চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, প্রদর্শনী ছাড়াও সপ্তাহব্যাপী চলবে ফ্রি ভ্যাটেনারি মেডিকেল ক্যম্প, ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম, খামার স্থাপনে প্রযুক্তি বিষয়ে খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হবে। মেলা উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ঘটে।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার প্রাণিসম্পদ বিভাগ ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বোডিং মাঠ সংলগ্ন জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় চত্বরে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উন্নত খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, প্রাণি স্বাস্থ্য এবং কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খামারি পর্যায়ে গবাদি পশু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
এসময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. ইলিয়াসসহ প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীতে ছাগল, ভেড়া, বিভিন্ন প্রজাতির মোরগ, পাখি, পার্সিয়ান সেমিফ্রান্স বিড়াল, বিরল প্রজাতির থারপারকার গরু, ডেনিস কবুতরসহ নানা প্রজাতির বিরল প্রাণি ও ডেইরী ফার্ম থেকে প্রস্তুতকৃত ঘি, পণিরসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি নিয়ে ২৬টি স্টল প্রদর্শিত হয়।
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেছেন, একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখনো কোন প্রকল্প পাস কিংবা অর্থ বরাদ্দ হয়নি। তাহলে অনিয়ম হল কোথায়? তারা রাজনৈতিকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোতিভাবে এমনটি করছেন।
তিনি আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লাসহ কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষ থেকে দেয়া এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেওয়া উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার আরো বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের কার্যকালে রাজস্ব ও এডিপির বরাদ্দে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের মধ্যে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি সরকারি নিবন্ধনবিহীন মাদ্রাসার নামে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ ও জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের শালগাঁও-কালিসীমা গ্রামের শতাধিক প্রকল্পের নামে কয়েক কোটি সরকারি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, অনুসন্ধ্যানে জানতে পেরেছি, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়াগ দারুল উলুম মাদ্রাসার নামে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ১ কোটি ৫৫লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। একই সময়ে জেলা পরিষদের সদস্য সদস্য মোঃ বাবুল মিয়া সদর উপজেলার কালিসীমা-শালগাঁও গ্রামে বিভিন্ন খাতে ১১৮টি প্রকল্প দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
জেলা পরিষদ সদস্য পায়েল হোসেন মৃধা সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনয়নসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূয়া প্রকল্প বরাদ্দ করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। নাসিরনগর উপজেলা থেকে নির্বাচিত সাবেক সদস্য ফারুকুজ্জামান ফারুক উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র একটি গ্রামে এভাবে বরাদ্দ দিতে পারে না। একইভাবে একটি প্রকল্প শেষ হতে না হতেই একই প্রতিষ্ঠানে বার বার বরাদ্দ দেওয়া যায় না। যা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম দিয়েছেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার আরো বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের নির্বাচিত ৮জন সদস্য স্থানীয় সরকার উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে (আল-মামুন সরকার) বিধি বহির্ভূতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদের প্রথম সভা থেকে নির্বাচিত সদস্যদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার।
তিনি নিজ ক্ষমতাবলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে চার লাখ টাকা, মেয়রকে চার লাখ ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দের বিভাজন করেছেন। যা স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদিত রাজস্ব তহবিল ও এডিপির বরাদ্দের ব্যবহার নীতিমালা ২০২২ এর পরিপন্থী।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল গেজেট বিপ্তপ্তিতে জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর অধিকতর সংশোধনীর প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের প্রণীত ২০২২ সালে ১০ নং আইন মোতাবেক প্রত্যেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ক্ষেত্রমতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধি পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের সদস্য।
এছাড়া জেলা পরিষদের এডিপি ও রাজস্ব খাতের অর্থে প্রকল্প গ্রহন, বাস্তবায়ন ও বন্টন নীতিমালা ২০০০ এর ৩ ধারা এর ৩ মোতাবেক জেলা পরিষদের প্রকল্প প্রণয়নের সময় জেলাধীন সকল উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে প্রকল্প গ্রহন ও অনুমোদন করতে হবে। সেই অনুসারে তাদের প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
আল মামুন সরকার বলেন, তাদের অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ পরিষদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাব দিলে সেটি পরবর্তী সভায় পাস হবে। পরবর্তী সভা এখানো হয়নি। অনুমোদনের জন্য প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় সেই প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে অর্থ বরাদ্দ দিবেন। পরে দরপত্র আহবান করা হবে। যার কোনো কিছুই এখনো হয়নি।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যদি কোন অনিয়ম করি তাহলে আপনারা আমার বিরুদ্ধে লিখবেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল আজিজ ও রুমানা ফেরদৌসিসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সদস্য (সদর উপজেলা থেকে নির্বাচিত) ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মোঃ বাবুল মিয়া সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ বছরে বিভিন্ন খাতে ১১৮টি প্রকল্প দিয়েছি। সকল প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবহেলিত ও যাদের প্রয়োজন তাদেরকেই প্রকল্প দিয়েছি। সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। উল্লেখ্য মোঃ বাবুল মিয়া জেলা পরিষদের বিগত পরিষদেও সদস্য ছিলেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলমকে কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।
ভাদুঘরে পৌরসভার বিজয় মেলা’র উদ্বোধন
স্টাফ রিপোর্টার:
মহান বিজয় দিবস ও বিজয়ের মাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আয়োজনে প্রথমবারের মতো ১৫-৩১ ডিসেম্বর ২০২২ “বিজয় মেলা” এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ভাদুঘর বাসটার্মিনাল সংলগ্ন মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আঃ কুদ্দূস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত কাউন্সিলর হোসনে আরা বেগম, শাহানা বেগম, মিনারা বেগম, নিলুফা ইয়াছমিন, কাউন্সিলর মোঃ জামাল হোসেন, শেখ মোঃ মাহফুজ মিয়া, আক্তার হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান, মোঃ আবদুল মালেক, ওমর ফারুক জীবন, ফারুক আহমেদ, মীর মোঃ শাহীন মিয়া, মোঃ ফারুক মিয়া, মোঃ কাওসার মিয়া, মোঃ সাকিল, মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামছুদ্দিন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কাউছার, সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কাজীসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ৯ মাস যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আজও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এর মূলে ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করেছিল সেই যুদ্ধে। কিন্তু যারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করেছে, যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করেনি এবং যারা ধর্মান্ধ- সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল, তারাই ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের বিরোধীতা করেছে। এখনো তারা বিভিন্নভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করছে। তাদের থেকে সকলে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় তিনি ভাদুঘরে বিজয় মেলার আয়োজন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা মেয়র মিসেস নায়ার কবির ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আঃ কুদ্দূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর ভাদুঘরের উন্নয়নে শহর রক্ষা বাধ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ভাদুঘর মাহবুবুল হুদা পৌর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ভাদুঘরের বিভিন্ন উন্নয়নে পৌর মেয়রকে সুদৃষ্টি রাখার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ১৫ ডিসেম্বর থকে শুরু হওয়া বিজয় মেলা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। মেলায় প্রতিদিন অতিথি শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন পণ্যের স্টল ও লাকি কুপন লটারির আয়োজন করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন মহাসড়কের ফোরলের প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ফেলে চলে যায় প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকেরা। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ। এই অবস্থায় খানাখন্দে ভরপুর চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার পর ভারতীয় নমনীয় ঋন এলওসির অধীনে ২০১৮ সালে তিনটি প্যাকেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দুইলেন থেকে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থমকে যায়। পরবর্তীতে বালু সংকটের কারণে আরো ৬মাস বিলম্ব হয় প্রকল্পের নির্মান কাজের। এরই মধ্যে গত ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছিল। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশের দুই লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
