অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামীকাল ৭ জুলাই পবিত্র জিলহজ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী ৮ জুলাই সোমবার থেকে পবিত্র মহররম মাস গণনা করা হবে। সেই হিসাবে ১৭ জুলাই বুধবার পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
আজ ৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।
সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের ওয়াকফ প্রশাসক মো. গোলাম কবীর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব গাজী তারিক সালমন, সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মুন্সী জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক মো. রুহূল আমিন, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের সহকারী খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতী আদনান মুহাম্মদ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ।
চলারপথে ডেস্ক :
চলতি বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৬৪০ টাকা। আজ ২ এপ্রিল রবিবার সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ইসলামী শরিয়াহ মতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি পণ্যের যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়। গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (এক শ পনেরো) টাকা দিতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৩৯৬ (তিন শ ছিয়ানব্বই) টাকা, কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১,৬৫০ (এক হাজার ছয় শত পঞ্চাশ) টাকা, খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১,৯৮০ (এক হাজার নয় শত আশি) টাকা ও পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২,৬৪০ (দুই হাজার ছয় শত চল্লিশ) টাকা ফিতরা দিতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
জয়পুরহাটে রেইজ প্রকল্পের আওতায় বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বল্প আয়ে উদ্যোক্তা নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিউনিটি আউটরিচ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থিক সহযোগিতায় জাকস ফাউন্ডেশন এ সভার আয়োজন করে।
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে জাকস ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এই কমিউনিটি আউটরিচ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাকস ফাউন্ডেশনের উপ নির্বাহী পরিচালক আবুল বাসার।
আরো বক্তব্য রাখেন পরিচালক রফিকুল ইসলাম, উপ পরিচালক খোরশেদ আলম, ওবায়দুল ইসলাম, রেইজ প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম, কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার আবু তাহের আনসারী প্রমুখ। এই প্রকল্পের আওতায় ১৫০ জন তরুণ-তরুণী মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল সার্ভিসিংসহ ১৭টি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিবেন।
সভায় স্থানীয় জনগোষ্ঠির বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেয়।
অনলাইন ডেস্ক :
আসন্ন হজ প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আজ ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের হজ একটা বড় ব্যাপার মুসলমানদের জন্য। কিন্তু হজের মতো পবিত্র কাজেও একটি সিন্ডিকেট দেখতে পাই। তারা কারসাজি করে হজের প্যাকেজ মূল্য বাড়িয়ে তোলে। হজের যে খরচ, সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। কত হতে পারে, কত কমানো যেতে পারে সেই আলোচনা হয়। বর্তমান প্যাকেজ যে অনেক বেশি, সেটি কমিয়ে আনা সম্ভব, সে বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
এর আগে, গত বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি প্যাকেজে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং বেসরকারি প্যাকেজে সর্বনিম্ন প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এ বছর এখনো হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। এখন প্রাক নিবন্ধন চলছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়ে চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়ের পর আর সময় বাড়ানো হবে না।
গত ২৬ আগস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। সৌদি সরকার আরো আগেই বাংলাদেশের জন্য এই কোটা ঘোষণা করেছে।
চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য জন্য তার দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে কেউ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
একইসঙ্গে তিনি উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’য় দেশবাসীর ভোট প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, “আপনারা আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এমনভাবে কাজ করবেন যাতে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।”
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে একথা বলেন।
তিনি আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের তেঁজগাও কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নির্বাচনী জনসভায় যুক্ত হন। যার সাথে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি সহ ৫টি জেলা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। পরে এসব জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন যাতে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।
তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কোন দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না, তাতে কিছু যায় আসে না।”
তিনি বলেন, ভোট কারচুপির কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি আর বিএনপির কাজটা কি? জ্বালাও পোড়াও অগ্নি সন্ত্রাস, এটাই তারা ভালো বোঝে এটাই তারা করে।
