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় আজ ২৩ জুলাই রবিবার।
এতে উল্লেখ করা হয়, জুন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করেন। অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং থেকে মাধ্যমিক উইংয়ে এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এতে ছুটি ছাড়াই অননুমোদিতভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এমতাবস্থায় পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে পরিদর্শনকালীন অননুমোদিতভাবে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট কারণ আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব স্ব জেলা শিক্ষা অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
শোকজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রংপুর। এ অঞ্চলের ১০ শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজশাহীর সাতজন, খুলনা অঞ্চলের পাঁচজন, ঢাকা অঞ্চলের চারজন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিনজন, কুমিল্লা অঞ্চলের দুইজন, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলের একজন করে শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন।
মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হক হেনরী বলেন, যাদের শোকজ করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই দুদিন বা তার বেশি দিন স্কুলে আসেন না। এটা সতর্কীকরণ নোটিশ। ভবিষ্যতে কেউ এমন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।