চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া ও কসবায় বন্যার পানি কমতে থাকায় পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। গত ১২ঘণ্টায় আখাউড়ার হাওড়া নদীর পানি আরও ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও বাঁধ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে এখনও বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে গত বুধবার আখাউড়ায় বন্যা সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার বঙ্গেরচর, কালিকাপুর, বাউতলা, আড়িয়ল ও খলাপাড়াসহ ৪০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বন্যার পানি বেড়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তবে ঢলের পানির বেগ কমায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি কমতে থাকে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বসা-বাড়ি থেকে পানি সরে গেছে।
তবে বন্যার কারণে আড়িয়ল ও খলাপাড়া এলায় হাওড়া নদীর দুইটি বাঁধসহ অন্তত ৮টি স্থানে সড়ক ধ্বসে পড়ে। এতে করে ওইসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি সরে গেলেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখনও বন্ধ রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। পাশাপাশি আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়েও যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, হাওড়া নদীর পানির সমতল হ্রাস পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। গত সন্ধ্যা ৬টা হতে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত আরও ৪ সেঃমিঃ কমে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে হাওড়া নদীর গঙ্গাসাগর পয়েন্টে পানির সমতল রয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ মিটার। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি জানান, আখাউড়ার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। বাসা-বাড়ি থেকে পানি সরে যাচ্ছে। দ্রুত ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও সড়ক মেরামত করে যান চলাচল ও স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেন, শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃতে গত ১ দশকের বেশি সময় ধরে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার মানুষের সহায়তা আমাদেরকে আমৃত্যু বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
আজ ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে যাওয়ার সময় সীমান্তের শূণ্য রেখায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স (সিভিল সোসাইটি) পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে কাজ করে তাদের আমন্ত্রণে আগরতলা যাচ্ছি। আগরতলার পলো টাওয়ার হোটেলে একটি সভা হবে। সভায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ত্রিপুরার ম‚খ্যমন্ত্রী থাকার কথা রয়েছে।
সভায় এই অঞ্চল দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি, মানুষের যাতায়াতের সুবিধার বিষয়ে আলোচনা করবো। তছাড়া রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগে বিনিয়োগ হচ্ছে এগুলো আপডেট করবো।
সামনের দিনে আরও কিছু কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তিনি আরও বলেন সীমান্তের ১০০ মিটারের ভেতরে সাধারণত কোন স্থাপনা করার নিয়ম নাই। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ উভয় উভয়ের উপর নির্ভরশীল। তাই আমরাও ছাড় দিয়েছি।
ভারতও ছাড় দিয়েছে। বাংলাদেশের সাথে উত্তর-প‚র্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের বাজার তৈরি হয়েছে। তাদের ক্রমবধর্মান উন্নতি হচ্ছে। এটাকে আমাদের বাজারের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই। এজন্য কানেক্টিভিটির কোন বিকল্প নাই। সেটার উপায় খোঁজা, দেখা।
এ পর্যন্ত দু’পক্ষের সরকার যতটুকু করেছে এটা কতটুকু প্রভাব ফেলেছে সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সামনের দিনে কাজ করা। এমন একটি ধারণা নিয়ে যাচ্ছি।
বিএসএফ’র আপত্তির কারণে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ ৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপডেট আছে। শিগ্রই দেখবেন। অপেক্ষা করেন সমাধান দেখবেন।
এসময় মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন নাঈম রাজ্জাক এমপি, সহকারি পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, মোঃ আল আমিনুল ইমাম, পরিচালক স্টেট মিনিস্টার অফিস।
ভারতে প্রবেশকালে সীমান্তের শূণ্য রেখায় তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে সড়ক পথে আখাউড়া চেকপোষ্টে এসে পৌঁছেন। এসময় তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা, আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুল ইসলাম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ আতিকুল ইসলাম, আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ স্বপন চন্দ্র দাস প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৩ জুন সকালে সড়ক বাজারস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে।
শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগসহ সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়। এসময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাম প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা। শোভাযাত্রা শেষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও কেক কাটা হয়। পরে শহরের বাইপাস সড়কের পাশে দু’শতাধিক বিভিন্ন জাতের বৃক্ষরোপন করা হয়।
এরআগে সকাল সাড়ে ৮টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দলীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়।
আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের সঞ্চালনে এসময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক অধ্যক্ষ (অব.) মোঃ জয়নাল আবেদীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ রোকসানা আক্তার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন বেগ শাপলু, সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নয়ন প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
দেশ বরেণ্য শিল্পপতি আব্দুল মোনেমের ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ধলেশ্বর গ্রামের রাবিয়া খাতুন স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রাবিয়া খাতুন স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আকছির এম. চৌধুরী।
আকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় স্মরণ সভায় বরেণ্য এই গুণি ব্যক্তির জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা করে বক্তব্য রাখেন, আখাউড়া প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্লাবের আহবায়ক সাংবাদিক রুবেল আহমেদ, বেসরকারি গ্রন্থাগার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন কানু, স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেছার উদ্দিন ভুঁইয়া, আমির চৌধুরী, রনি চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, রতন চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আমরা জীবনে সবাই সফল হতে চাই, সেরা হতে চাই, বিখ্যাত হতে চাই।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজন সফলকাম হন। তেমন একজন সফল মানুষ বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল মোনেম। তিনি তার সংক্ষিপ্ত জীবনে পৃথিবীতে রেখে গেছেন অনেক কীর্তিগাঁথা যা মানুষ মনে রাখবে সুদীর্ঘ সময়কাল। ভোগ করবে এর সুফল। তার একক প্রচেষ্টায় তিনি শূন্য থেকে শীর্ষ সারিতে আরোহণ করেছেন। তাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে আব্দুল মোনেমের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পাঠ করা হয়।
উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুল মোনেম এর নানার বাড়ি আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামে। তিনি তার শৈশবের একটি বড় অংশ আখাউড়ায় নানার বাড়িতে কাটিয়েছেন। আখাউড়া পৌরশহরের তারাগনে তার শশুর বাড়ি।
চলারপথে রিপোর্ট :
লক্ষ্মী রানী দাস। তিনি ভারত থেকে স্বামী ও সন্তান নিয়ে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
যাত্রাকালে আগরতলা ইমিগ্রেশনে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে এসে রীতিমত অবাক হক তিনি। বসারও সুব্যবস্থা নেই এখানে।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ালেও ছোট কক্ষটিতে নেই কোনো ফ্যান। হঠাৎ ১২ বছর বয়সী ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করার জন্য কোনো স্থান না পেয়ে ইমিগ্রেশন ভবনের এক কোনায় বসে তার সেবা যত্ন করেন। আশেপাশে ছিল না কোনো টিউবওয়েল। যাও বা ট্যাংকের পানি জুটেছে, তাও তীব্র তাপদাহে তপ্ত। তা দিয়েই ছেলেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান।
লক্ষ্মী রানী দাসের বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশনে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ও সুন্দর পরিবেশে আরামে সব কাজ করে এসেছি। বন্দর থেকে গাড়িতে আমাদের ফ্রি চেকপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। অথচ আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে এসে নাজেহাল হতে হলো। এখানে কোনো কিছুরই সুব্যবস্থা নেই। একতলা পুরোনো ভবনের ছোট্ট কক্ষে শত শত লোক ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে। এখানকার ইমিগ্রেশনের অব্যবস্থাপনা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এখানে যাত্রীদের জন্য পরিষেবা বাড়ানো উচিত। আশা করব, বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের যাত্রীদের কথা বিবেচনায় এনে ইমিগ্রেশন উন্নত করবে।
আগরতলা থেকে আসা আরেক যাত্রী খোকন মিয়া বলেন, আমি গত ছয় বছর ধরে এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করছি। ইমিগ্রেশনটি যে হালতে দেখেছিলাম, সে হালতেই আছে। একজন রোগী এলে যে বসবে, সে উপায় নেই। এখানে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, সে তুলনায় খুবই কম আছে।
বন্দরটি ঘুরে দেখা গেছে, মূলফটক পার হলেই একতলা বিশিষ্ট তিন রুমের একটি ভবন। এর মধ্যে দুটি ছোট রুম ও একটি মাঝারি রুম। একটিতে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বসেন, আরেকটি হচ্ছে ব্যারাক। মাঝারি কক্ষটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। পুরোনো ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে গেছে। প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই গাদাগাদি করেই চলে কার্যক্রম। যাত্রীদের মালপত্র বারান্দায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জন্য ইমিগ্রেশন কক্ষে কোনো জায়গা নেই। আর বাইরে টিনের একটি ছাউনি আছে, যেখানে ১৫/২০টি চেয়ার থাকলেও কোনো টেবিল নেই। অথচ ফরম পূরণ করতে টেবিল প্রয়োজন। ফরম পূরনের জন্য দেখা গেছে কেউ বারান্দার মেঝেতে বসে, আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎতের জেনারেটরের ওপরে ফরম রেখে পূরণ করছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্যও জায়গা নেই। কক্ষটিতে এসির ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় থাকায় যাত্রীদের লাইন কক্ষের বাইরে বারান্দায় চলে যায়। ফলে এসিগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট সহ্য করে ইমিগেশনের কাজ শেষ করতে হয়।
তবে বিড়ম্বনা এখানেই শেষ নয়। কাস্টমসের কাজ করতে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্তত দুইশ গজ দূরবর্তী অন্য আরেকটি ভবনে। মূলত এক ভবন ও এক ছাদের নিচে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ করতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে চালু হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার কররে ভারতে যাতায়াত করছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন অত্যন্ত এক হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ভারতে যান। যা থেকে প্রতি মাসে ৭৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে সরকারের। বিগত ছয় মাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী সুমন আহমেদ বলেন, আমি ইমিগ্রেশনের পরিবেশ দেখে হতবাক হয়ে গেছি। এখানে লাইনের কোনো শৃঙ্খলা নেই। কোনো ধরনের আধুনিকায়ন নেই। অথচ আগরতলা ইমিগ্রেশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফারহানা মিলি নামে এক নারী চিকিৎসক তার বাবার চিকিৎসা জন্য ভারতে যাওয়া সময় আক্ষেপ করে বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন ও আখাউড়া ইমিগ্রেশনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমাদের এখানে ভালো ব্যবস্থা নেই। মালপত্র রাখার জায়গা পাই না। আরেকজনের কাছে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। বছরের কয়েকবার যেতে হয়। তবে এর উন্নতি দেখছি না। এখানে দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক সেই কামনা করি।
মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন, বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামেমাত্র টিকে আছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে কোনোমতে ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরির পর এক ছাদের নিচে সব পরিষেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগও লাঘব হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালানোর জন্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে, তা খুবই অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সেবার মান বাড়বে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। আমাদের নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ চলছিল, তা বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এছাড়া বলে রাখি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক বন্দর নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিয়েছি। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। যাত্রীসেবার মানও উন্নত হবে।
তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং আধুনিক স্থলবন্দরটি তৈরি হলে আখাউড়াই হবে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থলবন্দর।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় ২০২৪-২৫ মৌসুমের আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আজ ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আখাউড়া উপজেলা এলএসডি গোডাউনে ধান সংগ্রহ অভিযানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি।
কৃষক মো: আউয়াল কাছ থেকে তিন মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৬৮৮ জন কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম, এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সাজেদুর রহমান।
আখাউড়া উপজেলা এলএসডি কর্মকর্তা মো: সাজেদুর রহমান জানান, এবার উপজেলায় ৩০১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৩ টাকায় প্রতি কেজি ধান সংগ্রহ করা হবে। একজন কৃষক ১২০ কেজি থেকে শুরু করে তিন মেট্রিক টন ধান দিতে পারবেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান সংগ্রহনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।