অনলাইন ডেস্ক :
৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলা শহর। ১৯৭১ সালের একইদিনে মুক্ত হয়েছিল নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর, বানিয়াচং ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাও। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সফিকুর রহমান।
হবিগঞ্জ : ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে হবিগঞ্জ শহরসহ তার আশপাশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ৩ নম্বর সেক্টরে দায়িত্বরত তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকার দুর্গম অঞ্চলগুলোতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের কাছাকাছি এসে পৌঁছায় এবং শহরে প্রবেশের তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ করেন। ৫ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে এবং ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকিস্তানি সেনাসহ রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে।
চুনারুঘাট: ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে চুনারুঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তোরাব আলী খন্দকার, শামছুল হুদা, আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে কয়েক শ মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা শহরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করে। ৬ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আস্তানা গুঁটিয়ে নেয় এবং পাকসেনারা শ্রীমঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর সকালে তৎকালীন সিও অফিসের সামনে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নবীগঞ্জ : একাত্তরের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ উপজেলাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছিল। ৪ ডিসেম্বর ভোরে অর্ধশতাধিক সহযোদ্ধা রাজনগরসংলগ্ন নবীগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ সড়কের পাশে অবস্থান নেয়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ধ্রুব নামে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ফটিক মিয়া, আব্দুল আহাদ ও ছাবু মিয়া নামে তিন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর রসদ ও গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা ৬ ডিসেম্বর ভোরে পালিয়ে যায়। ওইদিন দুপুরে জনতা থানা প্রাঙ্গণে জড়িত হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদী পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ: ১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকে। একই সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থেকেও ছটকে পড়ে কুখ্যাত হায়েনার দল। দীর্ঘ নয় মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। গগণ বিদারী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।
বাহুবল: ৫ ডিসেম্বর বাহুবলের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল হাসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে ২৪জন ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেন।
ওই দুইজনের নেতৃত্বে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবলের সীমান্তবর্তী কটিয়াদী বাজারে অভিযান চালানো হয়। পরে অভিযান হয় বাহুবলের ধনিয়াখালীতে। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর তারা বাহুবল থানায় আক্রমণ করেন। এতে ৪ রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। সবাই মিলে থানায় বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্ধার হয় অস্ত্র ও গোলারারুদ। পরে এসব গোলা ও অস্ত্র ভারতের অমপিনগর ক্যাম্পে জামা দেওয়া হয়।
একইভাবে ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় মাধবপুর ও বানিয়াচং উপজেলা শহর। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার অসংখ্য মানুষ হানাদারদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন। অনেকই শহীদ হয়েছেন। শহীদদের স্মৃতিরক্ষায় জন্য হবিগঞ্জ শহরে মুক্তিযোদ্ধা অফিসের কাছে, মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে, বাহুবলের ফয়জাবাদ, লাখাইর কৃষ্ণপুর, চুনারুঘাটের নলুয়া চা-বাগান, বানিয়াচঙ্গের বদলপুর, মাকালকান্দির বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে ‘রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস’ উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নাটোরের নলডাঙ্গার মাধনগরের মো. আবদুল্লাহ আল কাফি (১৮)। তিনি পশ্চিম মাধনগর জোয়ানপুর গ্রামের কৃষক বাবা মো. মাহবুব আলম হোসেন ও মা মোছা. পল্লব কান্তি সরদারের একমাত্র ছেলে।
শিক্ষার্থী কাফি পাবনা পলিটেকনিক ইনিস্টিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। ট্রেনে নাশকতা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি মূল গুরুত্ব দিয়ে এই ডিভাইসটি উদ্ভাবন করেন তিনি।
ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ শুরু করে, কিছুদিনের মধ্যেই আসে উদ্ভাবনের সফলতা। ট্রেন দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধে তৈরি করে ফেলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ‘রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস’।
কাফির বাবা মো. মাহবুব আলম, মা পল্লব কান্তি সরদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান রকিসহ অনেকে জানান, রেলওয়ে সেফটি ডিভাইসটি দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করছে। ডিভাইসটি আরো গবেষণা করে রেলওয়ের বিভাগের মাধ্যমে স্থাপন করা হলে ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তরুণ উদ্ভাবক আবদুল্লাহ আল কাফি জানান, রেলে কোথাও ভেঙে গেলে বা কাটা হলে, সিগনাল বেজে উঠবে ও অটোমেটিক্যালি-রেলওয়ে সেফটি ডিভাইসের মাধ্যমে স্টেশন মাষ্টারের কাছে ফোন চলে যাবে। যার ফলে আর ট্রেন দুর্ঘটনার সুযোগ থাকবে না।
রেলে দুর্ঘটনা রোধে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে ‘রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস’টি উদ্ভাবন করেন তিনি। তবে এই ডিভাইসটি আরো শক্তিশালী করার জন্য গবেষণা ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কাফি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
মাধনগর রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাষ্টার মো. মমিন উদ্দিন প্রামানিক বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনার মূল হোতাসহ আন্তঃজেলা ট্রান্সফরমার চোর চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত ট্রান্সফরমারের অংশবিশেষ, তামার কয়েল ও সরকারী বৈদ্যুতিক তার, চোরাইকাজে ব্যবহৃত সিএনজি ও সারঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
