চলারপথে ডেস্ক :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের এজলাসে বিচারকের বিরুদ্ধে শ্লোগান, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনা দেশের বিচার বিভাগে ‘কালো দাগ’ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের তিন আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ মন্তব্য করে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে আদেশ দেন।
আদালত বলেন, অবস্থা এমন চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিষিদ্ধসহ কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবো।
এদিন শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টির পিসফুল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। সবকিছুর সমাধান হবে, আমাদের একমাস সময় দিন।
জবাবে হাইকোর্ট বলেন, কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের (শুনানির) আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো এগোবো। একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সবকিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সব আইনজীবীকে কলঙ্কিত করেছে।
এসময় তিন আইনজীবীর পক্ষে ফের সময় চাওয়া হলে আদালত বলেন, আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কী হচ্ছে। আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন করেন, কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরাও (এক্সট্রিম) যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্রাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি না, সেটাও আমরা দেখবো।
এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ৮টি ফেসবুক ও ৫টি ইউটিউব ভিডিও সরানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বিটিআরসি।
গত ১৭ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে দ্রুত এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
ওইদিন আদালতে ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আদালত ও আইনজীবীদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।
ওইদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও জেলা জজের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অবিলম্বে অপসারণে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিটিআরসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।
আদালতে ওইদিন আইনজীবীদের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. সাঈদ আহমেদ রাজা, শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তা কাম্য নয়। হাইকোর্টের আদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবী আদালতে এসেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে নিয়ে বিষয়টি প্রশমনের উদ্যোগ নেবেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, আদালত আছে বলেই আমরা আইনজীবী। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান থাকতে হবে। উভয়পক্ষকে আরো সংবেদনশীল ও যতœশীল হতে হবে। আদালতকেও আইনজীবীদের বুঝিয়ে কাজ করতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এ ধরনের ঘটনা ভুল বার্তা দেয়। বিচারপ্রার্থী জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন তা সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) আইনজীবী মো. আক্কাস আলী, আইনজীবী জুবায়ের ইসলামকে আজকে সশরীরে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। গত ৫ জানুয়ারি আদালত অবমাননার রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ২ জানুয়ারির ঘটনায় ‘এজলাসে আদালতের বিচারক ও কর্মচারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের জন্য আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা’ শীর্ষক একটি চিঠি সুপ্রিম কোর্টে পাঠান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক।
এ চিঠি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য গত ৪ জানুয়ারি বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে নথি উপস্থাপন করা হয়। এরপর হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবীকে তলবের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন।
এরপর গত ১০ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের ২১ আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্ট রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে ওই ২১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
যে ২১ আইনজীবীকে তলব করা হয়েছে তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল, আইনজীবী মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মন চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আ. আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ, ইকবাল।
ওই ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগার প্রধান বিচারপতির কাছে একটি আবেদন করেন।
আবেদনে জেলা জজ আদালতে এজলাস চলাকালে বিচারকের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান দিয়ে বিচারকাজ বিঘ্নিত ও বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ মানহানির ঘটনায় প্রতিকার চাওয়া হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
