আজ শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস

জাতীয়, 27 November 2024, 310 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
২৭ নভেম্বর বুধবার শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস। শামসুল আলম খান মিলনের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি এলাকায় তৎকালীন স্বৈরশাসকের গুপ্তবাহিনীর গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নির্মমভাবে নিহত হন। তার আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং এক ঐতিহাসিক ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।

banner

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ডা. মিলন। সংগ্রামী মানুষের পথিকৃৎ মিলন ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব এবং স্বৈরাচার ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি আন্দোলনের মধ্যমণি। তার শাহাদতকে কেন্দ্র করে চলমান গণআন্দোলন দুর্বার গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। পরবর্তীতে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আরও অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ ডা. মিলনসহ সব বীর শহীদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

বাণীতে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ডা. মিলন যেদিন শহীদ হন সেদিনই দেশে জরুরি আইন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জরুরি আইন, কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে বারবার রাজপথে নেমে আসে। অবশেষে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু আবার গত দেড় দশকে দেশে নতুন এক স্বৈরাচার জেঁকে বসে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের উৎখাতের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশ নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে।

Leave a Reply

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৬৩৯জন নিহত

অনলাইন ডেস্ক : ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত Read more

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

বিএনপি না এলেই ভোট একতরফা নয় : ওবায়দুল কাদের

জাতীয়, 22 November 2023, 796 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলেই নির্বাচন একতরফা নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

banner

আজ ২২ নভেম্বর বুধবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কমনওয়েলথ প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট মিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিএনপিকে নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আসবে না বলেই নির্বাচন একতরফা হবে এটা ঠিক নয়, অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। একটি দলকে ঘিরে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মতামত প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত কারও নেতিবাচক কোনো মতামত দেখিনি। তবে বিদেশিদের মতামতে আমাদের মাথাব্যথাও নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাইরের কে নিষেধাজ্ঞা দিলো, সেটা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমাদের দেশের নির্বাচন, আমরা একটা স্বাধীন দেশ, আমাদের সংবিধান আছে, আমাদের সংবিধানের আলোকে আমাদের ইচ্ছায় নির্বাচন হবে। অন্য কারো নির্দেশ বা নিষেধাজ্ঞায় হবে না। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, নিষেধাজ্ঞা তাদের দেবে। আমাদের কেনো? আমরা তো শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে।

এসময় মনোনয়ন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াটা গণতান্ত্রিক। সেটা হলো- আমাদের জনমত জরিপ, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সেল আছে, এতে কার অবস্থান কী উঠে আসে। সব মিলিয়ে যার নম্বর বেশি, মনোনয়নে তাকেই বিবেচনা করা হয়। গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দেবো।

কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আলোচনা ইতিবাচক। তাদের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া আছে বলে মনে হয়েছে।

‘সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং নির্বাচন কমিশনকে আইনগত কাঠামো দিয়ে যুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সংসদীয় আইনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় আইনের সংস্কার করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন ঢেলে সজানো, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার নানান পদক্ষেপ আমরা তাদের জানিয়েছি। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, পৃথিবীতে গণতন্ত্রে পারফেক্ট কোন দেশ? তারাও সেটি আছে, বলে বলতে পারেনি।

একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, অনেকগুলো দলতো নির্বাচনে আসছে। একটা দলকে লক্ষ্য করে বা বিএনপি আসবে না বলে একতরফা হবে? আমার মনে হয়, এভাবে বলা সঠিক হবে না।

বুধবার বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। ১২টার পর শেষ হয় এ বৈঠক। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব) ফারুক খান, নির্বাচন পর্যবেক্ষক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন, সদস্য সচিব এবং অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রমুখ।

ঢালাও আসামির নেপথ্যে বাণিজ্য, বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব

জাতীয়, 27 April 2025, 132 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
কিশোরগঞ্জের দুলাল রবিদাসের মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) কারণে। গত বছরের ২৭ জুলাই তাঁর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে সনদ দিয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতাল। অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হয়েছেন—এমন অভিযোগ এনে ২৯ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনসহ ৭৬৮ জনকে।

banner

এ মামলা নিয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে চাঁদাবাজি ও পূর্বশত্রুতার জেরে হয়রানির অভিযোগসহ নানা অনিয়ম সামনে এসেছে। যে অভিযোগে মামলাটি হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দুলাল রবিদাসের স্বজনেরাই। ঘটনার সময়, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা, আসামির তালিকা—সবই ভুয়া।

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আহত হওয়ার ঘটনায়ও অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রকৃত আসামি, সন্দিগ্ধ ব্যক্তির পাশাপাশি হয়রানিমূলকভাবেও অনেককে আসামি করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, অন্যত্র থাকা মানুষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিও রয়েছেন। দুলাল রবিদাসের মতো সাজানো ঘটনার পাশাপাশি কোথাও সত্য ঘটনার মামলায় এ রকম অনেককে আসামি করে ‘মামলা–বাণিজ্য’ হচ্ছে। মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস, ভুলবশত আসামি করা হয়েছে মর্মে হলফনামা দিয়ে ও পুলিশ প্রতিবেদনে নির্দোষ দেখানোর প্রতিশ্রুতিসহ নানাভাবে এই বাণিজ্য করার অভিযোগ যেমন আছে, আবার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েও কাউকে কাউকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি। অন্যান্য ৯০০টি। এসব মামলায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলার মধ্যে অনেকগুলোর তদন্তে অগ্রগতি আছে বলেও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

তবে দুলাল রবিদাসের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৪০টি মামলা পর্যালোচনা করে ঢালাওভাবে আসামি করাসহ নানা অসংগতি দেখা গেছে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের চেয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর করে জানা গেছে, হয়রানিমূলক আসামি করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ স্থানে ভূমিকা রেখেছেন বিএনপির কোনো না কোনো নেতা–কর্মী। কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় অসাধু আইনজীবী, পুলিশ সদস্য ও দালাল চক্র জড়িত। কোথাও প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য, কোথাও চাঁদাবাজির জন্য, কোথাও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন অথবা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত—এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগত বিরোধ ও বিদ্বেষ থেকে মামলায় বিভিন্নজনের নাম দেওয়া হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

মামলা কারা করছেন
যে ৪০টি মামলার খোঁজখবর নিয়েছে প্রথম আলো, সেগুলোর মধ্যে ২৩টি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ও ৯টি চট্টগ্রামে করা মামলা। বাকি ৮টি মামলার মধ্যে ৬টি নারায়ণগঞ্জের, কিশোরগঞ্জ ও ফেনীর ২টি মামলা। এসব মামলার বাদীদের মধ্যে ১৪ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুজন শহীদের বাবা। একটি মামলার বাদী নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। একটি মামলার বাদী যুবলীগ কর্মী, যিনি অন্য মামলার আসামি। বাকি ২২টি মামলার বাদীদের মধ্যে ৯ জন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানাতে চাননি। ১৩ মামলার বাদীর রাজনৈতিক বা পেশাগত পরিচয় জানা যায়নি।

মামলাগুলোর তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বাদী, আসামি ও তাঁদের স্বজন, সংশ্লিষ্ট থানা–পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ২১টি মামলা হওয়ার আগে-পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। অনেক আসামিকে বাদী চেনেনও না।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে পুলিশ সদস্যদের মনোবল দুর্বল ছিল। তখন যাচাই-বাছাই করে মামলা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থানাগুলোর ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশেও মামলা হয়েছে।

ঢালাও আসামি করার বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেল যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত জারি করতে হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদাবাজি, ব্ল‍্যাকমেল করাসহ নানা রকম হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে।

তবে গ্রেপ্তার থেমে থাকেনি। ব্যবসায়িক বা সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে আসামি হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রতিপক্ষ যেমন সক্রিয় থাকে, পাশাপাশি ‘বাণিজ্যের’ উদ্দেশ্যে করা আসামিদের ধরতে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ বা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর হুমকি দিয়েও অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে। শুরুতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা না করে খসড়া এজাহারে দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে।