আজ ১৭ জুলাই সোমবার ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস মো. শাহাদাত হোসেন জানান, দাগনভূঞার সেকান্দরপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাগনভূঞা জোনাল অফিসের ডেপুটি ম্যানাজার জাহাঙ্গির আলম গত ১৪ জুলাই শুক্রবার দাগনভূঞা থানায় মামলা দায়ের করেন। সে প্রেক্ষিতে পুলিশ দাগনভূঞা থানা ও নোয়াখালী থানার বিভিন্ন এলাকায় সাড়াশি অভিযান করে মো. কামাল(৩১), মো. খোকন (৩৫), মো. সবুজ (২৭), চোর চক্রের ম‚ল হোতা জসিম উদ্দিন (৪০), সিএনজি চালক ইলিয়াছ(২৬), ও মো. বোরহান উদ্দিন(২৮)সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যে মতে, নোয়াখালী সুধারাম থানার হকার্স মার্কেটের পিছনে আসামি মো. বোরহান উদ্দীন এর ভাঙ্গারি দোকানে অভিযান করে চোরাইকৃত ট্রান্সফরমারের অংশবিশেষ, ট্রান্সফরামারের কয়েল ও সরকারি বৈদ্যুতিক তারসহ ট্রান্সফরমার কয়েল বিক্রির ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
চলারপথে ডেস্ক :
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ ও ‘মুজিববর্ষ বিশেষ অধিবেশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে কমিটির সদস্য ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন। কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর ক্ষমতা না দেওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধু জাতিকে উপহার দেন সংবিধান। এরপর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান- এটা বিশ্বে বিরল।
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন- কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় এবং জাতীয় সংসদের ৫০বছর পূর্তি ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনের কার্যাদি নিষ্পন্নের জন্য সময় বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় অধিবেশন শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে মর্মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ৭ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় এবং ৮ ও ৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হবে।
এ অধিবেশনে জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আগামীকাল ৭ এপ্রিল বিকেল সোয়া ৩টায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন।
এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে, বিধি-৭১ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া গেছে ৩৫টি। অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৮টি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। গত অধিবেশনে অনিষ্পন্ন ৯টি বিলসহ ১৭টি বিলের মধ্যে কমিটিতে পরীক্ষাধীন ৭টি, পাসের অপেক্ষায় ১টি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় ৯টি। বেসরকারি সদস্যদের বিলের কোন নোটিশ পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম সঞ্চালনা করেন। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাসস।
অনলাইন ডেস্ক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশের মসৃণ উত্তরণ এবং পরবর্তীতে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ করা, ও এর ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের আস্থা আছে বিশ্বব্যাংকের ওপর। আশা করছি বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশিদার হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও বলেছেন, “২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি মর্যাদা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ লাভের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংককে আমি আমাদের মানব পুঁজি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিকে একটি মসৃণ উত্তরণের জন্য সহায়তা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ আইডিএ উইন্ডোটি সংরক্ষণ ও অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।”
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত “বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন” শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সোমবার ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সামনে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ রেখেছেন যা বিশ্বব্যাংক ঋণদাতাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত।
এ সময় পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (আড়াই বিলিয়ন) ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি ছবি তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অবকাঠামো ও লজিস্টিকসে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করব বিশ্বব্যাংক অতীতের মতো আগামী বছরগুলোতে আমাদের ভৌত ও সামাজিক উভয় খাতে মেগা-প্রকল্পগুলোতে সম্পৃক্ত হবে।”
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জাতীয় আকাঙ্খার সঙ্গে জাতিসংঘের এসডিজির সমন্বয় করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের বর্ধিত, ছাড় দেয়া এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জরুরি প্রত্যাশা রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, মহামারী, সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে চলমান বৈশ্বিক একাধিক সংকট বেশিরভাগ উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে গুরুতর চাপের মধ্যে ফেলেছে।
তিনি বলেন, মহামারী ও সশস্ত্র সংঘাত থেকে উদ্ভূত একাধিক সংকট সত্ত্বেও, কিছু উন্নয়ন অংশীদার তাদের ঋণের খরচ এবং সুদের হার বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদেরকে কার্যকর বিকল্প খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আমাদের অর্থনীতিগুলো উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করে যে, জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকা-ে বিশ্বব্যাংকের বর্ধিত সম্পৃক্ততা প্যারিস চুক্তির অধীনে অর্থায়নের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের মধ্যে অর্থায়নের সমান বণ্টনের ওপর জোর দেব।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিতে বিশ্বব্যাপী রোল-মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, দুর্যোগ-সহিষ্ণু অবকাঠামো এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।
তিনি বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজনের একটি জীবন্ত গবেষণাগার হিসেবে বর্ণনা করেন যেখানে বেশ কিছু প্রকৃতি-ভিত্তিক ও কৌশলগত সমাধান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর অধীনে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের আমন্ত্রণ জানান।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে তারা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি।