তিনি বলেন, এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কেননা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদি সংগঠন হচ্ছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরির অপরাধে দুই দুবার এদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সেটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর মার্চে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঠিক একইভাবে তারা আবার ভোট চুরি করার চেষ্টা করেছিল ২০০৬ সালে। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করে সে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। পারে নাই। কাজেই দু’ দুবার যারা ভোট চুরির অপরাধে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়,ভোটের কথাও শুনতে হয় -এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার জনগণকে আওয়ামী লীগই দিয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। এবারে নির্বাচনে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এ ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে কোন মানুষের ক্ষতি যেন কেউ না করতে পারে। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
“হ্যাঁ আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীও রয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি দলের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যাবেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি নির্বাচিত হবেন। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে কিন্তু কোন রকমের সংঘাত বা মারামারি, কোন কিছুই আমি দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, কোন সংঘাত হলে সংঘাত যদি আমার দলেরও কেউ করে তাদের কিন্তু রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘেœ প্রয়োগ করবেন। যাকে খুশি বা যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবেন এবং সে জয়ী হয়ে আসবে। কেননা গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। এর যেন কোন ব্যতয় না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যও এটা জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান তেজগাঁও দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ, প্রার্থী, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীবৃন্দ সংযুক্ত পাঁচ জেলার ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ:) ও শাহ পরাণ (রহ:) এর মাজার জিয়ারত করে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এরপর দুপুর ২টায় নগরীর চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি।
তিনি ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল সফর করবেন এবং ওই দিন বিকেল ৩টায় জেলা শহরে একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সফর করবেন এবং গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসনের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি, এখন লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকটি ছেলে-মেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আজকে আমাদের ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখের অধিক। যারা ঘরে বসে আয় উপার্জন করতে পারে। তারা কোভিড- ১৯ এর সময়ও এটা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নটা ‘সাসটেইনেবল’ হবে অর্থাৎ যে উন্নয়নটা স্থায়ী হবে এবং যার মাধ্যমে জনগণ সুযোগ পাবে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর। উন্নয়নবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করব।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের অনেক মেধা আছে। যে মেধা অন্বেষণ করে তাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের অর্থনীতিও উন্নত হবে, স্মার্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি সেটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা উন্নত, উদার, অগ্রসরমান, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে উন্নয়নটা হবে সুষম। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যেন সুন্দরভাবে সেখানে বাঁচতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দুর্নীতি মুক্ত এবং সুষম উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কারণ এই দুর্নীতি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু লোক হঠাৎ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়। আর সৎভাবে যারা জীবনযাপন করে তাদের জীবনটা দুর্বিসহ হয়। সেজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ আমরা ঘোষণা দেবো। ন্যায় ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা এবং অর্থনীতিকে সমতা ভিত্তিক করা এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই,” শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটি শব্দ নয়। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নটাকে স্থায়ী বন্দোবস্ত করা যাতে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর সুফলটা ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। সেজন্য তাঁর সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছে। যেমন ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তার রূপরেখা এখনই প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, শতবর্ষ পরে বাংলাদেশের অবস্থান কিরকম হবে? তা বিবেচনা করে ‘ডেলটা মহাপরিকল্পনা – ২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ কিভাবে মুক্ত থাকবে, তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পাঁচ জেলার উন্নয়নের বিভিন্ন খতিয়ান, এগুলোকে আরো সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার নানা পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর সরকারের গৃহীত ১০ কোটির বেশি উপকারভোগীর সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচি, দেশের সকল গৃহহীণকে ঘর নির্মান ও তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আরো জ¦ালা, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি-উপবৃত্তি, মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান এবং চিকিৎসা সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সারাদেশে গড়ে তোলা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