এদিকে আন্দোলনের সময় ছাত্র–জনতার ওপর সরাসরি হামলায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বড় অংশ এখনো ধরা পড়েনি। শহীদদের স্বজনেরা প্রিয়জন হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি মামলায় এত বেশিসংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে ১০টি মেন্টরিং অ্যান্ড মনিটরিং দলের মাধ্যমে মামলাগুলো তদারক করা হচ্ছে। এর মধ্যে আট বিভাগে ৮টি, রাজধানীতে ১টি ও গাজীপুরের জন্য ১টি দল করা হয়েছে। প্রতিটি দল নিয়ে আমি বসছি এবং মামলাগুলো বিশ্লেষণ করছি। এতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করার ঘটনা কমে এসেছে।’

আইজিপি বলেন, ‘আসামি যতই হোক, অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
এক মামলায় যত অসংগতি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর বাসিন্দা বাবুল মিয়া (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (৪০)। বাবুল কৃষিকাজ ও পশুপালন করেন। তাঁর বোনের স্বামী সাইফুল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এ দুজনকে দুলাল হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে তাঁরা বাড়িছাড়া।

বাবুল মিয়ার বাবা বকুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর ছেলে ও জামাতাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাঁরা কোনো দিন রাজনীতি করেননি। প্রথম মামলার পর তাঁদের বলা হয়েছে, ৫০-৬০ হাজার টাকা দিলে আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। টাকা দিতে না পারায় আরও তিনটি মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।

দুলাল হত্যা মামলাটি করেছেন রাফিউল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা পরিচয় দিলেও কী পদে ছিলেন, তা বলতে পারেননি। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ১৮ জুলাই দুপুরে কিশোরগঞ্জের গৌরাঙ্গবাজার মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন দুলাল। পরে ২২-২৩ জন তাঁকে রড দিয়ে বেদম পিটুনি দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ রকম একটা মামলার কথা জানার পর প্রয়াত দুলালের ছেলে বিকাশ দাশ কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানান যে তাঁর বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করে যাঁরা নিরপরাধ মানুষদের হয়রানি করছেন, তাঁদের শাস্তির দাবি করেন বিকাশ।

হত্যাকাণ্ডের যে স্থানের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ঘটনার দিন (১৮ জুলাই) দুলাল ছিলেন না বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই কাঞ্চন রবিদাস। মৃত্যুনিবন্ধন সনদে দুলালের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘স্ট্রোক’ এবং মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ জুলাই।

আসামিদের অভিযোগ যাচাই করতে এক ব্যক্তিকে বাবুল ও সাইফুলের স্বজন পরিচয় দিয়ে বাদী রাফিউলের সঙ্গে কথা বলিয়েছে প্রথম আলো। ওই ব্যক্তির কাছে রাফিউল মামলা থেকে নাম বাদ দিতে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ টাকার ভাগ স্থানীয় এক আইনজীবী ও পুলিশকে দেবেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ মামলার আরও চার আসামি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নাম বাদ দিতে তাঁদের কাছ থেকেও ৫০-৬০ হাজার টাকা করে দাবি করা হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাফিউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রবিদাসকে হত্যা করতে দেখেছি। অনেকে মিলে মামলাটি করেছি। এ জন্য ভুলে অনেকের নাম ঢুকে গেছে।’

এ মামলার ভুক্তভোগীরা গত ৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে মানববন্ধন করেন। সেখানে তাঁরা অভিযাগ করেন, স্থানীয় ‘আওয়ামী আইনজীবী’ শওকত কবীর খোকন এ মামলা-বাণিজ্যে জড়িত। এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও মামলায় ফাঁসিয়েছেন তিনি।

শওকত কবীর প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি ‘বিএনপির সৈনিক’। সুনাম নষ্ট করতে প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আসামি চেনেন না বাদী
যে ৪০টি মামলা নিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধান করেছে, সেগুলোর এজাহারে উল্লেখ করা ১১ বাদীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন অথবা ভুয়া ঠিকানা দিয়েছেন। ফলে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা বাদীকে খুঁজে পাচ্ছে না। ১৪ জন বাদী জানিয়েছেন, অন্য কেউ তাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, মামলার কাগজে তাঁদের কাছ থেকে কেবল সই নেওয়া হয়েছে। আসামির নাম দিয়েছেন অন্যরা।
লক্ষ্য অর্থ আদায়

অভ্যুত্থান ঘিরে হওয়া প্রথম দিকের মামলাগুলোর আসামিদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের পাশাপাশি অনেক মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আরও অনেককে আসামি করা হয়।

গত বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাজধানীর একটি থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। সেখানে ১০ জনের বেশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। তাঁদের প্রায় সবাই ঘটনার সময় মামলায় উল্লেখিত স্থানে ছিলেন না বলে পুলিশের নথিতেই উল্লেখ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে মামলার আসামি পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাদী ১০ জনের নাম এজাহার থেকে বাদ দিতে ১ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁদেরও আসামি করা হয়।

পরে ওই বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের তিনি চেনেন না, তা সঠিক। তবে কোনো টাকা চাননি বলে দাবি করেন তিনি।

অবৈধ সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের আসামি করার দুটি হত্যা মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায়। এসব মামলার সঙ্গে যুবদল ও বিএনপির নেতাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মামলা দুটির এজাহারের বর্ণনা প্রায় একই রকম। সেখানে বৃহৎ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের তিন মালিককে আসামি করা হয়েছে।

এজাহার থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস কিংবা আসামির তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদনের জন্য টাকা নেওয়ার পাঁচটি ঘটনার কথা জানা গেছে। রাজধানীর এক ব্যবসায়ীর নাম বাদ দিতে বাদী আবেদন করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, আমি তার ধারেকাছেও ছিলাম না। পরে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ টাকা দিলে তিনি এজাহার থেকে নাম বাদ দিতে আবেদন করিয়েছেন।’

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর একটি অঞ্চলে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকার বাইরে কর্মরত ওই কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার্তা পাঠান রাজধানীর ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির একজন নেতা। তাতে বলা হয়, মামলা থেকে ‘বাঁচতে হলে’ পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা ১ জানুয়ারি এই প্রতিবেদককে ওই বার্তা দেখান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি বিএনপির একজন নেতা। দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম বাদ দিতে সম্মত হন।

‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে মামলা
অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের পরিবর্তে ‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে অন্য ব্যক্তিরা মামলার বাদী হয়েছেন। এ রকম একটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে এবং আরও একটির আবেদন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলামকে মিরপুর থানার তিনটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফখরুলকে এজাহারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় তাঁর দুই ভাইকেও আসামি করা হয়। দুটি মামলায় ঘটনা শুক্রবার দেখানো হয়েছে।

এ মামলার দুই আসামি অভিযোগ করেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে (শুক্রবার) মামলার সময় হিসেবে দেখানোর পেছনের মূল উদ্দেশ্য তাঁদের মতো চাকরিজীবী ব্যক্তিদের হরয়ানি করা।

মামলা তিনটি (মো. সেলিম আলী সেক (৩৬), পারভেজ হোসেন (২১) ও মো. মনিরুল ইসলাম (৪১) হত্যা) স্বজনদের কেউ করেননি। ‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে মামলাগুলো করেছেন তিন ব্যক্তি। তিন মামলার এজাহারের বর্ণনা অনেকটা একই রকম।

এজাহারে থাকা বাদীদের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে পারভেজ হত্যার বাদী নুরু ইসলামকে (৪০) ফোনে পাওয়া যায়। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

৫ আগস্ট ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কিশোর মাহমুদুল হাসানের বাবা রিকশাচালক মিজানুর রহমান মামলা করতে পারেননি। ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে জানতে পারেন, এ ঘটনায় আগেই যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় মাহমুদুলের নিহত হওয়ার পৃথক স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দুই বাদীকে চেনেন না মিজানুর রহমান। তিনি আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেকে আন্দোলনে গুলি করে হত্যা করা হয়, কিন্তু আমি মামলা করতে পারলাম না!’
প্রতিষ্ঠানের দখল নিতে আসামি

রাজধানীর মিরপুরে রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে আমিনা বেগমের। তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার ভাষানটেক থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দেওয়া রবিউল ইসলাম (সুমন)। রেস্তোরাঁ পরিচালনা নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। একটি মুঠোফোনে কথোপকথনে রবিউলকে বলতে শোনা যায়, ‘মহিলার (আমিনা) নামে দিয়ে দিছি মামলা। ও এখন বুঝুক। বেশি তালবেতাল করলে ওর স্বামীর নামেও দিমু, ওর চাকরিও খামু।’

আমিনাসহ ৩৪৬ জনের নামে ভাষানটেক থানায় মামলাটি করেছেন মো. মোস্তাকিম নামের এক ব্যক্তি। মামলার নথিতে মোস্তাকিম নিজেকে আন্দোলনে আহত এবং গুলিতে ডান পা হারানো ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

মামলায় ৩১ নম্বর আমিনার পরিচয় দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তবে কমিটির তালিকায় তাঁর নাম নেই। আমিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গত ১৯ জুলাই কাফরুলে দেশি অস্ত্র বা লোহার রড অথবা লাঠিসোঁটা দিয়ে বাদীর মাথায় আঘাত করেছেন।

স্বামীর সরকারি চাকরির সুবাধে আমিনা থাকেন কুমিল্লায়। সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা গেছে, মামলায় যে দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে, আমিনা সে সময় কুমিল্লায় ছিলেন। ভুক্তভোগী এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেস্তোরাঁ দখলে নিয়েছেন ওই যুবদল নেতা। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।

এ ঘটনায় আমিনার স্বামী মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন আমিনা।

যুবদল নেতা রবিউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি নয়, আমিনার নামে তিনটি মামলা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করেন, রাজনৈতিক মামলা খাবেন, এটাই স্বাভাবিক। নির্দোষ হলে আদালতে প্রমাণ করুক।’

মামলার বাদী মোস্তাকিম যুবদল করেন বলে জানান রবিউল। তিনি মুঠোফোনে কথোপকথনের বিষয়ে বলেন, ‘তিনি (আমিনা) যখন ক্ষমতা দেখিয়েছেন, তখন বলেছি আমার দল ক্ষমতায় আসলে আপনার চাকরি থাকবে না।’
নেপথ্যে পারিবারিক বিরোধ

ঢাকায় ব্যবসা করেন নাটোরের সিংড়ার এনায়েত করিম। ছাত্রজীবনে জিয়া ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় রাজধানীর সূত্রাপুর ও বনানী থানার দুটি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। পরিচয়ে লেখা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা। গ্রামের বাড়িতে গেলে গত ২৮ ডিসেম্বর সিংড়া থানা–লিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর নাটোরে সংবাদ সম্মেলন করেন এনায়েতের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। সেখানে দাবি করা হয়, এনায়েতের ভাতিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ এ মামলা করিয়েছেন।

পরে এনায়েতের স্ত্রী উম্মে সালমা প্রথম আলোকে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে ফয়সাল মামলায় এনায়েতের নাম দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের কাছে তা তিনি স্বীকারও করেছেন।

অবশ্য ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্ব আছে সেটা ঠিক, তবে আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার চাচা এত দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেছেন। সেখান থেকে অন্য কেউ হয়তো মামলা করে থাকতে পারেন।’
পেশাজীবী শ্রেণি ধরে মামলা

মামলার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একেক মামলায় একেক শ্রেণির ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। কোথাও সাংস্কৃতিক কর্মী, কোথাও ব্যবসায়ী, কোথাও সাংবাদিক, কোথাও আবার পুলিশ, কোথাও আমলা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট শ্রেণি–পেশার মানুষের নাম কেউ দিচ্ছে, সেগুলো ধরে মামলা হচ্ছে।

