অনলাইন ডেস্ক :
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত সৌদির আরাফাত ময়দান। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতায় আজ ১৫ জুন শনিবার সৌদি আরবের মক্কা নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ হাজি।
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৯ জিলহজ। এটি পবিত্র ‘আরাফাত দিবস’ হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহাসিক এই ময়দানে ইবাদত বন্দেগি আর দোয়া মোনাজাতে মশগুল হাজিরা। এদিন সকাল থেকে কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।
সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ শনিবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা করেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।
গত ৮ জিলহজ শুক্রবার মক্কা থেকে পাঁচ থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। সেখানে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন তারা। সেখান থেকে আজ ভোরে তারা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাক্সক্ষায় ছুটে এসেছেন আরাফাতের ময়দানে। মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
আরব নিউজ অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্ব থেকে ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী গত শুক্রবার মিনায় তারবিয়া দিবস কাটিয়েছেন। এদিন তারা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরাফাত দিবসের প্রস্তুতি নেন। হজযাত্রীরা হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর দেখানো পথ অনুসরণ করে শনিবারের আরাফাত দিবসের জন্য তাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দক্ষ ট্রাফিক ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা হজযাত্রীরা মসৃণভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন। হজযাত্রীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ৩৪ হাজারের বেশি চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং প্রশাসনিক কর্মীরা কাজ করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৮৯টি নিবেদিত হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং মোবাইল ক্লিনিকের অসুস্থ হাজিদের পরিবহণে ৭৩০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং সাতটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ জুন থেকে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ১৮০ জন হজযাত্রীর হার্টে অস্ত্রোপচার এবং ৪৭০ জনেরও বেশি হাজির ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি হজযাত্রী মন্ত্রণালয় প্রদত্ত বিভিন্ন চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা ব্যবহার এবং প্রচুর পানি পান করার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়া বলেছেন, ‘পবিত্র স্থানগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা হজ করতে আসা সবাইকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।’
মিউনিসিপ্যাল, রুরাল ও আবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, পবিত্র স্থানগুলোতে হাজিদের সহায়তায় তাদের ২২ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এ ছাড়া ৮৮ হাজার ডাস্টবিন সরবরাহ করা হয়েছে।
আজ সারা দিন হাজিরা পবিত্র আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে প্রার্থনা করবেন। এ ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন। আজ সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
(১০ জিলহজ) সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রবিবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষ করে আবার মিনায় ফিরে আসবেন হজযাত্রীরা। সেখানে জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর পশু কোরবানি করবেন তারা। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।
হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরিকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা দিয়ে, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।
মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২৩ সালে ১৮ লাখের বেশি লোক হজ করতে দেশটিতে জড়ো হয়েছিলেন। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে ২৪ লাখের বেশি মুসলমান হজে অংশ নেন। এ বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ হজ পালন করছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
অনলাইন ডেস্ক :
সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিতব্য এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আয়োজক নোবেল ফাউন্ডেশন। ওই তিন দেশের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানানোয় ক্ষোভ সঞ্চার হলে এই সিদ্ধান্ত নেয় ফাউন্ডেশন।
এর আগে ২০২২ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ও ভোজ সভায় রাশিয়া ও বেলারুশের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় ফাউন্ডেশন।
