চলারপথে ডেস্ক :
বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং ব্যবস্থায় তিনটি সেবা অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এর আওতায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাইপূর্বক ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে ১ মার্চ বুধবার।
তিনটি সেবার মধ্যে রয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটিং, টিকিট চেকিং ব্যবস্থায় পস (পয়েন্ট অব সেলস) মেশিনের প্রবর্তন এবং অনলাইনের মাধ্যমে কেনা টিকিট অনলাইনেই ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা।
রেল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এতে কমবে টিকিট কালোবাজারি এবং যাত্রীদের ভোগান্তি। রেলওয়ে সূত্র বলছে, যাত্রীসেবা বাড়াতে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে ও বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে টিকিটিং ব্যবস্থায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে।
১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং ব্যবস্থায় সাতটি শর্ত জুড়ে যাচ্ছে।
১। ১২-১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা পিতা বা মাতার নাম ও এনআইডি দ্বারা নিবন্ধনকৃত রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে এবং জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত অ্যাকাউন্ট দিয়ে পৃথক/এককভাবে টিকিট কিনতে পারবে। এরূপ ক্ষেত্রে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলকভাবে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে।
২। বিদেশি নাগরিকেরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে এবং পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
৩। সফলভাবে এনআইডি/ পাসপোর্ট/ জন্মনিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন ব্যতিত কোনো যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন না।
৪। ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা পাসপোর্ট/ ছবি সম্বলিত আইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে।
৫। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬। যাত্রীরা ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন/ পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিস্টেমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
৭। দেশের বিভাগীয় শহরের রেলস্টেশন ও আন্তঃনগর ট্রেনের প্রারম্ভিক স্টেশনসমূহে সর্বসাধারণের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার জন্য একটি করে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রেলভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
চলারপথে রিপোর্ট :
চাঁদপুর শহরের পালবাজার এলাকায় জেনিথ সুইটস এন্ড বেকারি নামে প্রতিষ্ঠানে দধির মধ্যে চুল ও পোকা পাওয়া এবং দুই ডিম বিক্রেতার দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ ১২ আগস্ট শনিবার বিকেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন বাজার তদারকির অভিযান পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, ডিমের দাম ক্রয়সীমায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় বিশেষ বাজার তদারকির অংশ হিসেবে শহরের পুরানবাজার ও পালবাজার এলাকায় ডিমের আড়ৎদার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে মূল্য তালিকা, ক্রয় ভাউচার ও বিক্রয় ভাউচার তদারকি করা হয়। তন্মধ্যে মূল্য তালিকা না থাকায় মেসার্স কাউছার ট্রেডার্সকে ৩ হাজার টাকা, ভাই ভাই ট্রেডার্সকে ২ হাজার টাকা এবং দধিতে পোকা- চুল পাওয়ায় জেনিথ সুইটস বেকারি মালিককে ১০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযানে সহযোগিতা করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস দল। জনস্বার্থে এমন অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায়/ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা সত্যিই বাঙালির জীবনে সত্যি হয়ে এসেছে। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় : ‘আমার ছিল না মুক্ত মাতৃভূমি/ শৃঙ্খলহীন স্বাধীন দেশ;/ শতবর্ষের শত সাধনায়/ পেয়েছি তোমায় বাংলাদেশ।’
বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন আজ ১৬ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনটিতে বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান। সেই দিনটির ন্যায় আজ সেই শ্লোগান তুলবে পুরো জাতি। সর্বত্র উড়বে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।
বিজয়ের এইদিনে শপথ নেয়া হবে দেশ থেকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার। শপথ নেয়া হবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসম্মানকারীদের রুখে দেয়ার। শপথ নেয়া হবে দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথে বাধাদানকারীদের সমূলে উচ্ছেদ করার।
নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর উনিশ শ’ একাত্তরের এই দিনে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই বিজয়ের আনন্দে আজ বাংলার মানুষ ভাসবে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা হবে। হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা হবে ফারুকী পার্ক স্মৃতিসৌধ। সেখানে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে সবাই। দিনভর বাংলার পথে-প্রান্তরে বাজবে বিজয়ের গান।
জাতি আজ স্মরণ করবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে নতুন প্রজন্ম। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাবে সর্বস্তরের মানুষ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে; যে দেশ এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং আর সাহস জুগিয়েছিল।
আজ সরকারি ছুটি। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়বে। ঘরের সামনে, ভবনের ছাদে কিংবা গাড়িতেও উড়বে লাল-সবুজের এই পতাকা।
চলারপথে রিপোর্ট :
সময় থমকে গিয়েছিল এ বাংলার বুকে। তার পাতায় পড়েছিল কালিমার ছাপ। আর পৃথিবী নীরব চোখে দেখেছিল এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
মেশিনগানের গুলিতে মারা হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের। বাদ যায়নি বৃদ্ধ-বয়স্ক-জোয়ান-কিশোর-শিশু কেউ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। আজ সেই বিভীষকার ২৫ মার্চের কালরাত।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আগ্রাসনে বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর কালো আঁধার। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৯৭১ সালের এদিন রাত ১০টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিলেন। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করেছিলেন ঢাকা শহরকে।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজ চলছে।
১৯৭১ সালের এ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। এ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ রাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদনা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ রাতে শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বর্বর হানাদার বাহিনী।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক ও সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারর চলার পথে রাস্তার দুপাশে গুলি ছুড়ে মারে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই।
ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এ হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় সেনানিবাসে। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটক রাখা হয়।
২৫ মার্চের পরদিন সকালে লুকিয়ে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞের কিছু আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলা। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় ‘জগন্নাথ হলের মাঠে’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্যামেরা চালু করি। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম, জগন্নাথ হলের সামনেই মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় এবং আমি ক্যামেরা অন করি। দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো। মাঠের পূর্ব পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটা তাঁবু বানিয়ে ছাউনি করেছিল। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে। যাদের আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। মৃতদেহগুলো এনে সব এক জায়গায় জমা করা হচ্ছিল এবং ওদের দিয়ে লেবারের কাজ করানোর পর আবার ওদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল।
শহিদ জননী জাহানার ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে কালরাত নিয়ে ২৬ মার্চের লেখার এক জায়গায় লিখেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁজরা। পাক আর্মি ‘দ্য পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারি বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।’
অনলাইন ডেস্ক :
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, যারা প্রকৃত সাংবাদিক তারাই শুধু কার্ড (পর্যবেক্ষক কার্ড) পাবেন। প্রকৃত সাংবাদিকের সংজ্ঞা কী তা আপনারা জানেন। সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। আজ ৬ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনমিয় সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের রুমে গিয়ে পরিচয় দেবেন এবং সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আপনার কার্ড দেখাবেন। আপনি ভোটকেন্দ্রে লাইভ, রেকর্ড ও সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে লাইনে থাকা অবস্থায় করতে হবে। এছাড়া কক্ষের ভেতরে ঢুকতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন তবে বক্তব্য নিতে পারবেন না, লাইভ করতে পারবেন না। এক রুমে ১০ মিনিটের বেশি থাকা যাবে না।
ইসি আলমগীর বলেন, বিদেশিরা নির্বাচন কমিশনে এসে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। আমরা সবসময় বলে আসছি তারা (বিদেশিরা) আমাদের ওপর কোনো চাপ দেননি। এছাড়া চাপ দেওয়ার অধিকারও তাদের নেই।
সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জামালপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় জামালপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান, পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।