যেমন শাহবাগ থানার একটি মামলায় পুলিশের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ঘটনার যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা চাকরির সুবাদে খুলনায় ছিলেন। তাঁকেও আসামি করা হয়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে করা একটি মামলায় ৫৩ জন সচিবকে আসামি করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোহাম্মদ জামান হোসেন খানের করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। মামলার আসামি একজন সাবেক সচিব প্রথম আলোকে বলেন, মামলা নিয়ে বিভিন্নভাবে তাঁর কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হয়েছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় যতজনকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের নাম উল্লেখ করে পরে আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি মামলার নেপথ্যে আছেন বিএনপির এক নেতা।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী। মাহাদী হাসান হত্যার ঘটনায় করা এই মামলার বাদী নিজেকে নিহত ব্যক্তির চাচা দাবি করেছেন। অপর দিকে একই ঘটনায় মাহাদীর বাবা বাদী হয়ে কদমতলী থানায়ও একটি মামলা করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলে যাত্রাবাড়ী নয়, কদমতলী থানা এলাকায় শহীদ হয়েছেন।

শহীদ পরিবারের নামেও মামলা

অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইকরামুল হক সাজিদ। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারের তিন সদস্যকে। তাঁরা যুবদল-ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান পদধারী নেতা। তাঁদের বাড়ি কক্সবাজারে।

৭ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় মামলাটি করেন ইকরামুলের বাবা মো. জিয়াউল হক। পরে ৯ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী ওই তিনজন ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে দলটির নেতা-কর্মীদের হামলায় কক্সবাজারের মহেশখালীর এই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হন বেশ কয়েকজন। মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে অনেকে বাড়িছাড়া ছিলেন। আন্দোলনের পুরো সময় তাঁরা কক্সবাজারে থেকেও ঢাকার মামলায় আসামি হয়েছেন।

মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এবং তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই (৫৪ নম্বর আসামি) মিজানুর রহমান মাতাব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বাদী কখনো আমাদের দেখেনওনি, চেনেনও না, নামও শোনেননি। আমাদের নামগুলো লিখে তাঁর থেকে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। মামলার যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তখন আমরা মহেশখালী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম।’ মিজানুরের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিরোধ থেকে তাঁদের ঢাকার এই মামলায় আসামি করিয়েছেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

মামলার বাদী জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো আর ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক এবং যাঁরা এই ঘটনা দেখেছেন, তাঁরা যে নামগুলো দিয়েছেন, সেগুলোই মামলায় আসামি হিসেবে এসেছে।’
নিরপরাধ ব্যক্তিদের কী হবে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে। হয়রানিমূলকভাবে আসামি হওয়া অনেক ব্যক্তিও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অথচ ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলি করা ব্যক্তি এবং গুলির নির্দেশদাতাদের বড় অংশ ধরা পড়েননি। এ অবস্থায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ বিশেষজ্ঞরা। যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই না করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, সরকারের এমন কথার বাস্তবায়ন দেখতে চান তাঁরা।

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা সত্য, কিন্তু আসামি ভুলভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে—এমন মামলা হয়েছে। এ জন্য মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। তবে আদালতের নির্দেশেও থানাকে অনেক মামলা নিতে হয়েছে।

নুরুল হুদা বলেন, যাচাই–বাছাই করে আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা যাবে না। পাশাপাশি ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

বেকারি মুদি দোকানে অভিযান, ৫১ হাজার টাকা জরিমানা

জাতীয়, 4 September 2023, 902 Views,

চলারপথে রিপোট
পরশুরাম উত্তর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে দুটি বেকারিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। একই সময় একটি মুদি দোকানে আরো ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আজ ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার এসব জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হাবিব শাপলা।

banner

অপরদিকে একই সময়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তিনটি মোটরসাইকেল মালিককে ও একটি সবজি দোকানে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার প্রস্তুত, খাদ্যে ক্ষতিকর দ্রব্যের মিশ্রণ, পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিএসটিআইএর অনুমোদন না থাকায় উত্তর বাজারের কাউতলী সড়কের আলিফ বেকারীর মালিক খায়রুল ইসলামের ২০ হাজার, শাহজালাল বেকারীর মালিক আমির হোসেনের ২০ হাজার টাকা এবং বাবুল মিয়ার মুদি দোকানে ৫ হাজার জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপল বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সর্তকতামূলক জরিমানা করা হয়েছে। তারা সংশোধিত না হলে পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মহাসড়কে পরিবহন এসকর্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছে র‌্যাব-৯