তিনি বর্গা চাষীদের জন্য বিনা জামানতে কৃষিঋণ এবং উদ্যোক্তা তৈরি হবার জন্য ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি কৃষকদের দোরগোড়ায় সার পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। বিএনপি এই সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গুলি চালিয়ে কৃষক হত্যা করেছিল সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিভাবে সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন ছিল না। সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩০টি আসন পেয়েছিল। আর সেখানে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ টি আসনে বিজয়ী হয়। এটা সকলকে মনে রাখতে হবে। এখন বড় বড় কথা বলে, তারা ভোটের কথা বলে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা আইন লঙ্ঘনকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যাদের জন্ম সেই বিএনপি ভোটের কি বোঝে, সে প্রশ্নও তিনি তোলেন। ক্ষমতায় বসে থেকে একদিকে সেনাপ্রধান এবং অপরদিকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের আয়োজন এর মাধ্যমে তার সময়ে বিভিন্ন প্রহসনের নির্বাচনের প্রসঙ্গও তিনি তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যাদের জন্ম তাদের সকল কাজই অবৈধ, কারণ তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না।
তিনি সাম্প্রতিক রেলে অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কিভাবে রেলে আগুন দিয়ে তারা মানুষ পোড়ালো। মাতা শিশু সন্তানকে বাঁচানোর জন্য বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে সে অবস্থায় জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিয়েছে, হেলপার পুড়ে শেষ। ২০১৩ ও ১৪ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা গেছে মনে হয় পানি আনতে, সেই ট্রাকে আগুন দিয়েছে, ছেলে পুড়ে শেষ। সন্তান আগুনে ঝলসে যাচ্ছে বাবা কিছুই করতে পারছে না। এভাবেই সারা বাংলাদেশে তারা তান্ডব করেছে। সেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, নয়টি লঞ্চ তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। এমনকি জজের এজলাসেও তারা আগুন দেয়। ঝালকাঠিতে বোমা মেরে জজ হত্যা করল। গাজীপুরে আইনজীবীদের উপর বোমা হামলা চালালো, সেখানো আইনজীবীদেরকে তারা আহত করল। এটাই বিএনপির চরিত্র, আর এখন আবার শুরু করেছে অগ্নি সন্ত্রাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাসে আগুন দিচ্ছে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে, রেলে আগুন দিচ্ছে। মানুষ যেন শান্তিতে চলাচল করতে পারে এজন্য সরকার নতুন রেলের কোচ ক্রয় করেছে, সেখানে আগুন দিচ্ছে। কারণ মানুষের শান্তি দেখলে ওদের মনে অশান্তি জাগে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘কুলাঙ্গার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই কুলাঙ্গার ২০০১ সালে হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া শুরু করেছিল। তাকে খাওয়া না দিয়ে কেউ ব্যবসা পেতো না। তার খাওয়ার কোন শেষ ছিল না। খেতে খেতে সে সবই খেয়ে ফেলেছে। মানি লন্ডারিং, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক আসামি এই তারেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। আর সেখানে বসে এখন নির্বাচন বানচাল করা সহ মানুষ হত্যার হুকুম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা বলে তারা নাকি গণতন্ত্র দেবে যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি তারা কিভাবে গণতন্ত্র দিতে পারে সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার আমরা ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি, প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছি এমনকি কোভিড-১৯ এর সময় যখন বিশে^র অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল তখনও আমরা ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। দেশের মানুষের উন্নয়নে দিন-রাত পরিশ্রম করেই আমরা একাজগুলো করে যাচ্ছি। রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ সহ দেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা আমরা করেছি সেটা জনগণের মাথায় রাখতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে হবে এবং জনগণের তথা ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
তিনি বলেন,“আর উন্নয়নের ধারাটাকে যদি অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকেই সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে হবে।” বাসস
অনলাইন ডেস্ক :
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ১৪৮টি। এসব মামলায় ঢালাও আসামি করার অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। তখন তদন্ত চলা অবস্থায় একের পর এক আসামির নাম বাদ দিতে বাদীরা আদালতে আবেদন করছেন বা হলফনামা দিয়ে বলছেন ‘ভুলবশত’ আসামি করা হয়েছে।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৪০ মামলা থেকে ৬৭৫ জন আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে গেছেন বাদীরা। এ জন্য তাঁরা ৩৫৪টি আবেদন ও হলফনামা দিয়েছেন। কোনো আবেদনে একজন, কোনোটিতে দুজন আবার কোনো আবেদনে চার-পাঁচজন করে ব্যক্তির নাম মামলা থেকে বাদ দিতে বলেছেন বাদীরা।
আইনজীবীরা বলছেন, এ রকম আবেদন এখনো জমা পড়ছে। হলফনামা দিয়ে ও আবেদন করে বাদীরা বলছেন, এজাহারে ভুলে আসামিদের নাম কে বা কারা লিখে দিয়েছেন। তাই তাঁদের জামিন কিংবা মামলা থেকে নাম বাদ দিতে আপত্তি নেই। বেশির ভাগ আবেদনের ভাষা প্রায় একই রকম।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম ও মহানগরে এ পর্যন্ত ১৪৮ মামলা হয়েছে। এসব এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা ১৩ হাজার ২৭ জন। এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সন্ত্রাসী যেমন আসামি আছেন; আবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। এখন মামলা থেকে এ ধরনের ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য যেমন আবেদন করছেন অনেক বাদী, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর জন্যও আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনও রয়েছেন। মামলা থেকে বাদ দিতে আবেদন করা হয়েছে এমন অন্তত ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে যাঁরা আগে থেকে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজি মামলার আসামি।