তিনি বলেন, “বিস্তৃত অঞ্চলের জন্য ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তার প্রভাবের পাশাপাশি পরিস্থিতি আমাদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বব্যাংককে আমাদের মানবিক প্রচেষ্টায় যোগদানের জন্য এবং রোহিঙ্গা ও তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ৫৯০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত চার দশকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যাপক নৃশংসতার পর থেকে তাদের সংখ্যা ১.২ মিলিয়নে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়ে তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তাঁকে তাঁর জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে তিনি কখনই মাথা নত করেননি।
তিনি বলেন, ‘আমি কখনো মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাঙালি একটি বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, কারণ তার আশেপাশে থাকা লোকদের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার কারণে এবং সে সাথে রয়েছে দেশের জনগণের অটুট সমর্থন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং এর প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌসিক বসু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং বৈশ্বিক ঋণদাতা ভিপি মার্টিন সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সবার সাথে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত।
তিনি বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট মালপাসকে তার আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বিশ্বব্যাংকে অনেক বাংলাদেশীকে নিয়োজিত দেখে আমি আনন্দিত।” তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নির্বিঘেœ এগিয়ে যেতে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক একটি নেতৃস্থানীয় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করে আসছে। বিশ্বব্যাংক চলমান আইডিএ কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশের জন্য বর্তমান বৈদেশিক সহায়তার প্রায় ৩২ শতাংশ অবদান রাখে।
তিনি আরো বলেন, “এছাড়া, আইএফসি এবং এমআইজিএ আমাদের বেসরকারী খাতকেও সহায়তা করছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে (বিশ্বব্যাংক) আমার উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রতি আমাদের আস্থা বজায় রেখেছি। আগামী দুই দশকে আমাদের সাফল্য নির্ভর করবে আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উপায়ে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করার প্রচেষ্টার উপর”।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের সংবিধানে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তার নৃশংস হত্যাকা-ের পর, জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দীর্ঘ ২১ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহন তার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করে।
তিনি বলেন, “টানা তিন মেয়াদে জনগণ ও দেশের সেবা করার সুযোগ লাভের জন্য আমি আমাদের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। গত দেড় দশকে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলির জন্য বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে এবং ২০২১ সালে, জাতিসংঘ এটিকে দ্বিতীয়বারের মতো এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভের যোগ্য ঘোষণা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং বিনামূল্যের গণ টিকাদানের মাধ্যমে সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপ্তি এবং গত বছর এর উদ্বোধন সম্ভবত আমাদের সহনশীলতা ও সাফল্য অর্জনের সেরা উদাহরণ।”
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি গত এক দশকে গড়ে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারীর ঠিক আগে এটি ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে ২০২২ সালে মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে যা ২০০৬ সালে ছিল ৪১.৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, তার সরকার সামাজিক সুরক্ষার জন্য জাতীয় বাজেট বরাদ্দ ৪০ গুণ বাড়িয়েছে, যা জিডিপির ২.৫ শতাংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এক বছর আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিনা খরচে সকল গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, আমরা প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছি এবং আয়সংস্থানমূলক দক্ষতা ও সহায়তা দিয়েছি।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার সরকার প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা এবং বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার আমাদের আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকার সম্প্রতি আমাদের জাতীয় জিডিপিতে নারীদের গৃহস্থালির কাজ প্রতিফলিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক সংযোগ, বিমান ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গয়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, “আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক দশ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের শতাধিক সেরা সবুজ কারখানার অর্ধেকেরও বেশি এখন বাংলাদেশে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার জন্য তার পরবর্তী রূপকল্প চালু করেছে যার লক্ষ্য ডিজিটালভাবে নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করা; চেহারাহীন সরকারি সেবা প্রদান; একটি জ্ঞান-ভিত্তিক নগদ অর্থ লেনদেনহীন অর্থনীতি; এবং একটি অধিকার-ভিত্তিক ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারকের সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও অশালীন আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে সংগঠনটির সভাপতি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমানের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কতিপয় আইনজীবী ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে বেআইনিভাবে বিচারিক কাজে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা বিচারকের সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও অশালীন আচরণ করেন; যা অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক ও দুঃখজনক। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত ওই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নিন্দনীয় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়।
শিষ্টাচারবহির্ভূত ওই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নিন্দনীয় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে এজলাস চলাকালে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী বিচারককে গালিগালাজ করছেন। তবে তানভীর ভূঁইয়ার দাবি, তিনি বিচারককে গালি দেননি। ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়েছে।
এদিকে, আইনজীবী ও আদালত কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত। বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধর, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আদালতের কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন।