আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন ফোরলেন প্রকল্পের কাজ ফেলে চলে গেছেন ৩৬০ জন ভারতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 3 September 2024, 120 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন মহাসড়কের ফোরলের প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ফেলে চলে যায় প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকেরা। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ। এই অবস্থায় খানাখন্দে ভরপুর চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার পর ভারতীয় নমনীয় ঋন এলওসির অধীনে ২০১৮ সালে তিনটি প্যাকেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দুইলেন থেকে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থমকে যায়। পরবর্তীতে বালু সংকটের কারণে আরো ৬মাস বিলম্ব হয় প্রকল্পের নির্মান কাজের। এরই মধ্যে গত ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছিল। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশের দুই লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।

প্যাকেজ-২ এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে করে সড়কটি দিয়ে চলাচলরত যানবাহন, চালক এবং যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আল আমিন জানান, আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কাজ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। খানাখন্দ সড়কের কারণে প্রতিনিই ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এতে করে যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

অন্যদিকে সড়কের তীব্র ধুলার কারণে আশপাশের বাসা বাড়ি সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা সংকটে অনেকটাই লাটে উঠেছে। তিনি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

পরিবহন চালক আলমগীর মিয়া বলেন, নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের নাট-বল্টু, চাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তিনি সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোঃ শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে চলে গেছেন। তারা কবে ফিরে আসবে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি তারা। শ্রমিকরা চলে যাবার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে আমরা তা এখন বলতে পারছি না। চলমান দুইটি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশত ভারতীয় লোক কাজ করতো। বর্তমানে তাদের মধ্যে একজনও বাংলাদেশে নেই।

তিনি আরো জানান, আমাদের প্যাকেজ-১ এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মত জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে উপর থেকে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ শামীম আহমেদ আরো বলেন, গত ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর নির্মানাধীন প্রকল্পটির ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চলে যাওয়ার পর প্রকল্পের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা চুরি ঠেকানোর জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়েও চুরি ঠেকাতে পারছিনা। তিনি এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার ফোরলেন প্রকল্পটিতে একটি উড়াল সেতুসহ ১৬টি ব্রীজ-কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

১ কোটি ২০ লক্ষাধিক টাকার মাদক ধ্বংস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 24 January 2024, 474 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাসুদ পারভেজ এর উপস্থিতিতে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিভিন্ন সময়ে মাদকসহ বিভিন্ন আলামতের নিস্পত্তিকৃত মামলার ১ কোটি ২০ লক্ষাধিক টাকার মাদক ও আলামত এবং প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নিস্পত্তিকৃত মামলার নথি ও ২০২২ ইং সনের সাড়ে ৮ হাজার পিটিশন ধ্বংস করা হয়েছে।

আজ ২৪ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় কুরুলিয়ার পাড়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মুখে আধুনিক চুল্লি এবং ভারী যান (ভোল্ডোজার) ব্যবহার করে বিভিন্ন মাদক ও আলামত ধংবস করা হয়।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আলামত ধ্বংস কমিটির চেয়ারম্যান অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন আহমেদ হ্যাপী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামিউল আলম, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হাসান রকি, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখাওয়াত হোসেন এবং মালাখানার দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ উপ-পরিদর্শক যোবাইদুল হাসান ভূঁইয়া।

ধ্বংসকৃত মাদক ও আলামতের মধ্যে রয়েছে গাঁজা ৫১০ কেজি ৪৬০ গ্রাম, ইয়াবা ট্যাবলেট ১১ হাজার ৫শত ৮০টি, ফেন্সিডিল ২শত ১৫ বোতল, স্কফ সিরাজ ৩শত ৯৯ বোতল, বিদেশী মদ ১০১ বোতল, বিয়ার ৬ক্যান।

এ সময় বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাসুদ পারভেজ বলেন, নিস্পত্তিকৃত মামলার মাদক বা আলামত ধ্বংসের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

পিতার অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলের কারাদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 23 June 2024, 225 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পিতার দেয়া অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলেকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২২ জুন শনিবার বিকেলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাব্বর হোসেন এ সাজা প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত জসিম উদ্দিন (২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা (তিতাসপাড়া) এলাকার আরজু মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, জসিম উদ্দিন মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য সে প্রায়ই বাড়িতে অত্যাচার করতো। সম্প্রতি তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। গত শুক্রবার দুপুরে নেশা করে বাড়ির পাশাপাশি বাইরের মানুষের উপর লাঠি, দা নিয়ে হামলা করতে যায়। শনিবার সকালেও দা নিয়ে পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা করে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার পিতা শনিবার দুপুরের দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কাছে অভিযোগ করেন। পরে তাকে পুলিশ দিয়ে আটক করে বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদকাসক্ত জসিমকে ছয় মাসের সাজা দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাব্বর হোসেন জানান, ওই যুবক মাদকাসক্ত হয়ে অত্যাচার চালাতো। তার পিতা অভিযোগ করলে তাকে মাদকাসক্ত অবস্হায় আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের (৩৬)(৫) ধারায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে নিজেও মাদক সেবন ও অত্যাচারের কথা স্বীকার করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০৫ পরিবার পাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 19 March 2023, 1184 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ১০৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-প্রকল্পের আওতায় ঘর। আজ ১৯ মার্চ রবিবার বিকেলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখ এই তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউএনও মোহাম্মদ সেলিম শেখ জানান, মুজিব বর্ষে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২-প্রকল্পের আওতায় ‘ক’ শ্রেনীর ভূমিহীন (যাদের জমি নেই, ঘরও নেই) তাদের পুর্নবাসনের জন্য চতুর্থ পর্যায়ে সদর উপজেলায় ১০৫টি পরিবারের জন্য গৃহ নির্মান করা হয়েছে।

এরই মধ্যে এই ঘর গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২ শতাংশ খাস জমিতে ২ কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫ শত টাকা। সব গুলো ঘর একই নকশায় তৈরী করা হয়েছে। সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের বড় সুলতানপুর ও সুলতানপুরে ১০টি, শিলাউরে ৬টি, মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর ও আমীরপাড়ায় ২৪টি, মৈন্দ গ্রামে ১টি, মাছিহাতা ইউনিয়নের পশ্চিম কাঞ্চনপুর ও কাঞ্চনপুরে ৪২টি ও বুধল ইউনিয়নের খাঁটিখাতা গ্রামে ২২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব ঘরের উপকারভোগীদের তালিকা নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ২২ মার্চ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পর ১০৫ টি পরিবারকে ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ৩২টি, ২য় পর্যায়ে ১৪৫টি এবং ৩য় পর্যায়ে ৬৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সদর উপজেলার সব ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মোশারফ হোসেনসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অপহৃত স্কুলছাত্রী হবিগঞ্জ থেকে উদ্ধার

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 17 February 2023, 2107 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া থেকে ১৫ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরনের ১০দিন পর ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৯-এর সিপিসি-১ হবিগঞ্জের সদস্যরা। আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণকারী বোরহান উদ্দিন (২৮)কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার ভাটামাথা গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে।

ভিটটিম সদর উপজেলার একটি স্কুলের ছাত্রী। তার বাড়ি সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। দুপুরে উদ্ধারকরা স্কুল ছাত্রীকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় হস্তান্তর করার পর পুলিশ ওই স্কুল ছাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরন করে। শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব সিপিসি-১-হবিগঞ্জ থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা র‌্যাব-৯-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগে করে জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টার সময় তার কন্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া থেকে অটোরিক্সা দিয়ে শহরের কাউতলী যাওয়ার পর কাউতলী গ্রামের গলিপথে যাওয়ার পর বোরহান উদ্দিনসহ তার অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের ভয়ে দেখিয়ে তার কন্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তিনি এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ও র‌্যাব-৯-এর সিপিসি-১ হবিগঞ্জ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব সদস্যরা ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধারে অভিযানে ও ছায়া তদন্ত শুরু করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রাম থেকে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণকারী বোরহান উদ্দিন (২৮)কে গ্রেফতার করা হয়।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৯-এর সিপিসি-১-হবিগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিন বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তিনি একজন লেবাসধারি ইমাম। তিনি সদর উপজেলার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ওই ছাত্রীকে নানাভাবে ফুসলানোর চেষ্টা করে আসছিলেন। তাকে ফুসলাতে না পেরে পরবর্তীতে সহযোগীদের নিয়ে তাকে অপহরণ করেন।

গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে একজন অপহরণকারী ও ধর্ষক। এর আগেও সে ১০ বছরের এক শিশুকে অপহরণ ও ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এ- একটি ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা চলমান রয়েছে। (মামলা নং- নাঃ শিঃ ২৪৪/১৯ ইং ও আখাউড়া থানার মামলা নং-০১, তারিখ ০১/০২/২০১৯ইং জিআর-৩৭/১৯)। ওই মামলায় সে দীর্ঘ ১১ মাস হাজতবাস করে জামিনে মুক্ত পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সোহরাব আল হোসাইন বলেন, শুক্রবার দুপুরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা স্কুল ছাত্রী ও গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিনকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে ভিকটিমকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ও বোরহান উদ্দিনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

সঠিকভাবে নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়, তাহলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে : উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 17 November 2024, 26 Views,

চারপথে রিপোর্ট :
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই প্রয়োজনীয় সময়ের একদিনও বেশি ক্ষমতায় থাকবে না।

তিনি জানান, এই সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত এবং আমাদের দায়িত্ব হলো এমন পরিবেশ তৈরি করা যাতে জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন হতে পারে।

আজ ১৭ নভেম্বর রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আয়োজিত আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এবং উন্নয়ন সংস্থা এআরডির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবিত প্রকল্পগুলো প্রদর্শন করে।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ই নিচ্ছি। সংস্কারের কাজে কোনো ধরনের বিলম্ব হবে না। তবে, এই সময়টা কেউ যদি বেশি মনে করে, তা হলে সেটা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। আমরা একদম চাই না, আমাদের সময়ের একদিনও বেশি থাকুক। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রিপোর্ট পাওয়া যাবে এবং তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, তা যেন পূর্বের অনাচার, দুর্নীতি ও অত্যাচারের দিকে ফিরে না যায়। আমরা পুরোপুরি সবকিছু ঠিক করতে পারব না, তবে যদি সঠিকভাবে নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়, তাহলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান এবং এআইইউবির অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম। মেলার উদ্বোধনের পর ফরিদা আখতার অতিথিদের সঙ্গে স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। মেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ক্লাব অংশগ্রহণ করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন করেন।