‘আমাদের কাছে পাবেন অরিজিনাল (এ জে এস কাগজের) গ্লেজিং প্রিন্টের সুতা জলছাপসহ নিখুঁত কাজের মাল। আমাদের কাছে ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট আছে, যা ব্যাংকের মেশিন ছাড়া খালি চোখে বোঝা অসম্ভব।’ ফেসবুকের একটি গ্রুপে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছিল জাল টাকার কারবার। এই চক্রটি জাল টাকা তৈরির টিকটক ভিডিও বানিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রচারণা চালাত। তবে মূলত জাল টাকা সরবরাহের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে আসছিল তারা।
সম্প্রতি এই চক্রের অন্যতম সদস্য সিফাত শেখকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জাল টাকার কারবার ও এই চক্রের বিস্তারিত।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সিফাত ও তার সহযোগীরা নিখুঁত জাল টাকা সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করত। এরপর অগ্রিম টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। ক্রেতাদের দেখানোর জন্য কিছু জাল নোট তারা নিজেদের কাছে রাখত। তবে সেগুলো কাউকে সরবরাহ করত না। এই চক্রে ১০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। তারা কেউ জাল নোট বানায়, কেউ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, কেউ ক্রেতার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে।
উপকমিশনার জানান, চক্রের সদস্যরা সবাই সাধারণ পরিবার থেকে আসা তরুণ। তবে তারা ফ্যাশনেবল ও বিলাসী জীবনযাপনের চেষ্টা চালায়। মাঝেমধ্যেই তারা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। জাল নোট বিক্রির নামে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ তারা মূলত ‘ফূর্তি’র জন্য ব্যয় করে। সিফাতকে গত ২৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে ফেরার পথেই গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে ফুটপাতে ছয় হাজার টাকা বেতনে পোশাক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে সিফাত। সে ইউটিউবসহ অনলাইনে বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে জাল টাকা তৈরি করা শিখেছে। পরে নিজেরা জাল টাকা বানানোর সময় তা ভিডিও করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। মূলত সহজে অধিক অর্থ উপার্জন করতে চাওয়া লোভী ব্যক্তিরা তাদের টার্গেট। তারা এক হাজার টাকার ১০০টি জাল নোটের জন্য ১০ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার ১০০টি নোটের জন্য ১২ হাজার টাকা, ১০০ ও ২০০ টাকার এক লাখ জাল নোটের জন্য ২০ হাজার টাকা দাম নিত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
এই চক্রের একটি ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে জাল টাকার বান্ডিলের ছবি-ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, জাল টাকায় আসল টাকার সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফলে হঠাৎ করে কারও পক্ষে সেটাকে জাল হিসেবে ধরা সম্ভব নয়। গত মাসের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে এ-গ্রেডের নিখুঁত জাল নোট তৈরি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের যে কোনো এলাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে। সেজন্য ৫০ ভাগ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। কুরিয়ার সার্ভিস বা নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো জাল টাকার চালান হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।
একটি ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘মালের (জাল টাকা) স্যাম্পল নিজ হাতে চেক করে তারপর অর্ডার করবেন।’
চারদিন আগে লেখক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির বিজ্ঞাপনের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন– ‘পুলিশ এত কিছু জানে, এটা জানে না? রেট এত ভালো। এক টাকার বদলে নকল আট টাকা।’ তাঁর শেয়ার করা স্ক্রিনশটে লেখা রয়েছে– ‘এক লাখ মালের দাম ১২ হাজার টাকা। সব রকমের নোট। সর্বনিম্ন অর্ডার ৫০ হাজার টাকা।’
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর দক্ষিণ গোড়ান থেকে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে জাল নোটের কারবারে জড়িত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চলারপথে ডেস্ক :
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে হেরোইনের চালান নৌপথে ভারত থেকে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিতে এসব মাদক বহনের জন্য ব্যবহার করা হয় নারীদের। এই চক্রে ১০-১২ নারী আছেন। তাঁরা প্রতি মাসে চার-পাঁচ কেজি হেরোইন নিয়ে আসেন। পরে তাঁরা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম করে এই মাদক পাঠিয়ে দেন। প্রতিটি চালানের জন্য তাঁরা পান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
হেরোইনের কারবারে জড়িত একটি চক্রের প্রধান শাকিবুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর আজ ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এসব তথ্য জানায় র্যাব। গ্রেফতার অপর দু’জন হলেন- তাঁর স্ত্রী সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনা ও সহযোগী রাজিয়া খাতুন। বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২ যৌথভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁয় এ অভিযান চালায়। এ সময় আনুমানিক সাড়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাধারণত চক্রের নারী সদস্যরাই হেরোইন বহন করে। তবে চালানের পরিমাণ বেশি হলে শাকিবুর নিজেও থাকতেন। এই চালানে তিন কেজির বেশি হেরোইন থাকায় তিনি বহনকারীদের সঙ্গে ছিলেন। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে শাকিবুর জানান, তাঁর নওগাঁর বাসায় আরও দুই কেজি হেরোইন আছে। এর পর সেখানে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রীর হেফাজতে থাকা দুই কেজি হেরোইন জব্দ করা হয়।