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 20 November 2023, 1529 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
তেলবাহী লরি, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন এসকর্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছে র‌্যাব-৯।

banner

“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই শ্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অপরাধ দমনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে জনসাধারণের পাশে থেকে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা জোরদার করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র‌্যাবের এই কার্যক্রম দেশের সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

দেশে বিভিন্ন সময়ে চলমান হরতাল-অবরোধে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে এবং দেশের সম্পদ রক্ষার্থে র‌্যাব-৯ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে চলমান হরতাল-অবরোধে জনসাধারণের চলাচলে কেউ যেন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে এবং নির্বিঘ্নে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পণ্যবাহী, যাত্রীবাহী গাড়ি ও তেলবাহী লরি কনভয়কে নিরাপদে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে র‌্যাব এর দায়িত্বপূর্ণ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট,হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ) জেলাগুলোতে নিয়মিতভাবে এসকর্ট প্রদানের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসফিল্ড থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুরগামী বিভিন্ন তেলবাহী লরি কনভয়কে নিয়মিত র‌্যাবের এসকর্ট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সিলেট থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এসকর্টকরে নিরাপত্তা দিচ্ছে র‌্যাব-৯। নাশকতা ও সহিংসতার মাধ্যমে কেউ যেন জনমনে ভীতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে র‌্যাব-৯ এর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে র‌্যাব-৯ এর বিশেষ টহল এবং চেকপোস্ট কার্যক্রমের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোষাকে সতর্কতার সাথে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।সব ধরনের পরিবহণ ও সাধারণ জনগণ যেন নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য র‌্যাব-৯ এর উক্ত নিরাপত্তা জোরদারকরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এছাড়াও যে কোন সহিংসতা বা নাশকতার বিরুদ্ধে র‌্যাব কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর।

ইজিবাইক চালক হত্যায় গ্রেফতার ৬

জাতীয়, 24 September 2023, 957 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বগুড়ার নন্দীগ্রামের ইজিবাইক চালক মুকুল হোসেন হত্যার ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা ও নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে শনিবার রাতে শেরপুর ও নাটোর থেকে তাদের গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি উদ্ধার করে। নিহত মুকুল হোসেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খাদাস উলাল পাড়ার মৃত দুদু মন্ডলের ছেলে।

banner

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বগুড়ার শেরপুর উপজেলার টুনিপাড়া এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে এমদাদুল হক মিলন, নাটোরের সিংড়া উপজেলার সাতারদিঘী এলাকার মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন প্রামানিক, গুরুদাসপুর উপজেলার পশ্চিম ধানুয়া মধ্যপাড়ার তোসির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল সবুজ, একই এলাকার মৃত রমজান আলীর ছেলে সুবহান, রাজশাহীর চারঘাটের উত্তর রায়পুর এলাকার শাহাদতের ছেলে ঝন্টু ওরফে বেলাল ও একই এলাকার ইসারুলের ছেলে নাজিরুল ইসলাম।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ স্নিগ্ধ আক্তার জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের একটি জমি থেকে ইজিবাইক চালক মুকুল হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে আত্মীয়-স্বজন তার লাশ দেখে শনাক্ত করে। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুকুল হোসেন ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হন। পরে এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোছাঃ মরিয়ম বাদী হয়ে নন্দীগ্রাম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তারপর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদেন্তর এক পর্যায়ে গত শনিবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও ছিনতাই করা ইজিবাইকটি উদ্ধার করে।