অনলাইন ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্রে রেখে ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে এবং হাজারো মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য একটি অভূতপূর্ব সময় ও সুযোগ আমরা অর্জন করেছি। এর বাস্তবায়ন তথা বাংলাদেশে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ এবং জনমালিকানা ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। উক্ত সংস্কার ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন- এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি।
এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালিনার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
‘এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’
ড. ইউনূস বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
‘এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
চলারপথে রিপোর্ট :
বাগেরহাটে ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটককৃত ডাকাতরা রাজশাহী ও রংপুরের আলোচিত একটি ডাকাতির সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতাররা হচ্ছেন, বাগেরহোট সদর উপজেলার পাতিলাখালী এলাকার নূর মোহাম্মাদের ছেলে জালাল শেখ (৫৭), একই এলাকার আবুল কালাম শেখের ছেলে কাদের শেখ (২৮), যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধনিরগাতী এলাকার মোতালেবের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪০), একই জেলার কোতায়ালী উপজেলার হামিদপুর এলাকার মোকছেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে ইকতিয়ার বিশ্বাস (৪২), ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুন্দসী এলাকার ধলা গাজীর ছেলে জাকির গাজী (২৮)।
আজ ১২ আগস্ট শনিবার দুপুরে বাগেরহাট পুলিশ সুপার আরিফুল হক প্রেস বিফিংএ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল, গুলিসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং পূর্বে ডাকাতি করে আনা মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গত ২৫ জুলাই রাজশাহীতে স্টোর ভেঙে ডাকাতি ও রংপুরের একটি আলোচিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাজশাহী ও রংপুরে ডাকাতি ছাড়াও অন্য কোথায় কোথায় ডাকাতি করেছে তা জানা যাবে।
অনলাইন ডেস্ক :
গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হলেও নতুন শিক্ষাক্রম সেই পরীক্ষা শুরু হবে ডিসেম্বর মাসে।
নতুন কারিকুলামে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ওপর ভিত্তি করে এ এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেখানে লিখিত মূল্যায়নে ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে ৩৫ শতাংশ। পুরো পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টাব্যাপী। এসব নতুন পদ্ধতি ঠিক করে প্রায় চূড়ান্ত করেছে পরীক্ষা পদ্ধতি। আগামী ৩১ মে- এর মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে সেই পরীক্ষার নাম এসএসসি থাকবে নাকি অন্য কোনো নাম হবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন কারিকুলাম নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ে কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সেখানে স্কুলের বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক (ষান্মাষিক) মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সাতটি ধাপ বা স্কেলে নির্ধারণ করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। সেখানে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরে। সব কিছু চূড়ান্ত করতে চলতি মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে নতুন কারিকুলামে। সেখানে পরীক্ষা সময় বাড়ার পাশাপাশি পরীক্ষা সময় পরিবর্তন হতে পারে। সব কিছু আরেকটি বৈঠকের চূড়ান্ত হওয়ার পর সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, মূল্যায়ন নির্দেশনা যেটি ঠিক করতে আগামী ২৭ তারিখ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত হতে পারে নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, বছরের শুরুতেই এসএসসি পরীক্ষা না নিয়ে বছরের শেষে নিলে শিক্ষার্থী শিক্ষাবর্ষ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে। এসব দিক বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এসএসসি পরীক্ষা ডিসেম্বর নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। তবে তা এখনও চূড়ান্ত না। চলতি মাসে চূড়ান্ত বৈঠকের পর তা বলা যাবে।
৫ ঘণ্টা হবে এসএসসি পরীক্ষা:
এর আগে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমে হবে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা। এই পাবলিক পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এতে থাকবে লিখিত পরীক্ষাও। প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নে বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের। বর্তমান সময়ের মতো আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্রে মূল্যায়নে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা।আর এসএসসি পরীক্ষা হবে কেবল দশম শ্রেণির বিষয়ের ওপর। অর্থাৎ আগে নবম-দশম এই দুই শ্রেণির ওপর পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির ওপর পরীক্ষা হবে। এই শ্রেণিতে মোট ১০টি বিষয় পড়বে শিক্ষার্থীরা। বিষয়গুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সার্বিক আয়োজনের জন্য বিষয়ভিত্তিক ৬০০ শিক্ষকের সমন্বয়ে রিসোর্সপুল (বিশেষজ্ঞ দল) গঠন করা হবে। প্রথমে তাদের বোর্ডের আয়োজনে এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিটির জন্য প্রতি বিষয়ে চারজন করে মোট ৪৪ জন শিক্ষককে চূড়ান্ত করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