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলছেন, এসব বাদীর পেছনে কিছু আইনজীবী ও বিএনপির নেতা-কর্মী রয়েছেন। তবে মামলা থেকে রেহাই পেতে টাকা লেনদেনের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ পরিচয় প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কিছু কিছু মামলার ক্ষেত্রে শুরুতেই এক দফা ‘বাণিজ্য’ করেছে একটি চক্র। খসড়া এজাহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পরে টাকার বিনিময়ে বাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। গত ২ জানুয়ারি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘মামলা-বাণিজ্যের’ ব্যাপারে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে দায়ের হওয়া অনেক মামলা সাজানো। অনেক বাদী আসামিদের চেনেন না। মামলার নেপথ্যে বিভিন্ন চক্র কাজ করেছে। এ ধরনের মামলার তদন্ত নিয়ে বেকায়দায় আছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এক মামলারই ৪৫ জনকে বাদ দেওয়ার আবেদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গুলিতে নিহত হন দোকান কর্মচারী মো. ফারুক। এ ঘটনায় তাঁর বাবা ভ্যানচালক মো. দুলাল ২৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরসহ ২৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এর মধ্যে মামলা থেকে আ জ ম নাছিরের নাম বাদ দিতে ৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন বাদী। তাতে বলা হয়, বাদীর অজ্ঞাতসারে অন্য কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতাবশত মামলায় আ জ ম নাছিরের নাম দিয়েছে। নাছির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
বাদীর পক্ষে আদালতে আবেদন পেশ করেন আইনজীবী আখেলুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাকে মামলার আসামি রাখবে না রাখবে, সেটি বাদীর বিষয়। আদালত বাদীর আবেদন নথিভুক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন।
এর মাসখানেক পর ৫ ডিসেম্বর একই মামলার আরও সাত আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেন বাদী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ, গিয়াস উদ্দিন ও মোহাম্মদ হোসেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল নবী ও খুলশী ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মল্লিক এবং আওয়ামী লীগ কর্মী আজগর আলী ও মো. মানিক।
এর আগে ৭ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছিলেন বাদী। এভাবে গত চার মাসে এ মামলা থেকে ৪৫ জনের নাম বাদ দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
তবে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্তে যা পাবে তা-ই প্রতিবেদন দেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রথম আলোকে বলেন, নাম বাদ দিতে তাঁদের কারও ৩০ হাজার, কারও এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। মামলা চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে এসব লেনদেন হয়েছে।
তবে বাদী মো. দুলাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘তাড়াহুড়া করে মামলা করেছি, এতে অনেকের নাম এসে গেছে। তাই বাদ দেওয়ার আবেদন করেছি।’ টাকার বিনিময়ে আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
৪০ আসামিকে বাদ দিতে চান আহত সিরাজ
গত বছরের ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তিনপুলের মাথায় আহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিএনপির কর্মী সিরাজ খান। পরে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৪০ জনের নাম বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেন তিনি। তাঁদের মধ্যে চাকরিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।
এ বিষয়ে বাদী সিরাজ খান প্রথম আলোর কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে যেসব আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
বাদীর অজান্তে অন্য কেউ আসামি দিয়েছে!
৫ আগস্ট মনসুরাবাদ এলাকায় গুলিতে আহত হন মো. মানিক। ওই ঘটনায় তিনি ২০ নভেম্বর ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন। আসামি করেন ১০৮ জনকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছিরসহ ২৬ জনের নাম বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেন।
আবেদনে বাদী লেখেন, আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ নেই। ফায়দা লোটার জন্য সুকৌশলে কেউ নাছিরের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাকি ২৫ জনের নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে প্রথম আলোকে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি মানিক।
৪ আগস্ট আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির কর্মী এনায়েতুল গণি হাটহাজারী থানায় মামলা করেন ৩০১ জনের বিরুদ্ধে। পরে ২৪ আসামির নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেন তিনি।
মো. সেলিম নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। পরে ৫১ আসামির মধ্যে ১৮ জনের নাম বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেন তিনি।
এভাবে অন্তত ৪০ মামলার বাদীরা ৬৭৫ আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য হলফনামা ও আবেদন দিয়েছেন আদালতে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে প্রায়ই আসামির নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করছেন বিভিন্ন মামলার বাদী। আদালত তা নথিভুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি
গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা মামলায় হয়রানিমূলক আসামি যাচাই-বাছাই করতে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় দুটি কমিটি করা হয়েছে। দুটিরই সদস্য নগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপার।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) রইছ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন দাবি করে এরই মধ্যে অনেক আসামি আবেদন করেছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করছে কমিটি।
প্রায় অভিন্ন কথা বলেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. রাসেল। তিনি বলেন, পুলিশ যা তদন্তে পাবে, তা-ই অভিযোগপত্রে দেবে।
জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় করা মামলা নিয়ে এমন আচরণ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছেন। অনেক নিরপরাধ লোককে আসামি করা হয়েছে, কিন্তু সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়নি। হলেও কিছু বাদী এখন নাম বাদ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হোক।’
সূত্র : প্রথম আলো, ২৭ এপ্রিল ২০২৫