চলারপথে রিপোর্ট :
পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আয়োজনে ভাদুঘর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে চলছে কোরবানির পশুর হাট। গত ১৩ জুন থেকে এই হাট শুরু হয়েছে। চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
সরেজমিনে আজ ১৪ জুন শুক্রবার ভাদুঘর কারবানির পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়। পুরো বাজার জুড়েই কোরবানির পশুর বিশাল সমারোহ। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা কম। এদিকে পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীরা মাঠের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতের বেলা আলোর জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো টার্মিনালের বাইরে এবং ভিতরে নিরাপত্তা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই হাটে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। এখনো বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি। কিছুসংখ্যক ক্রেতা হাটে ঘুরে ঘুরে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানির পশু দেখছেন এবং দাম যাচাই করে করছেন। হাটটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। এই মুহূর্তে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন তারা। আর মাত্র কদিন বাকি কোরবানির ঈদের। তবে এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি শহরের সবচেয়ে বড় এই পশুর হাট। কিছু কিছুসংখ্যক ক্রেতা হাটে এলেও দর যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, সবশেষে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের দামের ফারাক থাকছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা ছোট গরুর দাম হাঁকছেন বেশি।
১৪ জুন শুক্রবার দুপুরে এই পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপারীরা পশু নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এখনো ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসছে।
হবিগঞ্জ থেকে আসা এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ৮টি গরু এনেছি। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। সবাই দাম শুনে চলে যায়। তিনি একটি বড় গরুর দাম হাঁকেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।
মাঝারি আকারের একটি দেশীয় গরু দেখিয়ে তিনি বলেন, এটার দাম চেয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বলছেন। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একজন কিনবেন বললো। পরে বলে দাঁত ওঠেনি। না কিনেই চলে গেলো।
গরু ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, শহরের মানুষ এত তাড়াতাড়ি গরু কেনেন না। তাদের তো গরু রাখার জায়গা নেই। আশা করছি, আজ রাত থেকে বেচাকেনা শুরু হবে। সরাইল উপজেলা থেকে হাটে আসা এ ব্যবসায়ী ২টি ষাঁড় গরু এনেছেন। আকার ভেদে সেগুলোর দাম তিনি চাইছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এবারের হাটে মহিষ, ছাগল, ভেড়ার উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথকভাবে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আজ ৫ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি গণমিছিল বের করে জেলা জামায়াতে ইসলামী। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা মোবারক হোসেন।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জুনায়েদ হাসান ও আব্দুল বাতেন, যুব ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মো. রাকন উদ্দিন, আইসিটি ও শিক্ষা সম্পাদক রাজিফুল হাসান বাপ্পী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি হাসান মাহমুদ ও সেক্রেটারি জুলফিকার হায়দার রাফি প্রমুখ।
সমাবেশে মাওলানা মোবারক হোসেন বলেন, ‘ছাত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। বিগত ১৬ বছর মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমতকে সহ্য করেনি। এই দেশের মানুষ তাদের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়েছে। তবে এখনও তার সহযোগী ও অনুসারীরা ক্ষমতায় রয়ে গেছে।’
এর আগে সকাল ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ রোড থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত গণমিছিল ও সমাবেশ করে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মুফতি মুবারক উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলী আজম।
একই দিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার উদ্যোগেও পৃথক মিছিল ও সমাবেশ হয়। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং সেক্রেটারি মাওলানা গাজী নিয়াজুল করীম এর নেতৃত্ব দেন। সমাবেশে বক্তারা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পর্ষদে সদস্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম (মিথিল)।
৪ সেপ্টেম্বর বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পরিকল্পনা শাখা-১ সহকারি সচিব মুহাম্মদ আমিন শরীফ স্বাক্ষরিত পত্রে রাষ্ট্রপতি আদেশ ক্রমে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পর্ষদে সদস্য হিসাবে তাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পর্ষদে সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম এর জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র ফুলবাড়িয়ায়। স্কুল জীবন শুরু হয় অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জামান জাপানে। সেখানে পিএইচডি শেষ করে আমেরিকাতে, তারপর শিক্ষকতা শুরু করেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (অওটই) তে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। পি কে এস এফ পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্য পদে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম জানান, এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সবাইকে সবার স্থান থেকে কাজ করতে হবে। আমি একটি কাজের দায়িত্ব পেয়েছি। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তির ফলাফলে তাহিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর নাম ১৪ বার উঠেছে। এর মধ্যে মেধা তালিকায় ১০ বার ও অপেক্ষমান তালিকায় চারবার তার নাম উঠে। একইভাবে ফারিয়া জামান জেসি ও ফারিয়া আরফা নামে এক শিক্ষার্থীর নাম পাঁচবার উঠে। একই ছবি ও জন্মনিবন্ধন নম্বরে ফারিয়া জামান জেসি ও ফারিয়া আরফা নামে পৃথক নাম রয়েছে তালিকায়। এ ধরণের ‘অদ্ভুত’ ফলাফলে নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টি নিয়ে হতবাক। তবে কি কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভ. মডেল গালর্স হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৪১ জন ভর্তির জন্য আবেদন নেওয়া হয়। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিতদের তালিকা সোমবার বিকেলে স্কুলের ফটকে লাগিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফলাফল দেখতে ভীড় জমে। ফলাফল ঘেঁটে দেখা যায়, তাহিয়া নামে এক শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় আটবার ও অপেক্ষমান তালিকায় ছয়বার রয়েছে। ফলাফলে তাহিয়ার একই ছবি রয়েছে। তবে একাধিক জায়গায় জন্মনিবন্ধন ও মোবাইল নম্বর ভিন্ন। তাহিয়ার বাবার নাম রুবেল মিয়া ও মা লাভলী বেগম। তাহিয়ার নাম মেধা তালিকার ৫, ১৩, ১৭, ২৪, ৩২, ৩৬, ৬৬, ৬৭, ৯৮, ১১৬ তে রয়েছে। অপেক্ষমান তালিকার ৮১, ১০৮, ১১৬ ও ১১৮ তে রয়েছে। একইভাবে ফারিয়া জামান জেসি নামে আরেক শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় তিনবার ও ফারিয়ার আরফা দুইবার রয়েছে। ফারিয়ার ক্ষেত্রে সব ছবি এক থাকলেও নামের ক্ষেত্রে কোথাও ফারিয়া জামান জেসি, ফারিয়া আরফা রয়েছে। তবে জন্মনিবন্ধন নম্বর ও মোবাইল নম্বর একই রয়েছে।
ফারিয়ার বাবার নাম আবু জামিল ও মায়ের নাম তানিয়া আক্তার। ফারিয়ার জামানের নাম ১, ১০৮, ১৩৩, ফারিয়া আরফা নাম মেধাতালিকার ৯৩ ও ১৩৫ এ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক পারভীন আক্তার বলেন, ‘ফলাফল দেখার সময় বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ে। তাহিয়া নামে শিক্ষার্থীর নাম দুই তালিকায় ১৪ বার উঠেছে। তবে কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই।’
চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপির ডাকা মহাসড়ক অবরোধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের নিরাপত্তা এবং চালকদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য আজ ১ নভেম্বর বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিশেষ টহল দিয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শাহগীর আলমের নেতৃত্বে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পৌনে দুইটা পর্যন্ত এই দুই মহাসড়কে টহল দেয়া হয়।
সকালে জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি গাড়ি বহর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ পর্যন্ত মহাসড়কে বিশেষ টহল দেয়। এ সময় দেখা যায় মহাসড়কে ট্রাক,মাইক্রোবাস, আন্তঃজেলা লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকসাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়াও দূরপাল্লার বাস এনা পরিবহনের কয়েকটি বাসও মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে।
বিশেষ টহল দেয়ার সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, বিজিবির ২৫ ব্যাটালিয়নের ( সরাইল ব্যাটালিয়ন) লেঃ কর্ণেল সৈয়দ আরমান আরিফ, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ একরাম উল্লাহ, র্যাব-৯-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নাশিদ হাসান, জেলা আনসার ও ভিডিপির অ্যাডজুটেন্ট, সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার উদ্দিনসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টহল শেষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অবরোধ থাকলেও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। তিনি বলেন, মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল একটু কম হলেও সময়ের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, কেউ কোন ধরনের বিশৃংখলার চেষ্টা করলে তাকে ছাড় দেয়া হবেনা।
