চলারপথে রিপোর্ট:
আশুগঞ্জে সাড়ে ১২ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপসহ ১ জন মাদক বহনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মো. শফিকুল ইসলাম (৩৭)। শফিকুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের গোকর্ণঘাট এর মৃত আ. রউফ মাষ্টারের ছেলে।
২৪ নভেম্বর রবিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, রবিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার এসআই গাজী রবিউল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে চরচারতলা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর আশুগঞ্জ টোল প্লাজার অনুমান ৩০ গজ পূর্বপাশে পাকা রাস্তার উপর হতে ১২.৫ কেজি গাঁজা এবং একটি নীল রংয়ের টাটা এক্স-২ মিনি পিকআপসহ ১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আশুগঞ্জ থানায় উল্লেখিত বিষয়ে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে ৬২ কেজি গাঁজাসহ মোঃ জামিল হোসেন (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোলপ্লাজা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত জামিল হোসেন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে। এ সময় গাঁজা বহনকারী একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পুলিশ মিডিয়া উইংস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকাল ৯টার দিকে আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার সামনে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেটকার আটক করা হয়। পরে প্রাইভেটকার তল্লাসী করে ৬২ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে সম্পদে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির টানা দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। আর বার্ষিক আয়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম। চার বছরে জিয়াউল হকের বার্ষিক আয় কমলেও নিজের নামের পাশাপাশি স্ত্রীর নামে সম্পদ প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে।
আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম, জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ, স্বতন্ত্রপ্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম।
হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচজনের মধ্যে তিনজন প্রার্থী উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে শাহজাহান আলম এমবিএস (মাস্টার্স ইন বিজনেস স্টাডিজ), আবদুল হামিদ ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা এলএলবি পাস। রাজ্জাক হোসেন উচ্চমাধ্যমিক ও জহিরুল ইসলাম স্বশিক্ষিত।
নৌকার প্রার্থী শাহজাহান আলমের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি পেশায় শিক্ষক। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএস পাস। আশুগঞ্জ উপজেলায় নিজের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু কারিগরি ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তিনি। ২০১৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে তাঁর নামে দুটি মামলা ছিল। তবে দুটি মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
হলফনামা অনুযায়ী, শাহজাহান আলমের বার্ষিক আয় ১১ লাখ ২৩ হাজার ১১৬ টাকা। তাঁর নিজ নামে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৬২ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩২ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে। নিজ নামে সোনা আছে ২০ তোলা। নিজ নামে ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৭ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৯৬ হাজার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে তিনি ১৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
জিয়াউল হক মৃধার পেশা আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে মামলা হলেও তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়। হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও তাঁর ওপর নির্ভরশীল বড় ছেলের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৩১ হাজার ১২ টাকা দেখিয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩১ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় ২২ লাখ ১৭ হাজার ৬৩১ টাকা কমেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে জিয়াউল হক মৃধার বর্তমানে নিজ নামে সরাইল ও রাজউকের পূর্বাচলের নিউটাউনে ৬৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৯ টাকার সম্পত্তি, স্ত্রীর নামে ১৬৩ শতক জমি ও যৌথ মালিকানায় ৯ একর ৫০ শতক জমি আছে। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে নিজ নামে ৪৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি ল্যান্ডক্রুজার প্রাডোসহ ৯১ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৯ টাকার সম্পত্তি আছে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ৭ ভরি সোনাসহ ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৮ টাকার এবং নির্ভরশীলদের নামে ৩৫ ভরি সোনাসহ ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকার সম্পদ আছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। কৃষি ও অন্যান্য খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ হাজার ৯৬ হাজার ২০০ টাকা বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তাঁর নিজ নামে ৩০ লাখ ২৭ হাজার ১৪৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে। নিজ নামে সোনা আছে ৪০ ভরি ও স্ত্রীর নামে আছে ৩৭ ভরি। সরাইলে তাঁর ১০ বিঘা কৃষিজমি ও দশমিক ৪৫ শতক অকৃষিজমি আছে। আর স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকার অকৃষিজমি আছে বলে হলফনামায় লেখেন তিনি।
জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুলের নামে মামলা নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাঁর নিজ নামে ২৬ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে। তাঁর নামে ৩০ শতক কৃষি জমি ও আধা পাকা টিনশেডের দুই কোঠার একটি দালান আছে।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেনের নামে মামলা নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাঁর নিজ নামে ২৮ লাখ ৭ হাজার ৭০০ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তাঁর নামে ৩০ শতক কৃষিজমি আছে। তাঁর ১২ লাখ টাকার ব্যাংক লোন আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
মেয়াদ শেষে নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় প্রায় তিন বছর বন্ধ সেচ কার্যক্রম। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ৫০ সহস্রাধিক কৃষক বাড়তি সেচ খরচ মেটাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার টন ধান উৎপাদন কম হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন দ্রুত না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বলছে, কিছু সংশোধন, সরেজমিন যাচাইসহ সেচ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও টেকসই প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই বাস্তবায়ন শুরু হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন ইউনিটের টারবাইন ঠান্ডা রাখতে মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ পানি লাগে। পরে এই বর্জ্য পানি একটি আউটার চ্যানেল দিয়ে পুনরায় নদীতে ফেলা হয়। ১৯৭৫ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি হেড রেগুলেটর নির্মিত হলে পানির গতিপথ আংশিক পরিবর্তন করে তা পার্শ্ববর্তী জমির সেচ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এটিই ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে বিএডিসির অধীনে ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প’ নামে সেচ কার্যক্রম শুরু করে। একই সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এ ধরনের প্রকল্প গড়ে ওঠে। পরে ১৯৯০-৯৫ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দুটিকে একীভূত করে যাত্রা শুরু হয় ‘আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্প’, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুন।
কৃষকরা জানায়, গভীর কিংবা অগভীর নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি সেচকাজে ব্যবহার করলে একরপ্রতি তাদের জ্বালানি খরচসহ লাগে ৮-১০ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রকল্পের পানিতে একরে সেচ খরচ ২ হাজার টাকার মতো। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রকল্পের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ, সরাইল, সদর ও নবীনগর উপজেলার প্রায় ৩৪ হাজার এবং পলাশের ১৬ হাজার কৃষক এর সুবিধাভোগী। তারা নামমাত্র খরচে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা পেয়ে আসছিল। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ যেমন কমত, তেমনি গড়ে ৭০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হতো। কৃষকরা প্রতি বোরো মৌসুমে আশুগঞ্জ অংশে প্রায় ৭০ হাজার টন ধান উৎপাদন করে আসছিল, যা এখন একেবারে বন্ধের পথে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পুকুর আংশিক ভরাট ও পরে ২০২০ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সেচ প্রকল্পের প্রায় ১১ কিলোমিটার ড্রেন ও খাল ধ্বংস হয়ে যায়। এর পরই সেচ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে স্থানীয় কৃষকরা আন্দোলনে নামলে বিএডিসির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব পায়। ২০১৯ সালের আগস্টে বিএডিসি, সওজ ও সিইজিআইএস যৌথ জরিপ শেষে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয় ও বিএডিসির কাছে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। ২০২০ সালের ১৭ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি সচলে যেসব সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, তার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি বিএডিসি সেচ ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়। কিন্তু সেটি সাড়ে তিন বছরেও অনুমোদন পায়নি।
সেচ সুবিধাভোগী কৃষক রশিদ আহম্মদ, সেলিম মিয়া, দুলাল মিয়া ও স্কিম ম্যানেজার মো. বাছির জানান, সেচ বন্ধ থাকায় তিন বছর ধরে তাদের শত শত একর জমি অনাবাদী। অনেকে গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে আবাদ করলেও খরচ পড়ছে কয়েক গুণ। প্রকল্পটি দ্রুত চালু না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে জানান তারা।
আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহীন সিকদার বলেন, ‘এটি ব্যতিক্রমী সেচ প্রকল্প। দেশের কোথাও এতো কম খরচে সেচ সুবিধা নেই। প্রকল্প চালু থাকলে প্রতি মৌসুমে অন্তত ২৫ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারে এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’
বিএডিসির উপপ্রধান প্রকৌশলী ও আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের ফোকাল পারসন মোহাম্মদ ওবায়েদ হোসেন বলেন, ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত প্রকল্পের কিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করছে। শীঘ্রই প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া সম্ভব হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে কাজ শুরু করব।’
চলারপথে রিপোর্ট :
চাঁদার জন্য ব্রাহ্মণবড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলায় দিদার হোসেন নামে ১৪ বছরের এক কিশোরকে এক পা গাছে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করেছে একদল বখাটে যুবক। এসময় তারা কিশোরের পরিবারের নিকট মোবাইল ফোনে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকায় মুক্তি মেলে।
এ ঘটনায় আজ ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভুক্তভোগী দিদার হোসেনের বাবা মো. খায়ের মিয়া বাদী হয়ে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন উপজেলার চরচারতলা গ্রামের জামির (৪১), মাসুদ রানা (৩১), তোফাজ্জল (২৮), সাইফুল ইসলাম শাকিল (৩০), নাসির (৪০) ও আকাশ (৩০)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে তোফাজ্জলের কাছে দিদারের কাজের পাওনা ৮’শ টাকা চাইতে গেলে তোফাজ্জল তা দিতে অস্বীকার করে। এসময় দিদারের সাথে তোফাজ্জলের কথা কাটাকাটি ও একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। দুপুরে দিদার বাড়ি থেকে বের হলে একই এলাকার জামির, তোফাজ্জল, মাসুদ, শাকিল, আকাশ ও নাসির দিদারকে মিডল্যান্ড পাওয়ার প্লান্টের পাশে নিউ এশিয়া প্রজেক্টের খালি জায়গায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে একটি কড়ই গাছের ডালে দিদারকে ডান পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো ভাবে ঝুলিয়ে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে দিদারের মাকে মাসুদের মোবাইল ফোন দিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়। পরে দিদারের মা বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ঋণ করে ৩০ হাজার টাকা মাসুদকে দিলে গাছের ঝুলন্ত অবস্থা থেকে দিদারকে মাটিতে নামানো হয়। ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার এবং দুই বোনকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা।
মামলার বাদী খায়ের মিয়া বলেন, তাদের ভয়ভীতির কারণে আমি প্রথমে কাউকে জানায়নি। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাহিদ আহাম্মেদ বলেন, দিদারের পরবিারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের অবিলম্বে ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
একই বিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি নির্মাণের চার বছর পর আরেকটি নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ভবনটির সব ঠিক থাকলেও পরবর্তীতে নির্মাণ করা ভবনটি মাত্র ১৭ বছরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের পিলারে পলেস্তারা খসে পড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল এবং বের হয়ে এসেছে রড। বিদ্যালয়ের ছাদ থেকেও খসে পড়ছে পলেস্তারা। ছাদের বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও মেলেনি কোনো সাড়া। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
এমন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা পূর্বপাড়ায় ১৯৬৮ সালে খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১০৮ ও মেয়ে শিক্ষার্থী ১৩৯ জন আছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও একজন সংযুক্তি শিক্ষকসহ পাঁচজন আছেন।
২০০১-২০০২ অর্থ বছরে বিদ্যালয় চত্বরের পূর্বদিকে একটি পাকা ভবন এবং ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পশ্চিমদিকে আরেকটি পাকাভবন নির্মাণ করা হয়। দুটি ভবনই পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০০৫-২০০৬ সালে নির্মাণ করা বিদ্যালয়ের পশ্চিমদিকের ভবনের নিচের পিলার, বিমের পলেস্তরা খসে পড়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় রড বের হয়ে গেছে। পশ্চিমদের ভবনে শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা, দপ্তরের ছাদের ওপর একাধিক জায়গায় ফাটল আছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। এর মধ্যেই প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমসহ অন্য শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমদিকের জরাজীর্ণ ভবনে দুটি শ্রেণিকক্ষ, একটি দাপ্তরিক কাজ ও শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ এবং শৌচাগার আছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমদিকের ভবনে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রাক প্রাথমিকের এবং সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। পাশের ভবনে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান চলে। প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম গত বছরের শেষ দিকে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের কথা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখেন। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভবনটির দুরবস্থার কথা জানালেও কোনো কাজ হয়নি। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল হাই, রোমান মিয়া, জোনাকি আক্তার জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। ছাদের রড বের হয়ে গেছে। স্কুলের ছাদ থেকে সিমেন্ট খসে খসে পড়ে। সিঁড়ির দেওয়ালও ভেঙে গেছে। সিঁড়ির দিকের ফাটল দেখলে ভয় লাগে। ভয় নিয়ে আমরা ক্লাস করি।
স্থানীয় হানিফ মিয়া বলেন, চার বছর আগে নির্মাণ করা ভবন ভালো আছে। পরে নির্মাণ করা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম।
খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম বলেন, সর্বশেষ ২০২২ সালের শেষের দিকে বিদ্যালয়ের একটি ভবনের জরাজীর্ণের অবস্থা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আগেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাঠদান চালানোর জন্য বিকল্প কোনো ভবন নেই। তাই বাধ্য হয়েই জরাজীর্ণ ভবনে শ্রেণির কার্যক্রম এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, জেলা ও সব উপজেলার জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের তালিকায় এ বিদ্যালয়ের নামও আছে।