র্যাবের কমান্ডার জানান, গ্রেফতার শাকিব এর আগে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। দুই বছর ধরে তিনি মাদক কারবারে জড়িত। তিনি সীমান্ত থেকে সহযোগীদের মাধ্যমে হেরোইন সংগ্রহ করে প্রথমে নিজের বাড়িতে রাখতেন। পরে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিদের কাছে সরবরাহ করতেন। অর্থের লেনদেন হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।
র্যাবের এ মুখপাত্র জানান, সেলিনা খাতুন তাঁর স্বামীর মাদক কারবারের সহযোগী। হেরোইনের একটি অংশ তিনি বাড়িতে নিজের হেফাজতে রাখতেন। আস্থাভাজন মাদক কারবারিদের বাড়ি থেকেই হেরোইন সরবরাহ করা হতো। আর রাজিয়া শাকিবুরের অন্যতম সহযোগী। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় হেরোইন সরবরাহ করতেন। তিনি অনেকবার শাকিবুরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হেরোইন সরবরাহ করেছেন। বৃহস্পতিবারও তাঁরা গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহের উদ্দেশ্যে নওগাঁ থেকে রওনা হন। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তাঁদের গ্রেফতার করে র্যাব।
অনলাইন ডেস্ক :
দ্বিতীয়বারের মতো পেছানো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা হবে।
আজ ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়র জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন।
মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেথ তরা হয়, আগামী ৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের প্রথম পর্বের (রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আরো বলা হয়, প্রথম পর্বের রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার ৫৩৫টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১ ঘণ্টার এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে বলা হয়েছিল, চলতি মাসের ২৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তা পিছিয়ে আগামী ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য গত ১৮ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এবারই প্রথম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বিভাগ ধরে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গুচ্ছভিত্তিক এ নিয়োগে তিন ধাপে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষাও আলাদাভাবে নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফেনীতে ইন্টারনেট লাইনে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে রাহাত হোসেন (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আজ ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের রাহাত এর বাবা ইমরান হোসেন জানান, তার ছেলে ফেনীতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। বিকেলে শহরের মেডিস্ক্যান হাসপাতাল সংলগ্ন গলিতে কাজ করার সময় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শর্ট সার্কিটে মই থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় তার মাথা ফেটে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাহাত হোসেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের করিম মেম্বার বাড়ির ইমরান হোসেনের ছেলে।
ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ম্যানেজার ইউসুফ রুমন বলেন, কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত রাহাত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।
ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহতের লাশ ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো আমদানীর সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। আজ ৬ মে শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে স্থাপিত ব্যাগেজ স্ক্যানারের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভারত থেকে যে পণ্যগুলো আমদানির সুযোগ আছে সেগুলোর তালিকা দিলে আমরা আমদানির অনুমতি দেব। তবে সব পণ্য আমদানির অনুমতি দিতে গেলে- বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব সুবিধা প্রয়োজন, সেগুলো এখানে নেই। সেজন্য আমরা একসাথে সব পণ্যের জন্য বন্দর খুলে দিতে পারি না।
তবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অবৈধ সুবিধা দেওয়া হবে না। এতে যদি বাণিজ্য কমে যায় তাহলে কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে নিজ দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়ায় বন্দর ও কাস্টমস রাজস্ব পাবে। পরিবহন খাতেও কিছু কর্মসংস্থান হবে। সড়ক ব্যবহারের জন্যও মাশুল পাব আমরা। সর্বোপরি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে।
পরে তিনি বন্দর সভাকক্ষে কাস্টমস, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভায় ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি পরিচালনায় নানা সমস্যাসহ বন্দরসংশ্লিষ্ট বাধাগুলো তার কাছে তুলে ধরেন। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান এসব সমাধানে দ্রæত পদক্ষেপ নেবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
পরে ব্যবসায়ীরা জানান, ৬টি পণ্য আমদানীর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান এগুলোর অনুমতি দেওয়ার ব্যপারে ব্যবসায়ীদেরকে আশ^স্ত করেছেন।
এসময় এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রুহুল আমিন, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা, আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।