চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার নিজ গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়।
অভিযুক্ত শান্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
তিনি উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে।
প্রতারণার শিকার ৬ ভুক্তভোগী নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত রায়কে অভিযুক্ত করে ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, শান্ত কুমার রায় ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় সিগারেটের এজেন্ট ও র্স্বণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামে তার বাবার স্বর্ণের দোকান রয়েছে। সে নাম ব্যবহার করে তার বাবার সহযোগিতায় শান্ত কুমার রায় এলাকায় বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের টার্গেট করে ব্যাংকের রেটের চেয়ে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সিগারেটের ব্যবসা ও স্বর্ণের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কথা বলে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।
গত শনিবার ও রোববার (১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি) অনেকের টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ ছিল, ওইদিন থেকেই শান্ত লাপাত্তা, তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। শুরু হয় কানাঘুষা, বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক টাকা নেওয়ার তথ্য। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরো জানা যায়, নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের হকের ৪০ লাখ টাকা, মো. সুজন মিয়ার ২০ লাখ টাকা, আব্বাস উদ্দিনের ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ছগির আহমেদের ১২ লাখ টাকা, শ্যামল চন্দ্র দাসের ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অক্লান্ত চন্দ্র দেব নাথের ৩ লাখ টাকা ও নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলমের ৫ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
এছাড়া থোল্লাকান্দি গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ টাকা, থোল্লাকান্দি গ্রামের আতিকুর রহমান রনির (বিকাশের দোকান) ৩ লাখ টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালালের (বিকাশের দোকান) ৫৩ লাখ টাকা, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়ার ১১ লাখ টাকা, বাড়াইল গ্রামের (বিকাশের দোকান) মাহফুজুর রহমানের ৩ লাখ টাকা, নরসিংদী জেলার মুরাদনগরের বাদল মিয়ার ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায়। এসব পাওনাদাররা শান্ত ও তার বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগকারী শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, স্বর্ণ কিনবে বলে আমার কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়। লাভ হলে এর কিছু অংশ দেবে বলে আমাকে জানায়। কিন্তু টাকা দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। এখন খুঁজে পাচ্ছি না।
অপর ব্যক্তি ছগির আহমেদ বলেন, ব্যবসায়িক কাজে শান্ত আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয় গত জুলাই মাসে। বলেছিল তার বাবার স্বর্ণ ব্যবসা আছে দিলে লাভ হবে। কিন্তু এরপর থেকে আমার টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন তারিখ দিতে থাকে। গত শনিবারে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে আর পাচ্ছি না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাচ্ছি। সে আমার মতো অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে।
ব্যবসায়ী মো. হক সাহেব বলেন, শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায় সময়ই টাকা নিতো, আবার ফেরতও দিয়ে দিতো, সর্বশেষ ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে, অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিতো এটা আমার আগে জানা ছিল না, এখন শুনতে পাচ্ছি আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে সে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
অপরদিকে সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রিফাত আহম্মেদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেওয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত কুমার রায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়কে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার মোবাইল ফোন (০১৭৮৮৫৫০১৩০) বন্ধ পাওয়া যায়।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, এ পর্যন্ত ছয়জন পাওনা টাকার বিষয়ে নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান।
আজ ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী রিটার্নিং ও নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ফরহাদ তানভীরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, মেয়র শিব শংকর দাস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ, সদস্য গুলাম শাহরিয়ার বাদল, পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমুখ।
নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে ফয়জুর রহমান বাদল নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্বাচনী বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করতে হবে।’
২০১৪ সালে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
১০ বছর আগে শাহনূর আলম নামে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেন লিয়নের বেঞ্চ এ রায় দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আগের আদেশ বাতিল করে মামলাটি নেয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর এ রুলটির শুনানি হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা বিষয়টি শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করি। এরপর হাইকোর্ট রুল শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন। বৃহস্পতিবার রুলটি অ্যাবসোলুট করে রায় দিলেন হাইকোর্ট। ফলে শাহনূর আলম হত্যার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণে বাধা কাটলো।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১৪) নয়জন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৪ সালের ১ জুন একটি নালিশি আবেদন করেন শাহনূরের ভাই মেহেদি হাসান। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল শাহনূরকে র্যাব-১৪ এর সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরে ৬ মে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহনূর মারা যান। র্যাবের নির্যাতনে শাহনূরের মৃত্যু হয়েছে।
পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্যাতনে শাহনূরের মৃত্যুর অভিযোগের আবেদনটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ আদেশের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন অভিযুক্ত এক র্যাব সদস্য।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বাতিল করে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। তবে এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন শাহনূরের ভাই মেহেদি হাসান।
২০১৪ সালের ১৬ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত হোসেন ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ সংশোধন করে জেলা দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সে রুল ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে জমকালো আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। স্থানীয় সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যে আজ ১৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে ৩টা থেকে কুড়িঘর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাঠি খেলা দেখতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ।
“লাঠির ছন্দে শপথ করি, মাদক ছাড়া জীবন গড়ি” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে খেলাটি উদ্বোধন করবেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ হোসেন শান্তি। খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক নজরুল ইসলাম, প্রধান আকর্ষণ ছিলেন নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুমুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন আহমেদ মহিন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আলম সোরাফ, আনন্দ টিভির প্রতিনিধি আবু কাউছার, বাংলা টিভির প্রতিনিধি পিয়াল হাসান রিয়াজ, কুড়িঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মাসুদুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক সফর আলী, সাংবাদিক মমিনুল হক রুবেল, সাংবাদিক অলিহ উল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মোঃ নান্নু মিয়ার সভাপতিত্বে খেলা শেষে অতিথিদেরকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আয়োজকরা জানান, এই ঐতিহ্যবাহী খেলাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি বাড়াতে তারা নিয়মিতভাবে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। খেলা পরিচালনা করেন মোঃ জাকির সর্দার।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবু সাঈদকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ঢাকার উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে সাঈদ গ্রেফতারের খবরটি ২৩ মে শুক্রবার ফেসবুকে তার ছবিসহ ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আবারও গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে নবীনগর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা সাঈদকে ঢাকার উত্তরা থানার একটি হত্যা মামলায় সেখানকার পুলিশই তাকে গ্রেফতার করেছে। নবীনগরে বিভিন্ন মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতার নাম রয়েছে, আবু সাঈদ তাদের অন্যতম। কিন্তু সাঈদসহ বেশিরভাগ নেতা আত্মগোপনে থাকায় নবীনগরের পুলিশ তাকে এতোদিন গ্রেফতার করতে পারেনি।