প্যাকেজ-২ এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে করে সড়কটি দিয়ে চলাচলরত যানবাহন, চালক এবং যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আল আমিন জানান, আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কাজ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। খানাখন্দ সড়কের কারণে প্রতিনিই ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এতে করে যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
অন্যদিকে সড়কের তীব্র ধুলার কারণে আশপাশের বাসা বাড়ি সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা সংকটে অনেকটাই লাটে উঠেছে। তিনি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
পরিবহন চালক আলমগীর মিয়া বলেন, নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের নাট-বল্টু, চাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তিনি সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোঃ শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে চলে গেছেন। তারা কবে ফিরে আসবে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি তারা। শ্রমিকরা চলে যাবার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে আমরা তা এখন বলতে পারছি না। চলমান দুইটি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশত ভারতীয় লোক কাজ করতো। বর্তমানে তাদের মধ্যে একজনও বাংলাদেশে নেই।
তিনি আরো জানান, আমাদের প্যাকেজ-১ এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মত জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে উপর থেকে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ শামীম আহমেদ আরো বলেন, গত ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর নির্মানাধীন প্রকল্পটির ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চলে যাওয়ার পর প্রকল্পের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা চুরি ঠেকানোর জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়েও চুরি ঠেকাতে পারছিনা। তিনি এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার ফোরলেন প্রকল্পটিতে একটি উড়াল সেতুসহ ১৬টি ব্রীজ-কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।
চলারপথে রিপোর্ট :
জমি ভরাট করতে গিয়ে একটি সড়কের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। এতে সড়কের দুই পাশের প্রায় ১০০ বিঘা ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক এসব জমিতে ফসলের বীজ বা চারা রোপণ বন্ধ রেখেছেন। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন কৃষকরা। ইউএনও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন।
গত ১৩ মার্চ রামরাইল ও ঘাটিয়ারা গ্রামের ২০-২৫ জন কৃষক লিখিত আবেদন করেন।
মোহাম্মদপুর গ্রামের আরমান মিয়া জানান, কালভার্ট-সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে জামাল মিয়ার ছয় বিঘা জমি বছরে ৩০ হাজার টাকায় জমা নিয়ে তিনি সবজির চাষ করেন। তবে জলাবদ্ধতার শঙ্কায় তিনি উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। এতে কয়েক লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ জানান, ইউপি চেয়ারম্যানকে সমস্যাটি সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ইউএনওর কাছে আবেদন দেওয়ার পর কয়েক দিন অপেক্ষা করবেন। প্রশাসন কোনো প্রতিকার না করলে আরেকটি কালভার্ট ভরাটের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
রামরাইল গ্রামের কৃষক সুখলাল, মতিলাল, হীরালাল, দুলাল, নির্মল, চন্দন দেব, পরিতোষ দেব এবং ঘাটিয়ারা গ্রামের সোহাগ মিয়া, আব্দুল্লাহ মিয়া, হাবিব উল্লাহ, খবির মিয়া, আবু তাহের মিয়াও একই কথা বলেন। তাঁরা বলেন, ইচ্ছা করেই কালভার্ট বন্ধ করে মাটি ভরাট করেছেন মালিক। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
রামরাইল ও মোহাম্মদপুর গ্রামের সংযোগ সড়কের ঘাটিয়ারা গ্রামে প্রায় শত বছর ধরে কালভার্টটির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন হয়। পার্শ্ববর্তী বিলে গিয়ে পড়ে সেই পানি। তবে এক মাস আগে মোতালেব মিয়া বাড়ি নির্মাণের জন্য জমিটি ভরাট করেন। প্রভাবশালী হওয়ায় জমি ভরাটে বাধা দেওয়ার সাহস করেনি কেউ।
এ বিষয়ে মোতালেব মিয়ার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তাঁর ছেলে স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, এ কালভার্টের নিচ দিয়ে পানি যায় না। বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনে মাটি ভরাট করা হয়েছে। কারও প্রয়োজন হলে পাইপ-কালভার্ট নিজ খরচে করবেন।
রামরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমার সেলিম বলেন, ইউএনওর নির্দেশে সরেজমিন গিয়ে জমির মালিককে কালভার্টের মুখের মাটি সরিয়ে মোটা পাইপ বসিয়ে দিতে বলা হয়েছে; পানি নিষ্কাশনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।