চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকটি জেলার ১০ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থায়ীভাবে চাকুরি চাকরিচ্যুৎ করা হয়। এরই প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার বিদ্যুৎ সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দাবি আদায় না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে না বলে নিশ্চিত করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন।
বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, পল্লী বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরি বিধি ১৯৯২ (সংশোধিত, ২০১২) অনুযায়ী চাকরি হতে অব্যাহতি দেয়া হলো।
চাকরি হতে স্থায়ী বহিস্কৃতরা হলো- ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. সালাহ উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান ভূইয়া, নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ম্যানেজার মনির হেসেন, মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রাহাত, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হাকিম, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৪ এর সিনিয়র সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন, নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওয়্যারিং পরিদর্শক সালাম জাবেদ, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারমো. হুমায়ুন কবীর, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রাজন কুমার দাস ও কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দিপক কুমার সিংহ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ৪৭ বছর ধরে চলমান আছে। তাদের শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবি তোলা হয়। বিদ্যুৎ সচিবসহ প্রধান উপদেষ্টার দাবি তাদের দাবিকে যৌক্তিক বললেও বাস্তবায়ন না করে উল্টো আমাদের ১০ কর্মকর্তাকে চাকুরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং একজনকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করা হয়। যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।
নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আরইবির লোকজনের কেনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য নির্মাণসামগ্রী থেকে শুরু করে সব মালামাল খুবই নিম্নমানের। এসবের কারণে ভূতুড়ে বিল আসে। এর দায় আসে আমাদের ওপর। আমরা এসবের প্রতিবাদ করায় আমাদের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। চাকরি থেকে বহিষ্কার করা ১০ কর্মকর্তার সব মামলা বাতিল করে সসম্মানে চাকরিতে পূনর্বহালসহ আমাদের যৌক্তিক সকল দাবি না মানলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা সদরের সাথে সরাইল-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সংযোগ রক্ষাকারী দু‘টি পুরাতন আরসিসি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্রিজগুলো হলো-নাসিরনগর-সরাইল সড়কের দাতঁমন্ডল নামক স্থানে ব্রিজ ও নাসিরনগর-লাখাই সড়কে আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল নামক ব্রিজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল নামক ব্রিজ মধ্যবর্তী স্থানে সংযোগ থেকে সরে গেছে। ফলে স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ায় মূল ব্রিজটি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কে আশুরাইল (বেনীপাড়া) মহাখাল ব্রিজটি অনেক বছরের পুরনো। ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে হঠাৎ করেই সংযোগ থেকে সরে গেছে। পাশের রেলিংও ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুকিঁপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও হঠাৎ করে ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে সংযোগ সরে যাওয়ায় মনে আতঙ্ক নিয়েই চলাচল করছে হাজারো মানুষসহ ভারী যানবাহন। অন্যদিকে নাসিরনগর-সরাইল সড়কের দাতঁমন্ডল নামক স্থানে ব্রিজটি গতবছর বর্যার স্রোতে একদিকে হেলে পড়েছে। দীর্ঘ এক বছর যাবৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও আজো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। তাই ব্রিজ দুইটি অপসারণ করে এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করলে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূঁইয়া জানান, তিনি ডিসি অফিসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঝুঁকিপর্ণ দুইটি ব্রিজের বিষয়ে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের পুন:নির্মাণের বিষয়ে এখনো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন পাননি। তবে অনুমোদন পেলে টেন্ডারে যাবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন কৃষকলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব পারভেজ মোশারফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষকলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নাজির মিয়া।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মোঃ অলি মিয়া। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম নূরে আলম ।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রুমা আক্তার, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, জেলা কৃষকলীগ নেতা আলী আশরাফ প্রমুখ।
সম্মেলন শেষে মোঃ ইয়ার খান মোল্লাকে সভাপতি ও মোঃ আবদুর রশিদ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক, আকিবুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, তাসলিমা বেগমকে মহিলা সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কুন্ডা ইউনিয়ন কৃষকলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে উপজেলা পর্যায়ে যুবলীগের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কর্মসূচি ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ।
আজ ২৯ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক রায়হান আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এ কর্মসূচী পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ভার্চু্য়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।