৭ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ১৯৭১ সালের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী এবং যে কোনো সময় জাতিকে অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেটা স্পষ্ট করেছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ।
পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জনে যে গেরিলাযুদ্ধের প্রয়োজন তার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও স্বীকৃত। এটি বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত অলিখিত ভাষণ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃতি দেয়।
এদিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ ভাষণ ছিল জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশনা।
এদিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার এ ভাষণে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে কী করতে হবে সব দিক নির্দেশনায়ই দিয়ে দেন। তার ওই ভাষণের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি…, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক।’ পাকিস্তানের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দেন।
স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়।
১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এড়িয়ে চলা বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। বাঙালির এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রাযুক্ত হয়। এর পরই ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয় অর্জিত হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা এখন সংসদ সদস্য সংখ্যা ৬৪৮ বলছেন, তারা সংবিধানকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না। তিনি সংবিধানের ১২৩, ১৪৮ ও ৫৬ অনুচ্ছেদের ঊদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিংবা রাজনৈতিক কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যই তারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। আর যদি সেটা না হয়- তাহলে বলতে হয়, তাদের সংবিধানের এইসব অনুচ্ছেদ সমন্ধে সম্যক জ্ঞান নেই।
আনিসুল হক আজ ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পর ‘জাতীয় সংসদ সদস্য এখন ৬৪৮ জন হয়েছে’ বলে কারও কারও ব্যাখ্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরা এমপি হিসেবে শপথ নিলেও সংসদে তারা কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর আগামী ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ থাকায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরা ওই তারিখ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
আনিসুল হক জানান, ৩০ জানুয়ারি থেকেই নতুন সংসদ সদস্যরা এমপি হিসেবে সুযোগ-সুবিধা পাবেন। নতুন সংসদের অধিবেশন বসার পর, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হবে।বাসস
চলারপথে রিপোর্ট :
খুলনার বটিয়াঘাটার ডেউয়াতলায় ইজিবাইক চালক শাওন হাওলাদার ওরফে বাবু (২২) হত্যায় ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন মোসলেম গাজী (৫৩), আনিছুর রহমান (৪২) ও রুহুল আমিন (৪০)। তাদের নিকট থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আজ ৩০ আগস্ট বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ইজিবাইক চালক শাওন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বর্শিবাওয়া গ্রামে সেলিম হাওলাদারের ছেলে। ২৬ আগস্ট খালিশপুর ভাড়াবাসা থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ২৭ আগস্ট বিকালে শাওনের লাশ বটিয়াঘাটার ডেউয়াতলা কাজীবাছা নদীর তীর থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ২৮ আগস্ট নিহতের পিতা সেলিম হাওলাদার বাদী হয়ে মামলা করেন।
পুলিশ ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল সেটসহ মোসলেম গাজীকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে লবনচরা রূপসা ব্রিজ এলাকা থেকে আনিছুর রহমান ও নতুন বাজার চর স্কুল গলি থেকে রুহুল আমিন গ্রেফতার হয়। এরা সবাই হত্যায় জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ২৬ আগস্ট সন্ধ্যায় হত্যাকান্ডে জড়িত চার জন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শিববাড়ি থেকে দাকোপের পানখালী যাওয়ার জন্য শাওনের ইজিবাইকটি ভাড়া করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডেউয়াতলা শ্মশানের নিকট পৌঁছে তারা কৌশলে শাওনকে নদী তীরে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিরা শাওনের ইজিবাইক, ব্যবহৃত মোবাইল ও তার পকেটে থাকা ২৬০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সে ইজিবাইক নিয়ে রূপসা ব্রিজ পার হয়ে বাগেরহাটের দিকে গেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।