যদিও গত বৃহস্পতিবার ফাউন্ডেশন জানিয়েছিল, তারা তাদের পুরোনো রীতি অর্থাৎ সুইডেনে প্রতিনিধিত্বকারী সব দেশকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তে ফিরে যাবে। তবে এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।
আজ শনিবার ফাউন্ডেশন জানায়, নতুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ রক্ষায় নোবেল পুরস্কার যে বার্তা বহন করে তা তুলে ধরতে।
এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশন জানায়, ‘আমরা গত বছরের ব্যতিক্রমকে সাধারণ চর্চা হিসেবে আবারও গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানকে স্টকহোমে অনুষ্ঠিতব্য নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি না।’
অনলাইন ডেস্ক :
নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আজ ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজ বাসভবনে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে৷ গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক৷ আমাদের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ এর দুটি পৃথক অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
অনলাইন ডেস্ক :
গত ১৪ মে তুরস্কের আলোচিত নির্বাচনে কোন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৫০% এর বেশি ভোট পাননি। তাই আগামীকাল রবিবার আবারও অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। তুরস্কের ইতিহাসে তো বটে বিশ্বের চোখ থাকবে কালকের নির্বাচনের দিকে। তবে প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে কালকের নির্বাচনে ৫০% পেতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।
এদিকে তুরস্ককে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এরপরও দেশটির বেশিরভাগ মানুষ তাকে ভালোবাসেন। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে তারা তাকে ভোট দেন। কিন্তু, তারা কেন এমনটা করেন। কারণ, দু’দশক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর এবং এক ডজনেরও বেশি নির্বাচনের পর এরদোয়ান জানেন কীভাবে সবকিছু সামাল দিতে হয়। ইস্তাম্বুলে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের এক সম্মেলনে তাকে কাছে পেয়েও মানুষের যেন আশ মিটছিল না।
এরদোয়ান মূলত তার প্রজাবৎসল নীতি, নৈতিকতা, কঠোর ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় মতবাদের মাধ্যমে তুরস্কের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার ইশারা মতো ট্যাক্সি ড্রাইভাররা উল্লাস করছিলেন, হাততালি দিচ্ছিলেন – এবং তার নির্দেশ মতোই তারা বিরোধীদের প্রতি দুয়ো দিচ্ছিলেন। তবে বিরোধীরাও কম যান না। তারাও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাল কি হবে সেটা শুধুমাত্র ভোটাররাই বলতে পারেন।
সম্মেলনের স্থানটি ছিল বসফরাসের উপকূলে ইস্তাম্বুলের একটি কনভেনশন সেন্টার, যেটি নির্মিত হয়েছিল এরদোয়ান ওই শহরের মেয়র থাকাকালীন সময়ে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট যখন তার ভাষণ শেষ করেন, সমাবেশের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে: “এক জাতি, এক পতাকা, এক মাতৃভূমি, এক দেশ।” ততক্ষণে অনেক বয়স্ক ড্রাইভার উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলছিলেন ওপরের দিকে, কিংবা হাত তুলে প্রেসিডেন্টকে স্যালুট করছিলেন।
মাথায় স্কার্ফ আর রক্ষণশীল পোশাক পরে আয়েশে ওজদোয়ান ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন তার ট্যাক্সি ড্রাইভার স্বামীর সঙ্গে।
এরদোয়ানের সমর্থকরা বলছেন, তার কারণে তাদের জীবন উন্নত হয়েছে
তার নেতার ভাষণের প্রতিটি শব্দ যাতে তিনি শুনতে পান সে জন্য বেশ আগেই মিটিংয়ে হাজির হয়েছিলেন। সিটের পাশে ছিল একটি ক্র্যাচ। তার হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু তারপরও তিনি ওই সমাবেশে না গিয়ে থাকতে পারেননি।
“এরদোয়ান আমার কাছে সবকিছু,” বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলছিলেন তিনি। “আমরা আগে হাসপাতালে যেতে পারতাম না, কিন্তু এখন আমরা সহজেই সেবা পাই। আমাদের এখন পরিবহন ব্যবস্থা আছে। তিনি রাস্তাঘাট উন্নত করেছেন। মসজিদ নির্মাণ করেছেন। দ্রুত গতির ট্রেন আর পাতাল রেল দিয়ে তিনি দেশকে উন্নত করেছেন।”
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাষণে জাতীয়তাবাদী বক্তব্য ছিল ওই সমাবেশের অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। এদেরই একজন হলেন ৫৮-বছর বয়সী কাদির কাভলিওলু, যিনি গত ৪০ বছর ধরে মিনিবাস চালাচ্ছেন। “যেহেতু আমরা আমাদের মাতৃভূমি ও জাতিকে ভালবাসি, তাই আমরা দৃঢ়ভাবেই প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছি।”
“আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ুক কিংবা কমুক,” তিনি বলছেন, “প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তার সঙ্গে আছি। আমার প্রিয় প্রেসিডেন্টই আমাদের আশা-ভরসা।”
তুর্কি প্রেসিডেন্টের ওপর তার সমর্থকদরে অনেক আশা-ভরসা
এ মাসের শুরুতে তুর্কি ভোটাররা যখন নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন, সে সময় তারা তাদের মানিব্যাগের অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভোট দেননি। তুরস্কে খাবারের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। ৪৩% মুদ্রাস্ফীতির কারণে অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয়। তবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকেও অনেকে দায়ী করছেন ওই মুদ্রাস্ফীতির জন্য।
এই অবস্থার পরও প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
এই ঘটনায় বিশ্লেষকরা বেকুব বনে গেছেন, এবং গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা লাভ করেছেন : ‘জনমত জরিপের ফলাফল থেকে সাবধান।’
বিভক্ত এক দেশ
এরদোয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদলীয় নেতা কামাল কুলুচদারোলু নির্বাচনে পেয়েছেন মোট ৪৪.৯ শতাংশ ভোট।
সুতরাং, বিভক্ত এই দেশে ভোটাররাও ছিলেন বিভক্ত – বিরোধী দু’পক্ষের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র ৪ শতাংশ ভোটের।
একজন উগ্র-জাতীয়তাবাদী প্রার্থী সিনান ওগান ওই নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে ৫.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, যে কারণে নির্বাচনটি এই রোববার (২৮শে মে) দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে যেতে বাধ্য হয়। ওগান এরপর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি তার সমর্থন জানান।
তাহলে প্রশ্ন হলো, তুরস্কের অর্থনীতিতে এক বড় সঙ্কট থাকার পরও কেন বেশিরভাগ ভোটার এরদোয়ানকেই বেছে নিলেন?
এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কুলুচদারুলু (মাঝে) এবং তার জোট সঙ্গীরা
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে বিপর্যয়কর জোড়া ভূমিকম্প, যাতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এরপরও ভোটাররা কেন তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন না?
“আমি মনে করি তিনি একজন চূড়ান্ত ‘টেফলন রাজনীতিবিদ’ [কোন অভিযোগ যার গায়ে বসতে পারে না],” বলছেন অধ্যাপক সোলি ওজেল, যিনি ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক।
“তার যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তার শরীর থেকে ক্ষমতার আভা বের হয়। এটা এমন এক জিনিস যা কুলুচদারোলুর নেই।”
কিন্তু প্রথম রাউন্ডের হতাশাজনক ফলাফল দেখে তিনি নিজে এখন ডান দিকে মোচড় দিয়েছেন। তিনি এখন অনেক বেশি কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী। এটা দেখে একজন তুর্কি সাংবাদিক মন্তব্য করেছে, “এটা হচ্ছে পতনের রাস্তায় দৌড়।”
ক্ষমতাসীন একে পার্টির একটি জনসভা
তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন, এই নির্বাচনে আসলে বিজয়ী হয়েছে জাতীয়তাবাদ।
ভোটাররা এযাবতকালের সবচেয়ে জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল এক সংসদকে নির্বাচিত করেছে, যেখানে এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একে (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) পার্টি জোটের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
তুরস্কের কিছু তরুণ ভোটার মনে করছেন, ফলাফল নির্ধারিত হয়ে গেছে। রঙধনু রঙের এক পতাকার নীচে একটি লাল সোফায় বসে ২১-বছর বয়সী জেইনেপ এবং ২৩-বছর বয়সী মের্ট গরম গরম তুর্কি চা পরিবেশন করছিলেন এবং নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করছিলেন।
তারা দু’জনেই বোগাজিচি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। এটি একটি সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস। জেইনেপ এবং মের্ট-এর পরিচয় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলজিবিটিকিউ ক্লাবে – যেটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৫ থেকে ওই ক্যাম্পাসে সমকামীদের শোভাযাত্রা করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের সমকামী সম্প্রদায়কে টার্গেট করে বক্তব্য দিয়েছেন। ইজমির শহরে এক বিশাল সমাবেশে তিনি বলেছেন, “এই জাতি থেকে কোনো এলজিবিটি মানুষ বের হবে না।”
“আমাদের পারিবারিক কাঠামোকে আমরা কলঙ্কিত করি না। এখানে সন্তানরা মানুষের মতো সোজা হয়ে দাঁড়ায় – আমাদের পরিবারগুলো এমনই।”
কাঁধ পর্যন্ত কালো চুল এবং কানে দুল পরা মের্টের মনে হচ্ছে, তুরস্কের এলজিবিটি সম্প্রদায় এখন ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
“এরদোয়ান নিজে, প্রতিটি বক্তৃতায়, প্রতিটি অনুষ্ঠানে, আমাদের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে তুলে ধরছেন,” বলছিলেন তিনি, “দিনের পর দিন রাষ্ট্র আমাদের শত্রু বানাচ্ছে।“
নতুন এক তুর্কি শতাব্দী
রোববার তুর্কি ভোটাররা তাদের দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট দিতে যাবেন, যেটি হবে তুরস্কের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পার হয়েছে প্রায় ১০০ বছর।
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবার নির্বাচিত হলে একটি নতুন “তুর্কি শতকের” প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি আরও উন্নয়ন, আরও শক্তিশালী এক তুরস্ক উপহার দেবেন। সূত্র : বিবিসি
চলারপথে রিপোর্ট :
অনলাইন ডেস্ক :
ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক বিপর্যয় পেরিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার পথে আরো এক ধাপ এগিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানোর যে নির্দেশনা বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে— তাতেই মিলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদের হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ করার নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে ঋণের বিপরীতে আড়াই শতাংশ কম হারে সুদ কেটে রাখবে।
সামঞ্জস্য রক্ষা করতে অবশ্য সমপরিমাণ সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে স্থায়ী আমানতের বিপরীতেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ১৩ শতাংশ সুদ দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আগে এই হার ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিএসএল) জানিয়েছে, ২৫০টি বেসিস পয়েন্টে ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানো হয়েছে। মূলত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সচল করতেই নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।
অযৌক্তিক কর কাট-ছাঁট, অব্যবস্থাপনা, আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি ও করোনা মহামারির সময়কার অর্থনৈতিক স্থবিরতার জেরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ দিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছে যায় ৭০ শতাংশে। ডলারের মজুত না থাকায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সে সময়।
রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাই মূলত এজন্য দায়ী। জনগণের প্রবল বিক্ষোভে গত জুন মাসে রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাজাপাকসে সরকার। সেই থেকে একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী উভয় পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বিক্রমাসিংহে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরিভিত্তিতে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের (বেইল আউট ঋণ) আবেদন করে বিক্রমাসিংহের সরকার। দেশটির অর্থনীতির গতিবিধি যাচাই শেষে গত মার্চে সেই ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ।
কলোম্বভিত্তিক এশিয়া সিকিউরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জীওয়া ফেরনান্দো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নিয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের শেষ পর্যায়ে আছি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিএসএল’র গভর্ণর পি. নন্দলাল বীরাসিংহে রয়টার্সকে বলেন, ‘আসলে সংকট থেকে উত্তরণের ব্যাপারটি ধাপে ধাপে ঘটে। আমরা কেউই বলতে পারি না যে আগামী কাল কিংবা আজ থেকে এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা সব ঠিক করে ফেলতে পারব।’
‘তবে বর্তমানের যে পরিস্থিতি, তা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি – শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণের ধারাবাহিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে কিংবা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে।’
অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ভয়াবহ বোমা হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইশরও বেশি মানুষ।
আজ ৩০ জুলাই রবিবার রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলামা ইসলাম- ফজলের (জেইউই-এফ) একটি সম্মেলনে এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। খাইবার পাখতুনখোয়ার বাজুয়ার বিভাগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ২০ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল। পরবর্তীতে নিহতের সংখ্যা ৪০ জনে দাঁড়ায় বলে জানায় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফিরোজ জামাল শাহ জিও নিউজকে জানিয়েছেন, জমিয়ত উলামা ইসলামের দলের নেতারা বক্তব্য দেওয়ার সময় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এ হামলা দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা মাওলানা জিয়াউল্লাহ জান নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের আইজিপি আখতার হায়াত খান জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন এটি একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। বোমা হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সূত্র: জিও নিউজ