এ সময়ে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ভানু চন্দ্র দেব ও মোজাম্মেল হক দানার সঞ্চালনা’য় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এড. শাহানুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এড. সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুবিনা আক্তার, নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস, গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল হক, ভলাকুট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য রুবেল মিয়া প্রমুখ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যুবলীগ দেশে মানবিক যুবলীগ হিসেবে পরিচিত। এই যুবলীগকে আরো সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাসিরনগর উপজেলায় এই সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বেঙ্গাউতা গ্রামে বাস করেন এক হাজার পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামে শিশু রয়েছে অন্তত ৫০০। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের জন্য কোনো বিদ্যালয় নির্মিত হয়নি গ্রামটিতে। সবচেয়ে কাছের যে বিদ্যালয়, সেই কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থানও প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। রাস্তাঘাট বেহাল হওয়ায় বছরের প্রায় ছয় মাস নৌকা ছাড়া যাতায়াত করতে পারেন না বাসিন্দারা। এ সময় চলাচলে ঝুঁকি থাকায় শিশুরাও দূরের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এ গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন খান পড়েন রাজধানী ঢাকার তিতুমীর কলেজে। সেখানকার অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র বোরহান আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘আমাদের গ্রামে স্কুল নেই, রাস্তাঘাট নেই। মানুষের চেহারা নিয়ে কেবল বেঁচে আছি। শিক্ষার অভাবে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগছে না।’ বোরহান আরও বলেন, এখানে শিক্ষিত কোনো মানুষ থাকেন না। যাঁদের অবস্থান একটু ভালো, তাঁরা চলে যান শহরে। ফলে বাসিন্দাদের সবাই নিরক্ষর।
মো. আমির বলেন, রাস্তাঘাট না থাকায় পাশের গ্রামেও যেতে হয় ফসলি জমি মাড়িয়ে। বর্ষায় তা-ও ডুবে যায়। যে কারণে ছয় মাস কোথাও যেতে পারেন না। নৌকার পথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশুরা পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।
কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুবনা আক্তার বলেন, বেঙ্গাউতায় আনুমানিক পাঁচ শতাধিক শিশু রয়েছে। নদী পার হয়ে বছরের তিন-চার মাস কিছু শিশু বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। সম্প্রতি তাদের আসা কমে গেছে। তিনি শুনেছেন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে অনেকে।
এর ইঙ্গিত মেলে বিদ্যালয়টির দুই ছাত্রীর কথায়। চতুর্থ শ্রেণির আফরোজা আক্তার বলল, ‘আমরার গ্রামে একটা ইস্কুল হইলে ভালা হইতো। এতো দূরের ইস্কুলে যাইতে মন চায় না। আব্বায় কইছে মাদ্রাসায় ভর্তি কইরা দিবো।’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বিলকিস আক্তারের আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। তাঁদের মতো সে ভবিষ্যতে শিক্ষাদান করতে চায় অন্যদের। তবে এ পথে যে বাধা অনেক। বিলকিস বলে, ‘এতো দূর থেকে ইস্কুলে আইতে পারি না। বৃষ্টি আইলে বইখাতা ভিইজ্জা যায়। বন্যার সময় নৌকা দিয়া আইতে ডর (ভয়) লাগে।’ তাই স্থানীয় খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিও জানায় সে।
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে এ গ্রামের মানুষ বঞ্চিত বলে স্বীকার করেন চাপরতলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনসুর। তিনি বলেন, এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও রাস্তাঘাট তৈরি জরুরি।
জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার ১৩২টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৪টি। তবে ১৭টি গ্রাম বিদ্যালয়হীন। এর একটি এই বেঙ্গাউতা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, বিদ্যালয় স্থাপনে ৩৩ শতক জায়গার প্রয়োজন। জায়গার খোঁজ পেলে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।
ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেনেছেন। ওই গ্রামে বিদ্যালয় নির্মাণে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ছাত্রীদের উত্যক্তের ঘটনায় সাক্ষী হওয়ায় এক যুবক পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ২১ এপ্রিল রবিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
নিহত হুসাইন মুন্না উপজেলার রতনপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক খুরশিদ আলমের ছেলে। গত বুধবার তাকে মারধর করে স্থানীয় ৫-৬ জন বখাটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো– একই এলাকার মো. আল-আমিন, সাব্বির মিয়া ও মাসুম মিয়া।
স্থানীয়রা জানান, চাতলপাড় ইউনিয়নের ইকরা দারুল কুরআন বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার সময় স্থানীয় কিছু যুবক তাদের উত্যক্ত করত। প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসার শিক্ষকদের হুমকি-ধমকিও দিয়েছে তারা। মাসখানেক আগে উত্যক্ত করার ঘটনায় অভিভাবক সুমন মিয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। মুন্না ছিলেন ওই অভিযোগের দ্বিতীয় সাক্ষী।
ওই ঘটনার পর বুধবার মুন্নাকে স্থানীয় চকবাজারে মারধর করে ৫-৬ জন। এতে সে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে প্রথমে তাকে কিশোরগঞ্জের ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ওই অভিযোগ তদন্ত করা পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, তদন্তে উত্যক্তের ঘটনার সত্যতা পাননি। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ায় মুন্নাকে স্থানীয় আল-আমিন, মাসুম, সাব্বিরসহ কয়েক যুবক পিটিয়ে আহত করে বলে শুনেছেন।
তবে মুন্নার পরিবারের দাবি, হত্যার উদ্দেশেই মুন্নাকে মারধর করা হয়। পুলিশ অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তদন্ত ভিন্নখাতে নিয়েছে।
মাদ্রাসাটির শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ উত্যক্তের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মাদ্রাসার ছাত্রীদের প্রায় সময়ই বখাটেরা উত্যক্ত করে। এর আগে আল-আমিন ও মাসুম উত্যক্ত করলে তাদের পরিবার মুচলেখা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। ফের উত্যক্ত করলে অভিভাবক সুমন লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি প্রথম ও মুন্না দ্বিতীয় সাক্ষী হন। সাক্ষী হওয়ায় মুন্নাকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করা হয়।
অভিযোগকারী সুমন মিয়া বলেন, আমি লিখিত অভিযাগ দিলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আল-আমিনের বড় ভাই শফিক মিয়া জানান, উত্যক্ত করার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে বুধবার মুন্নার সঙ্গে তার ভাইয়ের কথাকাটাকাটি হয়েছিল বলে শুনেছেন।
নাসিরনগর থানা ওসি সোহাগ রানা বলেন, ইউএনও অফিসে দেওয়া লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা তদন্ত করে। তবে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে অভিযুক্তরা মুন্নাকে মারধর করতে পারে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।