বিজয়নগরে অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

বিজয়নগর, 6 October 2024, 32 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিজিবির বিশেষ অভিযানে বিজয়নগরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে, ভারতীয় ট্যাবলেট, ভারতীয় ক্রিম, ভারতীয় উন্নতমানের জর্জেট শাড়ি এবং ভারতীয় সিগারেট।

৫ অক্টোবর শনিবার বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়ন ২৫ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরাইল ব্যাটালিয়ন ২৫ বিজিবির অধীনস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা বাইপাস নামক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযানে সিলেট হতে ঢাকাগামী এস এ পরিবহনের একটি কাভার্ড ভ্যান হতে এসব ভারতীয় মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে জব্দকৃত ভারতীয় চোরাচালানী মালামালসমূহ বিজিবি’র হেফাজতে রয়েছে যা আখাউড়া কাস্টমস্ অফিসে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

ঈদুল ফিতরে ৫ দিন, ঈদুল আযহায়…

অনলাইন ডেস্ক : আগামী বছরের (২০২৫ সাল) সরকারি ছুটির তালিকা Read more

৩০ লাখ টাকা করে পাবে ছাত্র…

অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য Read more
ফাইল ছবি

২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক : ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন করেছে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ড বিষয়ক মহড়া…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দূর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশীয় অস্ত্র-নগদ টাকা উদ্ধারসহ দুই…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামীসহ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য…

চলারপথে রিপোর্ট : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রতিবাদে ও Read more

আন্দোলনে নিহত তানজিল মাহমুদ সুজয় এইচএসসি…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর Read more

পল্লীবিদ্যুতের ১০ জেলা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুৎ, বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকটি জেলার ১০ Read more
ফাইল ছবি

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা

অনলাইন ডেস্ক : পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী Read more

ভারত ৪৬ রানে অলআউট

অনলাইন ডেস্ক : ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছিল ভারত। Read more

কসবায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : অস্ত্র মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মো. মোস্তাফিজুর Read more
ফাইল ছবি

৮ জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ…

অনলাইন ডেস্ক : আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি Read more

বিজয়নগরে এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

বিজয়নগর, 20 December 2022, 1240 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
বিজয়নগরে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগ পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও পাহাড়পুর ইউপি পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাসেল খানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা অফিসের জেলা সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মোঃ মাছুম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রৌশন আরা, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রেসক্লাবের সভাপতি মৃনাল চৌধুরী লিটন, ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল, তাজুল ইসলাম, দানা মিয়া, চান্দুরা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ ফরিদ উদ্দিন, চরইসলামপুর ইউপি পরিদর্শক মোকারিম উদ্দিন প্রমুখ।

বিজয়নগরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

বিজয়নগর, 18 August 2023, 725 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে ২২ কেজি গাঁজাসহ মোজাম্মেল হোসেন (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আজ ১৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের ভাটিকালিসীমা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাদকদ্রব্য বহনকাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোজাম্মেল হোসেন বিজয়নগর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুরে চান্দুরা ইউনিয়নের ভাটিকালিসীমা গ্রামের জিলানী ব্রিক ফিল্ডের সামনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে অটোরিকসাসহ মোজাম্মেল হোসেনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

হরষপুর- মির্জাপুর সড়ক সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি কাজ

বিজয়নগর, 10 March 2023, 1137 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সবদিকে ধুলা। ধুলায় যেন অন্ধকার। বিজয়নগরের হরষপুর- মির্জাপুর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সড়কের পথচারিদের শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এ পথের যাত্রীদের সীমাহীন দুভোগ।

জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হরষপুর-মির্জাপুর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সড়ক।

সড়কটি পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সাথে বিকল্প সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পাশর্^বর্তী মাধবপুর উপজেলার অধিকাংশ জনগোষ্ঠি চলাচল করে থাকেন। তবে দীর্ঘদিন যাবত এ সড়কটি বেহাল অবস্থায় থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষজন। বর্ষার মৌসুমে কাদা পানি সয়লাব আর শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালির সৃষ্টি। শুষ্ক মৌসুমে সড়কে পানি দিয়ে কিউরিং না করায় ধুলা-বালিতে ভরপুর। এ সড়কের যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কাটছে না।

উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারের দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করা হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকায় সংস্কার কাজটি পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিপন ট্রেডার্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স পিন্টু কন্সট্রাকশন (জয়েন্ট বেঞ্চার) । কাজটি করাচ্ছেন মেসার্স পিন্টু কন্সট্রাকশনের মালিক মোঃ আতাউর রহমান পিন্টু। গেল বছরের মার্চ মাসে সংস্কার কাজটির ওয়ার্ক অর্ডার (অনুমতিপত্র) পায় প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের অক্টোবর মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও আদৌ পর্যন্ত সড়কটির সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারে নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সংস্কারের কাজ গত বছরের শেষ দিকে শুরু করে প্রায় ৩ কিলোমিটার সংস্কার কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ঐ সংস্কার করা সড়ক ও ভাঙ্গন ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এ সড়কের হরষপুর ইউনিয়নের অর্ন্তগত বাগদিয়া ব্রীজ থেকে হরষপুর দেওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কের ভেকু দিয়ে সড়ক খুঁড়ে রেখেছে ঠিকাদারীপ্রতিষ্ঠান। সড়কের কাজ না করায় মাসের পর মাস অতিবাহিত হচ্ছে। কাজ বন্ধ থাকায় ধুলাবালিতে বিশাল এলাকায় ধুলোর নগরীর পরিণত হয়েছে। সড়কের পাশে থাকা স্কুল, মাদ্রাসা, দোকানপাট, হাট-বাজারের মানুষের অবস্থায় খুবই নাজুক।বাগদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, এ সড়ক এখন ধূলার কারখানা। এ সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করলে শরীরে ধুলার প্রলেপ পড়ে ধূলোর আস্ত জমাট বাঁধে। সড়কের পাশে থাকাবাড়ি ঘর লোকজন জানান, সড়কের ধুলাবালি ঘরে ঢুকছে আর এ ধুলাবালু ঘরের আসবাপত্রে জমাট বেঁধেছে। ঘরে খাবার দাবারেও ধুলা পড়েছে। তারপরও সহ্য করে এসব খাবার খেতে হচ্ছে তাদের। সড়কেরপাশে থাকা গাছপালার লতাপাতা এখন ধুলাবালুতে আচ্চাদিত। প্রচুর ধুলাবালুতে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।

ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই মোটর সাইকেল যোগে এ সড়ক দিয়ে একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। মাস্ক ও রুমাল পড়েও ধুলা থেকে কোনোভাবেই রেহাই মিলছে না।

কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী শান্তা বলেন, ধুলাবালুতে অবস্থা খারাপ। কলেজে আসা-যাওয়ার খুবই কষ্ট হচ্ছে। আর জামা-কাপড়ের অবস্থা তো বলে শেষ করা যাবে না। আর কত দুর্ভোগ পেতে হবে?এদিকে সড়কের অবস্থা ভালো না হওয়ায় এ সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কমে গেছে। আর যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত। সড়কের অতিরিক্ত ধুলাবালি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশকরছে। এতে করে অ্যাজমা, হাঁপানী শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগব্যাধির সম্ভবনা রয়েছে।এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী মোঃ আতাউর রহমান পিন্টুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশিকুর রহমান ভূঞা সড়কের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কের কাজে কিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় তা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত করার জন্য বলা হয়েছে। আর যদি দ্রুত কাজ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে কাজের সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেলেও ঠিকাদার ঢাকা অফিসেও সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।

বিজয়নগরে বছরে ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতের ফল বিক্রি

বিজয়নগর, 12 July 2023, 808 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ভারতীয় সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক ও নৈর্সগিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজয়নগর উপজেলার টিলা ভূমির মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করা হয়।

উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন, ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টা, ৪২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা ও ১৬ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা ও প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিনত করতে থাকেন চাষীরা।

চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। বিজয়নগরে চাষ করা হয় পাঁচ ধরনের লিচ। এর মধ্যে রয়েছে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু।

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় রয়েছে এই লিচুর বাগানগুলি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছে।

উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানে থাকা ৭০ টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, তার ৪টি বাগানে থাকা ১৭০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।

উপজেলার মহেশপুর গ্রামের লিচুর চাষী মাসুদুল হাসান বলেন, তার বাগানে থাকা ৬০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।

২০১৫ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টার চাষ শুরু হয়। গত বছর উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ২০১৬ সাল থেকে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের।

বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫৪টি মাল্টার বাগান। গত বছর বাগানগুলোতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।

উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের মালটা বাগানের মালিক মোঃ সোহাগ ভূইয়া জানান, তার বাগানে ১২০টি মালটা গাছ আছে। গত বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে।

উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হয়েছে।

গত দুই বছর ধরে বিজয়নগরে লটকনের চাষ হলেও চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হলেও শুধু উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান।

মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭/৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এনিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এবছর সব গাছে লটকন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপর লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বানিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করবো।

উপজেলার সিঙ্গার বিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

একই এলাকার আবদুল হাসিম বলেন, তার বাগানে ১০০টি লটকন গাছ আছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০/২৫ জন চাষী ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশাকরি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষীরা।

তিনি বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। “মিয়াজাকি” আম গাছও আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।

উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় দেশীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন উৎপাদরের পাশাপাশি বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদিও চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে “মিয়াজাকি” আম। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সূর্যডিম আম চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছি । এই আমটিকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাজারজাত করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকি। প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় করা হয়।

ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ

বিজয়নগর, 8 September 2023, 639 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এখন ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন ওই কর্মকর্তা। টাকা ফেরত পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী আরিফ সিদ্দিকী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান’র সহায়তায় দাউদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত পিয়ন পদে খণ্ডকালীন কর্মরত অবস্থায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে পরিচয় হয়। পরে তিনি স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি পাবার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার নিকট শরণাপন্ন হন। তাকে উপজেলার বুল্লা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি পাইয়ে দেয়ার চুক্তিতে দুই ধাপে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন শিক্ষা কর্মকতা। একজন নিরাপত্তা প্রহরী আবশ্যক বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে ভুক্তভোগী আরিফ সিদ্দিকীসহ ৪ জন আবেদন করেন। আবেদনের সাথে সকল কাগজপত্রও জমা নেওয়া হয়। পরে আইডি কার্ডের সাথে সকল কাগজের তথ্য ভুল থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন না করলে চাকরি দেওয়া যাবে না বলে শিক্ষা কর্মকর্তা। পরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে দ্রুত সংশোধনের কথা বলে আরো ৪০ হাজার টাকা নেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে আবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান। এরই মধ্যে বুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়। ভুক্তভোগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট টাকা ফেরত চাইলে তিনি আড়িয়ল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লিটন দেব ও সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুক ভুইয়ার মাধ্যমে দুই ধাপে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেন। অবশিষ্ট ৭৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে এখন টালবাহানা শুরু করেছেন অভিযোগ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল জলিল জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ আছে বলে শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কোন লোকের কাছ থেকে টাকা নেয়নি। আমার কথা বলে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এইচ. ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।