অনলাইন ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আজ ২৫ আগস্ট রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়- আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।
ইউনূস আরো বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ- কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
তিনি বলেন, আমাদের ঘেরাও করে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ৬ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. ইউনূস।
দাফন সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের লক্ষীমুড়া গ্রামের নিহত হারুন মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুর বন্দরবাজার বালুর মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় হারুন মিয়ার আত্মীয় স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে। এর আগে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে হারুন মিয়া নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের পর হারুন মিয়ার মরদেহে এসে পৌঁছায় তার নিজ এলাকায়। মরদেহ পৌঁছার পর থেকেই স্থানীদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ, পত্তন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা হৃদয় আহমেদ জালাল, সাবেক মেম্বার সেলিম মিয়া, হোসেন মিয়া, মাওলানা সিরাজ আকরামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। নিহত হারুন মিয়ার ভাতিজা সোহেল বলেন, দুধ মিয়া সরাসরি করিম মিয়ার পক্ষে নিয়েছে। যার কারণে আমার চাচা হারুন মিয়া হত্যার শিকার হয়েছে। আমার চাচার হত্যার সাথে দুধ মিয়া জড়িত। দুধ মিয়াসহ যারা আমার চাচাকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি জানাই।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে হারুন মিয়ার জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযুক্ত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তিনি জানান।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, আইটি বাংলাদেশের একটি উদীয়মান খাত। এই খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরল গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাককো) আইটির সার্ভিস সেন্টার হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। দেশের বিপিও খাতের অবস্থান তুলে ধরতে পঞ্চম বিপিও সামিট আয়োজন প্রশংসনীয়। প্রায় সত্তর হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে বিপিও খাতের মাধ্যমে, যা দ্রুত প্রসারমান।
আজ ২২ জুলাই শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা গ্রান্ড বলরুমে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাককো)-র উদ্যোগে ‘সোর্সিং বিয়ন্ড বর্ডার্স’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত পঞ্চম বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিট-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি সামিটের শুভ উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, দেশের তরুণ মেধাবীদের সম্পৃক্ত করতে হলে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কার্যক্রম বিস্তৃত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে বিপিও’র সহজবোধ্য উপস্থাপন জরুরি। বিপিও থেকে দেশ ও জাতি কীভাবে লাভবান হতে পারে তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে নারীদের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। সোর্সিং বিয়ন্ড বর্ডার্স অর্থাৎ দেশের দক্ষ জনশক্তি সারা বিশ্বে সেবা প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখতে হবে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় আইটি সেক্টরের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আইটি সেক্টরে তৈরি হওয়া মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, আইসিটি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন ও আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া, বাককো’র প্রেসিডেন্ট ওয়াহেদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক গৃহকর্মীকে (৪০) দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ধর্ষিতা নিজে বাদী হয়ে ডাসার থানায় মামলাটি দায়ের করেন। পরে বিষয়টি আজ ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে সংবাদকর্মীদের কাছে জানান এই ভুক্তভোগী নারী।
অভিযুক্তরা হলেন বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মাগুরা মাদারীপুর গ্রামের এসকেন্দার হাওলাদারের ছেলে দুলাল হাওলাদার (৩০), একই এলাকার কাদের হাওলাদারের ছেলে মো. ইদ্রিস হাওলাদার (৫০), মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পূর্ব ডাসার গ্রামের রকমান শেখের ছেলে মো. মানিক শেখ (৩০), ঢাকা জেলার মিরপুর এলাকার চায়ের দোকানদার বাবু ওরফে মানিক (৪০)।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহকর্মীর স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্তান নিয়ে ঢাকার মিরপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ওই সুবাদে তার বাসার সামনে চায়ের দোকানদার বাবু ওরফে মানিকের সাথে পরিচয়। চায়ের দোকানদার বাবু জানান, মো. মানিক শেখ (৩০) এর কাছে ভালো একটি ছেলে আছে। সেই ছেলের বাড়ি ঘর দেখে আসতে পারো যদি পছন্দ হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে তার সাথে তোমাকে বিবাহ দিবো। বাবুর কথায় ভুক্তভোগী নারী রাজি হয়। পরে আসামি মানিক শেখের মোটরসাইকেলে করে গত (৬ সেপ্টেম্বর) বুধবার দুপুরের ঢাকার মিরপুর এলাকার থেকে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মাগুরা মাদারীপুর এলাকার উদ্দেশ্য রওনা দেন। পরে বরিশাল গৌরনদী পৌছালে মানিক শেখ বলেন, দুলাল হাওলাদারের সাথে তোমার বিয়ে হবে। তার বাড়ি ঘর তুমি দেখে ও চিনে নাও। পরে সেখান থেকে তারা রাত নয়টার