এ ব্যাপারে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, অবরোধের শুরু থেকেই আমরা মহাসড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। তথাকথিত অবরোধ থাকলেও মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। সব কিছু স্বাভাবিক আছে। তবে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা একটু কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যাত্রী স্বল্পতা। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসায় কোন রোগীর মৃত্যু হলে সেটি “ভুল চিকিৎসা নয়, এটি দুর্ঘটনা এবং এটি অপরাধ হিসেবে গন্য করা যাবেনা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা করেছেন জেলা বিএমএর নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ এফ. জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ আবু সাঈদ।
লিখিত বক্তব্যে ডাঃ আবু সাঈদ বলেন, চিকিৎসকরা রোগীদের সম্মতি নিয়ে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। দণ্ডবিধির ধারা ৮৮ ও ৮৯ অনুসারে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক এক্ষেত্রে রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পরও রোগীর মৃত্যু হলে সেটা কোনোভাবেই হত্যা মামলা হতে পারে না। তিনি বলেন, এই আইনে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততার সাথে নিঃসংকোচ চিত্তে কর্তব্য পালন করার নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং হত্যা মামলার মতো ফৌজদারি মামলা হতে ‘দায়মুক্তি’ প্রদান করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ধারা ৮৮ ও ৮৯ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ধারা ৮৮ অনুসারে ভাল উদ্দেশ্যে বা রোগ উপশমের উদ্দেশ্যে সম্মতিসহ কোনো রোগীর অস্ত্রোপচার করার সময় বা পরবর্তীতে যদি ‘মৃত্যু’ ঘটে তবে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। আর দণ্ডবিধির ধারা ৮৯ অনুসারে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা মানসিক প্রতিবন্ধী কোনো ব্যক্তি সম্মতি দিতে অসমর্থ হলে এবং তাকে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে কোনো অস্ত্রোপচার করা হলে এবং সেটি করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটলে তা কোনো অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
তিনি বলেন, তারপরও সম্প্রতি চিকিৎসা দুর্ঘটনায় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে চিকিৎসকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। অথচ চিকিৎসা সঠিক নাকি ভুল সেই মতামত দেয়ার একমাত্র এখতিয়ার বিএমডিসির।
তিনি বলেন, তদন্তে চিকিৎসকের ভুল বা অপরাধ প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। চিকিৎসা দুর্ঘটনা কোনো অপরাধ নয়। তবে রোগীর স্বজনরা জানে না চিকিৎসা নিয়ে কোনো সন্দেহ হলে বিচারের জন্য বিএমডিসির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। এই সুযোগে কতিপয় অতিউৎসাহী মিডিয়া জনগণকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেয়। বিচার প্রক্রিয়া যেমন আদালতে বিচারকের কাছে গোপনীয়, তেমনি চিকিৎসকের কার্যক্রম ও তার নিজের পেশাগত গোপনীয়তা বিএমডিসির আইন দ্বারা নির্ধারিত এবং সংরক্ষিত। রোগীর শরীর অস্ত্রোপচারে আকস্মাৎ দুর্ঘটনা ঘটে যায় যেমন জ্ঞান না ফেরা, হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ জখম হওয়া যা চিকিৎসকের কাছে অনাকাঙ্খিত। এ কারণেই বাংলাদেশ পেনালকোড-এ সার্জনকে দায়মুক্তি দেয়া আছে।
তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ধারা ৩০৪, ৩০৪ এর উপধারা ক ও খ প্রয়োগ করে যদি কোনো চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করতে হয়, সেক্ষেত্রে আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের মতামত লাগবে। এবং উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক তদন্তে দোষী সাব্যস্থ হলেই কেবল এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে। রোগীর মৃত্যুকে হত্যাকান্ড হিসেবে নথিভূক্ত করা অনাকাঙ্খিত। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি চিকিৎসক আবু সাঈদের অনুরোধ, তারা যেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেন এবং সঠিক কারণ অনুসন্ধ্যানে বিএমডিসি, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করেন। সেই সাথে চিকিৎসায় কোনো রোগী মারা গেলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্বাবধায়ক ডাঃ মো. শওকত হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রানা নূর সামস্, ডাঃ ফয়েজুর রহমান ফয়েজ, ডাঃ আজহারুর রহমান তুহিন, খোকন দেবনাথ, মাহফিদা আলম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্য পাঠের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন চিকিৎসক নেতারা। কিভাবে মিডিয়া ক্রাইম হলো? একজন চিকিৎসক অধিক হাসপাতালে কিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং তার মান কতুটুকু? বেসরকারি হাসপাতালে রাতে কেন কোনো চিকিৎসক থাকেন না? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের দূর্ব্যবহারসহ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক।
মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় জেলায় কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।