দিকে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কালাম ব্যাপারীর বাড়িতে নিয়ে আসে ভুক্তভোগীকে। কালাম বেপারি আসামি ইদ্রিসের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে চারজনকে তাদের ঘরে থাকতে দেয়। এরপরে কালাম ব্যাপারীর স্ত্রী তাদেরকে খাবার দেয়, খাবার খাওয়া শেষ করে যে যার মত করে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। তারপরে দুলাল হাওলাদার, মানিক শেখ, ইদ্রিস ও ভুক্তভোগী নারী টেলিভিশন রুমে বসে টেলিভিশন দেখে। এসময় মানিক শেখ ভুক্তভোগী নারীকে দুলাল হাওলাদার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে প্রস্তাব দেয়। এতে ওই নারী রাজি না হলে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে চারজন তাকে ধর্ষণ করে। পরে ওই রাইতেই তারা পালিয়ে যায়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি বাড়ির মালিক কালাম ব্যাপারীসহ ভুক্তভোগী নারীর স্বজনদের জানান। পরে স্বজনদের পরামর্শে মাদারীপুরের ডাসার থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমাকে তারা বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ঢাকা থেকে মাদারীপুরে নিয়ে এনে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। আমি এদের সঠিক বিচার চাই।
কালাম বেপারি জানান, ইদ্রিস আমার আত্মীয় সুবাদে তাদেরকে আমি এখানে থাকতে দিয়েছি। কিন্তু তারা এই মেয়েটার সাথে এরকম খারাপ কাজ করবে কখনো ভাবতে পারিনি। যারা মেয়েটির সাথে খারাপ কাজ করেছে তাদের কঠিন বিচার হোক।
ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, মামলা নেয়া হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস ১৭ এপ্রিল। হিমোফিলিয়া রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ, যা বংশানুক্রমে ছেলেদের হয়ে থাকে। শরীরের কোনো জায়গায় আঘাত পেলে বা সামান্য কেটে গেলে স্বাভাবিকভাবে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়।
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো রক্ত সংক্রান্ত রোগ হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক শ্নাবেলকে স্মরণ করার জন্য তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই দিনটি পালিত হয়। তাই হিমোফিলিয়া কী ও কেন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
হিমোফিলিয়া কী?
দুটি গ্রিক শব্দ হাইমা এবং ফিলিয়া থেকে হিমোফিলিয়া শব্দটি এসেছে। হাইমা অর্থ রক্ত ও ফিলিয়া অর্থ আকর্ষণ। দেহের কোনো অংশে রক্তপাত শুরু হলে সাধারণত সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। মেডিকেলের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে ক্লটিং বলে।
ক্লটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেহে কোথাও কোনো ক্ষত তৈরি হলে সেই ক্ষতস্থান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যাওয়াকেই ক্লটিং বলে। যে পদার্থ রক্তক্ষরণে বাঁধা দেয় তাকে ক্লট বলে। কিন্তু কোনো কারণে ক্ষতস্থানে এই ক্লট তৈরি না হলে সেখান থেকে একাধারে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। একজন হিমোফিলিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে এই ক্লট সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক নয়।
ব্যাপারটি আসলে এমন নয় যে, রোগীর দেহ থেকে অঝোরে এবং খুব দ্রুত রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। মূলত একজন হিমোফিলিয়াক (যারা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত) ব্যক্তির দেহ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
অনেকে হয়তো এখন মনে করছেন যে, এই রোগ হলে হাত, পা, হাঁটু ইত্যাদির কোথাও কেটে গেলেই তা থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে থাকবে। ব্যাপারটি তা নয়। দেহের বাইরের কোনো ছোটখাটো আঘাত এখানে খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। আসল চিন্তার বিষয় হলো ইন্টারনাল ব্লিডিং বা দেহের অভ্যন্তরীণ কোনো অংশে রক্তক্ষরণ। এই ধরণের রক্তক্ষরণকে হ্যামোরেজ বলে। এটি মূলত দেখা যায় দেহের ভেতরে কোনো সন্ধি যেমন হাঁটু ও গোড়ালিতে। এছাড়া দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন টিস্যু ও পেশীর মিলনস্থলেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। দেহের ভেতরে এমন রক্তক্ষরণ অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং আক্রান্ত অংশ বেশ ফুলতে শুরু করে।
হিমোফিলিয়া কেন হয়
মানবদেহে একটি X ও অন্যটি Y ক্রোমোজম থাকলে সে হয় ছেলে (46,XY) আর যদি দুটিই X ক্রোমোজম থাকে তাহলে সে হয় মেয়ে (46,XX)। X ক্রোমোজমে F8 ও F9 নামক জিন থাকে, যা F-VIII ও F-IX নামক ক্লোটিং প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোটিং প্রোটিন রক্তের সাদা অংশে পরিমাণমতো থাকে। ফলে আপনাআপনি রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। যাদের রক্তে এই ক্লোটিং প্রোটিন কম থাকে, তাদের রক্ত পড়া বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়। তারাই হিমোফিলিয়ার রোগী।
ছেলেদের দেহে যেহেতু একটামাত্র X ক্রোমোজম থাকে এবং এই একমাত্র X ক্রোমোজম যদি অসুস্থ/defect থাকে, তাহলে F-VIII/F-IX তৈরি হয় না। ফলে ছেলেরাই হিমোফিলিয়ার রোগী হয়। আর মেয়েদের দেহে যেহেতু দুটি X ক্রোমোজম থাকে, তাই একটি X অসুস্থ/defect হলেও অন্য X সুস্থ থাকায় পর্যাপ্ত F-VIII/F-IX তৈরি হয়। তাই সাধারণত মেয়েরা হিমোফিলিয়ার রোগী হয় না, রোগের বাহক হয়।
তবে ১. Lyonisation/inactivation of healthy X chromosome হলে, ২. বাবা রোগী ও মা বাহক হলে অথবা ৩. Turner syndrome (45,XO) হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে মামাতো, খালাতো প্রভৃতি বোনের বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন হিমোফিলিয়ার রোগীর মধ্যে অন্তত একজন বংশানুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়।
হিমোফিলিয়া কত প্রকার?
হিমোফিলিয়া এ এবং বি দুই ধরনের। হিমোফিলিয়া-এ-তে, ফ্যাকফোর-৮ মাত্রা কম বা অনুপস্থিত। হিমোফিলিয়া-বি ফ্যাকফোর-৯ এর ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষেরই হিমোফিলিয়া-এ আছে। এটি শরীরের ক্রোমোজোম সিস্টেমের অবনতির কারণেও হয়। আর চিকিৎসকদের ধারণা, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লাখ মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ :
যদি কোনো সাধারণ আঘাত বা ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে বুঝবেন এটি হিমোফিলিয়ার কারণে হয়েছে। এই রোগের ক্ষেত্রে রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট, প্রোথ্রোমবিন, প্লেটলেটের অসুস্থতা ইত্যাদি কমে যেতে পারে। এছাড়াও ক্ষতস্থানে বিলম্বিত রক্তপাত হয়। আর অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াটাই হিমোফিলিয়ার মূল লক্ষণ। শিশু বয়সেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ, শরীরের আঘাত লাগলে সেই জায়গাটি নীলচে হয়ে ফুলে যায় অর্থাৎ চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ; মাংসপেশিতে এবং অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ; হাঁটু, কনুই ও অন্যান্য অস্থি সন্ধি ফুলে যাওয়া; শরীরের কোথাও কেটে গেলে দীর্ঘক্ষণ রক্ত ঝরা; দাঁত তোলার পর বা সুন্নতে খাতনা করার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার সময় হাঁটুতে কালচে দাগ হওয়া, নবজাতকের নাভি কাটার সময় দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি।
হিমোফিলিয়ার বংশগতি :
বাবা সুস্থ ও মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর মেয়ে সন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। বাবা রোগী এবং মা সুস্থ হয় তবে সব ছেলে সন্তানই সুস্থ হবে এবং সব মেয়ে সন্তানই বাহক হবে। বাবা রোগী এবং মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। আর মেয়ে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫% ও বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবে, তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত শুধু পুরুষরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা এই রোগের বাহক। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাবা রোগী ও মা বাহক হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। হিমোফিলিয়া রোগীর সঙ্গে আত্মীয় যেমন খালাতো, মামাতো বা ফুপাতো বোনের বিয়ে হলে দুজনেই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-গুরুতর হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত কিছু লোকের মাথায় সামান্য আঘাতের পরে মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে পারে। যদিও এটি প্রায়শই ঘটে না, এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলির মধ্যে একটি যা উঠতে পারে।
কিছু সতর্কতা চিহ্ন এবং উপসর্গ হলো :
* একটি গুরুতর
* চলমান মাথা ব্যাথা
* বারবার বমি হওয়া
* অলসতা বা তন্দ্রা
* দ্বৈত উপলব্ধি
* হঠাৎ আনাড়ি বা দুর্বলতা
* হৃদরোগের আক্রমণ বা কম্পন
পরীক্ষা ও প্রতিরোধ
রক্তের ফ্যাক্টর দুটির পরীক্ষা। রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের genetic testing, genetic counseling I prenatal test (amniocentesis) করে অনাগত সন্তান রোগী না বাহক তা নিশ্চিত হয়ে হিমোফিলিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যায়। দেশেই এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে।
হিমোফিলিয়া রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করানোর কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন নিয়মমাফিক, সঠিক ব্যায়াম করে মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা গেলেও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই উত্তম।
অনলাইন ডেস্ক :
ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বেড়েছে। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৩ টাকা বাড়িয়ে এখন ১ হাজার ৪০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ ৩ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এই দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। ঘোষিত এই দাম রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজিতে ১১৭ টাকা ২ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে। এ ছাড়া রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত বেসরকারি এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজিতে ১১৩ টাকা ২০ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে। আর ভোক্তাপর্যায়ে অটোগ্যাসের দাম মূসকসহ প্রতি লিটারে ৬৪ টাকা ৪৩ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোনো পর্যায়ে (এলপিজি মজুতকরণ ও বোতলজাতকরণ, ডিস্ট্রিবিউটর এবং ভোক্তাপর্যায়ে রিটেইলার পয়েন্টে) কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে এলপিজি (বোতলজাতকৃত এবং রেটিকুলেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহকৃত)/অটোগ্যাস বিক্রয় করা যাবে না।
এর আগে অক্টোবর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৯ টাকা বাড়িয়ে ১৩৬৩ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। যা সেপ্টেম্বর মাসে ১২৮৪ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল।